এক চিলতে ভালবাসা

এক চিলতে ভালবাসা

কাকঁ ভেজা হয়ে বাসায় প্রবেশ করলাম। আজকে অফিসের বসের মুড টা ভাল থাকায় বিকেলেই বাসায় চলে আসতে পারছি। কিন্তু বাসার কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ ঝুম বৃষ্টি। তাই দৌড়ে কোন রকমে বাসায় আসলাম কিন্তু ভিজতে ঠিকই হলো।

আমাদের বাসাটা একটা ৭ তলা বিল্ডিংয়ে ৩য় তলার ডান পাশের একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকে। দরজার সামনে এসে কলিংবেল বাজানোর সাথে সাথে তুলি এসে দরজা খুলে দিলো। তুলি হলে আমার ছোট বোন। আমাকে ভিজা অবস্থায় দেখে তোয়ালেটা সামনে এগিয়ে দিলো। আমি মাথাটা মুছতে মুছতে আমার রুম যেতেই বাধা দিলো।

— কি হলো সামনে এসে দাড়ালি কেন?
— ভাইয়া তুই আপাতত আমার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। তোর রুমে একজন ঘুমাচ্ছে?
— তো ঘুমাচ্ছে ঘুমাক না, তাতে আমার কি? ছাড়তো।

আমি তুলিকে সরিয়ে দিয়ে সামনে যেতে যাবো তখনই তুলি মা বলে একটা চিল্লানি দিলো। এটা অবশ্য ওর ছোট থেকেই স্বভাব। তখন মা রান্না ঘর থেকে আসতেই তুলি বলল..

— মা ভাইয়া ওর রুমে ফ্রেশ হতে যাচ্ছে কিন্তু ওই রুমে তো তনু আপু ঘুমাচ্ছে?
— তনু? এটা আবার কে?(শকড খেয়ে বললাম)
— আরে রাজ তোকে বলা হয় নি, আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে নতুন ভাড়াটিয়া আসছে বাধঁন সাহেব। ওনার মেয়ে হলো তনু। তনুর অনেক জ্বর কিন্তু ওদের রুম গুলো তো ঘুছানো হয় নি তাই আমাদের এখানে আছে।

— ও আচ্ছা কিন্তু আমার রুমটা কেন?
— আসলে দেখিস তো বাবা তুলি তার রুমটা কেমন করে রাখে? ওইটাতে তো মানুষ থাকাও যাবে না। আর তুই অফিস যাওয়ার পর আমি তোর রুমটা ঘুছিয়ে দিয়ে ছিলাম আর তখনই বাধঁন সাহেব এসে ছিল।
— ও আচ্ছা, আমি তুলির রুমে মানে জঙ্গলে যাচ্ছি ফ্রেশ হতে। তুলি তুই আমার রুম থেকে একটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার নিয়ে আয়।
— ভাইয়া ঠিক হচ্ছে না কিন্তু?
— চুপচাপ যা বললাম তা কর।

আমার আর তুলির রুমটা পাশাপাশিই তাই তুলির রুমে যাওয়ার সময় আমার রুমে একটু উকিঁ দিচ্ছিলাম। যতই হোক, আমি তো ২৭ বছরের একটা সিঙ্গেল ছেলে। তুলি আমাকে দেখে হাসতে হাসতে চলে গেল। তুলির রুমে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে ছিলাম। কখন যে চোখটা লেগে গিয়ে ছিল খেয়ালই ছিল না। ঘুম ভাঙ্গলো মায়ের ডাকে। মা পাশে বসে মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছিল।

— কিরে আর কত ঘুমাবি? ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।
— আচ্ছা যাও,আসছি।

মা চলে গেল আর আমি উঠে ফ্রেশ হতে লাগলাম। ফ্রেশ হয়ে খাবার টেবিলে যেতেই একটু অবাক হলাম। কারন এখানে তিনটা নতুন মুখ। আমি চুপচাপ খাবার টেবিলে গিয়ে বসলাম। তখন বাবা ওদের সাথে পরিচয় করি দিতে লাগলো।বাধঁন আঙ্কেল, তনু আর নয়ন(তনুর ভাই)। আমি সবার সাথেই হালকা কথা বললাম। তুলি আমার পাশেই খাচ্ছিল তখন আমার কানে কানে এসে বলল…

— ভাই খাওয়াতে নজর দে, নয়ত গলায় খাবার আটকে যেতে পারে। আমি খাবার রেখে তুলির দিকে তাকাতেই তুলি বলল..
— না ঠিক আছে, এভাবে তাকানোর কিছু হয় নি তো।

তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমি আমার রুমে চলে আসলাম। তনু মেয়েটা দেখতে তো ভদ্রই মনে হলো তবে সত্যি কি এমন নাকি অন্য রকম। মেয়েটার তো মা নেই, হয়ত ভালই হবে। কারন, ফ্যামিলির কাজ কর্ম করে আবার নাকি অনার্সে ২য় বর্ষে পড়ে। যাই হোক, দেখতে মন্দ না।

এভাবে দেখতে দেখতে কয়েক মাস কেটেঁ গেল। সিড়িঁ দিয়ে উঠা নামার সময় মাঝে মাঝে দেখা হয় আর তুলির রুমে বসে থাকতে দেখি। তবে আমার বাসার সবার সাথে কথা বললেও আমার সাথে কথা বলে না। মনে হয় ভয় পায় নয়ত লজ্জা পায়। একদিন বিকেলে সকল অলসতার অবসান ঘটিয়ে ৭ তলা পেরিয়ে ছাদে আসলাম। ছাদে একটা বড় বসার বেঞ্চ রাখা আছে। ওইটা বসে আগে পা মালিশ করতে লাগলাম। তখন খেয়াল করলাম তনু গাছে পানি দিচ্ছে। তখন ভাবলাম একটু কথা বলি…

— হাই তনু।
— হ্যালো (আমার দিকে একবার ফিরে আবার কাজে মন দিলো)
— গাছে পানি দিচ্ছো বুঝি?
— না দেখতেই পাচ্ছেন গাছকে দুধ ভাত খাওয়াচ্ছি।
— মানে?
— দেখতেই তো পাচ্ছেন পানি দিচ্ছি, এখানে প্রশ্ন করার কি আছে?
— তাই বলে এমন ত্যাড়া উত্তর।
— আমি এমনই।

আমি আর কোন জবাব দিলাম না। আমার সাথে এমন ব্যবহারের কিছুই বুঝলাম না। আমি তো কোন খোচাঁ দিয়ে কথা বললাম না বা প্রেম করতেও গেলাম না। আমি তো স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে চাইলাম। এটা মেয়ে নাকি চিনির প্যাকেটে,লাল গুড়া মরিচ। এই মেয়ের জামাই তো টিকবো না, দৌড়ে পালাবে। এই মেয়ে তার মত গাছে পানি দিচ্ছে আর আমি ছাদে চারপাশটা দেখে নিচে নেমে চলে আসলাম।

এরপর আর কয়েকদিন কোন কথা হয় নি।একদিন অফিসের জন্য বের হতে একটু লেট করে ফেললাম আর দৌড়ে বাস স্টপে আসতেও বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। খেয়াল করলাম সেখানে তনুও ছিল কিন্তু বাস স্টপে যাত্রী ছাউনীর নিচে দুইটা মেয়ে বাদে সবই প্রায় মধ্য বয়সী পুরুষ। তনুর দিকে তাকাতেই মনে হলো ও অসস্তি বোধ করছে এত গুলো পুরুষের মাঝে। আর তনুকে দেখে তো মনে হচ্ছে একদম ভিজে গেছে। বৃষ্টিটাও থামার নাম নেই আর এইখান থেকেও বের হতে পারছে না। একটা লোক মনে হচ্ছে বার বার তনুর পাশে ঘেষে দাড়ানোর চেষ্টা করছে। মেজাজটা এমনি গরম হয়ে গেল। কিন্তু এখানে মাথা গরম করলে হবে না। ওই লোকটাকে ভয় দেখিয়ে তনুকে এখানে সেভ করতে হবে নয়ত পাবলিক আমাকে খারাপ ভেবে পিটাইতে পারে। আমি একটু স্বাভাবিক হয়ে তনুকে খুব পরিচিত হয়ে ডাক দিলাম…

— আরে তনু তুমি এখানে কমিশনারের অফিসে যাও নি।

তনু আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালো আর জায়গাটা অনেকটা সেভ হয়ে গেল কমিশনার শুনে। যদিও আমি এই শব্দটা এই কারনেই উচ্চারন করেছি।

— কি হলো তনু এভাবেই তাকিয়ে থাকবে নাকি কিছু বলবে?

কথাটা বলেই আমি তনু আর ওর পাশের মেয়েটার পিছনে গিয়ে দাড়ালাম। অনেকেই একটু সরে দাড়ালো। তনু বার বার ওর মাথা চুলকাচ্ছে আর একটু পর পর আমার দিকে ঘুরে দেখার চেষ্টা করছে। এভাবে একটু একটু কথার মাঝে বৃষ্টিটা হালকা হয়ে গেল আর তখনই বাস চলে আসলো। যখন তনু বাসে উঠতে যাবে তখন আমি ওর হাতটা ধরে ফেললাম। ও যদিও রাগি চোখে তাকায় নি তবু আমি বললাম…

— তুমি বাসায় চলে যাও, এমনি অনেকে ভিজে গেছো। পরে সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
— হুমম( মাথা নাড়ালো)

কোন কথা না বলে মাথাটা নিচু করে চুপ চাপ বাসার দিকে হাটতে লাগলো আর আমি বাসে উঠে গেলাম। আজকাল এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন অনেক মেয়েকেই হতে হচ্ছে আর মজা লুটচ্ছে মানুষের মত দেখতে অমানুষ গুলো। রাতে রুমে বসে অফিসের কিছু কাজ দেখছিলাম। আসলে প্রাইভেট জব জীবনটাকে তেজপাতা করে দিচ্ছে। তখনই দরজায় খটখটানোর আওয়াজ। তাকিয়ে দেখি তনু দরজায় দাড়িয়ে।

— আরে তুমি তুমি এই সময়?
— বিরক্ত করলাম না তো।
— আরে না। বলো হঠাৎ আমার রুমে কি মনে করে?
— হঠাৎ নয়ত, আমি তো এই বাসায় আসার পর এই রুমেই প্রথম এসে ছিলাম।
— সেটাও ঠিক, তারপর বলো কেন আসা হলো ?
— আসলে আপনাকে সরি আর ধন্যবাদ দুইটাই দেওয়ার ছিল।
— ঠিক বুঝলাম না।

— আসলে কয়েকদিন আগে ছাদে আপনাকে একটু অসহনীয় উত্তর দেই সেই জন্য সরি। আসলে আমি ওই সময় একটু ডিস্টার্ব ছিলাম আর আজকে আমাকে সেভ করার জন্য ধন্যবাদ।
— ধন্যবাদটা নিলাম তবে এমনটা অন্য মেয়েদের সাথে হলেও আমি এমনই করতাম আর সরিটা নিবো যদি ডিস্টার্ব হওয়ার কারনটা শুনতে পারি।
— আসলে…
— যদি একান্ত ব্যক্তিগত হয় তাহলে অনইচ্ছাকৃত বলতে হবে না।
— আসলে আমার ছয় মাসের রিলেশনশিপ ওইদিন শেষ হয়ে যায়। তাই ছেলেদের নিয়ে আমার মনে বাজে ধারনা ছিল তাই যেই কথা বলতে আসে তাকেই মনে হয় ফ্লাট করতে চায়।
— বুঝলাম কিন্তু রিলেশন কি কোন খাবার যে শেষ হয়ে যায়।
— সেটা তো আমার জানা নে তবে গত এক মাস ওর জন্য অনেক কেঁদেছি কিন্তু কোন লাভ হয় নি। পরে ভাবলাম যে চলে যাবে তাকে কেন আটকাবো?
— সেটাও ঠিক, তবে এখন সব ঠিক তো।
— একদম আর আসি শুভ রাত্রি।
— হুম বাই।

তনু আমাকে বাই দিয়ে তুলির রুমে গেল। হয়ত তুলির রুমের বাহানা করেই এসেছিল। আপাতত তনুর সাথে ভালই কথা হয়। একদিন অফিসে কাজ করছি তখন বস ডেকে পাঠালো…

— বস আমাকে ডেকে ছিলেন?
— হুমম রাজ আসো।আসলে করিমপুরে আমাদের একটা টিম একটা বিল্ডিংয়ের কাজ করছে। তবে কয়েকদিন যাবত “বার সিডিউলটা” একটু এলোমেলো হয়ে গেছে। তাই তুমি একটু ওইখানে গিয়ে সময় নিয়ে সিডিউলটা ঠিক করে দিয়ে আসো। জানোই তো একটা নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে কাজটা শেষ করতে হবে।

— জ্বী বস।

বসের সাথে কথা বলে হাতের কাজ পাশের টেবিলে দিয়ে আমি করিমপুরের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরি। সকালে সাইটে এসে ছিলাম। শুধু সিডিউলটা বানাতেই প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। সাইটের ইঞ্জিনিয়ারদের থেকে বিদায় নিয়ে রাস্তায় আসলাম। একটা রিকশা খুজতে লাগলাম। তখনই দূর থেকে একটা মেয়ে ডাক দিলো…

— এই যে প্রতিবেশী সাহেব।

আমি আমার চারপাশ টা ভাল করে দেখে নিলাম কাকে ডাক দিয়েছে কিন্তু কাউকেই তো পেলাম না। মেয়েটা আমার সামনে আসতেই খেয়াল করলাম এটা তনু।

— আরে তনু তুমি এখানে।
— ওইখান থেকে যে ডাকছি, আপনার কানে যায় না। নাকি খেয়াল করেও পাত্তা দিচ্ছেন না।
— আসলে তা নয়। প্রতিবেশী সাহেব এটা কেমন ডাক হলো বলো তো। অন্য কাউকেও তো ডাকতে পারো।
— আপনি আসলেই কানা। আমি দূর থেকে আপনাকে দেখে ডাক দিলাম আর আপনি আমায় দেখেন না।
— হুমম তাই তো চশমা পরি।
— নতুন করে ডাক্তার দেখান বুঝলেন। আপনার চোখ পুরো গেছে বুঝলেন।
— বাদ দাও,এবার বলো এই সন্ধ্যা বেলা এখানে তুমি কি করো?
— আমি তো আমার ফ্রেন্ডের বোনকে টিউশনি পড়াই তাই আসি কিন্তু আপনি এখানে?
— আমি অফিস থেকে এই সাইটে আসছিলাম।
— ও আচ্ছা চলেন তাহলে এক সাথে বাসায় যাওয়া যাক।
— ওকে কিন্তু আমার সাথে…
— কেন? আপনার সাথে গেলে কি হবে? আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনার সাথে আমাকে দেখলে রাগ করবে বুঝি?আর তাছাড়া আপনার পাশে নিজেকে সেভ মনে হয় এখন।
— আরে তা নয়, আমি এখনো সিঙ্গেল।
— হা হা এভাবে সিঙ্গেল বইলেন না, এটা আপনার বিয়ের বয়স। নয়ত পড়ে বুইড়া সিঙ্গেল হবেন।
— মানে?
— ধুর এত বুঝাতে পারবো না, রিকশা ডাকেন তো। এমনি রাত হয়ে যাচ্ছে।

যে মেয়ে আমার সাথে ঠিক মত কথা বলে না সে আজ এত বকবক করছে, আসলেই অবাক হওয়ার মতই। এক সাথে বাসায় আসলাম কিন্তু রিকশায়ও মেয়েটা অনেক বকবক করেছে আর আমি শুধু শুনেছি। একদিন অফিস ছুটি থাকায় আমি প্রায় ১১ টা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছিলাম। হঠাৎ মেঘের গর্জনে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। আমার রুমের সাথেই বেলকনি। অবশ্য রুমটা তুলি চেয়ে ছিল কিন্তু আমি ওরে ভূতের ভয় দেখিয়ে রুমটা নিয়ে নিয়েছি। আমি এক পাশ হয়ে শুয়ে বৃষ্টি দেখতে লাগলাম। চারপাশ একদম কালো হয়ে আছে। এটা বৃষ্টি বললে ভুল হবে, এটা তো ঝড়। বৃষ্টি দেখায় বাধা নিয়ে দরজায় খটখট আওয়াজ পড়লো। ঘুম চোখে দরজাটা খুলে দিতেই তুলি তনুর হাত ধরে বেলকনিতে গেল। আমি যে একটা মানুষ ওদের সামনে দাড়িয়ে আছি, ওদের যেন হুশ নেই।

— এই তুলি ঝড় হচ্ছে,তুই রুমে যা।
— ভাইয়া একটু থাকি না।
— দেখ শিলা বৃষ্টি হচ্ছে, বড় বরফ পড়লে ব্যাথা পাবি। যা তোরা এখান থেকে। তুলি আমার কথায় হয়ত রাগ করেছে কিন্তু কিছু বলছে না। তখন তনু বলল
— তুলি তুমি আমার রুমে চলো। আমার রুমেও বেলকেনী আছে।
— হুমম যাবো না, তুমি যাও। তুলি রাগ করে ওর রুমে চলে গেল আর তনু আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
— বৃষ্টি তো সব মেয়েরই ভাল লাগে। একটু ভিজলে আপনার সমস্যা কি?
— আসলে এটা বৃষ্টি না, এটা ঝড় আর তার উপর শিলা পড়ছে আর বিদ্যুৎও চমকাচ্ছে। তাই একটু রাগ দেখালাম।
— আপনি না রস কস ছাড়া একটা মানুষ। ধ্যাত।

তনুও রেগে চলে গেল আর আমি বোকার মত বসে রইলাম। আমি তো ওদের ভালোর জন্য একটু রাগ দেখিয়ে ছিলাম। তনুর সাথে এখন অনেক ফ্রি তবে শত হলেও আমি ওর বড় তাই সম্মান দিয়েই কথা বলে। আমি প্রথম থেকেই তনুকে তুমি করে বলে আসছি আর তনু আমাকে আপনি করে বলে। প্রায় ১ বছর হতে চলল আমাদের সম্পর্কটা এমনিই রয়েছে। ইদানিং অফিসে কাজের চাপটা একটা বেশি তাই রাতে বাসায় আসতে লেট হয়ে যায় আর সকাল সকালও অফিসে যেতে হয় তাই তনুর সাথে তেমন একটা দেখা হয় নি। অফিস থেকে এসে সবার সাথে বসে ডিনার করছিলাম। তখন বাবা আমায় বলল..

— রাজ তোর অফিসের কাজ কেমন চলছে?
— জ্বী ভাল বাবা। কয়েকদিন আগে বস একটা নতুন প্রজেক্ট শুরু করেছে। ওইটা নিয়ে অনেক ব্যস্ত।
— ব্যস্ত তো বাবা সারা জীবনই থাকবি। আমি আর তোর মা তোর বিয়ের কথা বলছিলাম।
–এখন এইসব নিয়ে না কথা বলাটাই ভাল বাবা। দেখোই তো তোমাদেরই ঠিক মত সময় দিতে পারি না আর নতুন কাউকে কিভাবে সময় দিবো?
— সময়টা তোর নিজের কাছে। চাইলে সব সম্ভব। আমরা আপাতত মেয়ে দেখে রেখেছি, তোকে শুধু মেয়ের বাড়ির লোক দেখা বাকি। অবশ্য ওরা তোর ছবি দেখেছে। তবে সামনাসামনি একটা ব্যাপারই আলাদা।
— তোমরা যেটা ভাল বুঝো তবে কিছুদিন পর সব করলেই ভাল হতো।
— ওইটা নিয়ে তোর ভাবতে হবে না। তুই হ্যা বলে দিয়েছিস এটাই অনেক।
— আচ্ছা।

লাইফে কখনো রিলেশন করি নি তবে কাউকে ভাল লাগে নি সেটা বলবো না। ভাল তো কতজনকেই লাগে তবে আমি সব সময় এই গুলো আকর্ষন হিসেবে মনে করি, যার কারনে লাইফে কখনো প্রেম হয়ে উঠে নি। আমার তো তনুকেও ভাল লাগে। ওর হাসি, ওর রাগ আর আমার পরিবারকে ও খুব ভালবাসে। তবে ও হয়ত আমায় ভালবাসে না। আর তাছাড়া এটা আমার আকর্ষণও হতে পারে।

আজ মেয়ের বাড়ি থেকে কয়েকজন মুরুব্বী এসে আমায় দেখে গেছে। এইসবে অনেকে নার্ভাস হলেও আমি খুব স্বাভাবিক ভাবেই ছিলাম। তবে আজ তনুকে অনেক মিস করছি। অনেক দিন হলো তনুর সাথে কথা হয় না, অবশ্য কয়েকবার দেখা হয়েছে তবে আমি ব্যস্ততার মাঝে থাকায় কথা হয় নি। আজ অনেক দিন পর ছাদে আসলাম। আমাকে দেখে যাওয়ার পর হাতে তেমন কাজ নেই তাই একটু ছাদে এসে বড় বেঞ্চে বসে রইলাম। হঠাৎ তনু এসে চুপচাপ বেঞ্চের অপর পাশে বসছে। আমি ওরে প্রশ্ন করার আগেই তনু আমার দিকে তাকিয়ে রইলো…

— কি হলো তনু? কোন কারনে ডিস্টার্ব মনে হচ্ছে?
— আমার মুখ দেখে কি এটাই মনে হচ্ছে?
— হুমম।
— ও আপনাকে দেখে তো কয়েকটা বাচ্চার বাবা মনে হচ্ছে।
— কিসের সাথে কি প্রশ্ন এটা তনু?
— জানি না। আপনি মুখ দেখে কি সত্যি কিছু বুঝেন না।
— মুখে না বললে এত বুঝার ক্ষমতা আমার নেই।
— সেটাও ঠিক। ভালবাসতেই তো জানেন না আর মুখ দেখে বুঝবেন কেমন করে?
–আমি সত্যি বুঝতে পারছি না তনু?
— আপনার নাকি বিয়ে ঠিক হয়েছে?
— ঠিক বলতে আজ আমাকে দেখতে আসছিল।
— ও আপনারও কি বিয়েতে মত আছে?
— আসলে বয়সও বাড়ছে আর বাসা থেকেও বলছে তাই রাজি হয়েছি। তা না হলে তুলিকে বিয়ে দিয়ে আমি বিয়ে করতাম।
— আচ্ছা ঠিক আছে,করেন বিয়ে?

তনু আর কোন কথা না বলে চুপচাপ চলে গেল আর আমি ভাবচ্ছি তনুর কথা গুলো। আগে কখনো তনু আমার সাথে এমন করে কথা বলে নি আর ও অনেক বুঝে কথা বলে। হঠাৎ এমন কি হয়ে গেল? আমি ছাদ থেকে চলে যাবো বলে উঠে দাড়িয়ে পিছনে ফিরতেই দেখি তনু কান্না করছে।

— এই তনু কি হয়েছে? তুমি কান্না করছো কেন? ও দৌড়ে এসে আমার শার্টের কলার টেনে ধরলো।
— এখনো কি বুঝবে না নাকি বলতে হবে সব?
— ভালবাসো আমায়।
— না বাসি না,এখনই বাসায় গিয়ে বলবে তুমি আমাকে ভালবাসো আর আমাকেই বিয়ে করবে।
— যদি না বলি।
— খুন করে ফেলবো কিন্তু।
— খুন করলে ভালবাসবে কাকে?
— ভালবাসি না না না। তুমি শুধু আমায় ভালবাসবে বুঝলে।
— ওকে এবার চোখ মুছে নাও, এভাবে কান্না করলে দেশে আবার ফনি আসবে।
— হুমম

তনুকে নিয়ে ছাদ থেকে চলে আসলাম। আজ বাসায় বলেই দিবো আমিও তনুকে ভালবাসি। আসলে এটা আকর্ষন না। আর এই বয়সে অবশ্য আকর্ষন হয় না, প্রেমই হয়।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত