বিয়ে

বিয়ে

বিয়ের পাঁচ মিনিট অাগে দিনা অামাকে মেসেজ দিল, “আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে, অামাকে তুমি ক্ষমা করে দিও” তাড়াতাড়ি করে ফোন দিলাম। ফোন কেটে দিয়ে মেসেজ দিল, “বিয়ের অনুষ্ঠানে সবাই অাছে, এখন কথা বলা যাবেনা” অাবারো শেষ মেসেজ ছিল, “ক্ষমা করে দিও” অাসলে সেই মূহূর্তে কেউ তার প্রেমিকাকে ক্ষমা করতে পারবে কিনা অামার জানা নেই। তাকে ক্ষমা করব কি করবনা সেটা নিয়ে তখন ভাবিনি। শুধু এটা ভেবেছিলাম, তার বিয়ে হয়ে গেলে অামি কি করে থাকব?

একবার গাড়ির নীচে পড়ে অামার পা অালাদা হয়ে রাস্তার নীচে পড়েছিল। আমি যখন জোরে চিৎকার করলাম তখন খেয়াল হল আসলে আমি এটা স্বপ্ন দেখছিলাম। অামার পায়েরতো কিছুই হয়নি। দিনার মেসেজের কথোপকথন শেষ হওয়ার পরও ভাবছিলাম এটা স্বপ্ন। হয়তো কিছুক্ষনের মধ্যে অামার ঘুম ভেঙ্গে যাবে। আমি জোরে চিৎকার দিয়েও দেখি ঘুম ভাঙ্গেনি। দু’চোখ বেয়ে টপ টপ করে পানি পড়তেছ। সে রাতে অামি একটুও ঘুমাইনি। সহ্য করতে না পেরে কয়েকবার চেষ্টা করেছি ফোন দিতে। কিন্তু মোবাইল বন্ধ।

সকাল এগারোটা। পরিত্যাক্ত বাড়ির ছাদে শুয়ে অাছি। রাত থেকে কিছুই যায়নি পেটে। এক কাত হয়ে শুয়ে থাকার কারনে দুইটি চোখের পানি একই দিকে নামতেছে। সাড়ে এগারোটার দিকে দিনা অামাকে ফোন করে বলতেছে, “বিশ্বাস করো বিয়েটা অামার ইচ্ছাতে হয়নি।” জানতে চেয়েছি, “তুমি বাধা দিয়েছিলে? যেন বিয়েটা না হয়।” দিনা কোন কথা বলেনি। আবারো বললাম, যেহেতো তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধেই বিয়েটা হয়েছে তাহলে তুমি চলে এসো। আমি তোমাকে অাবার বিয়ে করব। দিনা উত্তরে বলেছিল, “মেয়েদের বিয়ে একবারই হয়” নিজেকে বড্ড বেহায়া অার নির্লজ্জ মনে হয়। তবুও আমি দিনার একটি ফোনের জন্য চাতক পাখির মত অপেক্ষা করি। দিনাও আমাকে প্রায়ই ফোন দেয়।

ফোন দিয়ে সে তার শশুর শাশুড়ীর প্রশংসা করে। তাকে নাকি নিজের মেয়ের মতই অাদর যত্ন করে। কখনো তার স্বামীর প্রশংসা করে। তার স্বামী তাকে অনেক ভালবাসে। ভাল একটা চাকুরী করে ইত্যাদি। অার আমি বেহায়ার মত দিনার সুখের গল্প শুনি। ফোনের শেষের কথাগুলো থাকে আবেগে ভরপুর। “শ্রাবণ তুমি অামাকে ক্ষমা করে দিও, অামি তোমাকে ঠকিয়েছি। তুমি অামাকে ভুলে যাও।” অার যখন বলি, হ্যাঁ অামি তোমাকে অাস্তে অাস্তে ভুলতে শুরু করেছি। তখন তার অভিমানী সুর, “অাসলে তুমি অামাকে কখনো ভালবাসোনি। ভালবাসলে অামাকে ভুলতে পারতেনা।”

একেকবার নিজের ভুল স্বীকার করে বলে, “জানো? আমি দুই নৌকায় পা দিয়েছি। স্বামীর ভালবাসাও ছাড়তে পারিনা, তোমাকেও ভুলতে পারিনা।” অামি তাকে কি করে বুঝাব যে অামার পক্ষেও তাকে ভুলে যাওয়া সম্ভবনা। তাইতো নির্লজ্জের মত কথা বলি। কি করব? দেড়টা বছর একই সূতায় গাঁথা ছিল মন। কন্ঠস্বরটি শুনতে যে বড্ড ইচ্ছে করে। বাবা একদিন ধমক দিয়ে বলেছিল, “দাড়ি গোঁফ দিয়ে দেবদাস হচ্ছিস কেন? মুখ সেভ করিসনা কেন? অাসলে মনেই নেই কবে সেভ করেছিলাম। অায়নায় নিজের চেহারা দেখা হয়না সেই কবে থেকে। ভাঙ্গা মন নিয়ে জীবন ধারনটা কতটা কষ্টকর সেটা শুধু যাদের মন ভেঙ্গেছে তারাই বলতে পারবে।

এভাবে অার চলতে দেয়া যায়না। দিনাকে মুক্তি দিয়ে দেব। দেখা গেল কখনো অামারই কারনে তার সুখের সংসার ভাঙ্গতে পারে। অামি দূরে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকব সেটাই ভাল। দূর থেকেই তার সুখ কামনা করব। মাঝে মধ্যে নিজেকে গাড়ীর হেডলাইট মনে হয়। দূর বহু দূর পর্যন্ত পথ খুঁজে বেড়ায়। অামিও খুঁজি তবে সামনে শুধু অন্ধকারই দেখি। কবে যে অন্ধকারে পথ চলতে গিয়ে কোন গর্তে হোচট খেয়ে পড়ে থাকি কে জানে?

পুরোনো কথাগুলো মনে পড়ছে। দিনা বলত তার জীবনে অামার আগমন অাশীর্বাদ স্বরূপ। এখন নিজেকেই অভিশপ্ত মনে হচ্ছে। বালিশের সাদা কাভারে নতুন দাগ লেগে যাচ্ছে। প্রতি রাতে বালিশ অামার চোখের জল শুষে নিলেও দাগটা ঠিকই থেকে যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত একবুক জ্বালা নিয়েও তার সুখ কামনা করি। ভাল থাকুক দিনা স্বামী সংসার নিয়ে। আমি অার কোনদিন তার পথে কাটা হতে অাসবনা। মোবাইল থেকে সিম কার্ড নিয়ে মুখে দিলাম। দাঁতে চিবিয়ে গুঁড়া করে ফেলে দিয়েছি। দিনা অার চাইলেও ফোন দিতে পারবেনা। “এই ব্যাথা অামারি থাক, চাইনা কারো শান্তনা।”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত