স্বার্থপরতা নাকি ভালবাসা

স্বার্থপরতা নাকি ভালবাসা

আমার ফ্রেন্ডলিস্টে একটি ভাবুক মেয়ে ছিল _নাম জেনি! ইনবক্সে নক করলে একদিনের মেসেজ অন্য দিন দিতো!! একদিন তার একটা স্ট্যাটাস দেখলাম ”আমার আর মনে হয় পড়ালেখা করা হবে না! আব্বু খুব অসুস্থ ” সাথে সাথে ইনবক্সে নক করি! সে ও সাথে সাথে রিপ্লাই দিলো! পরে জানতে পারলাম তার বাবার প্যারালাইজ হয়ে যায় হঠাৎ করে! সারা দিন চ্যাটিং করে তার সম্পর্কে সব কিছু জানলাম_সে ও কষ্ট কে হালকা করার জন্য এমন ভাবে আমার সাথে সবকিছু শেয়ার করল মনে হয় আমি তার অনেক বেশি আপন!!

প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভালো একটা স্কলারশিপনিয়ে ভর্তি হয় সে! সেমিস্টার ফ্রি ১৫ হাজার মাত্র! ২মাস পরেই ১ম সেমিস্টার পরীক্ষা! ওই দিনে মোবাইল নাম্বার নেই তার কাছ থেকে! রাতে কথা হয় _যেমন দেখতে কিউট ছিলো ভয়েস টাও ছিলো সুইট! মনে মনে ভাবলাম এই সুযোগ! বাড়ি থেকে আমাকে প্রতিমাসে চলার টাকা দিতো! বাইক কিনার জন্য টিউশনি করতাম_আর সে টাকা জমা করতাম একাউন্টে!! প্রায় দশ দিন কথা বলার পর অনেক ক্লোজ হয়ে যাই জেনির সাথে! একদিন হসপিটালে এসে জেনি আমাকে ফোন দেয় _সে দিনে তাকে প্রথম দেখি! অসম্ভব সুন্দরি! রাতে বাসায় এসে ঘুম নেই! কয়েকদিন পর জেনির সাথে দেখা করলাম! তখন তাকে বলি  জেনি একটা কথা বলি? যদি কিছু মনে না করো তোমার সেমিস্টারের টাকা আমি দিব! পড়ালেখা ছেড়ে দিও না!! জেনি কোন কথা না বলে চলে যায়! রাতে ফোন দেই _ফোন ধরে না! পরে জেনি নিজেই ফোন দেয় ফাহিম আমরা আগামি মাসে গ্রামে চলে যাব আমার এই সেমিস্টার ড্রপ যাবে! পরে একটা জব পেলে আসব! ফুফুর বাসায় থেকে জবের পাশাপাশি হয়ত স্ট্যাডি করব!!

অনেক কষ্ট হয়েছে জেনিকে আর তার আম্মু কে বুঝাতে! তার আম্মু আমাকে বিশ্বাস করে জেনিকে তার ফুফুর বাসায় রেখে তারা গ্রামে চলে যায়! আমার টাকা দিয়ে জেনি সেমিস্টার পরীক্ষা দেয়! জেনিকে পরের মাসে কয়েকটা টিউশনি দিলাম! তার টাকা গুলো বাড়িতে পাঠিয়ে দিতাম তার আব্বুর চিকিৎসা ও ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার খরচের জন্য!!আর আমার টিউশনির টাকা গুলো দিয়ে তার সেমিস্টার ফ্রি দিতাম!! টিউশনি করে রাত ১০ দিকে ২জন এক সাথে মিলিত হতাম! ফুটপাথে নিয়ন বাতির নিচে ফুসকা, চটপটি এক সাথে খেয়ে জেনিকে বাসায় দিয়ে আসতাম!! ছুটির দিন গুলোতে দুরে বেড়াতে যেতাম! আমাদের মধ্যে ছিলো স্বর্গীয় বন্ধুত্ব! তাই কোন নোংরামি প্রশ্নই আসে না!

অনেক বেশি ভালোবাসি জেনিকে! কিন্তু তা মনের মধ্যেই চেপে রাখি! এই চাপা কষ্ট অনেক!! কিন্তু আমি চাই না জেনি ভাবুক যে আমি স্বার্থের কারনে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছি!  অসম্ভব সুন্দর দিন গুলো কখনো যে ৩ বছরের উপরে চলে যায়! ভাবতে ও পারি নাই! আমি যা বলতাম জেনি তাই করত দেখা করার সময় ১মিনিট ও লেট করতো না! রেজাল্ট ও ভালো করত! তাই তার সাথে ঝগরা লাগার কোন স্কুপই ছিলো না!! জেনির ৪মাস আগেই আমার পড়ালেখা শেষ হয়!!টিউশনির পাশাপাশি জবের জন্য ট্রাই করতে লাগলাম!! জেনির ফাইনাল পরীক্ষার আগেই অন্য শহরে আমার জব হয়! চলে যাই সেখানে!! অফিস থেকে ফিরে জেনিকে ফোন দিব তখনি তার মোবাইল থেকে মেসেজ  আমি একজন কে ভালোবাসি! আম্মু তার সাথে বিয়ে ঠিক করেছেন! আমি এক পায়ে রাজি!!

মেসেজ টা দিয়েই সুইচ অফ!! আমি একটা মেসেজ দিলাম তোমাকে কত বার বুঝাতে চেয়েছিলাম ভালবাসি! মনের সব কথা বুঝতে একাবার ও বুঝার চেষ্টা করলে না? একবার ও বললে না যে আমি তোমাকে ভালোবাসি কি না?? বোকার মতো কাঁদতে কাঁদতে বালিশ ভিজিয়ে ফেলি আর জেনির নাম্বারে ট্রাই করতে থাকি! তখনি জেনির আম্মুর ফোন  সে কখন থেকে তোমাকে ফোন দিতাছি? লাইনই পাই না! জেনিকে নিয়ে তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম! তোমার ফ্যামিলির সবাই রাজি শ্বাশুরি আম্মা ও আমার মা পরে আমাকে সারপ্রাইজ দিলেন আমাকে না জানিয়ে তলে তলে অনেক দুর!!

জেনি আমার মেসেজের রিপ্লাই দেয় হুম আমি বুঝেও না বুঝার ভান করেছি ভালোবাসা বুকে চেপে রেখেছি! যদি না করতাম তাহলে হয়তো আজ তোমাকে পেতাম না! একসাথে থাকতাম, আবেগে বশবতী হয়ে হয়তো নোংরামি চলে আসত আমাদের মাঝে ঝগরা হতো ভুল বোঝা বুঝি  এই জন্য জনাব! মনের কথা বুঝি বলেই আপনাকে না জানিয়ে সারপ্রাইজ দিলাম!

বাসর ঘরে জেনি বসে আছে! পাশে গিয়ে বসলাম! লাল গোলাপ হাতেনিয়ে বললাম_ জেনি আমি তোমাকে ভালোবাসি সেই প্রথম যে দিন দেখেছিলাম সে দিন থেকেই! আমাকে ভালোবাসবে? তোমার হাতটা আমাকে ধরতে দিবে? জেনি আমাকে বুকে টেনে নিয়ে কানে কানে বলতে লাগল প্রেমিকা হিসাবে না স্বামী হিসাবে বাসব? রাত গভীর দুজনের জমে থাকা ভালোবাসা দজন কে অনেক বেশি চেপে ধরেছে ::

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত