বউ রহস্য

বউ রহস্য

রাত বারোটার দিকে বাসায় ফিরে মাতাল অবস্থায় বউ এর সামনে গেলাম।ভাবলাম আজকে মনে হয় ঝগড়া শুরু করেই দিবে।কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে সে শুধু এইটুকুই বললো “একা একা না খেয়ে বাসায় নিয়ে আসলে দুইজনে মিলে খাওয়া যেত”। কথাটা শুনার সাথে সাথে গালে দুইটা থাপ্পড় মেরে দিলাম। থাপ্পড় খাওয়ার পরেও কিছু না বলে চুপ চাপ শুয়ে পড়লো। বিয়ের আগে এলাকার বড় ভাই,বন্ধু বান্ধবের কাছে বউ নিয়ে কত কি শুনেছি।

“বিয়ে তো করতাছ, জীবনটা তছনছ করে দিবে” ” আরে দুই দিন পর পর শপিং এ নিয়া যাইতে বলবে” “বাসায় দেরি করে আসলে চিল্লাচিল্লি করবে” “তোমার মা বাবার সাথেও কথা নিয়া ঝগড়া বাধাবে” “দুই দিন পর পর বাপের বাড়ি যাইতে চাইবে” “রান্না বান্না তো করবেই না,বরং তোমারই রান্না করে খাওয়াইতে হবে”  তিনটা মাস হয়ে গেলো এসব এর কোন কিছুই বউ এর মাঝে পেলাম না।কতবার বাসায় দেরিতে আসলাম,কিন্তু এই তিন মাসে একবার ও কিছু বললো না। আব্বা আম্মার সাথেও কোন কথায় ঝগড়া বাধলো না। সেই যে বিয়ের পর আসলো তারপর একদিন বাড়িতেও যাইতে চাইলো না।ভাবছিলাম ইদ আসতেছে মনে হয় যাইতে চাইবে।সেটাও চাচ্ছে না। রান্না বান্নাও একা একাই করে।আমার সাহায্য করা তো অনেক দুরের ব্যাপার,আম্মুকেও সাহায্য করতে দেয় না।নিজে নিজেই সব রান্না করে ফেলে। কিভাবে যে এটাকে বউ বউ বানাবো সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।

শেষমেষ হাসানের বুদ্ধিতে আজ মাতাল হয়ে বাসায় ফিরি।তবুও মেয়েটা একটুও ঝগড়া করলো না।থাপ্পড় মারলাম,ভাবলাম মারলে হয়ত কিছু একটা উত্তর দিবে।আর তাতেই ঝগড়া শুরু করা যাবে।সেটাও দিলো না।পরের বার মনে পড়ল সব মেয়েরাই তো শপিং পছন্দ করে,তাহলে শপিং এ গিয়ে দেখি বউ বানাতে পারি কিনা।শপিং এ গিয়ে প্রথমে নিজে খুব দামী দামী কাপড় কিনলাম।তারপর বাবা মা সহ পরিবারের সবার জন্য ও দামী দামী কাপড় কিনলাম। কিন্তু ওর জন্য যখন কিনতে গেলাম তখন ওর কোন পছন্দের ব্যাপারে কিছু শুনলাম না। কম দামী একটা শাড়ি কিনে নিয়ে চলে আসলাম।

কিনার সময় দেখলাম মনটা খারাপ করলো একটু।তবুও কিছু বললো না।মনে মনে ভাবলাম এবার তাহলে কাজ হইছে।এখানে সবার সামনে কিছু না বললেও বাসায় গিয়ে ঠিক ই বলবে।তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এলাম।বাসায় এসে অধির আগ্রহে বসে আছি কখন এসে কিছু বলবে।বাসার সব কাজ শেষ করে রুমে আসলো। কিছু বলছে না দেখে আমি নিজেই জিজ্ঞাসা করলাম ” শাড়িটা পছন্দ হয়েছে?”। ভাবলাম এটার উত্তরে মনের সব ক্ষোভ মিটাবে।কিন্তু না।” আপনি পছন্দ করে কিনে দিছেন সেটা আমার পছন্দ হবে না আবার? অনেক ভালো হয়েছে” কথাটা শুনার পর যাবতীয় আসা ছেড়ে দিলাম।এই মেয়েকে আর বউ বানানো সম্ভব না।

বউ নিয়ে চিন্তায় অফিসেও কোন কাজ কর্মে মন দিতে পারছি না।অফিসের কয়েকজন এসে জিজ্ঞাসা করলো” কি ভাই,বউ এর সাথে ঝগড়া হয়েছে নাকি! এত চুপ চাপ থাকেন কেন”। কারো কথার কোন জবাব দিলাম না।জবাব দিয়েই কি আর লাভ হবে? কেউ তো বিশ্বাস ই করবে না।বউ হয়েও কিভাবে এসব কাজ না করেও থাকতে পারে।

বাসার ফিরার পথে হঠাৎ আসলাম ভাইয়ের কথা মনে হলো।ভাই তো আমাকে বলছিল বিয়ের পর যেকোন রকমের সমস্যায় তার কাছে যেতে।বউ বিশারদ হিসেবে এলাকায় আলাদা একটা সুনাম আছে আসলাম ভাই এর। কেউ বলে আসলাম ভাই এর ৭ টা বউ আছে ৭ জেলায়।আবার কেউ বলে ১১ টা বউ আছে।আসলাম ভাই আগে ট্রাকের ড্রাইভার ছিল।এরা তো আবার যেখানে যায় সেখানেই বিয়ে করে রেখে আসে। আসলাম ভাই এর কাছেই আসলাম।তার বুদ্ধিতে কাজ হবেই।আসলাম ভাই সব শুনে বলা শুরু করলো” ধুর ব্যাটা এইটা বউ হয় নাকি?” ভালা কইরা খোজ নিয়া দেখ, ঐ মেয়ের মাঝে কোন সমস্যা আছে নাকি”। আসলাম ভাই এর চোখে মুখে চিন্তার ভাজ পড়ে গেল।

“শুনরে রোশান, এত্ত গুলা বউ আমার,কোন দিন এমন কাউকে তো পাই নাই, তুই এই মেয়েকে নিয়ে কিভাবে আছিস?” “আমি হলে চিন্তায় মারা ই যেতাম “। আর কেউ না বুঝলেও আসলাম ভাই আমার দু:খ বুঝলো।এটা ভেবেই কিছুটা শান্তি পাচ্ছি।লোকমুখে কত শুনেছি,বউ এমন করে,তেমন করে,আর আমার কপালে কি আসলো! এসব এর কিছুই করে না। আসলাম ভাই অনেক ক্ষন চোখ বন্ধ করে চিন্তা করলো।চিন্তা করার সময় মনে হচ্ছিল সে ধ্যানে বসছে।মাঝে মাঝে মাথা নাড়াচ্ছিল। দশ-বারো মিনিট পর ধ্যান ভেংগে আমাকে একটা উপায় বলে দিল।যদিও উপায় টা আমার পছন্দ হলো না।মনে হচ্ছিল যে কাজ করবে না। তবুও আসলাম ভাই বলছে চেষ্টা করে যেতেই পারে।

আসলাম ভাই এর কথা মত ফেসবুকে আমার এক পুরানো এক গার্লফ্রেন্ড এর সাথে ছবি আপলোড দিলাম।সাথে ক্যাপশন দিলাম ” অনেক দিন পর এক্স সাথে দেখা হলো, একসাথে অনেক অনেক আড্ডা দিলাম, পুরানো স্মৃতি গুলো মনে পড়ে গেলো! আহ প্রতিদিন যদি দেখা হতো” কেমন লাগছে আমাদের বন্ধুরা?”

ছবিটা আপলোড দেয়া দুই মিনিটের মাঝেই বউ দেখি হাহা রিএক্ট দিল। আসলাম ভাইরে বললাম “দেখছেন ভাই, এংরি রিএক্ট না দিয়ে হাহা দিলো এটাতেও কাজ হবে না।” মন খারাপ করেই বাসার দিকে চলে গেলাম। ওমা! এসে দেখি বউ আমার একটা বটি নিয়ে দরজায় দাড়াইয়া আছে। আমাকে দেখেই দৌড় দিয়ে আমার দিকে আসতে শুরু করলো। দৌড়াতে দৌড়াতে হাসানকে ফোন দিলাম ” বউ তো আমারে ঘরে উঠতে দিচ্ছে না,তর বাসায় একটু থাকতে দিবি” । হা-হা-হা করে হাসতে হাসতে হাসান বললো “এবার তাহলে বউ পেয়েছিস তুই”। দৌড়াতে দৌড়াতে ভাবলাম ” মেয়েরা অন্য সব মেনে নিলেও নিজের স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারে না”।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত