দোস্ত অর্পাকে তো আমার খুব ভালো লাগে।ওর দিকে শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।অর্পাকে না দেখলে ভালো লাগে না রে।আরে বলিস কি প্রেমে পড়েছিস নাকি।হুমমমম! দোস্ত অর্পার প্রেমে পড়েছি সেই ৭ম শ্রেণি থেকে।কিন্তু কখনো বলা হয়নি ভালোবাসি।সম্পর্কাটা শুধু বন্ধুত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ।আচ্ছা চিন্তা করিস না আমি বলে দিবো কেমন।অর্পার সাথে আমার ভালো একটা সম্পর্ক আছে।
না নিলয় না,অর্পাকে কিছু বলিস না।ও যে রাগী,পরে আমার সাথে আর কথা বলবে না তুই দয়াকরে অর্পাকে কিছু বলিস না।তুই এখানে দাড়া আমি আসছি, কথা বলুক বা না বলুক সেটা পরে দেখা যাবে আগে তোর মনের কথা অর্পাকে জানাতে হবে।এই বলে নিলয় চলে যায় অর্পার কাছে।অর্পা কেমন করে জানি তাকাচ্ছে আমার দিকে মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে আমাকে খেয়ে ফেলবে সেরকম অবস্থা।আমি অর্পার রাগান্বিত চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না চোখ নামিয়ে নিলাম।অর্পা আমার কাছে এসে বলে আজ থেকে তুই আর আমার সাথে কোন কথা বলবি।তোর মত মানুষের সাথে আমি কথা বলতে চাই না।এই বলে অর্পা চলে যায়।
নিলয় আমার দিকে তাকিয়ে আছে চোখ দেখে মনে হলো আমাকে সরি বলতেছে।এটার জন্য নিলয় নিজেকে দায়ী মনে করতেছে।নিলয় এদিকে আয়,তুই তো আমার ভালোর জন্যই বলেছিস।তোকে বলে ছিলাম বলিস না অর্পা রেগে যাবে।যাই হোক কোন ব্যাপার না একদিন তো বলতেই হতো।দোস্ত সরি ক্ষমা করে দে,বুঝতে পারিনি যে অর্পা এমন করবে।আচ্ছা যাক কোন ব্যাপার না।চল দেখি অর্পা কই গেলো।মেয়েটা রাগে কি থেকে কি করে ফেলে ঠিক নেই।চল গিয়ে দেখি কোথায় ও। ও হ্যা পরিচয়টা দিয়ে দেই।আমি আবির, আমরা দুজন খুব কাছের বন্ধু।আমরা সেই ছোট বেলা থেকে এক সাথে বড় হয়েছি।দুজন দুজনের খুব ভালো বন্ধু।বলতে গেলে আমরা দুজন একে অপরের পরিপূরক। অর্পা হচ্ছে আমার ভালোবাসার নাম।অর্পাও আমাদের সাথে একই শ্রেণিতে পড়ে।৬ষ্ট শ্রেণির শেষের দিকে অর্পার সাথে বন্ধুত্ব হয় এবং বন্ধুত্ব থেকে ভালো লাগা, ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।
কমন রুম থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে।মনে হলো অর্পার। আওয়াজ কিছু ক্ষণ শুনে নিশ্চিত হলাম হ্যা অর্পাই।কমন রুমের দরজা ভিতর থেক বন্ধ করে রেখেছে।অর্পা এই অর্পা দরজা খোল,কাঁদছিস কেন?অর্পার কোন প্রত্যুত্তর নেই।অনেক বার অর্পা অর্পা বলে ডাকলাম কিন্তু দরজা খুললো না।ভিতর থেকে সাদিয়া বলে উঠলো তোরা কি যাবি এখান থেকে নাকি ম্যাডামকে ডাক দিবো হ্যাঁ।কি শুরু করেছিস তোরা,যা এখান থেকে।আমরা দুজন চলে আসি,অর্পার জন্য খুব খারাপ লাগতেছে।ঘন্টা পড়তেই ম্যাডামের সাথে অর্পা ও সাদিয়া দুজনকে দেখে মনে একটু সংকোচ হলো,ম্যাডামকে বলে দেয় নি তো।তাহলে তো আমার অবস্থা শেষ।ভয় ভয় কাজ করছে মনের ভিতর,কিন্তু না অর্পা ম্যাডামকে কিছুই বলেনি।অর্পার চোখ-মুখ ফুলে গেছে কাঁদতে কাঁদতে।খুব মায়া হলো অর্পার জন্য।তবে করার ছিলো না কিছুই।ছুটির ঘন্টা পড়তেই অর্পাকে অতিক্রম করার সময় ছোট করে সরি বলে আসি,পিছনে ফিরে তাকাইনি আর।নিলয় থেকে গেল অর্পার কাছে,অর্পাকে বোঝানোর জন্য হয়তো।
পরের দিন অর্পার সাথে কথা বলতে গেলাম কিন্তু কথা না বলে চলে গেলো।এভাবে অনেক দিন আমাদের কথা হয় নি।প্রায় ২২ মাস কিন্তু এতে অর্পার প্রতি ভালোবাসা আমার এক বিন্দুও কমে নি।ভালোবাসা আরো বেড়েছে অর্পার প্রতি।আমাদের কথা না হলে চোখাচুখি হতো সব সময়।বেশ ভালোই লাগতো আমার।কিন্তু সে মানুষের সামনে এমন করতো যেন আমাকে সহ্য করতে পারে না।আবার ঠিকি সে সবার আড়ালে দেখে নেয় আমাকে এটার মধ্যে হয়তো অর্পার ভালো লাগা কাজ করে।দীর্ঘ ২২ মাস অর্পার সাথে কোন প্রকার কথা হয় নি আমার, কথা বলতে গিয়েছি অনেক বার কিন্তু অর্পা বলে নি।একটু খারাপ লাগতো তবে কিইই বা করার ছিলো আমার।
ভোর হতে না হতে ছুটে যেতাম সেই পূরান ব্রেক,বেল ছাড়া একটা সাইকেল নিয়ে।সকালে আবহাওয়া খুব উপভোগ করতাম আমি,আর ছুটে চলতাম প্রিয় মানুষ কে দেখার জন্য। সকাল ৬ টায় আমরা একই ব্যাচে গনিত প্রাইভেট পড়তাম।আমার বাড়ি থেকে যেতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগতো।কনকনে শীতের মধ্যেও ছুটে যেতাম অর্পার মুখখানা দেখার জন্য।বিকালে যেতাম পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন প্রাইভেটে।আমি আর নিলয় অর্পার থেকে কিছু দূরত্ব রেখেই ওর পিছ পিছ যেতাম।কিন্তু অর্পা কথা বলতো না।আমিও কথা বলার জন্য আর কোন চেষ্টা চালায় নি। শীতের সময় প্রাইভেট থেকে ফিরতে একটু সন্ধ্যা হয়ে যেত,অন্ধকার অন্ধকার হয়ে যেত।অর্পা বার বার পিছনে তাকাতো, আমি আছি কি না সেটা দেখার জন্য।আমাকে দেখে সে একটু সাহস পেত।আমিও তাকে দূর থেকে সাহস যোগাতাম কিন্তু কথা বলার জন্য যেতাম না।একদিন প্রাইভেট ছুটি হয়েছে,কয়েক মিনিটের মধ্যে আকাশ ঘন-কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছে।প্রচন্ড বাতাস বইছে, অর্পা অনেকটা পথ আগে চলে গিয়েছে।আমি সাইকেল দূরত্ব চালাতে থাকি।
অর্পা পিছন ফিরতেই আমাকে দেখে, আর একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নেয়।আমি সাইকেল থেকে নেমে ওর সাথেই হাটতে থাকি।শুধু দূরত্ব রাস্তার এপার-ওপার।প্রচন্ড বাতাস হচ্ছে,চারিদিকে অন্ধকার।কিছু সময়ের মধ্যে প্রবলবেগে বৃষ্টি শুরু হয়।অর্পা তার ব্যাগ থেকি ছাতা বের করে।আমি ভিজে গিয়েছি অনেকটা।অর্পা আমার পাশে চলে আসে,ছাতার নিচে ঢেকে নেয় আমায়।আমি আমার ভেজা শরীর নিয়ে ছাতার নিচে যাই।অর্পা তার ওড়না দিয়ে মাথা মুছিয়ে দেয়।আর এই প্রথম কথা বলে আমার সাথে সেই প্রপোজ করার পর।আর অর্পা আমার মাথা মুছিয়ে দিচ্ছে আর বলছে ঠান্ডা লেগে গেলে আমার পিছু নিবি কি করবি হ্যাঁ।আমি শুধু তাকিয়ে আছি কিছুই বলতে পারছি না।হাত পা অবশ হয়ে আসছে।এক ছাতার নিচে হাটতেছি আমরা।বৃষ্টির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম মনে মনে অর্পার সাথে এক ছাতার নিচে পথ চলার সুযোগটা করে দেওয়ার জন্য।বেশ ভালো লাগছে আমার,মনের ভিতর খুশির বাঁধ মানছে না।
বিদ্যুৎ চমকাতেই অর্পা জড়িয়ে ধরে আমায়।ছাতাটা বাতাসে উড়ে যায়,ভিজে যাই দুজনে।অর্পা জড়িয়েই আছে আমাকে,আমি কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।যেই মানুষটাকে নিজের করে পাবার জন্য এত কিছু করলাম,তাকে এভাবে দেখতে হবে ভাবিনি।জড়িয়ে ধরি অর্পাকে,অর্পা আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় আর বলে তোকে জড়িয়ে ধরেছি তাই বলে তুইও জড়িয়ে ধরবি বান্দর,ইতর ইত্যাদি বলতেছে।দুজনেই ভিজে গিয়েছি তাই ছাতার দিকে কোন খেয়াল নেই আমাদের।অজানা এক অনুভূতি ভর করেছে আমায়।নিজেকে খুব ভাগ্যবান বলে মনে হচ্ছে,আবার বিদ্যুৎ চমকালো, অর্পা আবার জড়িয়ে ধরলো আমায়।এবার আর জড়িয়ে ধরি নি অর্পা কে।থাকুক না এভাবে আমার অর্পাটা।
জড়িয়ে ধরলে যদি আবার ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়।আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টিকে ধন্যবাদ জানাই।এত সুন্দর একটা মুহূর্ত উপহার দেওয়ার জন্য।বৃষ্টি যেন থামবে না আজ,আমাদের জন্য হয়তো।অর্পা আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।অনুভব করলাম বুকে একটা চুমু দিলো অর্পা।অর্পার এমন ব্যবহার আমাকে নতুন করে আবার তার প্রেমে পড়তে বাধ্য করলো।বৃষ্টি থেমে গেল অর্পাকে বললাম এবার যাবি অর্পা,অনেক সময় হলো তোর বাসায় থেকে চিন্তা করবে।অর্পা আমাকে ছেড়ে দিয়ে হাটতে থাকে।আমি ছাতাটা নিয়ে অর্পার সাথে যাই।অর্পা আমার সাথে কোন কথা বলছে না,আমি ও বলছি না।অর্পার বাড়ির সামনে আসতেই অর্পা আমার হাত থেকে ছাতাটা নিতে যাবে এমন সময় আবার বিদ্যুৎ চমকালো চিতকার দিয়ে জড়িয়ে ধরে আমায়।নিজেকে লুকিয়ে নিতে চাচ্ছে আমার বুকের মাঝে।
অর্পা এই অর্পা তোর বাড়ির কেউ দেখলে সমস্যা হয়ে যাবে, এবার যা ভিতরে যা।অর্পা এবার একটু লজ্জা পেলো আমার কথায়।এক দৌড় দিয়ে বাড়ির ভিতর চলে যায়।আর বলে তুই কোথাও যাবি না আমি আসছি।কি আর করার দাড়িয়ে রইলাম বৃষ্টর মধ্যে অর্পার বাড়ির সামনে।কিছু সময় পেরুতেই অর্পা বাড়ির ভিতরে যেতে বলে সাথে অর্পার আম্মুও এসেছে।তাই না করতে পারিনি,আর বৃষ্টি সম্ভবত আজ থামবেও না।আমি অর্পার বাড়িতে প্রবেশ করি।অর্পা তার একটা ওড়না আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,এই নে আমার ওড়না,মাথাটা মুছে নে।তোর তো ইচ্ছা ছিলো আমার ওড়না দিয়ে তোর ভেজা মাথাটা মুছবার।যত খুশি মুছ এবার।এইনে লুঙ্গি চেন্জ করে নে,আমিও চেন্জ করে আসি।
অর্পা তোর ওড়না দিয়ে ভেজা মাথাটা মুছবো,এটা নিশ্চই নিলয় তোকে বলেছে,ওর মুখে না কিছুই আটকায় না।আরো অনেক কিছুই বলেছে নিলয় আমাকে ।যার মধ্যে দুইটা পূরণ করেছি মিঃ ভীতু।এই আমি ভীতু না।ভীতু না তো কী আমাকে কখনো নিজে প্রপোজ করেছিস আবার বলিস ভীতু না।না মানে ঐ তুই রেগে যাবি তাই বলিনি।আর হ্যাঁ আমি বৃষ্টির মধ্যে কিন্তু তোকে জড়িয়ে ধরেছি,তোর ইচ্ছাটা পূরন করে দিলাম। বাকি ইচ্ছাও পূরন করবো বুঝছিস।যাই চেন্জ করে আসি না হলে তোর ইচ্ছা পূরন করা হবে না।এই বলে অর্পা চলে যায়।আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি।অর্পার কথা গুলো মাথায় ঘূরছে।মনে মনে ভাবছি আমার এতদিনে স্বপ্ন পূরন হবে।এ আনন্দ আমার জীবনে আসবে সেটা কল্পনার বাহিরে ছিলো।
আবির এই আবির তুই তোর বাড়িতে ফোন করে জনিয়ে দে আজকে তোর বন্ধুর বাড়িতে আছিস,যাতে উনারা চিন্তা না করে।কি করে জানাবো বল,ফোন নেই তো আমার কাছে।এই নে আম্মুর ফোন, এটা দিয়ে ফোন দে।আমি ফোন করে জানিয়ে দেই বাড়িতে।অর্পার ছোট ভাইর পাশে আমার জায়গা হলো শোবার জন্য।আপনি কি আবির ভাইয়া? হ্যা কেন বলোতো? নাহ তোমার কথা আপু অনেক বলেছে।জানো ভাইয়া আপু তোমাকে ভালোবাসে,তোমাকে নিয়ে রোজ ডায়েরী লেখে।
তোমার ছবি একে ওর পড়ার টেবিলে রেখে দিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি বলতে থাকে।অর্পা সব কথা গুলো শুনে নেয় এবং অভ্র বলে ডাক দেয়। অর্পার ছোট ভাইয়ের নাম অভ্র।অভ্র থেমে যায় আর কিছু বলেনি চুপচাপ হয়ে সুয়ে থাকে।আমার শরীরটা একটু কেমন জানি লাগছে জ্বর জ্বর অনুভব হচ্ছে।শীতও করছে খুব, অর্পা আমার পাশে বসে।সে আমার মাথায় হাত দিয়ে বলে এই তোর তো জ্বর এসেছে।একদম গা পুড়ে যাচ্ছে।আসলে বৃষ্টিতে ভিজলে একটু এমন হয়,পরে ঠিক হয়ে যাবে তুই যা ঘুমাতে যা।তুই চুপ কর কথা বলবি না বলেই দুম করে চলে যায়।জ্বরে আমার অবস্থা খুব খারাপ।চোখটা বন্ধ হয়ে আসছে। কপালে ঠান্ডা অনুভব হতে চোখ খুলে দেখি অর্পা পাশে বসে পানি পট্টি দিচ্ছে।
অসুস্থতার মধ্যেও অর্পার ব্যবহারটা বেশ ভালোই লাগতেছে।এটাই তো চেয়েছিলাম আমি।নিভু নিভু চোখে অর্পাকে একটু দেখার চেষ্টা করতেছি,অর্পার চোখে পানি দেখতে পাই।এই তোর চোখে পানি কেন অর্পা।ও কিছু না তোর এখন কেমন লাগছে রে? হ্যাঁ আগের থেকে একটু ভালো।প্রিয় মানুষটা যে সেবা করতেছে ভালোতো লাগবেই।আচ্ছা আবির তুই কি আমায় অনেক ভালোবাসিস? হুমমমমমম অনেক।নিজে তো কখনও এসে তোর ভালোবাসার কথা বললি না।এখনও কি বলবি না আবির।ভালোবাসি তোকে অর্পা খুব ভালোবাসি।অর্পা আমার বুকে মাথা রেখে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।আচ্ছা অর্পা আমি একটু জড়িয়ে ধরবো,খুব ইচ্ছা করছে ধাক্কা দিবি না তো আবার। হুমমম ধর আবির ধাক্কা দিবো না।তোকেও যে আমি ভালোবাসি।নিজে যদি এসে বলতি তাহলে কী তোকে এত দিন ঘূরতে হতো ভীতু একটা।
আমিও অর্পাকে জড়িয়ে ধরে শরীরের তাপমাত্রা কমানোর চেষ্টা করছি।অর্পা সারা রাত পাশে থেকেই পানি পট্টি দিয়েছে।সকালে ডাক্তার ডেকে আনে এবং ঔষুধ দিয়ে যায়।অর্পার সেবায় কিছুটা সুস্থতা বোধ করি।আমি বিকালের দিকে অর্পার বাড়ির থেকে চলে আসি।আসার সময় অর্পা আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে সাবধানে যেও।বাড়ি গিয়ে আমাকে জানাবে কেমন।অর্পাকে জড়িয়ে ধরে বলি তুই এভবে আমাকে গ্রহন করবি ভাবতে পারি নি।আবির তুই না এখন থেকে আমায় তুমি করে বলবে মনে থাকবে তোমার।হ্যা থাকবে, তুমি এভাবে ভালো বেসে যেও আমায় অর্পা।এভাবে কাটতে থাকে আমাদের দিন গুলো।শেষ হয় আমাদের শিক্ষালয় জীবন।জড়িয়ে পড়ি কর্ম জীবনে,নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এবং অর্পাকে নিজের করে পাবার আগ্রহটা ঘিরে ধরে আমায়।
৫ বছর পর ১ মাসের ছুটি নিয়ে গ্রামে যাচ্ছি,অর্পা ২০-৩০ মিনিট পর পর ফোন দিয়ে খোজ নিচ্ছে।৬ঘন্টা অতিবাহিত হবার পর পৌছাই আমি।আর দুদিন বাদে আমার আর অর্পার বিয়ে।বিয়েটা অবশ্য বন্ধু নিলয়ের জন্যই হচ্ছে কেননা নিলয়ই আমাদের দুই পরিবারে সাথে কথা বলে এবং পরবর্তীতে তরা সম্মতি দেয়।নিলয় আর অর্পা দেখি বাস স্টপে দাড়িয়ে আছে।অর্পা নিলয়কে উপেক্ষা করে কিছু না বলেই জড়িয়ে ধরে। অর্পা কিছু বলছে না শুধু জড়িয়েই আছে।আমার দু হাতে দুটো ব্যাগ থাকায় খুব একটা সুবিধা হলো না।নিলয় এসে ব্যাগ দুটো নিলো আমার হাত থেকে।অর্পাকে অর্পার বাড়ি নামিয়ে দিয়ে আসি।রাতে অর্পা ফোন দেয় আমাকে,অনেক কিছু বলে আমায় সেই পূরনো দিন কথা।পূরনো কথা বলতেই ফিক করে হেসে দেয় অর্পা।ফোনের মধ্যে খুব মিষ্টি একটা হাসিতে মনটা ভরে গেল।ভাবতে লাগলাম কত প্রতিক্ষার পর আমারা পূর্ণতা পাবো।সেই ৭ম শ্রেনির কথা মনে করেই একটু হাসি এলো মুখে।
অর্পার ফিরিয়ে দেওয়া, তাকে পাবার জন্য যথেষ্ট কাজে দিয়েছে।হারিয়ে যাই সেই শিক্ষালয় জীবনে।অর্পার ধমকেই বাস্তবে ফিরি।কখন থেকে কথা বলে যাচ্ছি তোমার কোন উত্তর নেই।সমস্যা কি তোমার হ্যা,অন্যমনস্ক কেন?? কী করছিলে তুমি আমার একটা কথাও শুনোনি তুমি।আচ্ছা দুঃখিত বলো কি বলছিলে।অর্পা রাগে ফোনটা কেটে দেয়।ফোন বন্ধ করে রাখে।আসলে ও এমনই করে আর আমার রাগ ভাঙাতে ছুটে যেত হতো ওর বাড়িতে।ওর সামনে গিয়ে নানা রকম অভিনয় করে শেষে ফিরতে হতো।এখন রাত প্রায় ১১ টা,নিলয়কে নিয়ে অর্পার বাড়িতে যাই।অর্পা বাহিরে পাইচারি করছে, এটা অর্পার পূরনো অভ্যাস। আমি চুপ করে গিয়ে অর্পাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরি, অর্পা চিতকার দিতে গেলে মুখটা চেপে ধরি।
একটু অবাগ হয়ে ছিলো আমাকে দেখে হয়তো ভেবে ছিল আমি আসবো না। অর্পা আমাকে দেখতে পেয়ে নিজের রাগটা বেশি সময় রাখতে পারে নি। তুমি ঠিক আগের মতই আছো আবির।আমি রাগ করলে এভাবে ছুটে আসতে যেকোন সময় আমার রাখ ভাঙানোর জন্য।আজও এলে তুমি,ভেবে ছিলাম তুমি আসবে না কিন্তু সেই অভ্যাস থেকে গেছে বাহিরে পাইচারি করার আর তুমি কখন আসবে সেই অপেক্ষায়।অর্পার আম্মু জানে বিষয়টা রাগ হলে আমি এভাবে ছুটে আসি তাই খুব একটা সমস্যা হতো না।আবির তুমি আমাকে কোলে করে নিয়ে আমার রুমে দিয়ে আসো না হলে আমি যাবো না,কি আর করা যেই বলা সেই কাজ।কোলে নিয়ে অর্পার রুমে গেলাম।অর্পা তার হাত দুটো দিয়ে আমার গলাটা আটকে রেখেছে,চোখ দুটো বেশ মায়াবী লাগছে।অর্পার মাথাটা আমার বুকের মাঝে লুকিয়ে নেয়। আর্পা আমার কানে কানে বলে আর মাত্র দুটো দিন তার পরই তুমি আমার হবে চিরদিনের জন্য।
২ দিন পর.. এই আবির অর্পা তো তোর জন্য অপেক্ষা করছে।যা তুই অর্পার কাছে যা।আজ যে তোদের বাসর রাত,স্মরণীয় করে রাখ আজকের রাত টা।ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখি রাত প্রায় ১২ টা। আড্ডায় কেটে গেছে সময়। নিলয়কে শুভ রাত্রি বলে বাসর ঘরে প্রবেশ করি।অর্পা মুখটা গম্ভীর হয়ে আছে।মনে হয় রাগ করেছে কেনই বা করবে না, এত রাত হয়ে গেল অর্পা একা একা আছে।আমি পাশে গিয়ে হাত ধরতে যাবে এমন সময় বলে খবরদার ধরবা না আমায়,যাও তুমি আড্ডা দাও গিয়ে।আমার কাছে আসতে হবে না,আমি যে এখানে কারো জন্য লাল শাড়ী পরে অপেক্ষা করতেছি সেটার দিকে কারো কোন খেয়ালই নেই হুহহহহহ, এইরে বউটা যে রেগে গেল।বিভিন্ন ভাবে অর্পার রাগ টা ভাঙালাম।অর্পার মুখটা হত দিয়ে উচু করলাম, কি অপরূপ সুন্দর দেখাচ্ছে অর্পাকে।লাল শাড়ীতে অর্পাকে বেশ মানিয়েছে।
হটাৎ বৃষ্টি শুরু হলো,আবির এই আবির চলোনা আমরা ছাদে যাই।দুজনে এক সাথে বৃষ্টিতে ভিজি চলোনা আবিররর।কি আর করার বাসর রাতে বউ এর আবদার। আচ্ছা চলো,এই বলে অর্পাকে কোলে তুলে নিলাম।হাটতে থাকি ছাদের দিকে,অর্পা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে হয়তো আমার প্রশংসা করছে।বৃষ্টির ফোটা গায়ে লাগতেই অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করলো।আসলে আমার বৃষ্টি যতটা পছন্দ তার থেকে অর্পার বেশি পছন্দ।অর্পা নিজেকে বৃষ্টির মাঝে সোপে দিচ্ছে।আজ যেন কোন বাধা নেই, বৃষ্টির সাথে প্রেমে মগ্ন হয়ে যায় অর্পা আমি অর্পার দিকে তাকিয়ে থাকি পলকহীন ভাবে।বৃষ্টির সাথে এ যেন নতুন সম্পর্ক এ সম্পর্কে নেই কোন অধিকার আছে শুধু প্রশান্তির ছাপ। মেঘের গর্জনে বিদুৎ চমকানোর সাথে সাথে অর্পা আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।খুব ভয় পায় এই বিদুৎ চমকানো।অর্পাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে নেই।
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এই বৃষ্টির, যে বৃষ্টির জন্যই অর্পাকে নিজের করে পেয়েছিলাম।আজও এই বৃষ্টির কারনেই সুখের নীড় খুজে পেয়েছি আমি।অর্পার ভয়ার্ত চোখ,আর আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, আমার ভিতর নতুন অনুভূতির জন্ম দেয়।আমি যেন খুজে পেয়েছি আমার সুখের ঠিকানা।অর্পাকে একটু শক্ত করে জড়িয়ে নেই আমার সাথে,বৃষ্টিই আমাদের কাছে আসতে সহায়তা করছে।অর্পার ঠোটের স্পর্শে আমাদের প্রেমটা হয়ে ওঠে বৃষ্টিময় প্রেম।অর্পা আমার বুকের মাঝে খুজে পেয়েছে তার সুখের ঠিকানা। বৃষ্টির মাঝে দুজনে মন উজাড় করে ভিজে নিয়েছি।পেয়েছি শিক্ষালয় জীবনের ভালোবাসর পূর্ণতা।এই পূর্ণতায় চোখের দু ফোটা পানি মিলিয়ে গেল বৃষ্টির ফোটার সাথে।