অবশেষে মিলন

অবশেষে মিলন

গোসল শেষে নিজের গামছা টা কোমরে বেধে অন্য একটা তোয়ালে দিয়ে মাথার চুল মুছতেছি এমন সময় ক্রিং.. ক্রিং.. করে ফোনটা বেজে উঠলো ফোনটা রিসিভ করলাম..

:-হ্যা বল…..(আমি)
:-গতকাল কলেজের ড্যান্স টা একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছিস রে..(সাদিয়া)
:-আরে ইয়ার.. আমি সব কাছ এমনি ফাটিয়ে দি..
:-আরে গাধা আগে নিজের কোমরের গামছা টা তো সামলা..(সাদিয়া)

আমি নিচে তাকিয়ে দেখি কোমরের গামাছার গিট খুলে গামছাটা নিচে পড়ে গেছে কিন্তুু ও কোথা থেকে দেখছে তাড়াতাড়ি গামছা টা তুলে আশে-পাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম, কিন্তুু কোথাও তো কাউকে দেখতে পেলাম না যাই হোক… এবার পরিচয় টা দেয় আমি রোমান.. আর সাদিয়া হলো আমার জনম জনমের শক্রু, মানে বন্ধু আমাদের পাশা-পাশি বাসা, সাদিয়া আমার ২ দিনের বড়… তবে আমরা এক সাথেই বেড়ে উঠেছি ২ দিনের বড় বলে সব সময় অহংকার করে, বলে তুই ছোট ছোটর মত থাকবি ছোট বেলায় ওর মাথার যে কত চুল টেনে টেনে ছিড়ে দিয়েছি, তার কোনো হিসাব নেই আমারা প্রায় পুতুল নিয়ে বর বউ খেলতাম…

ওর পুতুল সাথে আমার পুতুলের বিয়ে দিতাম পুতুলের বাসর ঘর সাজাইতাম স্কুলে এক সাথেই যেতাম একদিন ক্লাসের স্যার আমাকে প্রশ্ন করলো, আমার প্রিয় মানুষ কে..?? সাথে সাথে উত্তর দিয়ে দিলাম সাদিয়া.. আমার এমন উত্তর শুনে ক্লাসের সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো একদিন সাদিয়া স্কুলে না গেলে আমিও সেদিন যেতাম না… কারণ ওকে ছাড়া আমার কোথাও যেতে ভালোই লাগতো না এজন্য স্কুল জীবন শেষ করে, এখন একই কলেজে একই গ্রুপে ভর্তি হয়েছি তবে আমাদের মাঝে সারাক্ষণ বাচ্চাদের মত ঝগড়া লেগেই থাকে, এর নমুনা প্রথমেই তো দেখলেন সকাল বেলায় ঘুমিয়ে আছি.. ঘুমের মধ্যে একটু একটু শুনতে পাচ্ছি, বাহিরে কেউ চিৎকার করে ডাকছে…

:-আন্টি.. আন্টি.. রোমান কোথায়…(সাদিয়া)
:-ও তো এখনও ঘুম থেকে উঠিনি মা..(আমার মা)
:-কিিিি… এখনও উঠিনি, আজ দেখাচ্ছি ওর মজা….

আমি চুপচাপ ঘুমিয়ে আছি, বুঝতে পারলাম আমার ঘরে ঘূর্ণিঝড় প্রবেশ করেছে.. মানে সাদিয়া….

:-এ গাঁধা.. উঠ বলছি, কি হলো কানে যাচ্ছে না..(সাদিয়া)
:- ( no reply)
:-দাড়া দেখাচ্ছি তোর ঘুম..

সাদিয়া একটা কাঠি আমার কানের ভিতর ঢুকায় দিলো, উহ একটু ব্যাথা পায়ছি রেগে গিয়ে ওর হাতটা ধরে মেরে দিলাম এক টান, সাথে সাথে ও আমার উপর এসে পড়লো…

:-কিরে গান্ধী.. তোর কেনো কন্ট্রোল নাই নাকি…(আমি)
:-তোর সাহস তো কম না…
:-তুই আমার স্বাধের ঘুমটা নষ্ট করলি কেন, তোকে যে শাস্তি পেতেই হবে…
:-এই শোন.. আমি তোর বিয়ে করা বউ না…
:-তাহলে এখনও আমার উপরে পড়ে আছিস ক্যান রে সাদিয়া এবার উঠে গেল..
:-তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে, মার্কেটে যাবো… (সাদিয়া)
:-আমার সময় হবে না…
:-ঠিক আছে, তাহলে ঐ রবিন কে সাথে করে নিয়ে যাই…
:-ঐ নাাা.. একটু wait কর আমি আসতেছি…

কত বড় সাহস, আমি থাকতে রবিন এর সাথে মার্কেটে যেতে চায় মার্কেটে গিয়ে তো পুরাই পাগল করে দিচ্ছে, এটা কিনবো সেটা কেনবো.. আসল কথা হলো, এই মেয়ে মানুষ নিয়ে মার্কেটে আসতে নেই একদিন কলেজে বসে আছি, একটু লক্ষ করলাম একটা ছেলে সাদিয়ার দিকে ড্যাপ-ড্যাপ করে বারবার তাকাচ্ছে….

:-কি রে..ঐ ছেলেটার সাথে লাইন মারছিস নাকি..(সাদিয়াকে ছেলেটার দেখিয়ে বললাম)
:-কিিি… ঐ ছেলের সাথে, তাও আবার আমি..?? তোর মাথা খারাপ নাকি..(সাদিয়া)
:-যাই বলিস না ক্যান, ছেলেটা কিন্তু ভালোই.. তোর সাথে মানাবে ভালো….
:-কি বল্লি কুত্তা.. দাড়া দেখাচ্ছি তোরে সাদিয়ার মারের হাত থেকে বাঁচার জন্য দিলাম দৌড়, সাথে সাথে লেগে গেল অন্য এক মেয়ের সাথে ধাক্কা এমন রোমান্টিক ধাক্কা সিনামায় ও দেখা যায় না মেয়েটার হাত থেকে বই গুলো সব পড়ে গেল, সে আমাদের ক্লাসেই পড়ে… নাম অজান্তা অজান্তার হাতে বই গুলো তুলে দিয়ে বললাম..

:-I’m Really Sorry….
:-It’s Ok.. Bt Next Time দেখে শুনে দৌড়াবে….
:- Ok এটা দেখে সাদিয়া আর মারার জন্য এগিয়ে আসলো না বাসায় আসার সময় বুঝতে পারলাম সাদিয়ার মন খারাপ…

:-কিরে তোর মন খারাপ ক্যান..(আমি)
:-এমনি……..
:-যাই হোক.. তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, তোর জন্য আজ এক মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলাম….
:- no reply..
:-আচ্ছা সিনেমার যেমন একটা ছেলে মেয়ে ধাক্কা খাবার পর প্রেম হয়ে যায়, অজান্তা আর আমার মাঝেও তেমনটি হবে নাতো সাদিয়া কিচ্ছু বলছে না, বোবার মতো হেঁটে চলেছে….
:-কি রে.. কলেজে যে ছেলেটা তোর দিকে তাকিয়ে লাইন মারছিল, ওর জন্য মন খারাপ নাকি সাদিয়া এবার এমন একটা রাগি look এ আমার দিকে তাকালো, আমার জায়গায় অন্য কিছু থাকলে হয়তো পুড়ে ছায় হয়ে যেত…

:-ঠিক আছে.. তুই যখন আমার সাথে কথা বলবি না, ওকে আমিও আর তোর সাথে কথা বলবো না এটা বলেই দ্রুত পায়ে হেটে বাসায় চলে আসলাম বিকাল গড়িয়ে সন্ধা নেমে আসলো এখনও সাদিয়ার সাথে কোনো কথা বলিনি, ওকে এক রাস্তায় দেখলে আমি অন্য রাস্তায় চলে যাচ্ছি সন্ধার পর পড়ার টেবিলে বই নিয়ে বসে আছি, কিন্তু পড়ছি না ঐ পাগলী টার সাথে ঝগড়া লাগলে কিছুই ভালো লাগে না কিচ্ছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম আমার রুমে কেউ প্রবেশ করেছে আমি ভাবলাম আম্মু এসেছে, কিন্তুু পিছনে তাকিয়ে দেখি.. এটা তো আমার শত্রু হাতে মিঃ লুডুস এর প্লেট আমার রাগ ভাঙ্গানোর জন্য এটা ওর চালাকি, কারন আমি লুডস খেতে খুব পছন্দ করি খুব ইচ্ছা করছিল বলতে, তাড়াতাড়ি লুডস দে.. জিব্বায় পানি চলে এসেছেকিন্তুু ওর উপর যে রেগে আছি এজন্য কিছু বললাম না, দেখি সে কি করে….

:-কি রে গাধা.. বই না পড়ে কোন মেয়ের কথা চিন্তা করছিস…(সাদিয়া)
:-সেটা তোকে বলবো ক্যান
:-ঠিক আছে বলতে হবে না, তোর জন্য নিজের হাতে লুডস তৈরি করে নিয়ে আসলাম খেয়ে নে
:-খাবো না
:-খেয়ে নে বলছি
:-বললাম তো খাবো না কিচ্ছুক্ষণ নিশ্চুপ, মনে মনে বলছি কি হলো আর একবার খেতে বলছে না কেনো, আমি যে আর অপেক্ষা করতে পারছি না
:-ঠিক আছে হা কর, আমি খাওয়াই দিচ্ছি এবারো না বলতে গেলাম, কিন্তু মুখ দিয়ে বের হলো আচ্ছা দে সাদিয়া আমার মুখে তুলে খাওয়াই দিতে লাগলো, আর আমি ওকে খাওয়াই দিলাম…

:-wow.. হেব্বি test হয়ছে… আমার বউটার হাতের রান্না যেনো এমন হয়
:-হয়েছে, আর ঢং করতে হবে না.. এখন আমি যায়
:-আর একটু থাক না
:-না আমি এখন আসি, আর তুই এবার কলেজের মেয়েদের নিয়ে চিন্তা কর

এটা বলে সাদিয়া চলে গেল মনে মনে ভাবছি আমি অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বললে,ও তো আমার খবর করে দেয় সাদিয়ার সাথে এটা আমার শুধুই বন্ধুত্ব, নাকি অন্য কিছু পরের দিন কলেজ থেকে ফিরে শুনলাম সাদিয়ার মামা এসেছে, সাথে করে একটা ছেলেকে নিয়ে এসেছে সাদিয়ার বিয়ের জন্য… ছেলেটা নাকি ভালো একটা জব করে কথাটা শোনা মাত্র বুকের ভিতর কেমন যানি করে উঠলো ছুটে চলে গেলাম ওদের বাসায় গিয়ে দেখি সাদিয়া আজ শাড়ি পড়েছে… কি সুন্দর লাগছে পাগলী টাকে কিন্তুু আমার মনের মাঝে ঝড় বয়ে যাচ্ছে….

:-বাবা রোমান.. এদিকে এসে বসো…(সাদিয়ার আব্বু ডাক দিলো) ছেলে পক্ষ সাদিয়া কে দেখে পছন্দ করে ফেললো, এখন সাদিয়ার মতামত নিয়ে বিয়ের তারিখ দিয়ে দিবে সাদিয়া ওর আম্মুকে ডেকে আড়ালে নিয়ে গেল আমিও গেলাম সাথে সাদিয়া কান্না করতে করতে বললো,

:-আম্মু আমি এখন বিয়ে করবো না, আমি পড়ালেখা করবো অবশেষে একটা মাত্র মেয়ের চোখের পানি দেখে ওর কথা অমান্য করতে পারেনি এবার আমারো মনে যেনো শান্তি খুজে পেলাম পরের দির কলেজে…

:-এই রোমান শোনো…(অজান্তা)
:-হ্যা বলো অজন্তা….
:-সে দিনের ধাক্কাটা একসিডেন্ট ছিল, নাকি ইচ্ছা করেই দিয়েছিলে আমি একটু হেসে বললাম..
:-সে দিনের ওটা দূর্ঘটনা ছিল….
:-life এ 1st তোমার সাথে এমন ধাক্কা খেয়েছি…

আমি আবারো হেসে উঠলাম হঠাৎ লক্ষ করি, দূরে থেকে সাদিয়া দেখছে আমি অজান্তার সাথে হেসে হেসে কথা বলছি সাদিয়া হয়তো ভাবছে, আমি অজান্তার সাথে প্রেম করছি সাদিয়া রেগে গিয়ে আমাকে কিছু না বলে একা একা বাসায় চলে গেল সাদিয়া বাসায় গিয়ে বললো…

:-বাবা আমি এই বিয়েতে রাজি আছি..
:-কি হয়েছে মা তোর, আমাকে বল…(সাদিয়ার বাবা)
:-আমার কিছুই হয়নি, আমি ঠিক আছি ছেলেটা ভালো জব করে, আর মেয়ের হ্যা সূচক মতামত পেয়ে খুশি হয়ে বিয়ের তারিখ ধার্য করে দিলো কিন্তুু প্রথমে আমি এসবের কিছুই জানিনা হঠাৎ করে সাদিয়া আমাদের বাসায় এসে বললো..

:-এই নে আমার বিয়ের কার্ড, কাল আমার বিয়ে কথাটা শোনা মাত্র যেনো আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল..
:-এটা কি বলছিস সাদিয়া…
:-হ্যা ঠিকি বলেছি, এখন থেকে তোকে আর জ্বালাবো না রে.. কাল আমার বিয়েতে আসিস এটা বলে সাদিয়া চলে গেল খুব কষ্ট হচ্ছে আমার, মনে হচ্ছে আমার কলিজা টা কেউ ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে সারারাত কান্না করেছি আজ সাদিয়ার বিয়ে.. আমি ঘর থেকে এখনও বের হয়নি এমন সময় আমার আম্মু আসলো..

:-বাবা রোমান.. এ কি অবস্থা তোর, কান্না করেছিস ক্যান ? আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলাম..
:-আমি সাদিয়াকে ছাড়া থাকতে পারবো না আম্মু, আমি যে ওকে আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি.. ওর অন্য কারো সাথে বিয়ে হলে আমি বাঁচবো না…
:-তুই যে সাদিয়া কে ভালোবাসিস, সেটা তাকে কখনো বলেছিস..(মা)
:-না…
:-তুই এখনি গিয়ে তোর ভালোবাসার কথা জানিয়ে আই, আমি জানি সাদিয়াও তোকে অনেক ভালোবাসে আম্মুর কথায় বুকভরা আশা নিয়ে ওদের বাসায় গেলাম বর পক্ষ সবাই এসে হাজির আমার বর কে গিয়ে বললাম

:-ভাইয়া একটু এদিকে আসবেন.. আপনার সাথে কিছু কথা আছে বর কে একটু আড়ালে নিয়ে বলতে লাগলাম..
:-ভাইয়া.. আপনি যাকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন, সে আমাকে ভালোবাসে আর আমিও তাকে ভালোবাসি সাদিয়া এই বিয়েটা করছে সম্পূর্ণ আমার উপর জেদ করে প্লিজ ভাইয়া এই বিয়েটা বন্ধ করুন
:-কিিিি  একটু পর যার সাথে আমার বিয়ে, তোমার সাহস হলো কি করে এখন এসব কথা আমার সাথে বলার ওর চিৎকার শুনে সবাই আমাদের এখানে ছুটে চলে আসলো, সাথে সাদিয়াও আসলো
:-এখানে এসব কি হচ্ছে (সাদিয়া) কেনো জানি নিজের চোখের পানিকে লুকাতে পারলাম না কান্না জড়িত কন্ঠে বলতে লাগলাম..
:-সাদিয়া পাগলামী করিস না, এ তুই আমাকে সময় দিয়েছিস এ তুই জানিস না..?? জানিস না আমি তোকে কতটা ভালোবাসি তুই বুঝিস না?? এমন সময় সেই বর আমার মুখে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো সাথে সাথে সাদিয়া ছুটে এসে কান্না করতে করতে আমাকে ধরে বললো,

:-এ তুই কেনো মার খাচ্ছিস (সাদিয়া)
:-তুই তাহলে বলিস না কেনো (আমি)
:- ওরে I Love You ইডিয়েট (সাদিয়া) সবার সামনে সাদিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো..
:-এইটা বলতে তোর এতক্ষণ সময় লাগে.. তুই জানিস না, পারবো না আমি ছাড়তে তোকে (আমি) আমাদের এমন দৃশ্য দেখে অনেকের চোখে পানি, আবার অনেকের মাথায় হাত উঠে গেছে বরের বাবা এসে বললো..
:-আল্লাহ তোমাদের তিনটা জীবনে কে রক্ষা করেছে.. এজন্য অনেক অনেক শুকরিয়া অবশেষে বিয়েটা আমার সাথেই হয়ে গেল….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত