“এমন এক বর্ষনে, প্রথম দর্শনে, হারিয়েছিলাম তোমাতে। হিসেব খুঁজেছি, বহু পথ পেড়িয়েছি, পেলামনা অার নিজেকে।” তুমি ছিলে বৃষ্টিবিলাসী।অার অামি দৃষ্টিবিলাসী।বৃষ্টি অামারও প্রিয় তবে বলতে পার তোমার চাইতে কম।বৃষ্টিতে অামরা দুজনই ভিজতাম।কিন্তু অামার উদ্দেশ্য থাকত সবসময় ভিন্ন।তুমি ভিজতে বৃষ্টি উপভোগ করতে।অার অামি ভিজতাম তোমার ওই বৃষ্টি উপভোগের দৃশ্য দেখতে।তুমি বৃষ্টির ফোটার মতই শুদ্ধ।কেমন হা করে দুহাত প্রসারে চক্রকারে ঘুরতে।
মনে হত যেন বৃষ্টির সব ফোটা তোমাই অাবর্তিত করেই ঝরছে।অনর্গল চেয়ে থাকতাম তোমার ওই ভেজা অাঁখি, ভেজা কেশ অার লেপ্টে যাওয়া কাজল।এমন মুহুর্তে যখন বৃষ্টি থেমে যেত মনে মনে ইচ্ছেমত গালি দিতাম।বলতাম- থামার অার সময় পেলিনা।এখনই থামতে হল।কিংবা সৃষ্টিকর্তার কাছে মিনতি করতাম অারো অধিক বর্ষা ঢেলে দিতে। সময় পাল্টেছে।এখন অার বৃষ্টি হলে ভিজি না।ভিজতে মনও চায় না।উল্টো মাথার উপর ছাদ খুঁজি।নিরবে এককোনে বসে তোমার স্মৃতির ঝর্ণায় ভিজি।সেই ভেজা অাঁখি, ভেজা কেশ অার লেপ্টে যাওয়া কাজল।
শ্রাবনের মাঝামাঝি একটা সময় ছিল তখন।নীল অাকাশ ছিল কালো মেঘে অাচ্ছন্ন।অার খানিকটা বিদ্যুৎ চমকানো মধ্যাহ্ন।গুরুত্ববহ কাজে গিয়েছিলাম কলেজে।গিয়ে দেখি প্রিন্সিপাল স্যার ওয়াশরুমে।হরি পিয়ন বলল এসে যাবে কিছুক্ষণে।অসারতা কাটাতে গিয়ে বসলাম লাইব্রেরিতে।কবিগুরুর মহুয়া হাতে চেয়ার টেনে বসলাম।তারপর হঠাৎ এক মুক্ত ছন্দে অাওয়াজ অাসে-” ওটা অামি খুঁজছিলাম।” সেই কন্ঠে অামি মুখ তুলি কিন্তু খুলার সাহস হারিয়ে ফেলি।সে এক গল্পের মতই মহুয়া সুন্দরী নারী।অামি চোখ ফেরানোর মানে খুঁজে ফিরি।সে মধুর কন্ঠে পুনরায় বলল- ” বইটা কি অামি একটু পড়তে পারি?” ভাষা হারিয়েছে অামার, বাধ্য ছেলের মত বইটা বাড়িয়ে দিলাম হাতে তার।”মহুয়াতে” ডুবে গিয়েছে অারেক মহুয়া।অপলক চোখে দেখছি তাকে।অামার অার ‘মহুয়া পড়ার দরকার নেই।সাক্ষাৎ মহুয়াকে নিজ চোখে দর্শন করছি অামি।
মাঝখানে কতসময় পেরিয়ে গেল সে হিসেব রাখিনি।তার কন্ঠে পেলাম হৃদয়ে মৃদু ঝাকানি।সে বকুনির সুরে বলল অামায়- “কি ব্যাপার হাবার মত চেয়ে অাছেন যে।জীবনে কোনদিন মেয়ে দেখেননি।” বললাম- দেখেছি।হাজারো রমনি চোখের সামনে দেখেছি।তবে তোমার মত মহুয়া অাঁখিতে পড়েনি কোনবার।তাই এ চাহনি।
একান্তই মনে মনে সংগোপনে বললাম কথাটা।মুখে বলবার সাধ্য যে নাই।কর্ণধারে পৌঁছিলেই অাস্ত গিলে খাবে অামায়।চুপ থাকায় শ্রেয়।এতে ভদ্রতা বেশি প্রকাশ পাই।কথায় অাছে ব্যাঙ কষ্ট পায় নিজের গালের দোষে।অামি সেই বোকাসোদা ব্যাঙ হতে চাই না।সে খানিকটা বিব্রত হয়ে বলল- “অাপনি কি কানে শুনেননা নাকি বোবা যে?”
এবার মুখের অাড়মোড়া ভেঙে বললাম-“এমনিই দেখছিলাম।” সে বলল- ” যাক বাবা বাঁচা গেল কথা বলতে পারেন তাইলে।অামি ভাবলাম কি না কি।” এভাবেই সময়গুলো হচ্ছিল অতিক্রান্ত।দিক ভুলে অামি অাজ দিকভ্রান্ত।কি হেতু এসেছি সে কারন ভুলতে বসেছি প্রায়।সম্মুখে মহুয়া বসে থাকলে এমনিতো হয়।সে বলল- “কি নাম অাপনার?” বললাম- সেতু জিৎ।সবাই প্রথমটাই ডাকে।অাপনার? সে বলল-” অামি অারশি।কিন্তু সবাই অামাকে বৃষ্টি বলেই ডাকে।”
– নামের এত ফাড়াক কেন জানতে পারি?
সে বলল- এখন না।সময় হলেই জানবেন। অামি হ্যাঁ সূচক মাথা ঝাকালাম।খানিকক্ষণ নিরব থাকার পর সে অাবার বলল- ” অাপনি বৃষ্টি হলে ঠিক করেন?” বললাম- জরুরি কোন কাজ পড়লে ছাতা নিয়ে বের হই।নয়ত বাসায় বসেই কাটিয়ে দিই।
– ছাতা নিয়ে কেন বের হওয়া লাগবে? বৃষ্টির দুয়েকটা ফোটা গাঁয়ে মাখলে কি এমন ক্ষতি হয়?
– অামি ঠান্ডা সইতে পারিনা।বৃষ্টি গাঁয়ে পড়লেই সর্দিকাশি সব একসাথে হয়।
অামার কথা শুনে সে একটু যেন কোথায় কষ্ট পেল।তারপর বলল- ” জানেন তো বৃষ্টি সৃষ্টিকর্তার দান।বৃষ্টিকে উপভোগ করতে হয়।কিন্তু অাপনারা সেটাকে দুর্যোগ ভেবে এড়িয়ে চলেন।” তার কথার প্রত্যুত্তরে কিছু বলতে যাব এমন সময় বিল্ডিংয়ের দালান ভেঙে বৃষ্টি পড়তে শুরু করল।একেবারে মুষলধারার বৃষ্টি।যার শব্দটাও মন্দ লাগছেনা।সে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অামাকে বলল-” ভিজবেন চলেন।” অামি অামতা অামতা করতে শুরু করে দিলাম।কি বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না।সে বলল অাবার- ” উঠেন উঠেন।একদিন ভিজলে কিচ্ছু হবেনা।ভিজেই দেখুননা কেমন ফিল হয়।” সে অার কিছু না বলেই সামনের দিকে হাঁটা দিল।অামি নিলাম তার পিছু।
সে খোলা অাকাশের নিচে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।অামি এখনো ছাদের নিচেই অাছি।অামাকে দেখতে পেয়ে হাতে ইশারা করল।অামি গিয়ে দাঁড়ালাম তার পাশে।যেতে যেতেই ভিজে একাকার হয়ে গেছি।সে হা করে বৃষ্টির ফোটা গিলছে।অামি অবাক চোখে তাকালাম তার দিকে। বলল- “এবার বুঝলেন তো কেন সবাই অামাই অারশি বাদ দিয়ে বৃষ্টি নামেই ডাকে।” অামি মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বললাম।মেয়েটা অাসলেই বৃষ্টিপাগলী।অামি অবাক চোখে দেখছি তার ভেজা অাঁখি, ভেজা কেশ অার লেপ্টে যাওয়া কাজল।সেদিই অামাদের প্রথম দেখা।অার এভাবেই অামাদের পরিচয়।
পৃথিবীতে সবার জন্য ভালোলাগা তৈরি হয়না।কিছু মানুষ থাকে যাদের প্রথম দর্শনেই ভালো লেগে যায়।এমনকি তাদের রুচি, অভ্যেসও অামাদের ভালো লাগে।যাকে এক পলক দেখলেই তোমার চোখ অাটকে যাবে, বুক ধড়ফড় করবে, হৃদয়ে সুখের অনুভূতি জাগবে তখন বুঝে নিও তুমি তার দেখা পেয়েছ যার জন্য তোমার সৃষ্টি।