এক ভুবন হাসি

এক ভুবন হাসি

-নাম কি আপনার?
-শিহাব
-ওহ্,আমি ইতি
-হুম
-এত্ত ভাব নিচ্ছেন ক্যানো
-কোথায় ভাব নিচ্ছি
-তাহলে নয়তো কি! এত্ত সুন্দর একটা মেয়ে কথা বলতে আসছে, কোথায় আপনি একটু ট্রাই মারার চেষ্টা করবেন তানা (হুম,হ্যা)বলে উত্তর দিচ্ছেন
-আমি এমনি
-বুঝলাম,নতুন ভর্তি হয়েছেন
-হুম
-কোন সাবজেক্ট
-ইংরেজী
-ওয়াও,আমিও সেম
-হুম
-উহ্,আপনি একটা যা তা
-আচ্ছা এখন আসি তবে

<ভার্সিটি প্রথমদিন> মেয়েটার সাথে যেমনটা ব্যাবহার করলাম,আমি আসলে তেমন নই। জাস্ট ভার্সিটির প্রথম দিনের চমক ছিলো। ক্যান্টিনে যেতেই কলেজ লাইফের পুরোনো কিছু বন্ধু পেয়ে গেলাম। আর কি চাই,জমিয়ে চা-সিগারেট খেয়ে ইনজয় করে বাড়ি ফিরলাম। পরেরদিন ভাবলাম ভার্সিটিতে আরো নতুন একটা ধামাকা দিই। পুরোনো ময়লা একটা জামা আর ময়লা একটা প্যান্ট পরে মাথায় চুপচুপা করে সরিষার তেল দিলাম। সাথে চুল গুলো ভদ্র স্টাইলে নিচে নামিয়ে দিলাম। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে”হ্যা এখন একদম ক্ষ্যাত লাগছে”। ভার্সিটিতে যেতেই সবাই ড্যাব ড্যাব করে তাকাচ্ছে। গেটের সামনে কিছু মেয়ে হাসা-হাসিও করছিলো। সব কিছু avoid করে ক্লাসের দিকে পা- বাড়ালাম। কিছুক্ষণ বাদে স্যার এসে

-এই ছেলে দাঁড়াও
-জ্বি স্যার আমায় বলছেন
-হ্যা তুমিই,এগুলা কি পরে এসেছো
-ক্যানো স্যার
-বাসায় কি ভালো জামা নেই, ভার্সিটি তে কি সব স্টুডেন্ট ভর্তি হয় বুঝিনা। কাল থেকে ভালো জামা পরে আসলে আমার ক্লাস করবা নাহলে যেন আমার ক্লাসে তোমায় না দেখি

-জ্বি স্যার
-এখন বসো।জোকার কোথাকার (ক্লাসে হাসির রোল পরে গেলো। প্রথম ক্লাস কোনো ভাবে শেষ করে বাইরে চলে আসলাম। পিছু পিছু ইতিও আসলো)

-শিহাব…এই শিহাব হুম বলো
-কাল তো ভালো জামা পরে এসেছিলে,আজ এগুলো ক্যানো
-ওগুলো ঈদে কিনেছিলাম।ভার্সিটি প্রথদিন তাই পরে এসেছিলাম
-ও আচ্ছা।ভার্সিটিতে আমার কোনো বন্ধু নেই,আমি কি তোমার বন্ধু হতে পারি
-আমার মতন ক্ষ্যাতের সাথে বন্ধুত্ব।।
-ওয়ে হ্যালো,বিএফ হতে বলছিনা বন্ধু হতে বলছি
-ওক্কে,তবে তোমার মতন সুন্দরী বান্ধুপ্পি পেয়ে আমি প্রচুর সৌভাগ্যবান
-কাল তো মুখি খুলছিলেনা, আজ দেখছি কথার বুলি ফুটেছে
-ওটা বুঝবেনা,কফি খাবে
-ফুচকা হলে better হয়
-হুম,মেয়েরা আছে বলেই আজ ফুচকাওয়ালারা বেঁচে আছে।নাহলে ভাতে মরতো
-হিহিহি

<দ্বিতীয় দিনটাও মন্দ কাটলোনা। রাতে চিন্তা করলাম তৃতীয় দিনটায় কি ধামাকা করা যায়! হুম আইডিয়া> পরেরদিন হাতে ব্যাচলেট,গলায় চেন,জামার বোতাম তিনটা খোলা,চোখে সানগ্লাস”হুম একদম গুন্ডা গুন্ডা লাগছে”। বাইকটা নিয়ে রওনা হলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। আজো সবাই তাকিয়ে আছে। ক্লাসে যেতেই ইতির ঝারি

-এগুলা কি পরে এসেছো,বোতাম আটকাও
-ক্যানো,খারাপ লাগছে!
-একদম গুন্ডা লাগছে [তারপর নিজের হাতেই বোতাম আটকে হাতের ব্যাস আর চেনটা খুলে ব্যাগে ভরে দিলো]

-হুম এখন পারফেক্ট
-এটা কি হলো
-আচ্ছা কালকে তবে ওগুলো পরে এসেছিলে ক্যানো
-এমনি
-তুমি আসলে একটা পাগল।তোমার মোবাইল নম্বরটা দাওতো
-01700****97
-হুম,এই কোথাও ঘুরতে যাবে
-কোথায়
-তুমি বলো
-পার্কে!
-ওয়াও,চলো তবে
-ক্লাসটা করে যাই
-নাহ্,এখনি
-আচ্ছা
<গেটের সামনে এসে>
-এখানে দাঁড়াও দুই মিনিট
-ক্যানো
-এমনি
<কিছুক্ষণ পর বাইক নিয়ে হাজির হলাম। ইতি হয়তো যতই দেখছে ততোই অবাক হচ্ছে>

-ওঠো
-হুহ,রিক্সায় যাবো
-রিক্সাওয়ালার চেয়ে ভালো ড্রাইভার,,আমি ম্যাডাম
-আচ্ছা চলো
<পার্কে বসে>
-শিহাব একটা কথা জিজ্ঞাসা করি
-হুম
-তোমার জিএফ আছে?
-ছিলো
-এখন নেই!
-নাহ্
-ক্যানো
-ছেড়ে চলে গেছে
-ওহ্
-কিন্তু একটা টুইস্ট কি জানো
-কি
-এমনটা সবাইকে বলতে চাই,কিন্তু কোনো মেয়ে পটেই না
-হিহিহি,ফাজিল

(সব কিছুই ভালো ছিলো। শুধু চতুর্থ দিনটা কি চমক দিবো সেটা নিয়ে ভাবছি) সকালে ফ্রেস হয়ে প্রাইভেটকারটা নিয়ে ভার্সিটির দিকে রওনা দিলাম। আজ একদম সাধারণ getup। ভার্সিটিতে তবুও আজ সবাই তাকিয়ে আছে। ভার্সিটিতে ফ্যামাউস হতে এর চেয়ে আর কি ভালো উপায় হতে পারে। এদিকে আব্বু কল

-হ্যালো শিহাব
-জ্বি আব্বু বলেন
-সবকিছু ঠিক-ঠাক আছেতো
-হ্যা আব্বু
-গুড,বাবা যা করবি একদম ভেবে চিন্তে। তোকে কিন্তু ভিপি হতেই হবে
-হুম আব্বু,চিন্তা করবেন না {রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম আমার। জন্মের পর থেকে দেখে আসছি কি করে নিজেরটা নিজে অর্জন করে নিতে হয়। সো এই উপায়টা তেমন কিছুই নয়। ক্লাসে গিয়ে ইতির ডাকে ইতির সামনে গেলাম}

-আজ কিন্তু তোমায় দারুণ লাগছে
-হাহাহা,আজো কি ঘুরতে যাবে
-যেতাম,কিন্তু আমি ছোট থেকে বাইকে ঘুরতে খুবি ভয় পাই
-আচ্ছা চলো,বাইকে যেতে হবেনা
-সত্যি
-হুম
<ইতি গাড়িটা দেখে আরো অবাক হলো>
-আজো কি ওঠার কথা বলতে হবে
-নাহ্
-কোথায় যাবে বলো
-নদীর পাড়ে
-আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা (নদীর ধারে দুজনে নীরব হয়ে বসে আছি। নদীর শীতল বাতাস প্রতিবারি ইতির চুল গুলো ছুঁয়ে দিয়ে যাচ্ছে। তাতে ওকে দেখতে খুবি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। তবুও চুপ থাকতে ভালো লাগছেনা)

-ইতি
-হুম
-জানতে ইচ্ছে করছেনা আমার এত কিছুর কারণ!
-প্রথম দিন এত্ত ভাব নিলে ক্যানো
-যাতে সব মেয়ে ভাবে আমি মেয়েদের সাথে কথা বলিনা
-ওপস,দ্বিতীয় দিন ওভাবে ভার্সিটিতে আসলে ক্যানো
-যাতে সবার ফোকাস আমার দিকে থাকে,সিম্পল getup এ আসলে হয়তো আর তাকাতো না
-তৃতীয় দিন গুন্ডার মতন আসলা ক্যান
-সেদিনো সবার দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য
-এত্ত কিছুর কারণ
-যাতে সবাই আমায় চেনে
-হাহ্,সেটা তো আস্তে আস্তেও চিনতে পারতো
-হুম,কিন্তু তাতে দেরী হয়ে যেতো
-কিসের দেরী
-আমার ভিপি হবার
-মানে
-চাইলেই ঢাকা ভালো ভার্সিটিতে পড়তে পাড়তাম।

কিন্তু আমার বাবার স্বপ্ন ছিলো এই ভার্সিটির ভিপি হবেন,কিন্তু আব্বুর লাইফে আম্মু চলে আসায় সব কিছুই এলোমেলো হয়ে যায়। সারাদিন আম্মুকে নিয়ে পরে থাকায় আব্বুর আর ভিপি হয়ে ওঠা হয়নি।তাই আব্বু আমায় দিয়ে তাঁর ভেঙে যাওয়া স্বপ্ন পূরণ করতে চায়

-বাব্বাহ্,এর জন্য এত্ত কিছু
-হুম
-আচ্ছা এখন যদি তোমার লাইফে কেউ চলে আসে তখন কি করবে
-অলরেডি চলে এসেছে
-কে
-যদি বলি তুমি
-মজা করছো
-নাহ্,যেই মেয়ে আমায় ক্ষ্যাত দেখেও বন্ধুত্ব করতে পারে তাকে নিশঃসন্দেহে ভালবাসা যায়
<কিছুক্ষণ আবার নীরবতা>
-শিহাব
-হুম
-জানিনা কি বলা উচিৎ,তবে মন বলছে তোমায় ভালবাসতে
-তবে একটা কথা রাখবা
-হুম বলো
-আমি চাই আমাদের ভালবাসার আগে আব্বুর স্বপ্নটা পূরণ করতে
-আচ্ছা,সব সময় আমরা বন্ধু হয়েই থাকবো কিন্তু অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে পারবানা
-এখন তোমার হাতটা ধরে কি হাঁটতে তো পারবো?
-(….)
<চিরচেনা সেই নদীর ধার দিয়ে দুজন হেঁটে চলেছি। ইতির হাতের ছোঁয়া পেয়ে ইতির দিকে তাকালাম। ইতি এক ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে ওর প্রতি ভালবাসাটা আরো বাড়িয়ে দিলো।।।

সমাপ্ত

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত