পটলবতী

পটলবতী

আব্বুর ড্রয়ারে পুরনো একটা চিঠি পেয়ে কৌতুহল বসত খুলে ফেললাম। আব্বুর আগের জীবনের প্রেমপত্র কিনা জানার জন্য। আমি আবার ডিটেক্টিভ মাইন্ড এর।

যদি প্রেমপত্র হয়, তাহলে আম্মুর রোজকার ট্রেনিং থেকে আমি বেঁচে যাব। আম্মু আমাকে রান্নার ট্রেনিং এ ঢুকিয়েছেন কয়দিন ধরে। এত গরমে আমার এসব ভালো লাগে না, কাজের মেয়ে কেও বিদায় দিয়ে দিছেন আমার ট্রেনিং এর জন্য! ভাবা যায় এত দুঃখ! তাই আম্মুকে প্রেমপত্র টা দেখিয়ে কয়দিনের জন্য ট্রেনিং টা অফ রাখব আরকি এই মতলব ।

চিঠি টা খুলতে ই পুরনো একটি সুবাস পেলাম, বুজলাম নিশ্চিত প্রেমপত্র। আম্মুকেও এই ড্রয়ারে তেমন হাত দিনে দেন না। আমার খুশি দেখে কে! চিঠি পড়ে তো আমি বিস্মিত। এত ভালোবাসাময় কথা নিয়ে চিঠি লেখা যে কেউ প্রেমে পরে যাবে এ যুগেও। পুরো চিঠি টা পরে যখন নামের দিকে খেয়াল করলাম নাম দেখে আমি পুরো শক্ড
” প্রিয় করলাবতী ”

এটা আবার কার নাম, এরকম কারো নাম হয়! আমার চেনা জানা তো কেউ নাই। অবশ্য আমি খুশি হলাম আমার কোচিং টা অফ হবে।

রান্না ঘরে, আম্মু জানো আজকে কি দেখছি,, আব্বুর কাছে একটা প্রেমপত্র দেখলাম!

— কি বলিস, এসব।। একটা চড় দিয়ে তোর শয়তানি বের করে দিব।

— ( কি রিয়েকশন বুজলাম না, আমিও হাল ছাড়লাম না) চিঠির কয়েকটা স্পেশাল লাইন বললাম আম্মুকে। এবার বুজলাম কাজ হবে।

— এই বুড়ো বয়সে ভীমরতি হয়েছে নাকি !
বলে, চাপা কান্না করতে লাগলেন। আমি সান্তনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে আরো কয়েকটা কথা বলাম।

ঘরে পিনপতন নিরবতা আম্মু গাল ফুলিয়ে বসে আছেন। আব্বু বাইরে যাবেন। এর আগে একদফা হয়ে গেছে। শার্ট পরছেন। তারমধ্যে আম্মু বলে উঠলেন,

— এই বয়সে এত সাজগুজ করে বাইরে যাওয়ার কি দরকার।

— আমি যাব, আমার ইচ্ছা তোমার এত কথা কেন।

বলেই আব্বু চলে গেলেন।

ঘরের কাজের জন্য কাজের বুয়া চলে এসেছে আমি মহা সুখে ফেইসবুকিং করছি। রাতে খেয়াল করলাম, আম্মু কি একটা কাগজ নিয়ে কাঁদছে। বুজলাম না কি। আম্মু চলে যাওয়ার পর, চাবি নিয়ে ঐ কাগজটা বের করলাম। একি ! আম্মুরও পুরনো প্রেমপত্র।

চিঠি টা পরে আমি পুরো ” থ “।
” প্রিয় ডালকুমার ” !

কয়েকদিন এভাবে চলল। আম্মু রোজ রাতে চিঠি নিয়ে কাঁদাকাদি করেন।

সন্ধ্যায়, আব্বু একটা পানজাবি নিয়ে আসলেন। পানজাবি পরে আয়নায় দাড়িয়ে দেখছিলেন। আম্মু এসব দেখে রেগে তুলকালাম।

দুজন একজন আরেকজন কে আগের কথা তুলে অভিমানের বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন। শেষ পর্যায়ে, আম্মু আমার বলা কয়েকটি লাইন আব্বু কে বলে দিলেন। এগুলো কি কাকে এসব বল এখন।

আব্বুর লাইন গুলো শোনে চোখে পানি এসে গেল।
— তুমি আমার আবেগ নিয়ে এভাবে মজা করলা? ( আব্বু)
— তোমার যে বুড়ো বয়সে ভীমরতি হয়েছে তার কি ( আম্মু)

সত্যি বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েরা পাল্টে যায়। তাই আমি…!

তার মানে তুমি সত্যি অন্যকাউকে নিয়ে আসতে চাইছো,,
আম্মু কান্না করে একাকার অবস্থা….!

আমিও রেগে আব্বুকে রেগে বললাম,,
আব্বু এসব ঠিক না! তুমি তোমার ” করলাবতী ” কি নিয়ে এসব করতে পার না। আর আম্মু তুমিও কি শুরু করেছ ” ডালকুমার ” এর চিঠি নিয়ে।

আম্মু আব্বু এসব নাম শুনে আমার দিকে শকুনি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। দু-জনের গোপন তথ্য ফাঁস করে দিলাম নাকি !

আমার দিকে এগিয়ে আসছেন ভিলেনের ভঙ্গিতে। আমার গলা শুকিয়ে কাঠ। পুরনো তত্ত্ব ফাস করে দিলাম আমি।

সামনে আসতে ই, আম্মু আব্বু একজন আরেকজন কে জড়িয়ে ধরে — করলাবতী, ডালকুমার বলে আবেগে কাঁদতে লাগলেন।

তোর জন্য এসব কিছু ( আম্মু)। এত কান্না। তোর বাবা কাঁদায় নি এত।

বুজতে বাকি রইল না,, কে কার করলাবতী আর ডালকুমার।

আব্বু বললেন, তোর মা একটু তেঁতো হলেও জীবনের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি তাই এই নাম ভালোবেসে।

আচ্ছা, বাবা, তাহলে — তোমাদের ডাল আর সবজির মাঝে আমি কি..?

তুই আমাদের মাঝে ” পটল “। বলে দুজনে হেসে উঠলেন। পটলবতী।

এত সুন্দর নাম ভাবা যায়।
ডাল আর সবজি থেকে পটল!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত