রিহা কোনার একটা টেবিলে বসে আছে । আজ ও একটা নীল শাড়ি পরেছে , হালকা নীল তার উপর সাদা ফুল ফুল মনে হচ্ছে নীল একটা পরী সাদা ফুলের আবরনে ঢেকে আছে । কফি হাউস টায় লোক খুব কম আর যারা আছে তারা খুব মনযোগ এর সাথে কফি খাচ্ছে । আমি কাউন্টার এর সামনে দারিয়ে আছি আর রিহার দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে আছি, মানুষ কিভাবে এত সুন্দর হয় । রিহা প্রায় এই কফি হাউস টায় আসে আর আমি এবাভেই ওর দিকে তাকিয়ে থাকি ।
আমি হচ্ছি একজন ছাত্র যে পার্টটাইম এই কফি হাউসে ওয়েটার এর জব করি, আমি ছাড়া আর কোন ওয়েটার নেই তাই রিহার ওয়ার্ডারটাও আমি নেই সবসময় আর নেয়ার সময় ওর মুচকি হাসিটা একদম কাবু করে ফেলে মনটা । আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মনি ভাই আমকে ধাক্কা দিয়ে বলল, কি শুধু কি দেখবাই নাকি যাইয়া ওয়ার্ডারটা নিবা । তার কথায় যেন আমার হুস ফিরলো । আমি চুলটা ঠিক করে ওর সামনে গেলাম, জী আপনার ওয়ার্ডারটা? ও আমার দিকে একটু রাগের চোখে তাকালো, আমি ভয় পেয়ে গেলাম, আমি কি এমন কিছু করেছি যাতে ও রাগ করে ভাবার চেষ্টা করলাম, নাহ কিছুতো মনে পরছে না । আমি একটু হালকা কাশি দিয়ে বললাম, আমি কি পরে আসবো? ও না বলে যেটা সবসময় ওয়ার্ডার করে সেটাই করলো । আমি চুপচাপ গিয়ে মনি ভাই কে বললাম, ভাই আমি কি কিছু করছি? মনি ভাই বলল, কেন? না মনে হলো আমার উপর রাগ করে আছে । মনি ভাই হেসে বলল, আরে এসব ব্যাপার না , আজ রাগ কাল আবার সব ঠিক ।
আমি বললাম, ভাই চকলেট কোল্ড কফি তো একটু বেশি করে দিয়েন, মানে স্পেশাল ভাবে বানানে যাতে রাগ কমে যায় আর সাথে ওয়াফেল দিয়েন উইথ ভ্যানিলা । মনি ভাই হেসে বলল, হ্যা হ্যা জানি তোমার রিহা স্পেশাল । আমিও হেসে আবার সামনে এসে দাড়ালাম, দেখি রিহা আমার দিকে খুব রাগী চোখে তাখিয়ে আছে আমি কোন মতে লুকিয়ে লুকিয়ে থাকলাম । তারপর ওর কফি আর ওয়াফেল নিয়ে গেলাম , ও এসব দেখে বলল, আজও কি এই ওয়াফেল কমপ্লেমেনটরি? আমি আমতা আমতা করে বললাম , জী । ও আচ্ছা, ঠিক আছে কিন্তু আর কেউ কেন এটা পাচ্ছে না । জী এটা শুধু কোল্ড কফির সাথেই পাওয়া যাই । এই কথা শুনে পাশের টেবিলের এক ছেলে বলে উঠলো, তাহলে আমাকেও দিয়েন এটা। এই কথা শুনে আমার মেজাজ আকাশে উঠে গেলো, শালার আর খাইয়া কাম নাই আমি তোমারে ফ্রিতে খাওয়ামু । আমি যথেষ্ট ভদ্র ভাবে তাকে বললাম , জী স্যার এটা শুধু মাত্র একজন লাকি কাস্টমার কে দেওয়া হয় ।
আজকেরত লাকি কাস্টমারতো উনি তাই আজ আর পসিবল হচ্ছে না । এই বলে আমি আর দেরী না করে চলে গেলাম । শালার ঠিক মতো কথা বলতেও পারলাম না , এইডা কিছু হইলো । দূর থেকে দেখলাম রিহা একটু একটু হাসছে , যাক রাগটা তো কমছে । কি সুন্দর না লাগছে ওকে , হাতে নীল চুরি , কপালে নিল টিপ । মাঝে মাঝে এক গুছো চুলে গালে এসে পরছে আর অর একটা চোখ ঢেকে যাচ্ছে ও সেই চুলগুলো কানের পিছনে নিয়ে গুজে দিচ্ছে আর সেই চুলের আড়ালে ওর অপূর্ব চোখ দেখা যাচ্ছে । মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছে তখন আমি আবার অন্য কাজে ব্যস্ত হওয়ার ভান করছি । দেখতে দেখতে খাওয়া শেষ হয়ে গেলো, আর আমার মনটাও খারাপ হয়ে গেলো, যা এখন এ চলে যাবে আর একটু থাকলে কি হয় ধুরো । আমার দিকে ঈশারা দিলো, বিল এর জন্য আমি ধীর পায়ে বিল নিয়ে গেলাম । ও বিল পে করলো আমি এসে আবার আগের যায়গায় দাড়ালাম । ও উঠে শাড়ীর ভাজটা ঠিক করলো। আমি চেয়ে থাকলাম । ও আস্তে আস্তে হেটে যাচ্ছে, আমিও তাকিয়ে আছি আর ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে । এক অদ্ভুত নিরবতা। ও বের হয়ে গেলো । কিন্তু চলে গেলো না ।
আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । কাচের দরজার ওপাশ থেকে । আমি চোখ সরিয়ে মনি ভাই এর দিকে তাকালাম, সে হেসে বলল, ১ ঘন্টা, এর বেশি আমি পারবনা । আমি হাসি মুখে বললাম, ১ ঘন্টায় যথেষ্ট । আমি এপ্রনটা খুলে দেখি রিহা নেই । আরে গেলো কই । বের হয়ে সামনে দেখি সে রিক্সায় বসে আছে । ওর ডান দিকের সিটটা খালি । আমি চুপচাপ গিয়ে পাশে বসে বললাম, মামা যাও । রিহা একদম চুপ করে বসে আছে , কোন কথা বলছে না । আমি বললাম , কি হলো কথা বলবা না? এমন চুপ করে বসে থাকবা ? আরে আজিব তো ? আচ্ছা কফি কেমন হইসিলো? আরে কিছুতো বল ?তোমাকে কিন্তু আজ অনেক সুন্দর লাগতাসে , শাড়িটা কি তোমার ? নাহ কোন কথায় বলতসে না । কি মুশকিল । আমি কতখন চুপ করে থেকে বললাম , আচ্ছা কথা বলবানাতো, ওকে থাকো তুমি আমি গেলাম, যেই রিক্সায় থামাতে বলব , ওমনি আমার হাত ধরে বলল, খবদার চুপ করে বসে থাকো, এক চুল নরবাতো এখনি ধাক্কা মেরে ফেলে দিবো । আর নড়ে কে ।
আমি একদ্ম সোজা হয়ে বসে থাকলাম । ও বলা শুরু করলো, আজ কয়দিন পর দেখা হয়সে তোমার সাথে আমার ? আমি চুপ। কি হল বল,কয়দিন? আমি বললাম , ৫ দিন । নাহহ বলল , ৫ দিনননন!! কি পাইসো কি তুমি হ্যাঁ। দেখা করনা খালি ক্লাস, আই কাজ আর গুম এমন চললে কিন্তু আমি একদম আগুন লাগাইয়া দিবো, আমকে কি পাইসো তুমি , ফাইলামি কর আমার সাথে । আজ কত করে বললাম ওফ নাও অফ নাও । নাহ ওফ দিবেনা , লোক নাই , এই সেই । এত সুন্দর করে সাজলাম আর তুমি দেখায় করনা । এই ২ টা বছর আমি কেমনে যে আছি তোমার সাথে , অন্য কেউ থাকলে ১ মাস ও থাকতো না । তোমার ভাগ্য ভালো আমাকে পাইসো । রিক্সায় চলছে আর ও আমকে বকেই যাচ্ছে আমি চুপ করে শুনছি , অনেক অভিমান জমে আছে ওর জানি আমি । আমি বা কি করবো এই জবটা না করলে বাসা ভাড়া কিভাবে দিবো আর হাত খরচটাও তো লাগে, বাসা থেকে পড়াশুনার টাকা নিচ্ছে আর কত নিবো ।
হা সব এ জানে কিন্তু ওর ওতো কিছু ইচ্ছা আছে যা আমি পুরণ করতে পারি না । ও বকতে বকতে একটা সময় চুপ হলো , আমি আলতো করে ওর হাত ধরলাম , তোমাকে আমি খুউউব ভালবাসি , আমার মায়াবতী । ও অন্যদিকে তাকিয়ে চোখ মুছলো তারপর আমার কাধে মাথা রেখে বলল , হুম না বাসলে তোমার হাড্ডি গুড়া করে দিবো । রিক্সা ছুটে চলে গন্ত্যবহীন রাস্তায় আর আমাদের এই ভালবাসা চলতে থাকে।