–সবে মাত্র সাত দিন হলো বিয়ে করেছি।বিয়ে যে করেছি নিজের কাছে মনে হচ্ছে না।মনে হচ্ছে বিবাহিত ব্যাচেলার।এখনো নিজের কাজ নিজে করি, আর না হয় মা করে দেয়।বিয়ে করেছি কিন্তু বউয়ের স্পর্শ এখনো পাইনি,পাবোই বা কিভাবে বউ যে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায়। কী ভাবছেন আপনারা,আমি কালো,কিংবা বউ পেটাই, আসলে সেটা না,আমার বউয়ের অনেক লজ্জা। আহা কথাটা শুনলেই আমারও কেমন জানি লজ্জা পাই।যেই মেয়ে বিয়ের পরেও স্বামীর কাছে যেতে লজ্জা পাই,তাকে আর কী বলবো।অনেক কিছুই তো শুনলেন,আরো বলবো অফিস থেকে ঘুরে আসি—
–মা,ওমা,কই তুমি?
–মা এখানে নেই।
–কই গেছে?
—কাজে আছে,তাই আমাকে পাঠালো।কিছু দরকার কী?
–মা কে গিয়ে বলো আমার অফিসের ফাইল টা পাচ্ছি না।
—ফাইল টা ড্রয়ারে রাখা আছে।
—কে রাখছে ওখানে?
—আমি রাখছি।
কথাটা বলেই রূপন্তী দ্রুত পায়ে হেটে চলে গেলো,ও আপনাদের তো বলাই হয়নি রূপন্তীই আমার বউ।যদিও বউ বলতে কেমন জানি লাগছে। আর আমি মাহিন,একটা বেসরকারি কম্পানিতে চাকরি করি।সব কিছু গুছিয়ে বের হলাম অফিসের দিকে। অফিসে ঢুকতেই আমার কলিগ বলতে লাগল-
–আরে মাহিন সাহেব,আপনি অফিসে?
–কেনো অফিসে আসা নিষেধ আছে নাকি আমার?
–না সেটা বলিনি,আপনি তো বিয়ে করছেন?
—বিয়ে তো আপনিও করছেন,তাতে সম্যসা কী?
—সম্যসা টা হলো আমি অনেক আগে বিয়ে করছি,আর আপনি সবে মাত্র কিছুদিন হলো।
–তা সম্যসা টা কোথায়?
—সম্যসা হলো আপনার ছুটি দশদিন আর আপনি সাত দিনের মাথায় অফিসে।
বউয়ের সাথে কী ঝগড়া করে আসছেন নাকি? এই সেরেছে আমার নিজেরই তো মনে নেই দশ দিনের ছুটিতে ছিলাম,কিভাবে মনে থাকবে,বউয়ের সাথে একটু ভাব ভালবাসা তৈরি হলে না হয় অফিসের কথা ভুলেই যেতাম।কী লজ্জার বিষয়।
—কী মাহিন সাহেব কী ভাবছেন?
—না,না,তেমন কিছু না।আসলে ভুলে গেছিলাম।আচ্ছা থাকেন।আমি বাসায় যায়।
যাক গে তেমন কেউ দেখেনি,না হলে যে কী হতো।অল্পেতে বেচে গেছি।লজ্জা তে মরে যাই,মরে যাই।বউয়ের মত লজ্জা যেনো না আসে আবার। কী আর করার শেষমেষ বাসায় ফিরে এলাম।বাসায় এসেই বা কী করব,না পারবো বউয়ের সাথে রোমান্স করতে না পারবো অন্য কিছু করতে।এতো লজ্জা যে কই রাখে।এই লজ্জাটাই দেখছি আমার জীবনটার তেরো টা বাজাবে।
—কী ব্যাপার বাসায় ফিরে আসলেন যে? [পিছনে তাকিয়ে দেখি বউ মানে রূপন্তী লাজুক কন্ঠে জানতে চাইছে]
—আমিও হাসি হাসি মুখে বললাম- কী করব,খুব লজ্জা লাগছিলো যে।
—ধূর কী যে বলেন না,লজ্জা তো মেয়েদের থাকে,ছেলেদের আবার লজ্জা থাকে নাকি।
[রূপন্তীর কথা শেষ না হতেই জড়িয়ে ধরে একটা চুমু দিলাম কপালে,বউ তো একবার আমাদের দিকে তাকায় আবার নিচের দিকে তাকায়]
–এই কী করলেন এসব,লজ্জা সরম নেই বুঝি? [রূপন্তী]
—তুমিই না মাত্র বললে ছেলেদের নাকি লজ্জা সরম নেই।
—ধূরর আপনি একটা অসভ্য।
—বউ কে চুমু দেয়া যদি অসভ্য হয় তাহলে কাল থেকে সভ্য কাজ করবো।
—কী করবেন শুনি?
—বাইরের মেয়েদের কে চুমু দিবো।
—এই দেখেন মোটেও এমন করবেন না।অন্য কোন মেয়ের দিকে নজর দিবেন না।শুধু আমার দিকে নজর দিবেন।
—নজর দিয়ে কী করব।যদি চুমু দিতে না পারি।
–ঠিকআছে প্রতিদিন একটা করে চুমু দিবেন।তবে একটাই কিন্তু..
কথাটা বলেই বউ লাজুক মুখখান নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে চলে গেলো।হয়তো এখন মায়ের আচল তলে মুখ লুকাবে।তবে মেয়ে যাই হোক নিজের স্বামীর ভাগ অন্য কাউকে দিবে না।সুযোগ তো পাইছি,একটা একটা একটা করে এভাবে চুমুর সংখ্যা বাড়িয়ে যাবো। পরের দিন বিকেল বেলা…
—-মা আমি একটু বাইরে গেলাম..
—কোথায় যাচ্ছেন (বউ মানে রূপন্তী)
—খুব চুমু খেতে ইচ্ছা করছে, তাই বাইরে গিয়ে দেখি যদি কোন মেয়ে পাই।
—কী,সকালে না আমাকে দিলেন,আবার কেনো?
—একটা তে মন ভরছে না।
—ঠিকআছে,তাহলে আমাকে করেন।তবুও অন্য মেয়ে না। কী আর করা বউ নিরুপায় হয়ে আবার ইয়ে করতে দিলো।
—আবার কোথায় যাচ্ছেন? (রূপন্তী)
—বাইরে থেকে ঘুরে আসি। (আমি)
—বাইরে যাচ্ছেন তাহলে আমিও যাবো।
–কানে কী ভুল শুনলাম-কী বললে আবার বলো?
—আমিও যাবো ঘুরতে আপনার সাথে।
–কেনো তোমার লজ্জা করবে না?
–করবে,তবুও যাবো।
—ঠিকআছে রেডি হয়ে এসো।
মনে লাড্ডু ফটাশ।বউ আমার, লজ্জা ভেঙে আমার সাথে যাবে ঘুরতে,তার মানে সামথিং সামথিং।কী যে খুশী লাগছে। আমি আর রূপন্তী রিক্সায় বসে আছি।উদ্দেশ্য ঝিনাইদহ মৌসুমী শপিংমল।হয় তো আজ একটু পকেট ফাকা হবে আর কী।
—এই যে এতো সরে আসছেন কেনো আমার দিকে।
—কেন আসতে পারি না?
—জানি না,তবে আমার লজ্জা লাগছে কিন্তু।শরীর ঘেষে না বসে একটু ফাকা রাখেন।
কী আর করব,যা একটু অনুভূতি অনুভব করছি তাও আর হলো না।রিক্সাওয়ালাও যেনো কেমন করে তাকিয়ে ছিলো,হয় তো এটা আমার বউ নাকি সন্দেহ করছিলো। উরে মা শপিংমল যে লেডিসমল হয়ে গেছে।চারিদিকে কত রকমের পরী,কোনটা থুয়ে কোনটার দিকে তাকাবো ভেবেই পাচ্ছি না।
—এইই এই এইই, (রূপন্তী)
–কী হইছে বলো?
—অন্য মেয়েদের দিকে তাকাচ্ছেন কেনো?
—দেখছো না নাল,নীল,হলুম,সাদা,বেগুনী,কতরকমের পরী।
–তাই বলে তাকাতে হবে?
—না তাকিয়ে কী করব,বউ তো আমার সাথে থাকে না।
—ঐ চুপ,চুপ,বাসায় চলেন চোখ একদম তুলে নিবো।
ওমা বউ কী কয়,লজ্জাবতী বউ হঠাৎ করে রাগী বউ হইলো কিভাবে। শপিংমল থেকে সামান্য কিছু কেনাকাটা করে,একটু ঘোরাঘুরি করে,রাতের কিছু খাবার কিনে বাসায় আসলাম।রূপন্তী তো লজ্জার কারনে বাইরে খেতেও চাইলো না।রিক্সা থেকে নেমে রূপন্তীর হাতে একটা পায়েল গুজে দিলাম।রূপন্তী অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে,হয়তো বুঝতে পারেনি কখন কিনেছি এটা।
রাতের খাবার খেয়ে আজ একটু তাড়াতিড়িই শুয়ে পড়লাম।খুব ক্লান্ত শরীর আজকে।কিছুক্ষন পরেই দরজার ঠক ঠক শব্দ পেয়ে দরজাটা খুললাম।দরজা খুলেই দেখি রূপন্তী দাড়িয়ে আছে।আমি অভদ্রের হাসি দিয়ে বললাম- আরে এত রাতে তুমি এখানে? রূপন্তীর চোখে-মুখে আনন্দ দেখতে পাচ্ছি। চোখে সামান্যভয় সামান্য আনন্দ। পিছনে হাতে পায়েল টা ধরে রেখেছে।রুমের দরজা বন্ধ করছে রূপন্তী! আমার চোখ আকাশে উঠল। যে মেয়ে আমার সামনেই আসেনা সে মেয়ে আজকে আমি রুমে থাকতেই দরজা বন্ধ করছে! বললাম – দরজা বন্ধ করছ কেন? রূপন্তী আমার সামনে এসে বলল-পায়েল টা পড়িয়ে দিন।আমি তাড়াতাড়ি বললাম- আমি পায়েল পরাতে পারি না। রূপন্তী বলল-সেইজন্যই তো দরজা বন্ধ করলাম।
আমি অবাক হয়ে বললাম -‘মানে?’
রূপন্তী হাতে পায়েল ধরিয়ে দিয়ে বলল- আপনি নিজের হাতে পায়েল না পড়ালে আমি পায়েল পড়ব না।এরপর রূপন্তী আলতো করে তার পা থেকে শাড়ী উপরে তুলল,আর আমি পায়েল টা পড়িয়ে দিয়ে দাড়িয়ে থাকলাম। রূপন্তী আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে,আমার বুকে মুখ লুকালো।হয়তো লজ্জা পাচ্ছে। আর আমি চেঁচিয়ে বললাম আমার কিন্তু খুব লজ্জা করছে।বাকিটা ইতিহাস…