_আবির চলো আমরা বিয়ে করি ফেলি।(আমি)
_কিহ! আবার শুরু করলে পাগলামী! (আবির)
_পাগলামো নয়! আমি সিরিয়াস!
_মাথা ঠিক আছে তোমার? একেতো দু’জন সেইম ইয়ারে পড়ি, তার উপর সবে থার্ড ইয়ার।
_তুমি কি জানো, থার্ড ইয়ারটা পড়াশুনার জন্য যতটা না উপযোগী, বিয়ে করার জন্য তার চেয়ে বেশি উপযোগী।
_তোমার এইসব লজিক শুনতে আমার ভালো লাগছে না, তুমি ভাবলে কি করে আমার পরিবার এখন আমার বিয়ে দিবে! বিয়ে করে বউকে খাওয়াবো কি?
_আমার পরিবার বুঝি তোমার মতো বেকার ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিবে?
_তাহলে পাগলামো করো কেনো?
_ভয়ে,
_কিসের ভয়?
_তোমাকে হারানোর ভয়।
_আমি কি কোনো বস্তু নাকি যে হারিয়ে যাব!
_উঁহু, তবে মাঝেমাঝে মনে হয় তুমি আমার থেকে হারিয়ে যাবে। প্লিজ আবির, চলো আমরা আমাদের পরিবারকে আমাদের কথাটা জানিয়ে বিয়ে করে ফেলি। রুশা আর মামুন কি সুন্দর বিয়ে করে নিয়েছে।
_রিতু, ওদের পরিবার থেকে ওদের বিয়ে দিয়েছে।
_আমাদের পরিবারও দিবে আমাদের বিয়ে।
_প্লিজ রিতু, তুমি আর আমাকে জ্বালাইও নাতো। তোমার এই পাগলামো দিনদিন অসহ্য লাগে। আমাকে মুক্তি দাও। আর ফোন করবেনা একদম।
কথাটা বলেই হনহন করে চলে গেল আবির। আমি ঠায় বসে আছি আর ভাবছি যে, সত্যি কি আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি! আবোলতাবোল কথা বলতে শুরু করেছি! কিন্তু আবিরের পড়াশুনা শেষ করে চাকরি পাওয়া অনেক দেরি হবে, ততদিনে ও যদি অন্য কাউকে পেয়ে আমাকে ভুলে যায়! কিন্তু ও’তো আমার কথাই বুঝতে চাইছে না। রাগ দেখিয়ে চলে গেল। আমার বুঝি রাগ নেই! আমিও আর ওর সাথে কথা বলব না। ও থাকতে পারলে আমি পারব না কেন!!
সন্ধ্যা থেকে ফোন নিয়ে গুঁতাগুঁতি করছি, কিছুই ভালো লাগছে না। অন্যদিন হলে এতক্ষণ আবির কল করত, কিন্তু আজ করেনি, আমিও করব না! ওর রাগ আছে আমার বুঝি রাগ নেই! এফ বিতে দেখছি সেই সন্ধ্যা থেকেই একটিভ আছে, আবির নিশ্চয়ই আমাকে মিস করছে! করুক! অন্তত ভালবাসা কি বুঝুক! এসব ভাবতে ভাবতে মিতুর ফোন পেয়ে চমকে গেছি।মিতু আমার ছোট বোন। এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। খুব দুষ্টু একটা মেয়ে, মাঝেমাঝে এমন কথা বলে ফেলে যে, ওর পাশে থাকা মানুষগুলোকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যেতে হয়। যাইহোক ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মিতুর হাসির আওয়াজ শুনতে পেলাম। কিছু হলেই মেয়েটা একেবারে হেসে গলে যাবে।আমি একটা ধমক দিয়ে বললাম..
_কিরে, অমন পেত্নীর মতো হাসছিস কেন?
_আপু শোন, ছোট মামা তোর জন্য একটা ছেলে দেখেছে।
_এ আর নতুন কি! আর কি হয়েছে বল।
_ছেলেটা না দেখতে হেব্বি সুন্দর!
_হেব্বি সুন্দর! তো তুই বিয়ে করে নে।
_ছি আপু! তুমি এসব কি বলছ! তোমার জন্য দেখা ছেলেকে আমি বিয়ে করব কেন? আর তোমার বিয়েটা হয়ে গেলে এমনিতেইতো আমার পালা।
_বাবার কি অবস্থা? মা কি করে?
_বাবা এইতো ভালই। মা আমার পাশেই আছে। নে ধর, কথা বল। মা ফোন রিসিভ করতেই কান্না করে দিল….
_মা তোমাকে না কতবার বলেছি যে, আমার সাথে কথা বলার সময় একদম কান্না করবে না, তুমিতো বাবা আর মিতুকে নিয়ে থাকো, আমি যে এখানে একা থাকি, আমার কি খারাপ লাগেনা?
কথাগুলো বলতে গিয়ে আমার গলাটা ধরে এসেছে। আমি মায়ের কান্নার কারণটা জানি। তার ইচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার বিয়ে দেওয়া। মিতুও বড় হয়েছে, ওকেওতো বিয়ে দিতে হবে! আমি সব বুঝলেও আবিরের জন্য পারিনা। বড্ড ভালবাসি ছেলেটাকে! আমার কথাগুলো শুনে মা কান্না কিছুটা থামিয়ে বলল…
_এইবার আর না করিস না, ছোট বোনটার কথাটাও একটু ভাব, তোর কি কোনো ভাই আছে নাকি! আর ছেলেটাও নাকি অনেক ভালো। ভালো ছেলে কি সব সময় পাওয়া যায়!
_আচ্ছা, দেখছি কি করা যায়। কথাটা আমি আবিরের উপর রাগ করেই বললাম। ছেলেটা বড্ড বেড়েছে, একটু শাস্তি দেওয়া দরকার।আমার কথায় মা অনেক খুশি হয়ে বলল..
_আমি তাহলে মিতুকে বলছি ছেলের ছবি পাঠিয়ে দিতে, আর তোর কিছু ছবিও তোর মামা ওই ছেলেকে দিতে বলেছে।
আমি আচ্ছা বলে ফোন রেখে দিলাম। মিতু ছবি পাঠানোর আগেই মেসেজ করেছে যে, ছেলের ছবি দেখে আমি যেন অজ্ঞান না হয়ে যাই। এমনিতেই মেজাজ খারাপ আছে, তার উপর মিতুর এইসব কথা একদম ভালো লাগছিল না। ফোন অফ করে চোখমুখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম। শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি আমি নিজেই বুঝতে পারিনি। সারাদিন ক্লান্ত থাকলে যা হয় আর কি! ফোন অন করতেই টুংটাং আওয়াজে মেসেজ আসতে লাগল। মিতু ছবি পাঠিয়েছে ছেলের, যদিও ছবি দেখার কোনো মুড নেই আমার, তারপরেও কিছুটা অযাচিত ভাবেই মেসেজ ওপেন করতেই আমি হা হয়ে গেলাম। এ যে আবিরের ছবি! মিতু কয়েকিদন ধরেই আমাকে সন্দেহ করছিল, নিশ্চয়ই কারো থেকে আবিরের খোজ পেয়েছে, তাই আমার সাথে মজা করছে হয়ত। ছবিগুলো দেখেই মিতুকে ফোন করলাম।
_হ্যা আপু বল। জ্ঞান ফিরেছে তাহলে!(মিতু)
_শোন মিতু, ফাইজলামি করার সময় নেই, আবিরের ছবি দিয়েছিস কেন?
_কে আবির? ওহ, দুলাভাই? তবে তোর পছন্দ না হলে আমিই….
_এক থাপ্পড় দিয়ে বিয়ে করার সাধ মিটিয়ে দিব। আমি তোর বড় আপু, সম্মান দিয়ে কথা বলবি।
_ওকে আপু! আবির ভাইয়ার বাবা ছোট মামার বন্ধু। উনিই ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ছোট মামার কাছে এসেছিল। যদিও ছেলে বেকার,তবে আপনাকে নাকি অনেক ভালবাসা দিবে!
_সত্যি?? মজা করছিস নাতো??
_আপনি আমার বড় আপু না! আপনার সাথে আমি মজা করতে পারি! তাও আবার বিয়ের ব্যাপারে????
_হারামি! ফোন রাখ।
_কেন? আবির ভাইয়াকে ঝাড়বে বুঝি?? তোমাকে এখনো কিছু জানায়নি??
_আচ্ছা পরে কথা বলছি।
_আচ্ছা। তবে আবির ভাইয়াকে বেশি বকো না। হাজার হোক আমার দুলাভাই!!!
_চুপ!
মিতু ওপাশ থেকে খিলখিল করে হাসছে, আর এসব শুনে আমার হার্টবিট কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। কথাগুলো কি সত্যি!! নাকি মিতু আমার সাথে মজা করছে! ইচ্ছে-অনিচ্ছের খুনসুটি শেষ করে আবিরকে কল দিলাম। ৩বার কল করার পর ফোন রিসিভ করল
_হ্যা, তুমি আবার আমাকে কল করেছ কেন?(আবির)
_এসব কি শুনছি?(আমি)
_কোনসব??
_ন্যাকা সাজছ? কিছুই জানো না বুঝি!!
_আসলে হয়েছে কি…..
_আমাকে কিছুই জানালে না? আমি কেউ না?
_শুনবে কি হয়েছে? নাকি ফোন রাখব?
_হুম। ভাব না দেখিয়ে বলো।
_আরে সেদিন রাইসা আমার ফোনে তোমার ছবি দেখে হাজার প্রশ্ন করতে লাগল,
কে এটা? কি করে? কে হয় তোমার? আমি বারবার বলি, বন্ধু, কিন্তু ওর যেন বিশ্বাস হয়না,আবার প্রশ্ন করে। শেষে রাগ করে বলেছি,” মেয়েটা তোর ভাবি”। আমার কথাটা বলা শেষ হতে না হতেই ও ফোন নিয়ে বাবা আর মা’কে গিয়ে ছবি দেখিয়ে বলেছে আমি ওই মেয়েটাকে মানে তোমাকে বিয়ে করেছি। এইটুকু শুনেই আমি হাসতে হাসতে শেষ। আবির আমাকে ধমক দিয়ে বলল,
_আরে পুরোটা শোনো আগে।
_হুম, বলো।
_রাইসার কথায় আমি পুরো থ হয়ে গেলাম,
আমার ছোট বোন হয়ে যে ও এতো দুষ্টু ভাবতেই পারিনি। বাবা-মা’ কে আমি যতই বুঝাতে থাকি যে, তোমাকে আমি বিয়ে করিনি, কিন্তু তারা সেটা বিশ্বাস করতে নারাজ! বাবা প্রথমে আমাকে বকা দিলেও পরে আমার পছন্দ আছে বলে প্রশংসা করতে লাগল! মা’তো বলেই দিল যে,তাদের বউমা’কে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের কাছে নিয়ে আসবে! আমার আর কি করার বোকার মতো সব অপবাদ মাথা পেতে নিয়ে তোমার পরিচয়, ঠিকানা সব দিলাম!
_তারপর???
_তারপর আর কি! তোমার মামা আমার বাবার বন্ধু হওয়ার সুবাদে আমার মতো বেকার ছেলের সাথেই তোমার বিয়ে দিতে রাজি হয়ে গেল! তাদের ভাষায় অবশ্য আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে!!!
_আমার বাবাও মামার কথা মেনে নিল??
_সেটা আমি কি করে জানব?? ওহ! তারাতো জানে আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে! তাই আর আপত্তি করেনি।
_আমাদের বিয়ে!!!!
_হয়ে গেছে!!!! আমি হাসতে হাসতে পুরো শেষ হয়ে গেছি। আবিরের নিশ্চুপ থাকা দেখে আমি বললাম,
_কি ব্যাপার! চুপ কেন!! বিয়ে করবেনা!!!
_নাহ! বিয়েতো হয়েই গেছে! এখনতো আমি সারাজীবন তোমার এই হাসির মাঝে হারিয়ে যেতে চাই! কথাটা শুনে কেন জানি আমার লজ্জা লাগছে। সত্যি কি থেকে কি হয়ে গেল!!!
(সমাপ্ত)