নীলা কোথা থেকে যেন হন্তদন্ত হয়ে এসে।
নীলাঃ এই আবির জানিস? আমার বিয়ে ঠিক হইছে।
আবিরঃ Wow what a great news! খাওয়াবি কবে?
নীলাঃ মানে?
আবিরঃ মানে হইলো পার্টি কবে?
নীলাঃ তোর কোনো অনুভূতি নাই? আমি তোর থেকে দূরে চলে যাবো এটা নিয়া?
আবিরঃ কিসের অনুভূতি? ক্যান অনুভূতি? কেমন অনুভূতি?
নীলাঃ এই যে আমরা আর আগের মত দেখা করতে পারবো না আড্ডা দিতে পারবো না এটা নিয়া!
আবিরঃ হুম। কিন্তু আমি তোর বিয়ের পর প্রত্যেক দিন মাঝ রাতে তোকে নিয়ে ফাঁকা রাস্তায় হাটতে বের হবো কিন্তু!
নীলাঃ হ আর আমার যে স্বামী হবে সে তো বসে বসে ললিপপ খাবে
আবিরঃ না তো, সেও যাবে।
নীলাঃ ৩ জন?
আবিরঃ না ২ জন।
নীলাঃ কে কে?
আবিরঃ তুই আর আমি।
নীলাঃ আর আমার স্বামী?
আবিরঃ সে তো থাকবেই।
নীলাঃ কেমনে কি? আজিব হুর নীলা রেগে ওখান থেকে উঠে চলে যায়। আবিরের এই সব ফাইজলামি মার্কা কথা শুনে খুব খারাপ লাগছিলো। বাসায় গিয়েই রুমের দরজা বন্ধ করে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্না শুরু করে। নীলা আবিরকে ভালবাসে আর আবিরের ওর প্রতি কোনো অনুভূতি নেই! দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। নীলা আর আবির খুব ভালো বন্ধু। না না ওরা এক বয়সী না আবির নীলার থেকে ৫ বছরের বড়। তবুও কিভাবে ওদের বন্ধুত্ত্ব হয়েছে সেটা না হয় অন্য দিন বলব? নীলার ফোন বেজে উঠল। আবির ফোন দিছে।
আবিরঃ ঐ তোর বিয়ে জানি কবে?
নীলাঃ ২১ ডিসেম্বর। কেন?
আবিরঃ দোস্ত আমারো বিয়ে ঠিক করছে বাসা দিয়ে। মেয়ে আমার হেব্বি পছন্দ।
নীলাঃ তো কর বিয়া ধইরা রাখছে কে?
আবিরঃ সমস্যা আছে তো একটা।
নীলাঃ কি?
আবিরঃ আমার বিয়ের দিনও ২১ ডিসেম্বরই ঠিক করা হইছে। তোর বিয়েতে যাবো কিভাবে?
নীলাঃ ঠিক আছে আমার বিয়ায় তোর আসতে হইবো না।
আবিরঃ ধন্যবাদ দোস্ত। আমি ভাবলাম তুই রাগ করিস কি না। শুনেই নীলা ফোনটা কেটে দিয়ে আবার কান্না শুরু করলো। আবির কয়েকবার ফোন দিলেও নীলা আর রিসিভ করে নি। এর ৩ দিন পর সিজনে ফোন দেয় নীলা।
আবিরঃ হ্যালো! কি বলবি? তারাতারি বল।
নীলাঃ একটু দেখা করবি?
আবিরঃ ঠিক আছে কাল বিকেল ৪ টায়। আমরা যেখানে আড্ডা দিতাম ওখানে।
বিকেল ৪ টা বাজে নীলা আর আবির ২ জনেই ঐ জায়গায় যায়।
আবিরঃ কি হইছে ডাকলি কেন?
নীলাঃ আজ একটু আড্ড দি আমরা?
আবিরঃ পাগল?
নীলাঃ ক্যান?
আবিরঃ শোন তোরও বিয়ে ঠিক হইছে আর আমারো বিয়ে ঠিক হইছে। আমাদের এখন দেখা করাটা কমাতে হবে। আর আমার হবু বউও চায় না আমি অন্য কোনো মেয়ের সাথে মিশি বা কথা বলি।তাই….
নীলাঃ তাই কি বল? তুই জানিস কথা সম্পূর্ন না করাটা আমার বিরক্তিকর লাগে।
আবিরঃ তুই আর আমাকে ফোন দিবি না।
নীলাঃ আচ্ছা বাই। ভাল থাকিস।
এটা বলেই নীলা কাঁদতে কাঁদতে চলে গেলো। আচ্ছা ভালো নাই বাসতে পারো তাই বলে এত দিনের বন্ধুত্ত্ব একটা ২ দিনের মেয়ের কথায় শেষ? চলে আসে ২১ ডিসেম্বর এর মধ্যে আর ওদের কথা হয় নি। বিয়ের দিন খুব সকালে নীলা আবিরকে ফোন দেয়।
নীলাঃ শেষবারের মত একবার দেখা করবি?
আবিরঃ কই আসবো?
নীলাঃ আমার বাসার সামনে আয়। আবির এসে দেখে নীলা আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে। নীলা ওর মেহেদী রাঙা হাতটা আবিরের দিকে বারিয়ে দিয়ে।
নীলাঃ হাতটা একটু ধরবি? আবির অবাক হয়ে তাকিয়ে।
আবিরঃ জীবনে তো তোর নখটাও ধরতে দিস নাই আর আজ হাত ধরতে বলছিস?
নীলাঃ তোর হাত ধরে এই শিশির ভেজা ঘাসের উপর হাটতে খুব ইচ্ছে করছে।
আবির ওর হাতটা ধরে। তারপর ওরা অনেকক্ষন একসাথে হাটে। এর মধ্যে আবির বক বক করলেও নীলা কোনো কথাই বলে নাই। আবির অনেক অবাক হয় নীলা খুবই বাঁচাল একটা মেয়ে। আর সে এরকম চুপ চাপ! মানা যাচ্ছে না। হাটা শেষ নীলাকে ওর বাসার গেট পর্যন্ত দিয়ে আবির চলে যায়। নীলার বিয়ের কাজ সুস্থভাবেই সম্পূর্ন হয়। খুব সুন্দর ভাবে সাজানো নীলার বাসর ঘর। আর রুমে নীলা একা বসে আছে। মুখে রুমাল চাপা দিয়ে রুমে প্রবেশ করে বর। রুমে ঢুকতেই নীলা হাতে একটা ছুরি নিয়ে। বাংলা ছায়াছবির পদ্ধতিতে।
নীলাঃ খবরদার একদম কাছে আসার চেষ্টাও করবেন না। আসলেই খুন করে ফেলবো।
বরঃ কি বলছো এসব?
নীলাঃ তুই!
বরঃ হ্যাঁ আমি। আমি আবির চিনতে পারছো না?
নীলাঃ তুই এখানে কি করছিস? আর হঠাৎ তুমি করেই বা বলছিস ক্যান?
আবিরঃ আমি আসবো না তো কে আসবে? আর বিয়ের পরেও কি তুই করা বলা যায়? বউকে তো তুমি করেই বলতে হয়।
নীলাঃ বিয়ে? বউ? ক্যামনে কি? কিছুই বুঝতাছি না।
আবিরঃ বারে… একটু আগেই তো, তোমার আর আমার বিয়ে হলো। বরের নাম না দেখেই বিয়ে করে ফেললা?
নীলাঃ মানে? আমার বিয়ে তোর সাথে ঠিক হইছিলো? আর তুই সব জানতি?
আবিরঃ হুম। না জানলে কি তোমার বিয়ে শুনেও এত স্বাভাবিক থাকতে পারতাম? নীলা কিছুই না বলে আবিরকে মারতে শুরু করে প্রায় ৫ মিনিট পর নীলা ক্লান্ত হয়ে বসে পরে।
আবিরঃ চলো
নীলাঃ কই?
আবিরঃ ভূলে গেলা? আমি তোমাকে বলেছিলাম না? তোমার বিয়ের পর তোমাকে নিয়ে মাঝ রাতে ফাঁকা রাস্তায় হাটতে বের হবো?
নীলাঃ যাবো কিন্তু সর্ত আছে।
আবিরঃ কি?
নীলাঃ আমার হাত ধরে হাটতে হবে আর কাঁধে মাথা রাখতে দিতে হবে।
আবিরঃ ঠিক আছে। শুধু আমাকে তুমি করে বললেই হবে।
নীলাঃ হিহিহি ঠিক আছে চলো। এরপর আর কি দুজনে জীবনের নতুন পথ চলা শুরু করলো।