রোদ তোমার কি এখানে খুব অস্বস্তিকর লাগছে?হিমেলের মুখে রোদ ডাকটা শুনে একটু অন্যরকম ভালো লাগলো।অনেকেই রোদেলা না বলে আমাকে রোদ বলে ডাকে।কিন্তু হিমেলের মুখে রোদ ডাকটা অসম্ভব ভালো লেগেছে।আমি হিমেলের জবাব এখনো দেই নি দেখে সে একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি বললাম আমি ঠিক আছি।হিমেল বলল চুলগুলা ভালভাবে চিরুনি করে নেও।
পার্লারের মেয়েরা মনে হয় খেয়েদেয়ে আর কাজ পাই নি তাইতো আমার বউয়ের চুলগুলোর এই অবস্থা করেছে।আমি ভাবছি কি সহজেই ও বউ কথাটা বলল যেন মনে হচ্ছে আমাদের রিলেশন করে বিয়ে হয়েছে।আজ আমাদের বিয়ে হয়েছে।আমাদের পারিবারিক ভাবেই বিয়ে হয়েছে। আমি শাড়িটা চেন্জ করে একটা সুতির থ্রি পিছ পড়লাম।আমি আয়নার সামনে বসে মাথার জটগুলো ছাড়ানোর চেষ্টা করছি।হিমেল বলল মাথায় তেল দেও তাহলে জট তাড়াতাড়ি খুলে যাবে।আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওর দিকে।
ও কেমন করে জানি আমার মনের কথাটা বুঝতে পেরে বলল ভাবছ যে আমি কিভাবে জানি মাথায় তেল দিলে চুলের জট খুলে যায়?তুমি মনে হয় ভুলে গেছ যে তোমার একটা ঢঙ্গি ননদ আছে যে সবসময় সাজুগুজু করতে ভালো বাসে।ওর কাছ থেকেই জেনেছি।হিমেল আমার পাশে এসে দাড়িয়ে আমার চুলের জটগুলো ছাড়িয়ে দিতে লাগলো।অবশেষে দুজনে মিলে জটগুলো খুলতে পারলাম।হিমেল বললো তোমার জন্য কিছু কিনেছি দাড়াও তোমাকে দেই।আমি বললাম আংক্টি কিংবা নূপুর হলে কিন্তু নিব না।কারণ যতগুলো গল্প পড়েছি সবগুলোতেই বর তার বউকে এই দুইটা জিনিস দেয়।হিমেল একটু হেসে আমাকে একটা প্যাকেট দিল। আমি প্যাকেট খুলে দেখলাম একটা ডায়রি;একটা ফ্রেম আর একপাতা কালো টিপ।
এগুলো পেয়ে খুব খুশি হলাম।ডায়রিটা দিয়েছি কারণ তোমার মনের অনুভুতির কথাগুলো এখানে লেখবে আর আমি প্রতিদিন চুপচুপ করে ডায়রি পড়ে তোমার মনের কথাগুলো জেনে নিব।আমি আমার ডায়রিটা লুকিয়ে রাখবো তোমাকে চুপ করে দেখতে দিব না।হিমেল বলল ডায়রিটা না হয় লুকিয়ে রাখলে কিন্তু তোমার চোখের ভাষা মনের কথা এসবই তো আমি বুঝতে পাই।ওর কথায় আমার খুব লজ্জা লাগছে।আমি বললাম আমরা কি খুব ভালো বন্ধু হতে পারি?হিমেল হেসে বলল আমাকে ভালো বর হিসাবে না চেয়ে বন্ধু হিসাবে চাইয়ে কেন?বিএফ আসে নাকি?হাহাহা।
তোমার কি মনে হয় আমার বিএফ থাকলে তোমার সাথে বিয়ে করতাম।আমি আমার বিএফ এর সাথেই পালিয়ে যেতাম।আরে রোদ আমি তো দুষ্টমি করছি।ঠিক আছে যাও তোমার বন্ধু হলাম।আমি বললাম শুধু বন্ধু হলে হবে না আমার বেস্ট ফেন্ড হতে হবে?বেস্ট হয়ে হলে আবার আমাকে তুই তুমারি করো না রোদ।আমি একটু মুচকি হাসলাম ওর দুষ্টমিময় কথা শুনে।হিমেল বলল আমিও চাই আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বপূর্ণ হোক।এবার বলো তোমার কি কি করতে ভালো লাগে? আমি বললাম আমার ভ্রমণ খুব প্রিয়।
হিমেল বললো তাই জান আমার ভ্রমণ খুব প্রিয়।আমি বললাম জানি তো।আর এই জন্যই তো তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছি।তোমার আইডিতে যখন দেখলাম তুমি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে ঔ সব জায়গার ছবি দিয়েছ তখনই বাবাকে বলেছিলাম আমি বিয়ে রাজি।হিমেল বলল ঘুরতে নিয়ে যেতে পারি কিন্তু বেশি কিছু খাওয়াতে পারবো না।আমি বুঝতে পারছি তুমি দুষ্টমি করছো।কিন্তু তারপরও তোমায় বলি শোন আমাকে তেমন কিছুই খাওয়া হবে না।শুধু ঝালমুড়ি কিংবা ফুসকা খাওয়ালেই হবে।আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত তিনটা দশ বাজে।এখন ঘুমানো উচিত না হলে আমরা কাল সকালে উঠতেই পারবো না।
হিমেল বললো সত্যিই তো অনেক রাত হয়েছে। টিপটা একটু পরবে তোমাকে টিপ পড়া অবস্থায় দেখার ইচ্ছা অনেক দিনের।আমি একটু হেসে টিপটা পড়ে নিলাম।তুমি তো দেখছি ভালোকরে টিপ পড়তেই পার না।একথা বলে ও আমার কপালের বাকাঁ টিপটা সোজা করে দিল।এবার ঠিক আছে। খুব সুন্দর লাগছে তোমায়।হিমেল বলল তোমায় ভালবাসি একথা বলবো না।কিন্তু একটু একটু করে তোমায় ভালোবাসতে শুরু করেছি।আমার এই ভালোবাসাটাকে পূ্র্ণতা দিতে আমায় কি একটুখানি ভালোবাসবে?তোমায় একটুখানি না অনেক বেশিই ভালবাসতে চাই।
(সমাপ্ত)