“চোখে দেখেন না নাকি? বয়সতো কম না। অল্প বয়সী মেয়ে দেখলে লোভ সামলাতে পারেন না তাই না?”
আয়মান সাহেব বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে পাশে বসা মেয়েটার দিকে তাকিয়ে নিজের মনে ভাবতে চাইলেন,”আসলে ওনার দোষ টা কী?”
বাস ভর্তি এতোগুলো মানুষের মধ্যে সবাই আয়মান সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছে।লজ্জায় তার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। গাড়িটা নষ্ট হওয়ায় আজ বাসের উপরের হ্যান্ডেল ধরে দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে। পাশেই একটা স্কুল পড়ুয়া মেয়ে। নিজের হাঁটুর বয়সী মেয়ের কাছ থেকে এমন কথা শুনে তার লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।
“এক্সকিউজ মি আপু! আপনার গায়ে উনি হাত দেন নি,একটু আগে যে ছেলেটা নেমে গেলো সে দিয়েছে। দেখুন তো ব্যাগের মোবাইলটা আছে কি না!” এতো ভীরের মধ্যে পিছনে দাঁড়ানো একটা মেয়ে চিৎকার দিয়ে কথাগুলো বলে উঠলো। আয়মান সাহেব অবাক হয়ে তাকালেন আবারো। তিনি এতোক্ষুণে বুঝতে পারলেন মেয়েটা কেন তার সাথে তখন এমন করলো।
তিনি মুচকি হাসলেন। মনে মনে বললেন,
“হায়রে দুনিয়া! মানুষ কতরকমই না জানি হয়।”
পাশে বসা মেয়েটা ব্যাগে হাত দিয়ে লজ্জিত চোখে আয়মান সাহেবের দিকে তাকালেন।
তিনি আর কিছু বললেন না।কেবল মুচকি হাসি দিয়ে বাস ছেড়ে নেমে দাঁড়ালেন।
“এক্সকিউজ মি! একটু দাঁড়াবেন প্লিজ। এই যে আপনাকেই বলছি।”
আয়মান সাহেব পিছন ফিরে তাকালেন। বাস কিছুদূর গিয়ে থেমেছে। একটা হলুদ শাড়ি পড়া মেয়ে শাড়ির আঁচল গুছিয়ে তাকে ডাকছে। মেয়েটার বয়স তেমন না। ২২ কিংবা ২৩ এর কাছাকাছি। তিনি ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলেন।
মেয়েটার শাড়ি পড়ে যে চলতে অসুবিধা হচ্ছে তা মেয়েটার হাঁটা দেখেই মনে হচ্ছে।একরকম হাঁপাতে হাঁপাতেই এসে বললো,
“আচ্ছা মানুষতো আপনি! এতোগুলো মানুষের মধ্যে আমি আপনাকে বাঁচালাম আর আপনি একটা ধন্যবাদও দিলেন না?”
আয়মান সাহেব অবাক হয়ে গেলেন। তিনি ঠিক কী বলবেন বুঝে উঠতে পারলেন না।অল্পবয়সী অচেনা একটা মেয়ে অনর্গল কথা বলে চলেছে।অথচ,তিনি কী বলবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না।
“আসলে এতো ভীরে আমি আপনাকে খেয়াল করিনি।মাফ করবেন,আপনাকে ধন্যবাদ।”
” যাক সে নাহয় মাফ করলাম।কিন্তু আপনি ওই মেয়েটাকে কিছু বললেন না কেন?”
আয়মান সাহেব মুচকি হাসলেন।
“মেয়েটা বুঝে উঠতে পারেনি। আসলে অল্পবয়সী ছোকরাগুলোর যন্ত্রণায় ওরা এখন অতিষ্ট। ছোকরাগুলোর জন্য আমরা বুড়োরা এখন রাস্তাঘাটে গালাগাল খাচ্ছি। হা হা হা…”
মেয়েটি খিলখিল শব্দে হাসলো।
“আপনি অতোটাও বুড়ো হননি। যাই হোক, আসুন একটু বসি সামনের রেস্তোরাঁটায়।”
আয়মান সাহেব দ্বিধার মধ্যে পড়ে গেলেন।অচেনা একটা মেয়ের সাথে এমন যাওয়া ঠিক হবে কী না বুঝতে পারছে না।”
“একি ভয় পাচ্ছেন নাকি? না না আমি ছেলেধরা নই। আসলে বান্ধবীদের সাথে কলেজ প্রোগ্রামে যাব, কিন্তু ওরা আসতে এখনো দেড়ি আছে।তাই একা বসতে কেমন লাগছে! আপনি কি একটু বসবেন?”
আয়মান সাহেব হাসলেন।
” আচ্ছা আচ্ছা চলুন।”
সকাল গড়িয়ে তখন দুপুর। সূর্যটা মাথার ওপর দাঁড়িয়ে। মেয়েটার নাকের উপরটা বারবার ঘামছে।এক পর্যায়ে আয়মান সাহেব বলেই ফেললেন,
” আপনার বর খুব ভালো বাসবে আপনাকে।”
মেয়েটি কফিতে চুমু দিতে গিয়েও থেমে গেলো।
“আপনি কী করে জানলেন?”
“যাদের নাক বেশি ঘামে তাদের বর বেশি ভালোবাসে।”
” হিহিহি, ভালো বলেছেন।তা যাই হোক।আমার পরিচয় দেই।আমি রিমি,অনার্স শেষ বছর।আপনি আয়মান চৌধুরী?”
” আপনি আমাকে চেনেন?”
” আমাদের কলেজে আপনাকে একবার দেখেছিলাম।সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামে এসেছিলেন।”
” আচ্ছা আচ্ছা। আমার খেয়াল পড়ছে না।”
রিমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“আপনি বিয়ে করেননি কেন?”
মুখ ভর্তি কফি নিয়েই আয়মান সাহেব বেশম খেলেন। এতো কিছু খোঁজ কখন রাখলো এই মেয়ে?”
“না মানে এমনি।আপনি কী করে জানলেন?”
” হাহাহা,আপনি কি ভয় পাচ্ছেন নাকি? বিবাহিত হলে নিশ্চয়ই আমার সাথে বসে আড্ডা দিতেন না। এতোক্ষুণে বউয়ের কাছে থাকতেন।”
মেয়েটার কথা বলার ধরণ,বুদ্ধিমত্তা, হাসি, সব কিছুই আয়মান সাহেবকে মুগ্ধ করলো। এই এতগুলো বসন্ত চলে গেলো তার জীবন থেকে অথচ এমন মুগ্ধতা কারো প্রতি আসেনি।
মনে মনে আয়মান হাসে। একটা মানুষের অভাব বোধ করে।
” কী ভাবছেন আয়মান সাহেব?”
” নাহ,তেমন কিছু না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলেছে,আপনার বান্ধবীরা কী আসবে না?”
“কথা ছিল আসার।হয়তো আসবে না।” ঠোঁট বাঁকিয়ে রিমি কাধ ঝাকায়। চোখেমুখে কলেজে যাবার কোনো তাড়া নেই।
“তাহলে চলুন আমি আপনার কলেজ অবধি এগিয়ে দিয়ে আসি।”
রিমি কথা বলেনা।নিশ্চুপ চোখে তাকিয়ে থাকে বাহিরের দিকে। কিছু একটা বলতে গিয়েও চুপ করে যায় যেন।
” আয়মান সাহেব আপনি অনেক ভালো মানুষ।সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করেন।”
“বুড়ো বয়সে আর বিশ্বাস অবিশ্বাস! আপনার কথার মানে বুঝিনি।”
“নিজেকে বাড়বার বুড়ো বলে কী প্রমাণ করতে চাচ্ছেন বলুনতো?”
“আচ্ছা আর না হয় সে কথায় না যাই। আপনি আপনার কথা বলুন।”
“আমি আপনাকে মিথ্যে বলেছি। আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি।আজ আমাকে দেখতে আসার কথা।আমি চলে এসেছি।আমার কোনো কলেজ প্রোগ্রাম নেই।”
আয়মান সাহেব বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে।রিমির চোখে পানি ছলছল করছে। হঠাৎ হাসি খুশি একটা মেয়ে কাঁদছে, আয়মান সাহেব দোটানায় পড়ে যায়। অপ্রস্তুত ভঙিতে বলেন,
“আমি কি আপনার কোনো উপকার করতে পারি?”
রিমি মাথানিচু করে বললো,
“বাসের মধ্যে একমাত্র আপনাকেই পরিচিত মনে হয়েছে।তাই আপনাকে ডেকেছি।আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসবেন?”
আয়মান সাহেব ভরষা দেয়।
“আহা মন খারাপ করবেন নাতো। চলুন আপনাকে বাড়ি দিয়ে আসছি।”
রিমি চোখ পিটপিট করে তাকায়। যে চোখ ভরষা খোঁজে।
“পাশেই একটা নদী আছে চলুন সূর্যাস্ত একসাথে দেখে তারপর বাড়ি ফিরবো।”
আয়মান চুপ করে থাকে।
“আমি কি বেশি আবদার করে ফেললাম?”
আয়মান হাসে,
“আপনি বাচ্চা একটা মেয়ে।চলুন অনেক বছর নদীর কাছে বসে সূর্যাস্ত দেখি না।আজ দেখবো।”
রিমি নাকমুখ কুঁচকে তাকায়।
“অনার্সতো শেষই প্রায়।এখনো আমি বাচ্চা?”
আয়মান হাসতে হাসতে উঠে দাঁড়ায়। কিছু বলেনা।
রিমি মেয়েটা অদ্ভুত একটু বেশিই অদ্ভুত। একটু আগেও যে মেয়েটা কান্না করছিল,মন খারাপ করে বসে ছিল।এখন সেই মেয়েটাই পানিতে পা ডুবিয়ে খিলখিল করে হাসছে। একজীবনে আয়মান কতটা ভুল ছিল তা রিমি বুঝিয়ে দিল।সে ভেবেছিল একজীবনে সবরকম সুখই সে পেয়েছে।নিজের পড়াশোনা শেষ করেছে,নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে,বাড়ি-গাড়ি সবই করেছে। শুধু বাবা মা মাঝপথে তাকে একলা করে চলে গেলেন।বিয়েটিয়ে নিয়ে আর কেউ মাথাও ঘামায়নি।বয়সটা যে কখন ৪০ পেড়িয়ে ৪৫ এ পা দিলো বুঝতেই পারলো না আয়মান। সময় সময়ের মতোই বয়ে যায়। শুধু কিছু কিছু মন খারাপের রাতে একটা হাতের অভাব পড়ে।এই আরকি! রিমিকে আয়মান যতটা দেখে তার বেশি অবাক হয়।
“আপনি কি দাঁড়িয়েই থাকবেন? আসুনতো বসুন এখানে।দারুণ লাগবে আপনার।”
আয়মান ধীরে গিয়ে রিমির পাশে বসে।
“আজ আপনার অনেক সময় নষ্ট করে দিলাম তাই না?”
“হাহাহা.. নাহ তা কি বলেছি নাকি? আজ আপনি অনেক উপকার করলেন।”
“কেমন উপকার করলাম?”
“এই যে আপনি না থাকলে হয়তো এতো সুন্দর একটা দিন আমি উপভোগ করতে পারতাম না।”
“একটা কথা বলি?”
” বলুন।”
“আপনি আমায় তুমি করেই বলবেন,আপনি বলবেন না প্লিজ।”
আয়মান মুচকি হাসে। দুরের বিশাল বিশাল গাছের দিকে তাকিয়ে জীবনকে ধন্যবাদ দেয়।
এতো সুন্দর একটা দিন উপহারের জন্য। বিকেলকে ঝাঁপিয়ে সন্ধ্যা এসে হাজির হয়।সূর্য আস্তে আস্তে অস্ত যায়।রিমির কণ্ঠে কবিতা আবৃতি হয়।
“অথচ,পুরোনো শহরে তোমার আমার নতুন করে ফেরা,
এই ব্যস্ত শহরে আজ নেই আমাদের কোনো তাড়া।”
এই মুহূর্তে আয়মান নিজের বাসার ছাদে হাতে একটা চিরকুট নিয়ে বসে আছে।তার জীবনের প্রথম চিরকুট এটা,রিমির দেয়া চিরকুট। রিমিদের বাসা থেকে আসতে আসতে বেশ রাত হয়ে গেছে। রিমির বাবা-মা সহজ সরল।অল্প কথাতেই বুঝে নিয়েছেন সব।রাতে জোড় করে আয়মানকে খাইয়েছে। মহিলার হাতের রান্না ভয়ানক সুন্দর। বাড়ি ফেরার সময় রিমি গেটের কাছে এসে এই ছোট্ট চিরকুটটা হাতে দিয়ে গেছে।
সেই থেকে হাতে নিয়েই ঘুরছে।খুলতে সাহস হচ্ছে না তার। কিছু একটা যেন বাধা দিচ্ছে।যেন, এই চিরকুট খুললেই তিনি রিমির প্রেমে পড়ে যাবেন। অতি চেষ্টার পর তিনি চিরকুটটি খুললেন,
প্রিয় বুড়ো মানুষ,
আপনার সাথে আজকে কাটানো দিনটা জানিনা জীবনের সবথেকে শ্রেষ্ঠ দিন কী না? কিন্তু এতটুকু জানি যতটুকু সময় কাটিয়েছি তা বিশ্বাসযোগ্য,ভরষাপ্রাপ্য।
বুড়ো বলেছি দেখে রাগ করবেন না,আপনি মোটেই বুড়ো নন।
ইতি,
রিমি
নিচে রিমির নাম্বার দেয়া।আয়মানের ইচ্ছে করছে একবার ফোন দিতে কিন্তু কী একটা ভেবে আয়মান মুচকি হেসে
চিরকুটটা হাতে নিয়ে রুমে চলে আসে।
আয়মান আয়নার সামনে দাঁড়ায়। মাথার একপাশের চুল পেকে গেছে কিছু,কলপ লাগায় বলে ধরা যায় না।আয়মান নিজের দিকে তাকিয়ে হাসে।
“নাহ,এই সময়ে আর এসব হয় না।”
আয়মান ভাবতে চায় না রিমির কথা। তবুও ঘুরেফিরে মাথায় রিমির কথাই ঘোরপ্যাঁচ খায়।মেয়েটার হাসির কথা,ভয় পাওয়া মুখ,এলোমেলো চুল সবকিছু একটু একটু করে আয়মানের ভেতরটা ভাঙে।সারারাতে ঘুমাতে পারে না।
আয়মানের ফোনে সাধারণত সকাল সকাল ফোন আসেনা।যা আসে দশটার পর।আজ সকাল সাতটা বাজতেই ফোন বাজছে।ঘুম ঘুম চোখে আয়মান ফোন রিসিভ করে,
“হ্যালো কে?”
“প্রহর শেষে আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্রমাস
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ। ”
ফোনের ওপাশে রিমি কবিতা পড়ে।আয়মান হকচকিয়ে ওঠে।
“আপনি আমার নাম্বার কেমন করে পেলেন?”
“হিহিহি,রাতে ভুত এসে দিয়ে গেলো। ”
আয়মান চিন্তা করে গতরাতের কথা তাহলে কি ভুল করে ফোন দিয়েছিল সে?
“আপনার মানিব্যাগ আমাদের বাড়িতে ফেলে গেছেন। আজ কলেজ এসে নিয়ে যাবেন। ম্যাসেজ করে ঠিকানা দেব।”
“ওহ তাই বলুন।”
” আমাকে আপনি করে বলবেন না প্লিজ।আপনাকে সকাল সকাল ফোন দিয়ে বিরক্ত করলাম।”
“হাহাহা চেষ্টা করছি তুমি বলার।আর আমিতো বলিনি আমি বিরক্ত হয়েছি।ভালোই হলো,একটা মিটিং আছে,আর তুমি জাগিয়ে দিলে।”
“আচ্ছা আমি আপনাকে রোজ জাগিয়ে দেবো? ”
আয়মান কিছু বলেনা।এ কথায় ও কথায় কথা এড়িয়ে যায়। অন্য কথা বলে,রিমি ফোন কেটে দেয়।
দুপুরের দিকে গিয়ে মানিব্যাগ নিয়ে আসে।রিমিকেও বাড়ি অব্ধি দিয়ে আসে।
রিমি এখন রোজ ফোন দেয়।সকালে নতুন নতুন কবিতায় ঘুম ভাঙে আয়মানের,দুপুরে খাওয়ার কথা মনে করিয়ে রিমি ফোন দেয়,রাতে সারাদিনের বর্ণনা দিতে দিতে রাত পাড় করে দুজনে।আয়মান জানেনা এই সম্পর্কের নাম কী? রিমি তাকে চুম্বকের মতো টানে,দূরে সরতে পারেনা। আজও রিমি ফোন দিয়েছে, আয়মান ফোন ধরে কথা বলেনা।ওপাশে রিমি কবিতা বলে,
” ধরো,
বাহিরে প্রখর রোদে অফিস শেষ করে সবে ঘরে ফিরলে,ঠাণ্ডা একগ্লাস পানির জায়গায় যদি
খুব কাছে এসে বলি,
ভালোবাসো?
তুমি কী দূরে সড়িয়ে দেবে নাকি আরো কাছে টেনে বলবে,
ভালোবাসি ভালোবাসি।”
আয়মান কোনো কথা বলে না।চুপচাপ সবটা শোনে।রিমি খিলখিল করে হাসে,
“উল্টোপাল্টা ভাববেন না,এটা কিন্তু শুধুই কবিতা।”
আয়মান থতমত খায়,
“না না কিছুই মনে করিনি।”
“জরুরী তলব আছে। আজ দেখা করতে পারবেন? সেই নদীর পাড়ে?”
“কখন?”
“বিকেল পাঁচটা।”
“আচ্ছা আসবো।”
রিমি ফোন কেটে দেয়।সারাদিনে আর ফোন আসেনা রিমির।আয়মান ফোন দিলেও বন্ধ বলছে।আয়মানেদ ভেতর বাহির জুড়ে ছটফট শুরু হয়।পাঁচটার আগেই গিয়ে হাজির হয় নদীর পাড়ে। একাই পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকে।কিছুক্ষণ পরে রিমি আস্তে করে এসে আয়মানের পাশে পা ডুবিয়ে বসে। আয়মান তাকিয়ে অবাক হয় রিমিকে দেখে,
সেই একই হলদে শাড়ী, এলোমেলো চুল,প্রথমদিনের মতো লাগছে রিমিকে।
“সারাদিনে কোনো খোঁজ কেন নাওনি? ফোন বন্ধ রেখেছো কেন?”
“দেখলাম আপনাকে ছাড়া বাকি জীবন চলতে পারবো কি না?”
“তুমি সব পারো রিমি,তুমি থাকতেও পারবে।” অভিমানে আয়মান মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
রিমি আলতো করে আয়মানের হাত ছোঁয়।
“জীবনের অর্ধেকের বেশিতো একাই কাটিয়েছো।এই বুড়ো,বাকিটা সময় আমায় দেবে?”
আয়মান সুখের অভিমান করে বলে,
“না না, যে মেয়ে আমার ভেতর বাহির এমন উথালপাতাল করে দেয়,তার সাথে কথা নেই।”
প্রথমদিনের মতো মাথানিচু করে রিমি বলে,
“বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে।আমি পালিয়ে এসেছি। আমাকে একটু বাড়ি দিয়ে আসবেন?”
আয়মান রিমির হাত ধরে দাঁড়ায়,
“চলো,আজ তোমাকে তোমার নিজের বাড়ি নিয়ে যাব, তোমার সংসারে।”
রিমি মুচকি হেসে আয়মানের হাত শক্ত করে ধরে।ওরা বিকেলকে সন্ধ্যের বুকে নামিয়ে হেঁটে চলে।
ওরা আরো একবার পৃথিবীর বুকে প্রমাণ করে দিয়ে যায়,
“ভালোবাসার কোনো বয়স নেই।”