অফিস থেকে বাসায় ফিরতে মুন্নিয়া বললো আহনাফ তোমার সাথে আমার আর থাকা সম্ভব হচ্ছে না!
–মানে কি? কি বলতে চাচ্ছো ক্লিয়ার করে বলো?
—মানে খুব সোজা আমি আলাদা হয়ে যাব
–আলাদা হবা কেন, এখানে তো তোমার শ্বশুরবাড়ির কেউ নেই
–গাধা গাধা_ই থাকে, আমি ডিভোর্স দিবো তোমাকে!
মুখে ভাত দিয়েছিলাম, মাত্র খেতে বসলাম, উপরোক্ত কথা গুলোর শেষ কথাটা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম, মুন্নিয়ার দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছি। ভালোবেসে বিয়ে করে দশবছর সংসার করে শেষে কিনা এই পরিনতি হতে যাচ্ছে!!
–বেশ কবে দিচ্ছো ডিভোর্স
–আমার একজনের সাথে কথা হয়েছে, সব কিছু রেডি আছে চাইলে গতকাল দিবো, মানে আমরা দুজনে উকিলের বাসায় বাসায় যাবো।
–আচ্ছা সকালে রেডি থেকো তাহলে?
তারপর দুজন খাটের দুপাশে শুয়ে পড়লাম।দুজন দু মেরুর বাসিন্দা, এই কালও দুজন আধপৃষ্টে জড়িয়ে ছিলাম, রাত্রী নিদ্রাকালে বছরের পর বছর একে অন্যের মাঝে মিশে থাকতাম, জড়িয়ে রাখতাম খুব শক্ত করে।। রাত্রী বাড়তেছে, সময় এগিয়ে যাচ্ছে, মুন্নিয়ার সাথে পথচলা আমার শেষের দিকে। মুন্নিয়া আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার যথেষ্ট কারণ ও আছে? প্রতিটি মেয়ে ই চায় বিয়ের পর মাতৃত্বের স্বাদ গ্রহন করতে।মেয়েরা যখন মাতৃত্বের স্বাদ পেয়ে যায় তখন তাদের ওপর দিয়ে ঝড় তুফান বয়ে গেলে ও একবিন্দু ও নড়েচড়ে না শুধু মাত্র সন্তানের কারণে। আর এই মাতৃত্বের স্বাদ টা আমি মুন্নিয়াকে দিতে পারিনি। গত একবছর ধরে তিন তিন বার দুজনে পরীক্ষা করেছি, সেখানে প্রতিবার ই মুন্নিয়ার পজিটিভ দিক আসছে, শুধু আমার নেগেটিভ।
গত সপ্তাহে ও একবার পরীক্ষা করিয়েছিলাম, ফলাফল সেই আগের মতোই, কালকে ডিউটিতে যাওয়ার সময় টেবিলের ওপর কাগজ গুলো রেখে গিয়েছিলাম।হয়তো সেটা মুন্নিয়ার চোখে পড়েছে। তাই বুদ্ধিমানের পরিচয় দিয়ে সরে যাচ্ছে, মুন্নিয়া কেন হয়তো মুন্নিয়ার জায়গায় অন্য কেউ হলে ও একিই কাজ করতো। আজ অনেক দিন পর না অনেক বছর পর বুকের ব্যথাটা উঠেছে, সেই শেষ উঠেছিলো মুন্নিয়ার সাথে রিলেশন থাকা অবস্থায়, মুন্নিয়াকে হারানোর একটু ভয় চেঁপে বসলে তখন ব্যথাটা করতো।না আজ আর ঘুম হবেনা,, বেলখনিতে গিয়ে একটু বসি। মুন্নিয়া পেশায় একজন নার্স, ঢাকায় নামি একটা হাসপাতালে জব করে, আমিও জব করি, যা ইনকাম হয় ভালোয় চলে যায় দুজনের, সংসার গুছানোর জন্য মুন্নিয়াকে না করে দিই, মুন্নিয়া ও সায় দিয়ে সংসারে মনোযোগী হয়।
মুন্নিয়ার সাথে আমার পরিচয় হাসপাতালে, আমার বন্ধুর নিকট আত্মীয় একজন কে রক্ত দিতে গিয়েছিলাম, তখন রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টা হবে, বেডে শোয়ার পর একজন নার্স আসলো সুইচ পুষ করতে,, চোখ পড়লো নার্সের মুখের দিকে, এত্তো মায়াবী চেহারা এর আগে কখনো দেখেছি বলে মনে হয়, আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা একটা পরী, মাথায় হিজাব বাঁধা, গায়ে সাদা এপ্রণ, গলায় নীল একটা ওরনা,প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে যাই। সেদিন রক্ত দিয়ে চলে আসি। পরেরদিন বাচ্চা দেখতে যাই, হাসপাতালে যাওয়ার পর শুনেছিলাম প্রসূতি মায়ের অপারেশনের জন্য রক্ত প্রয়োজন ছিলো।
বাচ্চার মায়ের পাশে বাচ্চাটিকে শুয়ে রাখা হয়েছিলো, ডাক্তার এসেছে বাচ্চা মাকে ইনজেকশন দিবে। তাই ডাক দিয়ে বলল “মুন্নিয়া বাচ্চাটাকে একটু ধরো তো ” তখন বুঝেছিলাম এই নার্সের নাম মুন্নিয়া।বাচ্চাটাকে কোলে নেওয়ার পর মুন্নিয়াকে ও একদম বাচ্চার মতোইই লাগতেছে,মনে হয় এর আগে কখনো বাচ্চা দেখেনি বা বাচ্চা কোলে নেয় নি। ছোট বেলায় দেখেছি কাজিন দের আম্মু বা চাচিরা কোলে নিলে কতরকম কথা বলে, কিন্তু মুন্নিয়া পারছে না হাসপাতাল বলে, ঠিকই মুখে কি যেন বিড় বিড় করতেছে। ইনজেকশন পুস করতেই ডাক্তার বললেন”মুন্নিয়া তুমি বাচ্চাটাকে দিয়ে আসো কে আছে দেখো গিয়ে, বাচ্চার দাদু একটু বাসায় গেছে গত তিনদিন ধরে গোসল দেন নি, আমার বন্ধু একটু বাহিরে গেছে।
–এই যে আপনি সেদিন রক্ত দিয়েছিলেন, বাচ্চার কে আছে বলতে পারবেন কাউকে দেখতে পাচ্ছিনা? ((এই টা কি কণ্ঠে কথা গুলো শুনলাম, এতো সুন্দর কণ্ঠ কি করে হয়, আমি নিশ্চিত ও যদি কোন গানের কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করতো তাহলে চ্যাম্পিয়ন হতো) )
–দেন ওকে আমার কোলে দেন
(ওর হাবভাব দেখে বুঝলাম ডাক্তারের বলা কথার জন্য ও খুজতেছে বাচ্চার আপনজনদের, নিজ থেকে চাচ্ছে না বাচ্চাটাকে ওর কোল থেকে নামাতে)
–না থাক একটু,
–আপনি কিন্তু ভিষন সুন্দর আর ভয়েস টা ও দারুণ (একটু ফ্লাট করলাম) প্রতিউত্তরে মুন্নিয়া কিছু বলেনি একটু মুচকি হাসলো
–আপনি মনে হয় এর আগে কোন বাচ্চা কে কোলে নেন নি তাই না মেম
–জ্বী আসলে এখানে আমি নতুন এসেছি, ইর্ন্টার্নি শেষ করলাম কিছুদিন, আর ডাক্তার টা হচ্ছে আমার আংকেল, তাই আমাকে এখানে রেখে গেছে।
–আপনার বাচ্চা খুব ভালো লাগে তাই না
–হুম ভিষন প্রিয়,
এর মধ্যে অফিস থেকে ফোন আসাতে সেদিন চলে আসলাম। এরপর আর যাওয়া হয়নি হাসপাতালে, শুনেছিলাম বাচ্চাকে নিয়ে বাসায় চলে গেছে, এরপর কাজে মনোযোগ দিলাম, সপ্তাহ খানেক অতিক্রম ও হয়ে গেলো, অফিস শেষ করে বাসায় এসে গোসল দিয়ে একটু শুয়েছিলাম, এর মধ্যে মোবাইল টা বেজে উঠলো, নাম্বার ছিনিনা, তাই রিসিভ করিনি, তিনবারের মাথায় রিসিভ করলাম
–হ্যালো কে বলছেন
–চুপ
–হ্যালো কথা বলতেছেন না কেন
–এইবার ও চুপ
–হ্যালো কে আপনে? ফোন দিয়ে কথা বলছেন না কেন
–চুপ
–আচ্ছা আমি রাখলাম
–ওপাশ থেকে ভেসে আসলো, এই রাখবেন না প্লিজ, আমি বলতেছি (কোকিল কণ্ঠের একটা মেয়ে বলল)
–আমি টা কে
–ভুলে গেলেন এতো তাড়াতাড়ি
–আপনাকে তো ছিনিই না ভুলবো কিভাবে বলেন?
–আমি মুন্নিয়া হাসপাতালে যাকে দেখেছিলেন, এইবার মনে পড়েছে
(আমি পুরো ৪৪০ ভোল্টের শকড খেলাম, মুন্নিয়া আমাকে কল দিয়েছে, খুশীতে কি করতে ইচ্ছে করছে সেটা জানিনা এখন)
–হুম মনে পড়েছে, কেমন আছেন আপনি
–হুমমম ভালো আর থাকি কিভাবে বলেন (রহস্যের গন্ধ পেলাম)
–কেন কি হয়েছে
–আপনি তো আমাকে ভুলে ই গিয়েছেন?(গাল ফুলানোর ভাব)
–আসলে কাজের প্রেসারে আছি তো
–সেটা জানি, আপনার বন্ধু আদিয়ান বলেছে
–আপনি আদিয়ান কে ছিনেন
–চিনবো না কেন আদিয়ান হলো আংকেলের বন্ধুর ভাগিনা।
–আপনি আমার নাম্বার ও আদিয়ান থেকে নিয়েছেন?
–হ্যাঁ,
–কেন নিয়েছেন
–কারণ আপনি আমাকে পছন্দ যে করেন সেটা আমি বুঝে গেছি, তাই সেদিন আগ বাড়িয়ে কথা বলতে এসেছিলেন
–আর কি কি জানেন
–হুমমম আপনি আমাকে ভালোবাসেন সেটা ও জানি
এরপর আমাদের কথা বলা কন্টিনিউ হলো, মুন্নিয়া বাসায় গেলে সারাক্ষণ কি করে না করে সব বলতো, মুন্নিয়ার পছন্দ গুলো জেনে নিলাম, সপ্তাহে একদিন দেখা করা নিয়ম করে। দুজন ডুবতে থাকলাম ভালোবাসার অথৈয় সাগরে, গভীর মগ্ন হয়ে গেলাম দুজন দুজনাতে। ভালোবাসা সুন্দর তো পৃথিবী রঙিন হয়ে যায়। দুজনে বুনতে শুরু করলাম লাল নীল শতরঙের স্বপ্নজাল। মুন্নিয়া একদিন ফোন দিয়ে বললো দেখা করতে খুব জুরুরী, আমিও গেলাম যথাসময়ে, দুর থেকে দেখলাম মন মরা হয়ে বসে আছে মুন্নিয়া,
–সরি জানু একটু লেট হয়ে গেলো (মুন্নিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি, চেহারার কি অবস্থা, চোখ গুলো ও ফোঁলা)এই তোমার এই অবস্থা কেন, কি হয়েছে, বাসায় কিছু হয়েছে
–আহনাফ আমাকে বিয়ে করবে
–কেন করবো না করবো তো
–চলো এক্ষুনি বিয়ে করবো
–এখন
–কেন কোন সমস্যা আছে তোমার
–না কোন সমস্যা নেই, তার আগে বলো নিজের এই অবস্থা কেন করেছো, কি হয়েছে আমাকে খুলে বলো
হুহু করে কান্না শুরু করলো মুন্নিয়া
–এই কি হয়েছে বলবে তো, না বললে আমি বুঝবো কিভাবে তোমার এই অবস্থা কেন ডান হাত টা চেঁপে ধরে মুন্নিয়া শুরু করলো
–বাবা ফোন দিয়ে বলে বাসায় যেতে, আম্মু নাকি অসুস্থ, আমিও গেলাম
–তারপর
–বাসায় গিয়ে দেখি আম্মু সুস্থ আছে, আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য ছেলে ঠিক করেছে, আর ছেলের পরিবার আমাকে দেখতে চেয়েছে তাই বাড়িতে নিয়ে গেছে মিথ্যে বলে
–দেখতে তো এসেছে বিয়ে তো আর ঠিক হয় নি
–না ছেলেদের আমাকে পছন্দ ও হয়েছে
–পছন্দ হবে না কেন বলো, তোমার মতো সুন্দর গুনবতী মেয়ে তোমাদের দশগ্রাম খুজলে পাওয়া যাবে বলো
–এই একদম ফান করবানা
–তুমি বাসায় গেছো আমাকে বলোনি যে
–আমি ভেবেছি আম্মুকে দেখে আবার চলে আসবো
–বিয়ে ঠিক কবে হবে
–জানিনা, মিথ্যে বলে চলে এসেছি ঢাকায়
–তারপর
–তারপর আর কি, চলো বিয়ে করবো
–না করলে হয় না
–আমি কিন্তু (বলে মুন্নিয়া আবার কান্না শুরু করলো)
–আচ্ছা কান্না বন্ধ করো, এই নাও টিস্যু, আমি আদিয়ান কে ফোন দিচ্ছি আসতে
সেদিন সাদামাটা ভাবে আমরা বিয়ে টা করে ফেলি। মুন্নিয়া বাড়িতে জানিয়ে দেয় যে আমরা বিয়ে করে ফেলেছি।
বিয়ের একমাসের মাথায় মুন্নিয়াকে নিয়ে তাদের বাড়িতে যাই, সবাই মেনে নিলে ও সেদিন মুন্নিয়ার বাবা মেনে নিতে পারেনি। উনার একটাই কথা যে মেয়ে তার মানসম্মান নিয়ে খেলা করেছে, তাকে আর কখনো মেয়ে বলে পরিচয় দিবেন না। মুন্নিয়ার বাবার একটাই কথা, যেদিন আমাকে ছাড়তে পারবে সেদিন ওকে মেনে নিবেন। এরপর মুন্নিয়া আমাকে ছাড়েনি মুন্নিয়ার বাবা ও আর মেনে নেয় নি। তারপর আমরা একটা চিলেকোঠার বাসায় উঠে যাই। শুরু হয় সংসার জীবন। বসে আছি উকিলের বাসায়, মুন্নিয়াকে দেখে মনে হয় আমাকে ছেড়ে যেতে একটুও কষ্ট হচ্ছে না, উকিল সাহেব ফোনে কার সাথে যেন কথা বলতেছেন। কথা শেষ হওয়ার পর উকিল সাহেব বললেন
–আপনি ভেবে চিন্তে ডিভোর্স দিচ্ছেন তো (মুন্নিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন উকিল সাহেব)
–হ্যাঁ (মুন্নিয়া) (মুন্নিয়ার হ্যাঁ বলার সাথে সাথে চোখ থেকে দুফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়লো, এই মাঝ বয়সে এসে ও কান্না করছি আমি)
–আপনার কিছু বলা আছে আহনাফ সাহেব (উকিল)
–নাহ
–আচ্ছা এখানে সাক্ষর করে দিন (মুন্নিয়ার দিকে সেপারেশন পেপার দিয়ে) মুন্নিয়ে গড়গড় করে সাক্ষর করে দিলো।
একটা সাক্ষরে দুটি জীবন আলাদা হয়ে গেলো, সব অধিকার ধুয়ে মুচে গেলো। সেপারেশন পেপারে আমি সাইন করিনি, পরে করবো বলেছি, করে পাঠিয়ে দিবো। মুন্নিয়াকে নিয়ে বাসায় আসলাম, বলে দিলাম তার সবকিছু গুছিয়ে নিতে, পাশের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম, আজ আমার তৃষ্ণা পেয়েছে, ভিশন তৃষ্ণা, তবে কিসের তৃষ্ণা সেটা বুঝে উঠতে পারছিনা। মুন্নিয়াকে হারিয়ে ফেলবো কখনো কল্পনা ও করতে পারিনি,, ছোট্ট করে একটা চিঠি লিখলাম দুলাইনের প্রিয় মুন্নিয়া ভালোবাসি, ভালোবাসতাম, আর সবসময় ভালোবাসবো, যেখানে যাও ভালো থেকো।
ইতি তোমার পাগল মুন্নিয়া ডাক দিলো তার গোছানো শেষ এবার বিদায় হয়ে যাবে আমার কাছ থেকে, রুমে এসে আবারও তাকিয়ে আছি আমার আগের সেই মুন্নিয়ার সাথে এই মুন্নিয়ার নুন্যতম মিল খুজেঁ পাচ্ছিনা। আমার আগের মুন্নিয়া কত কোমল স্নিগ্ধ নমনীয় ছিলো। আর এই মুন্নিয়াকে মনে হচ্ছে পাষাণ নিষ্ঠুর, যে অবহেলায় আমাকে একা করে চলে যাচ্ছে, শূন্য খাঁচা ফেলে। যাওয়ার সময় একটি বার ও পিছনে ফিরে তাকালো না। দশবছরের সংসার জীবন, তিনবছরের ভালোবাসা, সবকিছুতে এখন মরিচিকা।
বাসার নিচে নেমে একটা রিক্সা নিয়ে চলে গেলো, কোথায় যাবে কি করবে, কিছুই বলে যায় নি, হয়তো বলার প্রয়োজন মনে করেনি, বা নতুন সুখের সন্ধান পেয়েছে। আজ আমাকে ঘুম চেঁপে বসেছে, চোখ কোন মতেইই খোলা রাখা সম্ভব হচ্ছেনা, তাই শুয়ে পড়লাম। আর কিছু বলতে পারিনা। সন্ধ্যায় ঘুম ভেঙেছে তবে নিজের ওপর ভারি কিছু পড়েছে মনে হচ্ছে, আমাকে আধপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। চোখ খুলে চক্ষু চড়কগাছ। মুন্নিয়া আমার বুকে শুয়ে আছে। ওর না চলে যাওয়ার কথা। মুন্নিয়াকে সরিয়ে উঠে বাথরুমে চলে গেলাম। বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি মুন্নিয়া বসে আছে খাটের ওপর কাগজ কত গুলো আমার দিকে রাগী মুড নিয়ে তাকিয়ে বললো
–এগুলো কি
–কি এগুলো
–বুঝতে পারছিস না এগুলো কি (বিয়ের দশবছরের মাথায় এই প্রথম মুন্নিয়া তুই করে বললো)
–না পারছিনা, আর তুমি এখানে কেন, তোমার না চলে যাওয়ার কথা?
–চলে গেলে খুব খুশী হইতি তাই না
–সেটা কি বলেছি আমি
–না বললে সব সত্য আমার থেকে লুকালি কেন,?
–কি লুকিয়েছি
–এই দুইটা রিপোর্ট দেখ, একটায় লেখা আছে আহনাফ শারীরিক সমস্যার কারণে কখনো বাবা হতে পারবেনা।
–ঠিক তো
–আর এখানে লেখা আছে মুন্নিয়া কখনো মা হতে পারবে না
–তোমার টা মিথ্যে আমার টা সত্যি
–কোন টা সত্যি সেটা আমি জেনেই আবার এখানে এসেছি
–কি জেনেছো
— ডাক্তার আলফাজ আহাম্মেদ আমাকে সব বলে দিয়েছে
–কি বলেছে
–মাথা ব্যথা হওয়াতে ফার্মেসী তে গিয়েছিলাম, ওখানেই দেখা হয় উনার সাথে, আর শুরু তে উনি আমাকে বলেছেন আরে মিসেস আহনাফ, কেমন আছেন, আমার স্বামী কি আর একটা বিয়ে করেছেন
–জ্বী ভালো, জানিনা বিয়ে করেছে কিনা, তবে আমি ডিভোর্স দিয়ে চলে যাচ্ছি ওকে ছেড়ে
–কেন চলে যাচ্ছেন, বিয়ে করে বৌ বাসায় এনেছে নাকি
–ওকে কোন মেয়ে বিয়ে করবে
–মানে
–আহনাফ কখনো বাবা হতে পারবেনা, এটা জানার পর কোন মেয়ে ওকে বিয়ে করবে বলেন
–আপনি ভুল জানেন মিস মুন্নিয়া
–কি ভুল
–আহনাফ বাবা নয় বরং আপনি মা হতে পারবেন না। সেদিন টেস্ট করার পর আহনাফ সাহেব আমাকে বলেছে সব, উনার রিপোর্ট টা পজেটিভ না করে নেগেটিভ করতে। সেটা কেন বলেছে জানেন
–না
–কারণ আপনাকে আহনাফ প্রচন্ড ভালোবাসে, উনাকে বিয়ে করার পরামর্শ দিয়েছিলাম, উনি বলেছেন ভালো একজন কে বাসেন আর সেটা আপনি। আপনার জায়গায় কখনো অন্য কাউকে বসাতে পারবেন না।
তারপর
–তারপর তোমার কাছে আসার ইচ্ছে ছিলো না আমার, কেননা আমি তোমার সাথে অবিচার করেছি সত্য টা না জেনে।
–ও
–আহনাফ তোমাকে আজ একটা সত্যি কথা বলি, তুমি অফিসে চলে গেলে আমি একটা ছেলের সাথে মেসেজ করতাম, কখনো দেখিনি তাকে, তার নেশায় আশক্ত হয়ে গিয়েছিলাম, ভাবলাম তোমাকে তো ঠকালাম তাকে সত্যি টা বলে দিই তারপর কি বলে (মুন্নিয়া)
–তারপর
–সব সত্য জানার পরে বললো আমাকে বিয়ে করতে পারবে না ও
–তারপর
–পরোক্ষনে বুঝলাম ওর প্রতি আমার একজাতীয় মোহ জেগেছিল, তোমার মতো ভালোবাসা কারও কাছ থেকে আশা করতে পারবো না, পেছনের দিন গুলোর কথা মনে উঠতেই আমি বুঝতে পারলাম আমি ওকে নয় তোমাকে ভালোবাসি।
–এখন যাদের তোমাকে ফিরিয়ে দিই, পেপারে সাক্ষর টা করে কি করবে তখন
–আত্মহত্যা করবো
–ওকে তাই করো(ডয়ার থেকে পেপার টা নিয়ে) মুন্নিয়া অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে আছে, হয়তো ভাবতে পারেনি তাকে আমি ফিরিয়ে দেব। ঘুরে দাড়িয়ে হাঁটা দিলো মুন্নিয়া। দু কদম আগাতে ডাক দিলাম
–মনিইইইইই পেছন ফিরতেই সেপারেশন পেপার টা ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেললাম। অমনি মুন্নিয়া দৌড়ে এসে ঝাঁপ দিলো আমার ওপর।
–তুমি ভাবলে কিভাবে তোমাকে ছেড়ে দিবো আমি
–সরি আহনাফ
–তোমাকে কখনো বুঝাতে পারিনি কতটা ভালোবাসি, আজ বুঝলে তো ভালোবাসাটা
–হুম
–সন্তান ই কি সব বলো, আজ এতো বছর আঁকড়ে ধরে তোমায় ছিলাম এখন দুরে কিভাবে থাকি বলো, তোমাকে ছাড়া আমি বড্ড অসহায় এটা কেন বুঝোনা। লাগবে না আমাদের সন্তান। আল্লাহ দিলে হবে, না হলে এভাবে জীবন অতিবাহিত করবো দুজনে।
–হুম।
–মনি উপরের দিকে তাকাও মুন্নিয়া উপরে তাকা তে ই আর বলা যাবে না…
সমাপ্ত