-“এতোক্ষণ কোথায় ছিলেন?” বাসর ঘরে ডুকতেই বউ প্রশ্ন করে বসলো! নতুন বউ পরিচয় হওয়ার আগেই বলে কোথায় ছিলাম যাইহোক কথা না বাড়িয়ে বললাম,
-বন্ধুদের সাথে ছিলাম।
-নতুন বউকে একা রেখে রাত দু’টো পর্যন্ত বাহিরে তাও আবার বন্ধুদের সাথে। যান আপনি বাহিরেই থাকেন।
কথাটি বলেই অন্যদিকে ফিরে গেলো! আমি পানি খাচ্ছি এরমধ্যেই নিজেই এসে সালাম করলো। মুখ থেকে ঘোমটা সরিয়ে যা দেখলাম তার জন্যে আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। এতো মায়াবী চেহারা, চোখ দু’টো টানা টানা হরিণের মতো। এতো সুন্দর কন্ঠ। বিয়ের আগে আমি ওকে দেখিনি। যদিও মা অনেকবার দেখতে বলেছিলো। তাদেরকে দেয়া আমার শর্ত ছিলো মেয়ের সাথে অন্য কারো রিলেশন থাকলে তাকে আমি বিয়ে করবোনা এবং তাদের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের পছন্দ করা মেয়েকেই বিয়ে করেছি। আবার প্রশ্ন করে বসলো;-
-এই কি ভাবতেছেন? ভাবনার জগত থেকে ফিরে…
-কই নাতো! দু’জনেই নিশ্চুপ নিরবতা ভেঙ্গে বললাম…
-আচ্ছা আপনার নামটাইতো জানা হলোনা। আমি রিয়াদ আপনার নাম?
-তামান্না!
-খুব সুন্দর নাম।
-আপনি জীবনে কয়টা প্রেম করছেন?
-একটিও না! আপনি?
-ইশ.. বললেই হলো।
আপনাদের মত ছেলেদের আমার ভালো করে চেনা আছে বুঝলেন! আমি কিন্তু একসাথে অনেকগুলো প্রেম করেছি। ওমা বলে কি! অনেকগুলো প্রেম করা মেয়েকে আমি বিয়ে করলাম। মেয়েটার যেহেতু চেহারা সুন্দর করতেই পারে। এটাই স্বাভাবিক।
-আবার কি ভাবেন?
-নাহ কিছুনা!
-কিন্তু মা বললো আপনি নাকি কখনো প্রেম করেননি!
-ওনাকে বলেছি তাই ওনি বলেছেন!
-আপনি পানি খাবেন?
-না। কেনো?
-আমার প্রচুর পানির পিপাসা লেগেছে। পানি খাওয়ার জন্যে একটু বাহিরে যেতে হবে।
পানি খাওয়ার নাম করে বাহিরে আসলাম। যদিও রুমের ভিতরেই পানি ছিলো। কি মেয়ের সাথে বিয়ে দিলো। মা আমার সাথে এতো বড় প্রতারণা করতে পারলো। ওনারতো উচিত ছিলো মেয়েটার সম্পর্কে একটু ভালো করে খোঁজ-খবর নেয়ার। মা-বাবা ঘুমাচ্ছে এতো রাতে জাগানোটা ঠিক হবেনা। তাই আল্লাহর কাছে বিচার দিতে লাগলাম আল্লাহ তুমিতো সবকিছুই জানো! আমি কি দোষ করলাম তোমার দরবারে। যার জন্যে অনেকগুলো প্রেম করা মেয়ের সাথে আমারে তুমি জুটি বেধে পাঠাইছো! ওমনি আবার ডাক দিলো!
-কই গেলেন? পানি খেতে এতো সময় লাগে নাকি? বাধ্য ছেলের মত ফিরে গেলাম।
-জ্বী কিছু বলবেন? আমার প্রচুর ঘুম আসতেছে আমি ঘুমাবো! একটু জোরেই বললো….
-কিহ ঘুমাবেন মানে? আজকে আমাদের বাসর রাত। আপনি জানেন বিয়ের আগে এই রাতটার জন্যে মেয়েরা কত স্বপ্ন দেখে?
-আপনার আবার স্বপ্ন কিসের? আপনারতো অনেকগুলো বয়ফ্রেন্ড ছিলো। তাদের সাথে বাসর রাত হয়নি?
-প্রেম করেছি বললাম। তাতেই এতোকিছু ভেবে বসে আচেন! এই রাত নিয়ে কতো স্বপ্ন ছিলো আমার। আপনারা ছেলেরা মেয়েদেরকে বুঝতেই চাননা!
-“স্বপ্ন কি শুধু মেয়েরা দেখে ছেলেরা দেখেনা? শুনেন, এই রাত নিয়ে আমিও অনেক স্বপ্ন দেখেছি। ভার্সিটির সব বন্ধুরা প্রেম করতো। বিভিন্ন পার্কে গার্লফ্রেন্ডের হাত দরে ঘুরে বেড়াতো। আবার এইটা ভাববেননা যে আমাকে কোনো মেয়ে পছন্দ করতোনা। করতো! কিন্তু আমার একটাই ইচ্ছে ছিল, আমি এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করবো যে আমার মত কারো সাথে কোন প্রেম করেনি। বিয়ের পর তার সাথে প্রেম করবো। আর আপনি বলতেছেন অনেকগুলো প্রেম করেছেন। আমি ঘুমাবো সরেন আপনাকে বুঝার মত সময় আমার হাতে নেই।”
বালিশ নিয়ে সোফার রুমে যাবো ওমনি ভাবে হাত ধরে টান দিয়ে থামিয়ে বলতে লাগলো…
-দেখেন আমিও সারাজীবন আপনার মত এমন একজনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি। যার কখনো কোন মেয়ের সাথে রিলেশন ছিলোনা। বিয়ের পর শুধু আমাকেই ভালোবাসবে। দুমুঠো ভাত দিতে না পারুক কিন্তু কখনো কষ্ট দিবেনা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে। কখনো তাহাজ্জুদের নামাজ মিস করবেনা।
আমি অসুস্থ হলে আমাকে ওযুর পানি এনে দিবে। সকাল বেলায় অফিসে যাওয়ার আগে আমার কপালে আলতো করে চুমো দিয়ে ‘ভালোবাসি’ কথাটি বলে বাসা থেকে বের হবে। অফিস থেকে ফিরে আমার জন্যে চকোলেট আনবে। আমি কখনো প্রেম করিনি। এগুলোতে বিশ্বাসও ছিলোনা। মহান আল্লাহ তা’আলাতো বিয়ের আগে প্রেম হারাম করেছেন। আমি মহিলা মাদ্রাসায় পড়তাম। কখনো কোনো পরপুরুষ আমার চেহারা দেখেনি। আমি সবসময় পর্দা করে চলি। দেখলেন আজকে বিয়ের পরও আমাকে আর আপনাকে যেখানে রেখে মিষ্টি খাওয়ালো সেখানে সব মহিলা ছিলো। একজন পুরুষও ছিলোনা। কেনো যানেন? আমার বাবা-মা জানে এটা আমি মেনে নিবোনা। কারণ তাদের মেয়ে পর্দা করে। আমাদের পাশের বাড়ির কোনো ছেলেও যানেনা আমি কেমন! কেমন আমার দেহের গঠন! কতটুকু লাম্বা! এসবের কিছুই জানেনা। আপনার আম্মু আর আমার আম্মু পূর্ব পরিচিত ছিলো।
একদিন। আমাদের বাসায় আসে। আমি চা বানিয়ে দিলাম। আমার চায়ের প্রশংসা করে আর বলে আমাকে ওনার ছেলের বউ বানাবে। তারপরেই আমাদের বিয়ের কথাবার্তা শুরু করে বিয়ে ঠিক করে। আর আপনি কোন কথা না শুনেই আমার বুকের ভিতরে বসত করা স্বপ্ন গুলোকে মাটি করে বাসর ঘর থেকে চলে যাচ্ছেন! কথাটি বলেই ও কান্না করতে লাগলো। এতোক্ষণ ওর কথাগুলো শুনে দু’চোখ দিয়ে পানি পড়তেছে। কি বলে ওকে বুঝাবো ওর মত একজনকে পাওয়ার আসায় সারাজীবন আমিও অপেক্ষায় ছিলাম। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করতেছে। এটা খুশীর কান্না। কোনোভাবে ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম;-
-কান্না বন্ধ করে এদিকে আসেন। কাঁদো কাঁদো সুরে বললো;
-আবার কোথায় যাবো
-ওয়াশরুম যাবো।
ওয়াশরুমে গিয়ে দু’জনেই ওজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ আর তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করলাম। বাকিটা জীবন একসাথে থাকবো বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিয়ের পরের জীবনটা শুরু করলাম।