বাবা

বাবা

-এভাবে আর কত দিন বৌমা?
-জ্বী আম্মু দেখছি…
-এই দেখছি দেখছি করেতো ৫ বছরতো হলো। মানুষ কি বলে একবার ভেবে দেখেছো?
-জ্বী আম্মু।

এটা বলে তনিমা কোন রকম তার শ্বাশুরীর সামনে থেকে চলে আসে।তনিমা তার শ্বাশুরিকে রাতের ওষুধ দিতে গেলে শ্বাশুরী উপরের কথা গুলো বলে।বলবেই বা কেন তনিমা আর রিদয়ের বিয়ে হইছে যে আজকে প্রাই ৫বছর হতে চললো।কিন্তু তনিমা এখনও মা হতে পারেনি।কি সবাই ভাবছেন যে তনিমা বা রিদয়ের কোন প্রবলেম আছে তাইতো?না!!

ওদের দুইজনের ওরকম কোন প্রবলেম নাই।ওদের বিয়ে হয়ছে প্রেম করে।রিদয় যখন ক্লাশে টেইনে পড়ে তখন তনিমা ক্লাস এইটে।ওরা দুইজন একই স্কুলে পড়তো ওদের বাড়িও অনেকটা পাশাপাশি ছিলো সে সুবাদে দুইজনের পরিচয়এর পরে প্রেম।দীর্ঘ পাঁছ বছর প্রেম করার পর তনিমা যখন ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষে তখন তনিমাকে ওর বাসা থেকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পরে লাগে। রিদয় যেহেতু তখন অানার্স দ্বিতীয় বর্ষে তখন সেও বেকার তার কাছে তনিমার বাবা-মা তাকে বিয়ে দিবে না।একপর্যায়ে তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে। শেষ পর্যন্ত অনেক জামেলা পেরিয়ে তাদের পরিবার তাদেরকে মেনে নেয়।এর আগে থেকে রিদয় কোচিং এ ক্লাশ নিয়ে টিউশনি করিয়ে মোটামোটি সংসার চালাচ্ছে। বিয়ের একবছর পর থেকে তনিমার শ্বাশুরী প্রাই তনিমাকে বাচ্ছা নেওয়ার জন্য আকারে ইঙ্গিতে বলতো কিন্তু তনিমা বুজেও না বুজার ভান করতো।এভাবে চলতে চলতে প্রাই দুই বছর হয়ে গেল একদিন রিদয়ের আন্টি তাদের বাসাই বেড়াইতে আসে তখন তনিমা উনার জন্য নাস্তা আনতে রান্না ঘরে যাই তখন শুনে তার খালা শ্বাশুরী তার শ্বাশুরীকে বলছে…

-কিরে বুবু তুই কি নাতী-নাতনীর মুখ দেখবি না?দুই বছর তো হতে চললো।
-প্রত্যাক দিনই বউমাকে বলি কিন্তু কে শুনে কার কথা?
-বুবু তুমি মনে হয় এ ব্যাপারে সরাসরি কথা বলা দরকার।
-আচ্ছ দেখি।কি করা যাই।

এরপর থেকে তনিমাকে প্রাই তার শ্বাশুরী এই ব্যাপারে বলে।কিন্তু সে তার যুক্তিযুক্ত উত্তর দিতে পারে না।কারন সে ও চায় তার একটা বাবু হবে সে তার বাবুর সাথে খেলবে বাবুর নরম হাত দিয়ে তাকে ছুঁয়ে দিবে। কিন্তু রিদয়কে যখন তনিমা বেবি নেওয়ার ব্যাপারে বলে তখনই রিদয় বলে আরো পরে। রিদয় এর এই পরে বলাটার ও একটা কারন আছে রিদয় এখনও প্রতিষ্ঠিত না।সে জানে যে এসময় সে বেবি নিলে তার বেবির ভবিষ্যত অতটা ভালো হবে না।হয়তো সবাই খুশী হবে ঠিক কিন্তু এই সামন্য খুশীর চেয়ে তার বাবুর ভবিষ্যত জীবন অনেক জরুরী। কারন বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরে ভালো ভালো স্কুল গুলোতে এ্যাডমিশন করাইতে হলে প্রথমে ২-৪লাখ লাখের পাশাপাশি ব্যাংক এ্যাকাউন্টে অনেক গুলো টাকা আছে সেটাও দেখানো লাগে।মাসে মাসে ৭-৮ হাজার টাকা দেওয়া লাগে বেতন সহ এটা সেটার খরচ। কিন্তু রিদয়ের পক্ষে এখন তা বহন করা করা সম্ভব না।

আজ রিদয় তার ছেলেকে স্কুলে ভর্তী করাবে। সে স্কুলটাই যেটাতে রিদয় ভর্তী হতে চেয়েছি কিন্তু তার বাবার যথেষ্ট টাকা না থাকাই রিদয় ভর্তী হতে পারে নি।আজ রিদয়ের ধন-সম্পদের অভাব নেই রিদয়ের ৮টা কোচিং সেন্টার আছে চট্টগ্রাম শহরে। যেখানে হাজার হাজার স্টুডেন্ট পরছে।সে তার এত দিনে আত্মত্যাগের ফল পেয়েছে। তনিমা আজ মা ডাক শুনেছে তনিমার শ্বাশুরী তার নাতীর সাথে খেলতে পারছে। ঠিক এভাবেই প্রতিটা বাবা তার জন্মের আগ থেকে তার সন্তার এর ভবিষ্যত এর কথা ভাবে। তখন যত কষ্ট হোক না কেন তার সন্তার এর একটা ভালো ক্যারিয়ার এর জন্য একজন বাবা সব করতে প্রস্তুত থাকে কিন্তু সে কষ্ট গুলো একজন বাবার গায়ে লাগে না।বাবার গায়ে লাগে সে কষ্ট গুলো যখন সন্তান বড় হয়ে বাবাকে অবহেলা করে বা ভালো কোন জব পেয়ে বাবাকে ছেরে বউকে নিয়ে অন্য বাসাই উঠে তখন একজন বাবার কি পরিমান কষ্ট হয় সেটা একজন বাবাই বুঝে শুধু।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত