আজ তিনদিন হয়েছে আবিরের সাথে ব্রেকাপ হয়েছে। আমিই ব্রেকাপ করেছি।যথেষ্ট কারণ আছে ব্রেকাপ করার।প্রথম কারন হচ্ছে,আমি বারবার বারণ করার পরেও ও আমাকে জানু,সোনা,বাবু,টিয়া,ময়না,পাখি, কাক,কোকিল,চিল,শকুন,ঈগল ইত্যাদি ইত্যাদি বলে ডাকে!!! আমি ওকে কতবার বলেছি যে,” দেখো আবির! আমার অনেক সুন্দর একটা নাম আছে,কথা।এতো সুন্দর নাম রেখে তুমি আমাকে কি সব ছাইপাশ বলে ডাকো।
আমার কিন্তু এইসব একদম পছন্দ না”।কিন্তু তারপরেও ও ওইসব বলেই ডাকবে আর বলবে,” দেখো পাখি,তুমিইতো আমার ময়না,টিয়া।তোমাকে বাবু বলব নাতো কাকে কোকিল বলব!!!” একবার সহ্য করা যায়, দুইবার সহ্য করা যায়, বারবার!!! নাহ! আর সহ্য হচ্ছিল না। আরেকটা কারণ হচ্ছে ছেলেটা একদম লুইচ্চ্যা টাইপের। আমার সাথে প্রেম করার আগে যে কতশত মেয়েকে প্রপোজ করেছে আল্লাহই ভালো জানে।চেহারা সুন্দর দেখে ভেবেছিলাম ছেলেটা অনেক ভালোই হবে। এতো সুন্দর একটা ছেলে আমাকে প্রপোজ করেছে,দেরি করা উচিৎ হবেনা!!! কিন্তু এখন শুনি আমার কোনো বান্ধবী মনে হয় বাদ নেই যে,আবির প্রপোজ করেনি।আবির নামটা আমার খুব পছন্দ, কিন্তু এইনামের ছেলেরা যে এতো বদ স্বভাবের হয় আগে জানতাম না।
প্রথম ভাবলাম থাক,প্রপোজ করেছে শুধু, প্রেমতো আর করেনি আর ছেলেটাকে কয়দিনে অনেক ভালোও বেসে ফেলেছি তাই আর ছাড়তে পারছিলাম না।কিন্তু ইদানীং আমার নামে আমার বান্ধবীদেরকে আজেবাজে কথা বলে বেড়ায়। “কথা এই করে,কথা ওই করে,কথা এই শোনেনা,কথা ওই শোনেনা,কথার সাথে প্রেম করে জীবনটা শেষ হয়ে গেলো”আরো অনেক কিছু।আর আমি জিজ্ঞেস করলেই ভালো মানুষের মতো বলে যে,”আরে সোনা! তোমার নামে আমি এইসব বলতে পারি তোমার বান্ধবীরা আমাকে সহ্য করতে পারেনা।আমি দেখতে অনেক সুন্দর না।তাই ওরা তোমাকে হিংসা করে এইসব কথা বলে”। প্রথম প্রথম আমিও ভাবতাম যে,হয়ত আমার বান্ধবীরা মিথ্যা কথাই বলে।কিন্তু নায়লা সেদিন যখন মেসেজ দেখালো যে আবির ওকে লিখেছে, ” আর বলোনা নায়লা,তোমার বান্ধবীতো সারাক্ষণ আমাকে সন্দেহ করে বেড়ায়।
আমার মতো একটা ছেলেকে বি এফ হিসেবে পেয়ে ওর গর্ব করার কথা যে,ওর মতো একটা ক্ষ্যাত মেয়ের সাথে আমি প্রেম করি,তা নয় আমার সাথে ভাব দেখায়।” মেসেজটা দেখে আমার রাগে মনে হচ্ছিল যে,ওই আবিরের বাচ্চা আবিরকে গলা টিপে হত্যা করি। এতো বড় সাহস আমাকে ক্ষ্যাত বলে।প্রেম করার আগেতো খুব প্রশংসা করত,আর এখন!!! আমি পুরাতন হয়ে গেছি!!ক্ষ্যাত হয়ে গেছি।ভালো না।আর সহ্য করিনি।আমার বান্ধবীর ফোন থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে,আবিরকে পাঠিয়ে ইচ্ছামত গালাগালি করে ব্লক করে দিছি আর এটাও বলে দিয়েছি আর কখনো যেন আমাকে ফোন না করে। ওই আমার এক বছরের সিনিয়র। ডিপার্টমেন্ট এর বড় ভাই। বলেছি ভুলেও যেন কোনোদিন আমার সামনে না পরে, তাইলে যে কি করব,আমি নিজেও জানিনা।ব্লক দেওয়ার পরেও ফোনের পর ফোন করেই যাচ্ছে।
আমাদের রিলেশনের বেশিদিন হয়নি।মাত্র ছয়মাস।এর মধ্যে ডিপার্টমেন্ট আর ক্যাম্পাস ছাড়া বাইরে মোট তিনবার দেখা করেছি,তাও আবার ষ্টেশনে,দুজনে হাত ধরে পাশাপাশি হেটেছি।জায়গাটা আমার ভালোই লাগে,বিকেলের দিকে, নিরব পরিবেশ। এটাও ওর পছন্দ হতোনা,ও বলে যে,” ধুর! এইটা কোনো ঘোরার জায়গা হইল।সবাই কত ঘুরাঘুরি করে,আর তুমি বেরই হতে চাওনা”।মানে আমার সবকিছুতেই ওর সমস্যা আর ওর সব কিছুতেই আমার সমস্যা।আমি এখন অবাক হয়ে যাচ্ছি যে ওই ছেলেটার সাথে ছয়মাস কিভাবে কাটালাম!!! কিন্তু নাহ! এই তিনদিন বড্ড মিস করছি।হয়ত সত্যি ছেলেটাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি।কিন্তু ওই মেসেজ আর অন্যন্য কথাগুলো মনে করে আবার রাগও হচ্ছে খুব। রাগের কাছে ভালবাসাগুলো হার মেনে যাচ্ছে। এফ বিতেও বেশি থাকতে ভালো লাগেনা।আজ রাতে মেসেঞ্জারে ঢুকতেই দেখি ‘ক্লান্ত বালক’ আইডি থেকে একটা মেসেজ,”সরি বাবু! মিস ইউ।প্লিজ ব্লক ছাড়াও।
এইটা আমার এক ফ্রেন্ড এরএর আইডি।কথা বলব তোমার সাথে।ডিপার্টমেন্টে তোমার সামনে যাইনা, তোমাকে খুব ভয় লাগে”। মেসেজটা দেখে খুব মায়া হলো,ভাবলাম ব্লক ছাড়াই।কিন্তু যখনি খেয়াল করলাম যে,বাবু লিখেছে মেসেজে,তখনি আবার রাগ হতে লাগল।ওই আইডিটাও ব্লক দিলাম।রাতে আর ভালো ঘুম হয়নি। সকালে উঠে দেখি আরেকটা আইডি থেকে মেসেজ,” সোনাবাবু প্লিজ,ব্লক ছাড়াও।এমন করো কেনো!!! আমি তোমাকে খুব মিস করছে।ভালবাসিতো তোমাকে আমি। প্লিজ!!! ” এইবারও খুব মায়া লাগছিল,কিন্তু আবারও সেই সমস্যা, মেসেজের শুরুতেই সোনা আবার বাবু লাগিয়েছে। আবার ওই আইডিটাও ব্লক করলাম।আর আবিরের উপর এতো রাগ হচ্ছিল,কিন্তু কিছুই করার নেই।
সারাদিন ক্লাসে ছিলাম,কিন্তু আবিরকে খুব মিস করছিলাম।বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরলাম।খেতে ইচ্ছা করছিল না,কেনো জানি আমার মনে হচ্ছিল যে,আবির আবার অন্য আইডি থেকে মেসেজ করেছে।সত্যি তাই,মেসেঞ্জারে ঢুকতেই আবার আরেকটা আইডি থেকে মেসেজ,” ওই ছেমড়ি মেসেজের রিপ্লাই দিস না কেনো??? কিসের এতো ভাব তোর!!! সামনে পাইলে থাপড়াইয়া সবগুলা দাত ফালাইয়া দিতাম।আমার সাথে ভাব দেখাস।একবার ব্লক ছাড়া আর সাহস থাকেতো আমার সামনে এসে কথা বল।যত সব ঢং”। এইবার মেসেজটা দেখে আমার প্রচুর রাগ হচ্ছিল।ভাবলাম ইচ্ছামত গালি দিব।কিন্তু এইবার দেখি ওই আমারে ব্লক দিয়ে রাখছে আরো রাগ হল।দিলাম ফোন।ফোনটা রিসিভ করে আবির চুপ করে আছে।আমিই কথা বললাম আগে..
_ওই তোর সমস্যা কি???
_একটু দেখা করতে পারবা???
_কই তুই এখন????
_ক্যম্পাসেই আছি।প্লিজ আসো।
_ওকে।তুই ওইখানেই থাক।
আমি গেলামতো অনেক ঝাড়ি দেবো ভেবে।গিয়ে দেখি ও নেই সেখানে,যেখানে থাকার কথা। কিন্তু মোটা আম গাছটায় অনেক সুন্দর করে গাছ কেটে “কথা সরি ” লেখা। ভালই লাগছিল।লেখাটা পড়েই মনের অজান্তেই হেসে দিলাম।আরেকটু সামনে যেতেই দেখি আবির মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।পুরো চারদিন পর আবিরকে দেখছি। কি কি বলে গালি দিবো ওকে দেখে আবেগে সব ভুলে যাচ্ছি। তারপরেও নিজেকে কিছুটা কন্ট্রোল করে বললাম যে,
_ কি ব্যাপার লাস্ট কি যেন মেসেজ করেছো সামনে পেলে কি করবে?? আবির চুপ।আমি আবার বললাম।
_ওই বলো।এখন চুপ করে আছো কেন?
_ভালোভাবে বললেতো শোনোনি।
তাই ওই মেসেজগুলো আমার ফ্রেন্ড লিখেছিল।ভয়ে আমি তোমাকেই ব্লক দিয়ে দিয়েছি।ভালবাসি তোমাকে, বোঝোনা কেনো।ভুল হয়ে গেছে ক্ষমা করে দাও।তুমি যেভাবে বলবে, সেভাবেই তোমার সাথে কথা বলব। প্লিজ। কথাগুলো শুনে আর ওর মায়াবী মুখখানা দেখে আমিও ভুলে গেলাম যে,আমি ওর সাথে ঝগড়া করতে গেছিলাম। ঝগড়া বাদ দিয়ে এই চারদিন আমার কিভাবে কেটেছে,কি কি করেছি তাই বলতে শুরু করে দিলাম।আর ভাবতে লাগলাম যে,ওর সাথে ব্রেকাপ করব কি,ওর সাথে কথা না বললে যে,এই কথা বোবা হয়ে যাবে।