– এই হ্যালো মিস।
– কি?
– ফোন ধরেন না,মেসেজের রিপ্লে দেন না।সমস্যা কি?
– আমি ফালতু পোলাপানের সাথে কথা বলি না।
– আমি ফালতু পোলাপান?
– সেটা আবার নতুন করে বলতে হবে?
– আপনি কিন্তু অপমান করছেন।
– ওমা,আপনার অপমান বোধ আছে?
– আমার অপমান বোধ আছে কি না তা আপনার ছোট বোনের সাথে প্রেম করলে প্রমাণ হয়ে যাবে।
– এইতো লাইনে আসছেন।দেখিয়ে দিলেন না স্বভাবের আসল পরিচয়?
– ওহ্ খোদা!মজা করে বলছি।
– হুম।সত্যি কথা বলে ধরে খেলে তো মজা হয়ে যায়।
– আচ্ছা ঝগড়া বাদ দেন।চলেন কোথাও গিয়ে বসি।
– না।
এর মধ্যে নিধান বাইক নিয়ে হাজির।স্নেহা কিছু না বলে বাইকে উঠে গেলো। দৃশ্যটা ফাহিমের বুক চিরে ফেলছে।চাপা এক ব্যথা অনুভব হচ্ছে। আচ্ছা স্নেহা কি এই ছেলেটার জন্য হঠাৎ তাকে অবহেলা করছে? ভাবতে ভাবতে নিধান বাইক টেনে চলে গেলো।স্নেহা পেছন থেকে খুব শক্ত করে নিধানকে জড়িয়ে ধরে আছে। মাঝ পথে গিয়ে নিধান মুখ ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করলো “কোথায় যাবা?” স্নেহা নিধানের কানে ঠোঁট স্পর্শ করে বললো “তোমার যেখানে ইচ্ছা।”
– খুব ক্লান্ত লাগছে।তাহলে হোটেলে যাওয়া যাক?
– কিন্তু জানু আমি তো বাসা থেকে প্রিপারেশন নিয়ে বের হইনি।তাছাড়া ফাস্ট টাইম।সো একটু বুঝো প্লিজ।
বাক্যটা শেষ হতে নিধান রাস্তার ধারে বাইক ব্রেক করলো।মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।সারা রাত গভীর পরিকল্পনার পর মেয়েটা যদি হঠাৎ এরূপ কথা বলে তাহলে রাগ হওয়া স্বাভাবিক।
– তুমি জানো কত কাজ ছিলো আজ?তাও আসছি কিসের জন্য?তোমার মুড না থাকলে আগে বলতে পারতা।
– সরি জানু।
– সরি টরি বুঝি না।আলাদা ড্রেস লাগে কিনে দিচ্ছি।আনন্দ করতে চাইছি করবো।
– আমায় একটু বুঝবা না?
– রিলেশনে আমি দুইটা জিনিস বুঝি।এনজয় এন্ড এনজয়।
– তুমি কি জাস্ট এর জন্য আমার সাথে রিলেশন করছো?
– আরে না।কিন্তু হালকা এন্টারটেইনমেন্ট দরকার আছে না?তাছাড়া তোমারও খুব ভাললাগবে।প্লিজ চলো।
– আমি……
পুরো বাক্য বলার আগে নিধানের ফোন বেজে উঠলো।স্ক্রিনে নেহার নাম্বার। নিধান ফোন রিসিভ করে বললো;
– হ্যা দোস্ত বল।
– দোস্ত মানে?
– আরে বুঝিস না।আম্মু পাশে।
– ও,বাবু আমার বাসা না আজ ফাঁকা।সবাই বেড়াতে গেছে।
– তোর বাবা অসুস্থ হইছে আর আমাকে এখন জানাচ্ছিস।পাগল একটা।রাতে বললে কি হতো?আচ্ছা চিন্তা করিস না,আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসতেছি। নিধান ফোন রেখে দিলো।স্নেহা নিধানের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে।
– আর বইলোনা।আমার এক পাগল বন্ধু।
– সেটা বুঝতে পারলাম।তো আম্মু পাশে বলার প্রয়োজন কি ছিলো?
– বলছি আর সাধে?যদি শোনে একা আছি তাহলে দেখা করতে বলে।একবার তো বলছিলাম অফিসের কাজে ব্যস্ত আছি।সে বান্দা অফিসে এসে হাজির।আম্মুকে যা একটু ভয় পায়।তাই দেখা করতে মন না চাইলে আম্মুর কথা বলে কাটিয়ে দেই।কিন্তু এখন সিরিয়াস ম্যাটার।ওর বাবা গুরুতর ভাবে অসুস্থ।আমাকে এই মুহূর্তে যেতে হবে।
– আমি!আমি কি করবো?আমায় নামিয়ে দিয়ে আসবা না?
– তুমি যাবা শ্যামলী।ওর বাবা ভর্তি শাহাবাগ।আমার ডাবল ঘুরান হয়ে যায় না?প্লিজ বাবু একটু ম্যানেজ করে চলে যাও।
স্নেহা কিছু বলতে পারলো না।চোখের কোণে অশ্রু জমা হচ্ছে। নিধানের ফোনে সে স্পষ্ট দেখেছে নেহা নামে কেউ ফোন করেছিলো। নিধান ছেলেটা কি তাহলে সত্যি খারাপ। বান্ধবীদের কথা ঠিক।সে প্লে-বয়ের পাল্লায় পড়েছে। ফাহিম বুঝে ফেলেছে,স্নেহা তাঁর সাথে টাইম পাস করেছে।না হয় কোন মেয়ে নতুন রিলেশনে এতটা অবহেলা করে না। এদিকে স্নেহার স্মৃতিও ভোলা যাচ্ছে না।প্রতিটা কথা মনে পড়ছে।বিশেষ করে সকালের ঘটনা।পুরো এক গোলকধাঁধা হয়ে মস্তিষ্কে জুড়ে বসেছে। তাকে ভোলার এখন একটাই উপায়।নতুন রিলেশন। আসলে যে কষ্টের দাম দিতে জানে না তাঁর জন্য কষ্ট পাওয়াটাই বৃথা। সবকিছু ভেবে ফাহিম ডিসিশন নিলো মেঘার সাথে রিলেশন করবে। মেয়েটা প্রাইমারী থেকে তাকে পছন্দ করে।ভার্সিটিতে ওঠার পর তো কয়েকবার প্রপোজও করেছে।তাকে একটা ফোন দিলে মন্দ হয় না;
– দোস্ত।
– বল।
– কি করিস?
– টিভি দেখি।
– পার্কে যাবি?
– কেন?
– ঘুরতে।
– না।
– তাহলে হাতিরঝিল?
– না।
– ধানমন্ডি ৩২ তো যাবি।
– না।
– কোথাও যাই চল।
– তোর কি হইছে বলতো?
– প্রেমে পড়ছি।
– কার?
– তোর।
– বাহ্ ভালো তো।
– তুই পড়িস নাই?
– আমি তোর মতন মিছে মিছে প্রেমে পড়ি না।
– সত্যি প্রেমে পড়ছি।
– এখন মজা করার মুডে নাই।এমনিতে রেজাল্টের জন্য আম্মু বকা দিছে।
– তুই যদি মজা না ভাবিস তো একটা কথা বলতাম।
– বল।
– আই লাভ্ ইউ।
– আর একবার এরকম করলে কিন্তু ফোন কেটে দিবো।
– বিশ্বাস করলি না।ওকে।আমি নিজে থেকে ফোন কেটে দিচ্ছি।
অতঃপর লাইন বিচ্ছিন্ন করে ফাহিম বসে রইলো।মেয়েরা আজব কোয়ালিটির। যতক্ষণ পায়ে কাছে রাখবা ততক্ষণ পা ধরে থাকবে,যেই মাথায় তুলবা অমনি ধরে থাপড়াবে। এর মধ্যে মেঘা ফোন দিলো।ফাহিম স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো,নাহ্ মেয়েটা একটু আলাদা।
– হুম বল।
– ফোন কাটলি কেন?
– এমনি।
– রাগ করছিস?
– না।
– তুই আমায় সত্যি ভালবাসিস?
– হুম।
– কতটা?
– আপাতত একটু।তবে তুই চাইলে সেটা অনেকে পরিণত হবে।
– ফান করছিস নাতো?
– না।
– ওকে।হাতিরঝিল আয়।
– এখন?
– এই মুহূর্তে।আমি গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছি।
ফাহিম ফোন কেটে কোনরকম একটা জামা পড়ে নিলো।এরপর রাস্তায় বের হয়ে হাতিরঝিলের উদ্দেশ্যে হাঁটছে।
মনে আজ রঙ লেগেছে।চারিপাশে ভাললাগার হাতছানি। এর মধ্যে সামনে একটি ফুলের দোকান পেচে গেলো।ফাহিম সে দোকান থেকে এক গুচ্ছ গোলাপ কিনে নিলো।তারপর আবার হাঁটার পালা।
আকাশ সম্পূর্ণ পরিষ্কার।তবু রোদের দেখা নেই। সাদ মেঘ গুলো উড়ে বেড়াচ্ছে। দু’একটা পাখি এখন থেকে নিজ নীড়ে ফিরে যাচ্ছে। শীতল কোমল হাওয়া মনে দোলা দিচ্ছে।আচ্ছা এটা কি প্রেমে দোলা? ভাবতে না ভাবতে মেঘার কণ্ঠে ডাক “ফাহিম,এদিকে এসো।” ফাহিক মেঘার দিকে একজন তাকিয়ে দৌড়ে সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মেঘা নিশ্চুপ।চোখে লজ্জার স্পর্শ। ফাহিম সে লজ্জা মিশ্রিত চাহনি হাতের তালু দিয়ে আটকে ফুল সামনে ধরে বললো; ভালবাসা শিখেছি যবে থেকে,তোমায় ভালবেসেছি তবে থেকে। এই ভালবাসা ফোরাবে যেদিন, ভেবে নিও আমি হারিয়ে গেছি সেদিন। আমার এই ভালবাসা, কাব্যে প্রকাশ নয়। তবু বলবো ভালবাসি, তোমায় তোমায় তোমায়।
শেষ তিনটা শব্দ একটু বেশি জোরে বলে ফেললো ফাহিম। মেঘা অবাক হয়ে ফাহিমের হাত সরালো। স্নেহার চোখের সামনে তারই প্রিয় মানুষ তাঁর জন্য ফুল হাতে দাঁড়িয়ে আছে।আচ্ছা একটা মানুষের ভাগ্য কতটা ভালো হলে এরকম দৃশ্যের দেখা পায়? মেঘা নিজেকে সামলাতে পারছে।সবকিছু কল্পনা মনে হচ্ছে।কল্পনা থেকে বের হতে বালিকা খুব শক্ত করে সামনে থাকা বলককে জড়িয়ে ধরলো।ফাহিমও কিছু না ভেবে মেঘার সাথে তাল মেলালো।হুম এখন হৃদয় পরিপূর্ণতা পেয়েছে।দুজন দুজনকে ফিল করতে পারছে। দার্শনিকদের ভাষায় হতে পারে “দুজন দুজনকে ফিল করার নাম ভালবাসা।” অপরদিকে অশ্রু চোখে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক কন্যা সাক্ষী হয়ে রইলো এই ভালবাসার।