প্রথম প্রেমের অনুভূতি

প্রথম প্রেমের অনুভূতি

মিতুকে আজ ছেলে পক্ষরা দেখতে এসেছে। দেখতে আসা ব্যাপারটা মিতু খুব উপভোগ করে। অন্য ৮ ১০ টা মেয়ের মত ভয়ে কুঁকড়ে যায় না। যেদিন ছেলেপক্ষরা আসে সেদিন মিতুর খুশির দিন। কারণ সে ছেলে পক্ষদের কে ভালো ভাবে ভড়কে দিতে পারে।

ছেলে পক্ষরা এসেই প্রথমে নাম জিজ্ঞেস করে। অথচ সে জানে তার নাম তারা জেনেই আসে, এই নাম নিয়ে শত গবেষণাও চলে। সে মৃদু স্বরে তার নাম বলে। নাম বলার পর ছেলের চাচী অথবা খালা সম্পর্কীয় কেউ একজন তাকে দাঁড়াতে বলে। দাঁড়ানোর পর বলে হাঁটতে। যেন সে র্যাম্পের মডেল। শাড়ি পরে তাদের সামনে বিজ্ঞাপন করছে। এখানেই শেষ নয়, কোন অতি উৎসাহী পক্ষ আবার হাত পা ও দেখে। মিতু ঠান্ডা মাথায় সবকিছুই করে। অতি সুন্দরী বলে ছেলে পক্ষের পছন্দও হয়। তারা হাসি মুখে বলে ‘মাশাল্লাহ, মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে।’ তখন মিতু তার খেলা শুরু করে।

সে সবাই ভড়কে দিয়ে বলে, ‘আপনাদের ছেলেকেও দাঁড়াতে বলেন। সেও একটু হেঁটে দেখাক। যার সাথে সংসার করব তার চলবলন আগে থেকে দেখা নেওয়া ভালো। আমার আবার কুঁজো হয়ে হাঁটা ছেলে পছন্দ না।’
এতক্ষণ শান্তশিষ্ট থাকা মেয়েটার মুখে হুট করে এতগুলো কথা শুনে ছেলে পক্ষ থতমত খেয়ে যায়। ছেলের অনেকটা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা হয়। তারা কোনরকম ভাবে বিদায় নেয়। যাওয়ার সময় শুধু বলে যায়,’ আমরা আপনাদেরকে জানাবো।’ কিন্তু আর কখনো জানায় না। তারা ধরেই নেয় মেয়েটা বেয়াদব। বেয়াদবের সাথে আর যাইহোক ছেলেকে বিয়ে দেওয়া যায়না। কিন্তু মিতুর একটাই যুক্তি, তারা মেয়ে দেখার সময় বাজারি মেয়ের মত করে দেখবে, বাজারি মেয়ের বেয়াদবি সহ্য করতে পারবেনা তা কিভাবে হবে! বাজারি মেয়ে কি তাদের কে মাথায় তুলে নাচবে!

মিতু কে আজকে যিনি দেখতে এসেছে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাই মিতু কিছুটা চিন্তিত। আর যাইহোক একজন সম্মানিত শিক্ষকের সামনে তো আর যেভাবে সেভাবে কথা বলা যায়না! তবুও মিতুর একটাই কথা, এই পক্ষও যদি তাকে বাজারি মেয়ের মত ট্রিট করে সে ছেড়ে দিবেনা। মিতু ছেলে পক্ষের সামনে বসে আছে। ছেলের মা মিতুকে জিজ্ঞেস করল-

– মা, তোমার নাম?
– মিতু।
– পড়াশুনা?
– অনার্স ফাইনাল ইয়ার।
– মাশাল্লাহ…. আচ্ছা, তুমি আনিসকে নিয়ে অন্য রুমে যাও। তোমরা নিজেরা নিজেরা কথা বল..

মিতু বুঝলো ছেলের নাম আনিস। ছেলে দেখতে শুনতে মোটামুটি। তবে লাজুক, পুরো সময়ে একবারও সে মিতুর দিকে তাকায়নি। সিলিঙের দিকে তাকিয়ে ছিল। যেন সে মেয়ে না, ঘরের সিলিঙ দেখতে এসেছে। সিলিঙ দেখা শেষ করে এক্ষুণি সে বিদায় নিবে। মিতু অন্য রুমে এনে আনিসকে বসালো। তারপর বলল-

– কি ব্যাপার? আপনারা দাঁড়াতে কিংবা হাঁটতে বললেন না যে? খোঁড়া নাকি ঠিকঠাক পরীক্ষা করবেন না?
– সরি। আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারিনি।
– আচ্ছা, বুঝতে হবেনা। আগে বলুন আমি কত নাম্বার?
– মানে?
– আমার আগে কয়টা মেয়ে দেখেছেন?
– ৩ টা।
– পছন্দ হয়নি?
– হয়েছে।
– তো বিয়ে করেননি যে?
– আমাকে তাদের পছন্দ হয়নি।
– আমিও যদি পছন্দ না করি?
– তাহলে আর কি করা, অন্য মেয়ে খুঁজতে হবে।
– হুম।

– কি?
– কিছুনা…. আচ্ছা আমাকে আপনার পছন্দ হয়েছে?
– সরাসরি বলতে হবে?
– কেন? সমস্যা?
– লজ্জা লাগে।
– এত লজ্জা নিয়ে মেয়ে দেখতে এসেছেন কেন?
– আসতে চাইনি তো। মা জোর করে এনেছেন।
– ওহ…
– আর কিছু জিজ্ঞেস করবেন?
– কেন? বিরক্ত হয়ে গেছেন?
– না, তা কেন হব!
– আচ্ছা,আপনি যান। আশা করি আমার কাজ হয়ে গেছে।

– কি কাজ?
– সে আপনি বুঝবেন না। যান, মায়ের কানে গিয়ে ফিসফিস করে বলুন, আপনার আমাকে পছন্দ হয়নি।
– কেন? মিথ্যে কেন বলব?
– মিথ্যে না! এত জেরার পরও আপনার আমাকে পছন্দ হয়েছে?
– হুম।
– কিন্তু সরি, আমার আপনাকে পছন্দ হয়নি।
– আচ্ছা। তাহলে যাই….
– যেয়ে কি করবেন? আরো মেয়ে খুঁজবেন?
– বিয়ে করতে হলে খুঁজতে তো হবে তাইনা!
– হুম তাতো অবশ্যই। best of luck.
– Thank you.

আনিসরা চলে গেলেন। মিতু এই পক্ষকে এত সহজে বিদায় করতে পারবে তা ভাবেনি। তারা চলে যাওয়ার পর সে তার রুমে এসে বসল। রুমটায় এখনো কড়া পারফিউমের ঘ্রাণ লেগে আছে। আনিস সাহেব এই পারফিউম দিয়ে এসেছিলেন। মিতুর হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেল। বেচারা! সবাই ঘুরে মেয়ে পছন্দ হয়না বলে, আর সে ঘুরে তাকে কারো পছন্দ হচ্ছেনা বলে। অথচ পছন্দ না হওয়ার মত কিছুই নেই তার মধ্যে। স্মার্ট, সুন্দর, কিছুটা লাজুক। আর লাজুক বলে তার মধ্যে যেন অন্যরকম এক মায়া।

মিতু আনিসের বায়োডাটা টা হাতে নিল। সেখানে তার নাম্বার দেওয়া আছে। মিতুর ইচ্ছে করছে এখুনি লোকটাকে ফোন দিয়ে বলতে,’শুনুন, আপনি আর কোন মেয়ে দেখবেন না। আমার আপনাকে পছন্দ হয়েছে। তখন মিথ্যে বলেছিলাম। মেয়েরা এইরকম দু’চারটা মিথ্যে বলে।’ মিতু নাম্বারটা ডায়াল করল। কিন্তু কল দিতে পারলো না। তার কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগছে। জীবনে এই প্রথম তার কারো জন্য এইরকম অনুভূতি হচ্ছে। আচ্ছা, এই অনুভূতি কে কি বলে? প্রেম? যদি তাই হয় তবে থাকুক না এই অনুভূতি আরো কিছুক্ষণ, কাটুক না আরো কিছু সময় এই অন্যরকম ভালোলাগায়। ফোন তো আর কিছুক্ষণ পরও দেওয়া যাবে…কিন্তু এই প্রথম অনুভূতি কি আর ফিরে আসবে!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত