বউয়ের জ্বালা

বউয়ের জ্বালা

আমার গার্লফ্রেন্ড হুজুগ তুলেছে আমাকে বিয়ে করবে ৷ আমি বলে দিয়েছি বিয়ে করলে কাজের মেয়ে করে রাখবো কারণ আম্মু কাজের মেয়ে ভালবাসে ৷ সে এতেও নাকি রাজি, তবুও সে আমার বউ হবে ৷ নাহ, তাকে এমন কথা বলেও মাথা থেকে বিয়ের ভূত ছাড়াতে পারলাম না ৷

কয়েকদিন পর, খবর পেলাম আমাদের বাসার কাজের মেয়ে ছকিনা পাশের বাসার ড্রাইভার মফিজের সাথে পালিয়ে গেছে ৷ এই কারণে আম্মা হাউমাউ করে কাঁদছে ৷ তার কান্নার ধরণ পুরাই সিনেমাটিক! গ্রামে যেভাবে মেয়েরা তাদের স্বামী মারা গেলে কান্দে, আমার আম্মাও তেমনিভাবে বিলাপ করতে করতে কাঁদছে, ঠিক এভাবে, আমার কি সর্বনাশটা হইয়া গেলোরেএএএ, ও ছকিনা তুই কেন পালাইয়া গেলিরেএএএ? তোর মতো এত ভাল কাজের মেয়ে আর কি পামুরেএএএ, ও আমার ছকিনারেরেরে! মরার ছকিনা তোর বিয়ে করার শখ জাগছিল আমারে বলতে পারতিসরে, তুই কেন পালাইয়া গেলিরেএএএ? ও ও ও ও আল্লাহ! কি সর্বনাশ করলা! আমারে ছকিনারে ফিরায়া দাও! আম্মার এমন কান্না দেখে আমার সহ্য হলোনা ৷

আমিও তার সাথে কাঁদতে লাগলাম ৷ তারপর বললাম, আম্মা, চিন্তা করছো কেন? ছকিনার চেয়ে সুন্দরী, মার্জিত, মেধাবী, কর্মঠ মেয়েকে আমি কাজের মেয়ে হিসেবে তোমার নিকট হাজির করবো ৷ বাবা তুই পারবি? অবশ্যই পারবো মা, তোমার দূঃখ যে আমার সহ্য হয়না ৷ কেমন করে এমন কাজের মেয়ে পাবি খুঁজে? সেটা আমার উপরে ছেড়ে দাও! তোমাকে শুধু টাকা খরচ করতে হবে ৷ টাকার চিন্তা করিস না, শুধু ছকিনার মত ভাল একটা কাজের মেয়ে চাই ৷ অবশ্যই পাবে মা ৷ তুমি শুধু পত্রিকায় কাজের মেয়ে চাই এটা বিজ্ঞাপন করার মত টাকা দাও তাহলই হয়ে যাবে ৷ আম্মা আমাকে লাখ খানেক টাকা দিলো, দশ হাজার টাকা খরচ করে “কাজের মেয়ে চাই” বিজ্ঞাপনটা পত্রিকায় ছাঁপায়লাম ৷

ওদিকে সুমি তো বিয়ের জন্য পাগল হয়ে আছে৷ আর তানিশা, অনিশা, মনিকা এই তিনজন আমার গার্লফ্রেন্ড হবার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে, আমার গার্লফ্রন্ডের চেয়ে এই তিন জনের অত্যাচার আরো মারাক্তক ৷ যা দিনদিন বেড়েই চলছিল ৷ তাদেরকে শায়েস্তা করতে একটা প্ল্যান করি আমি ৷ যেদিন কাজের মেয়েদের ইন্টারভিউ নেবার ডেট, সেদিন আমি ঐ তিনটা জল্লাদ মেয়ের ফোনে ম্যাসেজ করি এই লিখে যে, যদি আমাকে সত্যিই ভালবাস, তবে কাল আমাদের বাড়িতে এসে মাকে বুঝিয়ে বলো যে তুমি আমাকে খুব ভালবাসো এবং আম্মা যদি তোমাকে বিশ্বাস করে তবে তুমি আমার! প্রত্যেকেই ম্যাসেজের রিপ্লাইয়ে বললো, আসছি, এবং প্রমাণ করবো যে আমি তোমাকে খুব ভালবাসি ৷

আমার একমাত্র গার্লফ্রেন্ড সুমিকেও বললাম, তুমি যদি আমাকে বিয়ে করতে চাও তবে আম্মাকে বলো আমাদের সম্পর্কের কথা; আম্মা যদি তোমাকে মেনে নেয় তবে বিয়ে হবে আমাদের” ৷ সুমি এটাতে রাজি হলো! ইন্টারভিউয়ের দিনঃ আম্মা ইতোমধ্যে ৩৫জন মেয়ের থেকে ইন্টারভিউ নিয়েছে কিন্তু একজনেরও রান্না সম্পর্কে সঠিক ধারণা জানা নাই ৷ তারা সকলে টাকার লোভে কাজের মেয়ে হবার সাহস দেখিয়েছে ৷ বিজ্ঞাপনে স্যালারি উল্লেখ্য করেছিলাম মাসে ২৫ হাজার টাকা এবং দুমাস পর পর একটা শাড়ি! এটা পড়েই এতগুলো মেয়ে এসে হাজির! ৩৫ জন মেয়েকে আউট করে দিয়ে পরের আরো ১৫ জনকে আউট করে দিল মা ৷ সর্বশেষ আমার গার্লফ্রেন্ড হবার জন্য পাগল সেই তিন তিনটা মেয়ে এসে হাজির ৷ আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তাদের কান্ড দেখছিলাম ৷

প্রথমে অনিশা গেল আম্মার কাছে এবং আম্মাকে বলল, আন্টি, হিমেল কেমন আছে? আম্মা অনিশার এমন কথা শুনে চোখটা কপালে তুলে সাপের মত মুখ বানিয়ে বলল, তুমি আমার ছেলের খোঁজ নিতে আসছো নাকি কাজের মেয়ে হিসেবে নিয়োগ পাবার জন্য ইন্টারভিউ দিতে আসছো? কি? আমি কাজের মেয়ের ইন্টারভিউ দিবো? কিসব বলছেন আন্টি? ওমা, এই মেয়েটার দেখি মাথার তার ছিঁড়ে গেছে, এই মেয়ে তুমি জানোনা যে এখানে কাজের মেয়ে নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ নেওয়া হচ্ছে? অনিশা উপরে লাগানো সাইনবোর্ড দেখে বুঝতে পারলো ব্যাপারটা ৷

এরপরও সে দেখি নির্লজ্জের মত আমার আম্মাকে বলছে, আন্টি, একটা কথা বলবো রাগ করবেন না, আমি আপনার ছেলেকে ভালবাসি ৷ তাকে আমি চাই ৷ আপনি শুধু হিমেলকে বলুন সে যেনো আমাকে মেনে নেয়! আম্মা মেয়েটার এমন ভয়ংকর সাহসের কথা শুনে রাগে ফোসফোস করতে লাগল এবং দাঁত কটমট করে বলল, বেহায়া মেয়ে, লজ্জা কি বেঁচে খায়ছো? আসছো কাজের মেয়ে হতে আর ছেলেকে দেখে মাথার তাঁর ছিড়ে গেছে? আম্মা আরো কিছু কথা শুনিয়ে দিল ৷ অনিশা মন বেজার করে চোখটা লাল করে চোখের পানি ফেলে চলে গেল ৷ তানিশা ও মনিকা এদেরও আম্মা বিদায় করে দিল, তাদেরও আচ্ছামত বকে পাঠিয়ে দিল! আমার আনন্দ দেখে কে! এদের যন্ত্রণায় পা ফালাতে পারিনি ভার্সিটিতে ৷ এবার সুমির পালা ৷ সে এসে বুঝতে পারলো আসল ব্যাপারটা! আমি বলেছিলাম যে আমাকে বিয়ে করলে কাজের মেয়ে করে রাখবো!

সে দেখি এটা মেনে নিয়ে আম্মার নিকট গিয়ে সোজা বলল, আন্টি, আমাকে পছন্দ হয় কাজের মেয়ে হিসেবে? আম্মা সুমির মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো ৷ বুঝতে পারলাম মা তার চেহারা দেখেই মুগ্ধ! কিন্তু না, ঘোর কাটিয়ে মা সুমিকে বললো, কি কি রান্না জানো, তুমি? সুমি অনেকগুলো পদের রান্নার কথা বলে, সে সবই চমৎকার করে রান্না করতে পারে! মা আরো কিছু প্রশ্ন করলে সে সব কিছুর সঠিক উত্তর দেয় ৷ বুঝতে পারলাম গার্লফ্রেন্ড হিসেবে সুমি খারাপ না, সে ভাল রাঁধনী হতে পারবে! বিয়ের পর মজা করে তার রান্না করা খাবার খেতে পারবো ৷ মা সুমিকে কাজের মেয়ে হিসেবে সিলেক্ট করলো! কয়েকদিন সুমি কাজের মেয়ে হিসেবে ভাল পারফর্মেন্স করলো!

হঠাৎ একদিন সুমি আমাকে ব্লাকমেইল করে ৷ রুম আটকিয়ে আমাকে ধর্ষণ করার নাটক করে, সে তার গায়ের কাপড় ছিঁড়ে ফেলে তারপর চেঁচামেচি করে মাকে রুমের কাছে আনে ৷ দরজা খুলে ফেলে সুমি এবং মা দেখতে পায় আমি সুমিকে জোর করে রেপ করার চেষ্টা করেছি কারণ সুমির কাপড় ছেঁড়া ৷ তার উপর সুমির কান্নার অভিনয় মাকে ইমোশোনাল করে দিল! মা আমাকে চটাস চটাস করে থাপ্পর লাগিয়ে দেয় ৷ সুমির মা বাবাকে ডাকা হয় ৷ শেষপর্যন্ত আমাদের বিয়ে হয়, বদনামের হাত থেকে বাঁচতে ৷ কিন্তু সর্বনাশ, বিয়ের পর সুমি একটা কাজও আর করেনা ৷ আমাকে তার এতগুলো কাপড় কাঁচতে হয়, ঘর ঝাঁড়ু দিতে হয়, মশারী টাঙাতে হয়, এমনকি তার পাও টিপে দিতে হয় ৷

এগুলো না করলে “খুব মারে!” আমার এমন করুণ অবস্থা দেখে বউটা খিলখিল করে হাসে আর বলে কেমন লাগে ? খুব তো বলতা আমাকে কাজের মেয়ে করে রাখবা? কাকে কাজের মেয়ে করার স্বপ্ন দেখছিলে ? হু! সাহস কত! আমি বউয়ের কথা শুধু শুনছিলাম আর কাপড় কাঁচতেছিলাম ৷ আমি কি জানি সে পুলিশের মেয়ে? উল্টা পাল্টা কিছু করলেই চৌদ্ধ শিকে ঢুকিয়ে দিবে ৷ তারচেয়ে কাপড় কাঁচায় ভাল!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত