সঙ্গী

সঙ্গী

-এই টাকা গুলা নাও
-কেন দিচ্ছ?
-তোমার চাকরির জন্য নাকি লাগতেছে তাই দিলাম
-নাহ আমি যোগার করে নিব৷ আর তুমি এত টাকা পেলে কোথায়?
-নাহ আসলে বাবাকে বলে নিয়েছিলাম৷ যে আমার সেমিস্টারে জন্য লাগবে বলে
-কেন নিয়েছ?দিয়ে দিও
-আসলে জানো খুব ভালবাসি বলে৷ তোমাকে আমি হারাতে চায় না৷ তুমি যদি চাকরি পাও আমাদের ভালবাসার কথা আমি বাবাকে বলতে পারব৷মেয়েটার নাম ইরা৷ আর আমি হাবিব৷

খুব ইতস্ততভাবে টাকা গুলো নিলাম৷ না নিয়েও কোনো উপায় নেই, চাকরিটা আমার খুব দরকার৷ নাহলে তাকে যে আমি হারিয়ে ফেলব৷ আসলে মেয়েটা আমাকে খুব ভালবাসে৷ চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করলাম হয় নাই৷ তাও একটা চাকরির হল এখন ৫০ হাজার টাকা দরকার৷ আমার ৩৫ হাজার ছিল এখন ১৫ হাজারের জন্য অনেকের কাছে বললাম পেলাম না৷ কিন্তুও এনে দিল৷ আমি ভাবি “একজন মেয়ে কতটা ভালবাসলে যে নিজে তার বয়ফ্রেন্ড এর জন্য টাকা দিয়ে চাকরি পেতে সাহায্য করে৷ আমি মাঝে মাঝে ভাবি কেন সে আমাকে এত ভালবাসে৷ কেন সে এত করে আমাকে চায়৷ আমি তাকে একদিন জিজ্ঞাসা করলাম,

-একটা কথা জিজ্ঞাসা করি?
-হুম বল৷ আবার অনুমতি চেয়ে নিচ্ছ কেন?
-আচ্চা তুমি আমাকে কেন এত ভালবাস৷ আমি মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান৷ তোমার সাথে দেখা করার জন্য একটা গোলাপ আনতে পারি না৷
-আসলে আমি তোমার চোখে সেদিন আমার প্রতি খুব সম্মান দেখেছিলাম৷

যে চোখে আমি ঘর বাধার স্বপ্নরা উঁকি দিচ্ছিল৷ আর যে ছেলে এখনো পর্যন্ত আমার হাত ধরা ছাড়া অন্ন চিন্তা মাথায় আনেনি সে কিভাবে খারাপ হয় বল৷ আমি তার কথা শুনে খুব এস্তব্ধ হয়েছিলাম৷ কিভাবে একটা মানুষ এতটা ভালবাসতে পারে৷ আমি মনে হয় ” আসলেই মেয়েদের ভালবাসার অনুভূতি গুলো খুব সুন্দর৷ যখন একটা মেয়ে একটা ছেলেকে মন থেকে ভালবাসে তার অনুভুতি গুলো খুব সুন্দর হয়ে যায়৷ আর মেয়েদের অনুভুতি গুলো খুব গুছানো থাকে৷ তাই তাদের স্বপ্নগুলো খুব গুছানো৷ আমার যখন চাকরিটা হয়৷ তখন প্রথমে তার সাথেই দেখা করে খবরটা দিহ৷ আর তখন সে কেন জানি খুব কান্না করে দিল৷ কান্না করতে করতে আমাকে সে প্রথম জরিয়ে ধরল৷ আমি বুঝলাম কোন এক মেয়েকে প্রথম জরিয়ে ধরার অনুভূতি৷ তখন ইরা বলল,

-আসলে পূর্নতা পাওয়া শুভক্ষন এসে গেল আমাদের তাই না৷
-হুম এই মাস তিনেক পর আমাদের ভালবাসা পূর্নতা পাবে৷
-জানো আমার ছোট ছোট স্বপ্ন আছে আমাদের সংসারে আমাকে কিন্তু সেগুলো পূরন করতে দিবে
-ছোট কেন বড় গুলাও পূরন করতে আমি সাহায্য করব৷

ইরা আমার হাত ধরে পাশে বসে আছে৷ এই প্রথম মেয়েটা এত গভীরে আসল৷ আমার মনটা আজ ভিষণ খুশি৷ কারন আমার ভালবাসা পূর্নতা পাওয়ার পথে৷ আজ মা-বাবাও খুব খুশি হবে৷ তাদের ছেলেটা আর বেকার ঘুরবে না৷ বেকার নামক শব্দটা আর মানুষের মুখে তাচ্ছিল্যভাবে শুনতে হবে না৷

আসলে আমাদের সমাজ এইরকম কেন৷ কেন মানুষকে এত উপহাস করে৷ আমি আজ চাকরি পাচ্ছি না৷ কিন্তু সমাজ আমাকে তোহ চাকরি পাইয়ে দিবে না৷ কিন্তু তবুও কেন সমাজ তাচ্ছিল্যভাবে বেকার করে৷ আমি সমাজের দুষ দিয় না৷ আমি দুষ নি সমাজের মানুষের নিয়ম-নীতির৷ কখনো কখনো মানুষ সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে সমাজ বাধা হয়ে দাঁড়ায়৷ সমাজ টাকাওয়ালাকে গভীরভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে৷ আর গরীব গুলো খুব সুন্দর করে তাচ্ছিল্য করে৷ সমাজ বড়লোকের ঠিকই খবর রাখে৷ আর গরীবের দারে কাছেও ঘেষে না৷ ঘৃনা করি আমি এই সমাজ ব্যবস্তাকে৷

আজ চাকরির একমাস পূর্ন হল৷ মাসের টাকাটাও পেলাম৷ কিছু টাকা আমার কাছে রেখে বাকী গুলো নাকে দিয়ে দিলাম৷ আর ছোট বোন আর ভাইটাকে ৫০০ টাকা করে দিলাম৷ আজ ইরার সাথে দেখা করব৷ তাকে আজ কোনো ভাল হোটেলে খেতে পারি নাই৷ ইরাকে কল দিয়ে নদীর পাড়ে আসতে বললাম৷ ইরার জন্য একটা শাড়ি কিনলাম৷ শাড়ি কিনে নদীর পাড়ে তার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম৷ ইরা এসে বলল,

-বেশি দেরী করে পেললাম নাকি?
-না তোহ মেয়ে
-আজ এত খুশি যে আমি তাকে শাড়ি দিলাম৷ তখন সে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে শাড়িটা গ্রহন করল৷ তারপর তাকে নিয়ে একটা নাম করা হোটেলে ডুকলাম৷ জানি ইরা এসেছে অনেকবার৷ আর হাতে গুনা কয়েকবার৷ ইরা বলল

-হঠাৎ এখানে কেন?
-অনেকদিন তোমাকে ভাল মন্দ কিছু খাওয়াতে পারি না৷ আজকে নিয়ে আসলাম৷ আর আজকে বেতন পেলাম৷
-এত টাকা খরচ করার কি আছে হ্যা৷
-কেন আমার বউ এর সাথেই তোহ খরচ করছি৷ আর হ্যা মেয়ে তোমার আব্বু-আম্মুর কাছে আমার আব্বু -আম্মু যাবে সামনে মাসে৷  ইরা এই কথা শুনার সাথে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে৷ তারপর খেয়ে দেয়ে চলে আসলাম আমরা৷

আজ সবাই খুশি৷ সবাইকে খুশিতে রাখতে পারছি৷ সবই টাকার খেলা৷ টাকা থাকলে সবাই খুশি তাকে৷ কিন্তু আমি ইরাকে পেয়েছিলাম৷ আমার অন্ধকার সময়ে৷ যখন আমার জীবনের অবস্থা খুব খারাপ ছিল৷ যেন কোন এক অন্ধকার এ একটু আলোর উপস্থিতি পেলাম৷ যেন এই আলোটা জীবনে তাকলে কষ্ট জিনিসটা আমার কাছেও আসতে পারবে না৷ খুব আপন করে নিয়ে আমাকে সাহায্য করেছিল৷ আজ আমি এখানে শুধু তার কারনে৷ মা-বাবা গিয়ে আমাদের বিয়ের কথা বার্থা হল৷ আমাদের প্রেমের ব্যাপারটা আমরা ঘরে বলে দিহ৷ দেখতে বিয়েও হয়ে গেল৷ মেয়েটার আমাকে খুব ছোট ছোট স্বপ্ন ছিল৷ এই যে মাঝে তার সাথে বসে চাঁদ দেখা৷ সপ্তাহে একবার ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার আবদার৷ এইরকম ছোট ছোট আবদার৷ আর মা-বাবা যেন একটা হারিয়ে যাওয়া মেয়ে পেল৷ ছোট বোনটা বেশ বলে বেড়ায় তার ভাবি যেন তার এক হারিয়ে যাওয়া বান্ধবী৷

আজ সেইদিন যেইদিনে ইরা আমার জীবনে এসেছিল৷ আজ ঘরটাকে ভিষন সুন্দর করে সাজালাম৷ ইরা হয়ত ভুলে গেল নয়ত জিজ্ঞাসা করত না কেন সাজাচ্ছা আমাদের রুম৷ যখন জানল সে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরেছিল৷ মেয়েটা কান্না করতে করতে বলল এত ভালবাসো আমায়৷ আমি তাকে তার ১৫ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছিলাম৷ তখন সে নিয়ে বলল, “রেখে দিলাম তোমার কোনো এক উপকারের জন্য৷” আসলে জীবনে প্রতিষ্ঠিত বা সুন্দর করে তুলার জন্য দরকার এক সঙ্গী৷ যেখানে সে নিজের কোনো স্বার্থের খুঁজ না নিয়ে শুধু আমার চিন্তা করবে৷ ভবিষ্যৎ এর চিন্তা করবে৷ তখন দেখবেন জীবনটা ভারি সুন্দর হয়ে উঠবে৷

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত