সকালে ঘুমাচ্ছিলাম কলিংবেল এর শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।চোখে প্রচুর ঘুম নিয়ে দরজা খুলতেই তো আমি পুরা অবাক একি আমি কাকে দেখছি? নিলিমা আমার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে। আমি কি সত্যি দেখছি?নাকি ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখছি।নিজেকে চিমটি কাটতে যাবো তখনই নিলিমা বলে উঠলো…
-ভিতরে আসতে বলবেন না?নাকি বাহিরে দাঁড় করাই রাখবেন?
-না।আসো ভিতরে আসো। ভিতরে আসতে আসতে ও জিজ্ঞেস করলো…
-আন্টি কৈ?
-আম্মুরাতো গ্রামে।এখনও আসে নাই।
-মানে?আপনি কি বাসাই একা?
-হুম।
এটা বলতেই ওর মুখে যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। এরপর ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করে কাকে জানি কল দিলো।কথা শেষে আমাকে বললো…
-আমি এখানে একটা জব এর ইন্টারভিউ দিতে আসছি।আমি ভাবছি আন্টিরা কোরবান এখানে করছে তাই একটু আগেই চলে আসছি।
-হুম ভালোই করছো।
-মানে,আপনি কি চান্স নিতে চাচ্ছেন?
-আস্তাগফিরুল্লাহ কি বলো এগুলো?
-আচ্ছা ওকে।বাদ দিন।আর শুনুন আন্টির সাথে আমার কথা হয়ছে।আমাকে উপরের কোনার ঘরটাই থাকতে বলছে। আন্টিরা ২ দিন পরে আসবে উনারা আসা পর্যন্ত আপনি উপরের ঘরের আশে পাশেও যাওয়া নিষেদ।
-আচ্ছা যাবো না।(ঘর আমার বাড়ি আমার আর আমার বাড়িতে উনার কথাই আমাকে চলতে হবে।)
-ওকে।
আমি উপরে যাচ্ছি বাই অহ আচ্ছা নিলিমার পরিচয়তো এখনও আপনাদেরকে দেওয়া হয়নি।তাহলে শুনুন নিলিমা হলো আমার আব্বুর বন্ধুর মেয়ে।আমরা যখন রাজশাহীতে ছিলাম তখন ওরা আর আমরা পাশাপাশি ফ্লাটে থাকতাম।
সে হিসাবে আমাদের পরিচয়।ছোট বেলা থেকে ও আমাকে প্রচুর জ্বালাইতো শুধু ঘুমানোর সময়টা বাদে সারাদিনই আমাদের বাসাই থাকতো আম্মু আমার চেয়ে ওরে বেশি আদর করতো।এটা নিয়ে প্রাই আমাদের মাজে মারামারি হতো কিন্তু দিনশেষে আম্মু ওর পক্ষ নিতো। প্রতিদিন ঝগড়া,মারামারি করতে করতে কখন যে দুইজন বড় হয়ে গেলাম বুজতে পারি নাই।এর মধ্যে আব্বুর ট্রান্সফার হয়ে গেল চট্টগ্রামে। আমরা যখন চট্টগ্রামে আসার জন্য জিনিস-পত্র গুচাচ্ছিলাম তখন একদিন সন্ধায় নিলিমি আমার রুমে আসে আমি ব্যালকনিতে দাড়িয়ে জোস্না দেখছিলাম এমন সময় রুমের দরজা লাগানোর আওয়াজ শুনলাম।রুমে ডুকেই দেখি নিলিমা আমার রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিছে।আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম ওর পাগলামীর তো শেষ নেই।
-এ এই কি করছিস?দরজা বন্ধ করছিস কেন? বলার আগেই এক দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এই প্রথম ও আমাকে জড়িয়ে ধরলো।কেমন জানি অনুভূতি হলো। এই কি হয়ছে তোর? তুই কাঁদছিস কেন? রিদয় তুই আমাকে ছেরে চলে যাবি?আমি তোকে ছারা থাকতে পারবো না।তুই চলে গেলে আমি কাকে সারদিন জ্বালাবো।পড়া বুজানোর নাম করে কাকে আমি দেখতে আসবো? তুই আমাকে ছেরে যাইস না।তুই চলে গেলে আমি খুব একা হয়ে যাবোরে।রিদয় আমি তোকে ভালোবাসি আমি তোকে হারাইতে চাই না।প্লিজ রিদয় প্লিজ তুই আমার হবি বল? (ও এক নাগারে এগুলো সব বলে গেলো।)
-কি হলো তুই চুপ কেনো?
-আগে তো ছার তারপর বলি।
-দেখ নিলিমা তুই এবং আমি এখনও অনেক ছোট। আর আমি তোকে জাস্ট আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ভাবি এর বেশি কিছু না।
-প্লিজ রিদয় আমাকে তুই ফিরিয়ে দিস না।
-দেখ আমার দ্বারা তোর সাথে রিলেশনে যাওয়া সম্ভব না।
এটা বলা শেষ না করতেই কে জানি দরজা নক করলো। আমি দরজা খুলে দিলাম।দেখলাম আম্মু দাঁড়িয়ে।আম্মুকে দেখে নিলিমা এক দৌড়ে চলে গেলো।আম্মু আমাকে জিজ্ঞেস করলো ও কেন আসছিলো?আমি বললাম কিছু নোটস নিতে। আম্মু কিছু বললো না শুধু একটু মুচকি হাসলো।এই হাসির কারন তখন বুজতে পারি নাই।এখন ঠিকই বুজছি।
কিছুদিনের মধ্যে আমরা চট্টগ্রামে চলে আসি। এরপর থেকে নিলিমার সাথে আমার আর কখনও কথা হয়নি।আম্মুরা প্রাই কথা বলে জানতাম। আমি ফ্রেস হতে রুমে চলে গেলাম।কিছুক্ষন পর সেলিম চাচা(আমাদের কাজের লোক) ডাক দিলো নাস্তা করার জন্য।একটু পরেই নাস্তা করতে গেলাম।দেখি নিলিমা এখনও আসে নাই।তাই সেলিম চাচাকে পাঠালাম ওকে ডাক দিতে।তারপর সেলিম চাচার সাথে ওকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে নাস্তা করে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বেড় হলাম। আসার সময় প্রচুর বৃষ্টি শুরু হলো আমি আবার বৃষ্টি দেখলে ভিজতে মিস করি না আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না।আমি গাড়ি থেকে নেমে বৃষ্টিতে ভিজা শুরু করলাম।অনেক্ষন ধরে বৃষ্টিতে ভিজার পর মনে হলো নাকটা ভারি হয়ে আসছে বুজতে বাকি রইলো না যে সর্দি নিতে যাচ্ছে তাই আর না ভিজা বাসাই চলে গেলাম।বাসাই ফিরতে প্রাই ১১:৩০ বাজে বাসাই কলিংবেল দিতেই নিলিমা দরজা খুলে দিলো মনে হয় দরজার সামানে দাঁড়িয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো।আমি জিজ্ঞেস করলাম সেলিম আঙ্কেল কৈ?
-উনাকে আমি ঘুমাইতে পাঠাই দিছি। (নিলিমা)
আমি আর কথা না বারিয়ে সোজা রুমে চলে গেলাম।ফ্রেস হয়ে খাওয়ার টেবিলে গিয়ে দেখি নিলিমা একটা গম্ভির ভাব নিয়ে বসে আছে।আমি ঐ দিকে খেয়াল না করে ভাত বারতে যাবো তখনই নিলিাম বলে উঠলো আপনি বসেন আমি বেরে দিচ্ছে।আমি আর কিছু বললাম না।চুপচাপ খাওয়া শুরু করলাম।খাওয়া শেষ করে রুমে চলে আসলাম।
সারাদিন ঘুরাঘুরি কারনে শরীরটা প্রচুর ক্লান্ত লাগছে।তাই গা হেলিয়ে দিতেই কখনও যে ঘুম চলে আসছে বুজতেই পারি নাই। যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন আমি নিজেকে আবিষ্কার করলাম হাসপাতালের বেড়ে।রাত তখন মেবি ২:১৩বাজে।নিলিমা আমার হাতটা ধরে পাশে রাখা বেঞ্চে বসে ঘুমাচ্ছে।শুনেছি ঘুমন্ত অবস্থাই যে কোন নারীকে নিষ্পাপ মনে হয়। নিলিমাকে মনে হয় একটু বেশি নিষ্পাপ লাগছে।আমি ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওর নিষ্পাপ মুখ খানা দেখছিলাম।ছোট বেলার সেই নিলিমা আর আজকের নিলিমার মধ্যে অনেক পার্থক্য।এখন সে অনেক পরিপাটি।অনেক গুছিয়ে কথা বলে। হঠাৎ নিলিমার ঘুম ভেঙ্গে গেলো সাথে সাথে আমার চোখে চোখ পরলো আমার তাকানো দেখে মনে হয় একটু লজ্জাও পেয়েছে।তবে লজ্জার চেয়ে ও খুশি হয়ছে বেশি মনে হয়।নিলিমা তখনই চিৎকার দিয়ে বললো “আন্টি,আন্টি,রিদয়ের জ্ঞান ফিরেছে”। সাথে সাথে দেখলাম আব্বু-আম্মু সবাই আমার কেবিনে এসে হাজির তার মানে এতক্ষন সবাই বাহিরে অপেক্ষা করছিলো।
-মা,তোমরা এখানে?তোমার গ্রাম থেকে আসলা কখন?
-আমরা আজকে বিকালে আসছি।তোর এখন কেমন লাগছে বাবা?(মা)
-কিছুটা ভালো।আমাকে এখনে আনলো কে তাহলে?
-তুই পরশু দিন নাকি বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরছিস।এরপরেই তো তোর জ্বর উঠলো।আর জ্বর উঠলে তো তুই জ্ঞান হারাছ।তারপর নিলিমা আর সেলিম তোকে ঐ দিন রাতে এখানে আনছে।
-ওহ আচ্ছা।
-আন্টি ওরতো জ্ঞান ফিরছে আপনার এখন বাড়ি যান।আমি আছি এখানে।(নিলিমা)
-না মা,তুই আজকে দুই রাত ধরে টোটালি ঘুমাচ নাই।তুই তোর আঙ্কেল এর সাথে বাসাই চলে যা।আমি আছি এখানে।(মা)
-আন্টি আপনি এমনি অসুস্থ।এরপরে আজকে জার্নি করে আসছেন।রাত জাগলে আপনার শরীর খারাপ করবে।আপনি যান।সকালে আসিয়েন।
– কিন্তু নিলিমা আম্মুর কথা থামিয়ে দিয়ে এক প্রকার জোর করেই আম্মুদেরকে পাঠিয়ে দিলো। এরপরে সে আমার পাশে বসে আছে।দুইজনের মুখেই কোন কথা নাই।কিছুক্ষন পর ও নিরভতা ভাঙ্গলো…
-ঐ দিন রাতে বৃষ্টিতে ভিজতে কে বলছিলো?
-এমনি আমার বৃষ্টিতে ভিজতে ভালো লাগে তাই ভিজছি।
-তাই বলে এত বেশি ভিজতে হবে?আমি তো পুরা ভয় পেয়ে গেছিলাম।
-ভয় পাওয়ার কি আছে? এত তাড়াতাড়ি মরবো না।
-একদম চুপ এই কথা যাতে আর মুখে না আসে।
দুই দিন পরে আমাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেওয়া হলো।বাড়িতে আসতেই দেখি মেহমানে ভর্তি পুরো বাড়ি।এত মেহমান কেন? সবাই কি আমাকে দেখতে আসছে।এই সামান্য জ্বর এর জন্য এতজন আসছে দেখতে।আমার কাছে ব্যাপারটা নিয়ে খটকা লাগলো। আমি বাড়িতে পা রাখতেই মা আমাকে উপরের ঘরে ডেকে পাঠালো।উপরে আসতেই দেখি নিলিমা আমাকে দেখে একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে ওর রুমে চলে গেলো।আমি আম্মুর রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
-আম্মু আসবো?
-হুম বাবা আই।তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
-হুম আম্মু বলো।
-তুই আর নিলিমা ছোট থাকা অবস্থাই আমরা তোদের বিয়ে ঠিক করছিলাম।
এত দিন তোরা যাতে তোদের ক্যারিয়ারের দিকে ঠিক মতে মন দেস এইজন্যই কিছু বলা হয়নি।এখন তোরা দুইজনই নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজেদের ক্যারিয়ার ভালো একটা জায়গাই নিয়ে আসছিস।তাই আমার ভাবছি শুভ কাজটা সামনের বুধবারে সেরে ফেলতে।এখন তোর কি মত বাবা?
-আম্মু আমার কোন সমস্যা নেই।কিন্তু নিলিমা…?
-ওর সাথে আমাদের কথা হয়ছে।ওর ও কোন আপত্তি নেই।
-ওকে।
-আচ্ছা এখন যা ফ্রেস হয়ে আই।আমি খেতে দিচ্ছি।
-আচ্ছা মা।
তাহলে এই কারনেই এত মেহমান আমাদের বাড়িতে। দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো।আজ আমাদের বিয়ে।সেই সন্ধা থেকেই ক্লাবে এসে বসে আছি।না এমনি আসি নাই একদম বরের সাজে এসেছি।সবাই আসছে সেলফি তুলছে এমনি ছবি তুলছে।নিজেকে কেমন জানি সেলিব্রেটি সেলিব্রেটি মনে হচ্ছে ইয়া বড় স্টেইজে একা বসে আছে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আমার সামনে রাখা চেয়ার গুলোতে বসে আছে।নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।
কিছুক্ষন পর পর সুন্দরি ললনারা আসছে আমার সাথে সেলফি তুলতে।আহা বিয়ের আগে এতবছর সিঙ্গেল কাটাইলাম কোন ললনা এসে বললো না আসো একটা সেলফি তুলি। আর আজ এমনিতেই ক্ষুদাই পেট ছো ছো করে সেই সন্ধায় কি খাইছি এরপর থেকে আর খাওয়ার কোন নাম গন্ধই পেলাম না। তার উপর ললনারা এসে বলে ভাইয়া স্মাইল প্লিজ।খালি পেটে আর কতক্ষন ভেটকান যাই কন চায়।কিছুক্ষন পর বড় ভাইয়া আসলো বললো রিদয় চল খাবি নিলিমারা খাবার টেবিলে চলে আসছে। এরপরে খাওয়া দাওয়া ও বিয়ের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে। নিলিমাকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।কিছুক্ষন এর মধ্যে গাড়ি বাসার সামনে পৌছে গেলো।গাড়ি থেকে নেমে আরো কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নিলিমাকে বাসর ঘরে দেওয়া হলো। আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বসে গেলাম।প্রাই রাত ১২:৪৫ মিনিট আড্ডা দেওয়ার পর বড় ভাবি এসে ডাক দিলো।
-কিরে রিদয় তুই এখনও এখানে?আর ঐদিকে তোর জন্য একজন অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত।
-কে আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে আবার?
-তোর ছোট বেলার বউ।হাদারাম কথাকার। যা বিড়াল কিন্তু মারতেই হবে আজকে(এক গাল হাসি দিয়ে ভাবী বললো)
-এতক্ষন যা ফুরফুরে মেজাজে ছিলাম।এখন কেন জানি একটা ভয় কাজ করছে।ভাবী না গেলে হয় না?
-ঐ হাদারাম কস কি তুই?আজকে তোর বাসর রাত এই বলে কান ধরে টেনে নিয়ে গেলো।এক ধাক্কাই আমাকে বাসর ঘরে ডুকাই দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।ভাবি। আমি দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে ভাবিকে বলতেছি দরজা খোলার জন্য কিন্তু কে শুনে কার কথা।
অতঃপর কে জানি আমাকে পিছন থেকে কলার ধরে টান দিয়ে খাটে পেলে দিলো।আর নিজেও আমারে গায়ের উপর পরলো।শুরু হলে আমাদের বাসর ঘরের বিড়াল মারার গল্প।
(সমাপ্ত)