ফেক আইডিতে সুন্দর একটা মেয়ের ছবি প্রোফাইলে দিয়ে বরকে নক দিলাম।”কেমন আছেন? আপনি আমার রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করছেন না কেন?” ঘন্টাখানেক পর রিপ্লাই পেলাম, “আসলে এই আইডিতে একটু সমস্যা আছে,এটাতে সব ফ্যামিলি মেম্বার! বাইরের মেয়ে দেখলে রাগ করে। আপনি আমার ফেক আইডিতে রিকোয়েস্ট দিতে পারেন!” আমি আঁতকে উঠলাম। দুঃখী চোখে মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললাম,
-আপনার ফেক আইডির লিংক দেন।
সে লিংক পাঠালো। আইডি নেম, এলোন বয় শিহাব! প্রোফাইলে একটা অ্যারাবিয়ান ছেলের ছবি। ঘরে আস্ত একটা বউ রেখে এলোন বয়! ভাবতেই অবাক লাগছে আমার। বদটাকে এতদিন সরল সাদাসিধা ভালোমানুষ বলে জানতাম। কখনো ধারনাও করিনি সে এতোটা এলোন! ছিঃ! আস্তাগফিরুল্লাহ! আমি তার ফেক আইডিতে রিকোয়েস্ট পাঠালাম। সে সাথে সাথে এক্সেপ্ট করলো। আমি তার টাইমলাইন ঘুরে দেখতে লাগলাম, ২৩-০৩-১৯, সে লিখেছে-“এই বৃষ্টির দিনে সিঙ্গেলদের কষ্ট একমাত্র সিঙ্গেলরাই জানে!”
নাউজুবিল্লাহ! নাউজুবিল্লাহ! ঐদিন সে আর আমি দুজন উত্তরার সবচেয়ে বড় রেস্টুরেন্টে বসে বৃষ্টি দেখতে দেখতে খিচুড়ি খাচ্ছিলাম। সে কোথা থেকে একটা গোলাপ এনে বলেছিলো, “এই গোলাপ এত সুন্দর! তবুও তোমার পাশে এত ফিকে লাগে কেন?” আর সেইদিনই সে এতবড় মিথ্যা একটা স্টাটাস দিতে পারলো! সব মেয়ে পটানোর ধান্দা। রাগে ঘৃণায় আমি আর তাকে নক দিলাম না। খানিকক্ষণ পর সে নিজেই নক দিয়ে বললো,
-আচ্ছা! আপনি এত সুন্দর কিভাবে?যেন শতকোটি বছর হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত গুহায় বসে সাধু সাধনা করে, “হে খোদা! আমাকে অপ্সরী দেখিয়ে দাও!” তারপর গিয়ে আপনার মতো সুন্দরীর দেখা মেলে!
আমি দুঃখী চোখে তার মেসেজের দিকে তাকিয়ে আছি। এই জাতীয় কথাবার্তা তার মুখ থেকে শুনে শুনে তার সাথে হাসি আনন্দে কাটিয়ে দিয়েছি ছয়টা বছর। আর আজ সে একই কথা অন্য মেয়েকে বলছে! আমি কেন বুঝিনি সে এত খারাপ! কেন আমি এত বোকা! হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন,বেশী বুদ্ধিমতি মেয়েদের সংসার হয় না, বোকাদের হয়। আমি বোকা বলেই এতদিন ধরে এর সাথে সংসার করে ফেলেছি! বুদ্ধি খাটিয়ে আইডি খুলেছিলাম বলেই আজ আমার সংসারে ভাঙ্গন ধরলো! ভাবতে ভাবতে আমি তাকে রিপ্লাই দিলাম,
-আচ্ছা! আপনার রিয়েল আইডিতে একটা মেয়ের সাথে ছবি দেখলাম। বউ আপনার?
আরে হ্যাঁ! তবে বউ না। বউ ছিল। খুব চরিত্র খারাপ! আরেকজনের সাথে পালিয়ে গেছে। আমি তাকে প্রচন্ড ভালোবাসতাম। ইনফ্যাক্ট এখনো বাসি, তাই তার ছবি এখনো চেন্জ করা হয়নি। তার ভালোবাসা মিথ্যা ছিল। আমার তো না! আমার এত দুঃখের দিনে একজন ভালো বন্ধু যদি মাথায় হাত দিয়ে বলে, “কষ্ট পেও না! যে গেছে তাকে যেতে দাও,আমি তো আছি নাকি!” তাহলেই আমি তার ছবি বদলে ফেলবো। কিন্তু আমার তো কোন বন্ধু নাই।
এবার আমি বিছানায় আছড়ে পড়ে কাঁদতে লাগলাম। এ কি হয়ে গেল আমার! এ কি হয়ে গেল! মেসেজের রিপ্লাই না পেয়ে বদটা আমাকে এবার কল দিচ্ছে। আমি ওয়াই-ফাই অফ করে দিলাম। খানিকক্ষণ পর সে আমাকে ফোন দিলো। মানে তার আসল বউকে। ,আমি রিসিভ করে চুপচাপ রইলাম। সে বললো, বাইরে যাবা নাকি! আজ আমার অফিস তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে যাবে! চলো একটা মুভি দেখে আসি! আমি বললাম, আমি কোথাও যাবো না। তোমার বান্ধবীদের নিয়ে যাও!
-আরে আজব! আমার আবার বান্ধবী কে! তুমি আমার জীবনে এসেছো পর্যন্ত তো আর অন্য কোন মেয়ের দিকে ফিরেও তাকাতে ইচ্ছা করে না! ভুলেও যদি তাকাই তাহলে অবাক হয়ে দেখি,তোমার রুপের কাছে ওরা কতটা ফিকে! গাদাগাদা মেকআপ দিয়েও তোমার সিম্পল ন্যাচারাল চেহারার নখের কাছেও আসতে পারে না ওরা। আমি ফোনটা আছাড় দিলাম। মানুষ এত খারাপ কেমনে হয়? কেমনে? হাউ? একবার ভাবলাম বাপের বাড়ি চলে যাই। তারপর মনে হলো, না! একে একটু শায়েস্তা করে যাই। রান্না বসালাম। সব তরকারীতে ইচ্ছামতো লবণ মিশিয়ে সে বাসায় আসলে তাকে খেতে দিলাম।
সে খেতে খেতে মুখ বিকৃত করলো। আমি পাশের চেয়ারে বসে কঠিন চোখে তাকিয়ে আছি। সে বললো, তরকারিতে লবণের পরিমাণ সামান্য বেশী। আমি কথা বললাম না। সে আবার বললো, ব্যাপার না। তোমার মিষ্টি হাতের ছোঁয়ায় এ লবণ আমার কাছে অথৈ সাগরের মতো লাগছে। যেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে তোমাকে নিয়ে আমি ঘুরে বেড়াচ্ছি,ঢেউ এসে বারবার ভিজিয়ে দিচ্ছে পায়ের পাতা আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লাম। ওর অনর্থক কথা শোনার সময় নাই। রাতে ফোন নিয়ে ব্যালকনিতে বসে ফেক আইডি দিয়ে তাকে আবার নক দিলাম,
-দেখা করবেন আমার সাথে?
মিনিট দশেক পর সে জবাব দিলো, নাহ! আমি আপনার সাথে দেখা করবো না। আপনার সাথে দেখা হলে আপনার রুপের আগুনে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যাবে আমার হৃদয়। জবাব দিয়ে দেবে দেশের সকল বার্ণ ইউনিট! তখন আমি আমি তাকে ব্লক দিয়ে উঠে গিয়ে সোজা তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
-আমি তোমার সাথে সংসার করতে পারবো না। তোমার চরিত্র এত খারাপ! ছিঃ!
সে দুঃখী গলায় বললো, যেতে চাও যেও। কিন্তু এখন যেও না। এই বইটা বের হয়ে যাওয়ার পর যেও। ,আমি অবাক হয়ে বললাম, কিসের বই? আচ্ছা! আমি জানতে চাই না কিসের বই! আমি শুধু জানতে চাই তুমি কয়টা মেয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করো? তুমি জানো আজ সকাল থেকে যে মেয়েটার সাথে লুচ্চামি করছো সেটা আমার….
সে আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, কোনটা? সকাল থেকে তো তিনটা মেয়ের সাথে কথা হলো। কাল কথা হলো দুইটা মেয়ের সাথে! তুমি কার কথা বলছো? আমি বাক্যহারা হয়ে তাকিয়ে আছি। সে আবার বললো, আসলে সাহিত্যচর্চার জন্য সুন্দরী মেয়ে একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইলিমেন্ট। আমি একজনের সাথে কবিতার বিষয়ে কথা বলেছিলাম। সে বললো,কবিতা লেখার আগে সুন্দরী মেয়েদের দেখতে। তাদের দেখলে মাথায় সুন্দর সুন্দর কবিতা আসে। তাইতো অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন সুন্দরী মেয়েদের প্রোফাইল ঘুরছি,কথা বলছি। অনেকগুলো কবিতা লেখা শেষ।
তুমি চলে যাবা যেও। এই বইটা বের হওয়ার পর যাও। নেক্সট আমি যে কবিতার বইটা লিখবো সেটা হবে বিরহের। সেটার জন্য তোমার চলে যাওয়াটাও জরুরী। তুমি না গেলে বিরহ আসবে কিভাবে? যে দরজা দিয়ে তুমি বেরিয়ে যাবে একই মাহেন্দ্রক্ষণে সেই দরজা দিয়ে তোমাকে পাশ কাটিয়ে মৃদুছন্দে হেলেদুলে প্রবেশ করবে বিরহ!