নিলয় থামো । ক্লাসে ঢোকার সময় মেয়র কন্ঠে নিজের নাম শুনে থমকে দাড়াল নিলয় । পিছনে ফিরে দেখে নীলা ওর দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।(নীলা বড়লোক বাপের একমাএ মেয় আর নিলয় মধ্যবিত্ত ঘরের বড়ছেলে।)
:-জী আমাকে বলছেন।
;-তুমি কি বয়ড়া নাকি! কতবার ডাকলাম তোমাকে শুনতে পওনা! নিলয় প্রতিউত্তরে মাথা চুলকাতে লাগল।
:-আমার সাথে বসো না কেন তুমি? আসলেইতো প্রতিদিন যত দেরিই হোকনা কেন নীলার পাশের সিটটা খালিই থাকে তবুও নিলয় কখনও ওর সাথে বসে না।
;-আজ থেকে আমার সাথে বসবা আর হ্যা গতকালের নোট আমি তুলিনি তুলে দিওতো। নিলয় যেন এক গ্রাসে কথাগুলো গিললো । নীলাকে সে ভালো করে চেনেই না আর ওর কথা শুনে মনে হচ্ছে ওরা দুজনে বাল্যকালের বন্ধু । অগ্যাতা নীলার নোটটা নিলয়কে তুলে দিতেই হলো।কলেজ শেষে নিলয় রিক্সার অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে এমন সময় নীলা ওর হাতটা ধরে বলল;- গাড়িতে উঠ তোমাকে ড্রপ করে দেই। এই প্রথম কোন অন্য মেয় নিলয়ের হাত ধরেছে ও খুব অসস্তি অনুভব করল।ক্লাসের অনেকেই হা করে তাকিয়ে আছে ওদের দিকে।
:–নো থ্যাংকস॥
বলে নিলয় ওর হাতটা বের করে নিয়ে হেটেই বাড়ি চলে গেল। কলেজের গেট দিয়ে নিলয় ঢুকতেই নীলা ছুটে এল , এক সপ্তাহ কলেজে আসনি কেন? নিলয় কোন উওর না দিয়েই ক্লাসে চলে গেল। ক্লাসে গিয়ে দেখে কেউ ওকে বসতে দিচ্ছে না সবাই নীলার পাশের সিটটা দেখিয়ে দিচ্ছে ।নিলয় চরমভাবে রেগে গেল। নীলা ক্লাসে ঢুকতেই ঠাস করে এক থাপ্পর বসিয়ে দিল।
~না একটু বেশিই হয়ে গেছে।যাইহোক মেয়টার থেকে পিছুতো ছুটলো। পরের দিন ক্লাসে নিলয় নীলার উপর আরো খেপে গেল।
~এই তোমার সমস্যাটা কোথায় হ্যা,এই রকম বেহায়ার মতো তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছো কেন ?
~এমনি।
~স্যরি
~কেন?
~আসলে গতকাল ওভাবে থাপ্পার মারাটা উচিৎ হয়নি।
~ইটস ওকে ।থাপ্পরের বদলাটা আমি ঠিকই সুদে আসলে তুলে নেব। ~কি?
~কিছুনা। বাসায় গিয়ে নিলয় তো অবাক । ~নিলয় দেখতো এই পান্জাবিটা কেমন। ~ভাল,
~ভাল করে দেখ পরশু দিন বিয়েতে এই পান্জাবিটা পড়তে হবে।
~কার বিয়ে?
~কার আবার তোর।
~তোমার মাথা খারাপ হইছে ,আমার বিয়ে !!!কার সাথে??
~নীলার সাথে তোর বিয়ে। পরশুদিন।
~ আমি ওকে কেন বিয়ে করব ~প্রেম করবি 2 বছর ধরে আর বিয়ে করবি না।চৌধুরি সাহেব তোকে জেলের ভাত খাওয়ায় ছাড়বে।
~আম্মূ আমিতো এখন পর্যন্ত কোন মেয়কে পছন্দই করিনি প্রেমতো দূরের কথা।
~আমি জানিনা ।
~পড়াশুনাটা তো আগে শেষ করব নাকি সেটাও করতে দিবে না!
~নীলাকে গিয়ে বল ও রাজি থাকলে অমার কোন সমস্যা নেই
~আরে জামাই বাবা যে
~আঙ্কেল নীলা..
~ওই রুমে যাও নীলা নিলয়কে দেখেই জরিয়ে ধরল নিলয় কোন মতন ওকে ছাড়িয়ে নিল।
~এটা কি করলে তুমি?
~আমি আবার কি করলাম!
~কলেজে কি ছেলের অভাব পড়ছে যে তুমি আমার পিছু ছাড়ছো না।এখুনি তোমার বাবাকে বল যে তুমি আমাকে ফাসিয়েছ ।
~আচ্ছা আব্বুকে বলছি পুলিশ ডাকতে। ~its To Much.
~Seam To U .
~আচ্ছা আমার কিছু সময় দরকার । পড়াশুনাটা শেষ করে তারপর না হয় বিয়টা করি।
~তাহলে আমার একটা শর্ত আছে ;~কি শর্ত ?
~আমার উপর কখনো রাগ করতে পারবে না।রাগ করলে কিন্তু পরের দিনই বিয়ে..
~ওকে ডান।
~এক সাথে কলেজে যাব,আর যদি ভূলেও অন্য কোন মেয়র দিকে তাকাইছে তাহলে তোমার একদিন কি আমার একদিন। (রিক্সায়)
~কি সমস্যা তোমার?
-কোথায় কি সমস্যা!
~তাহলে তোমার কাধে মাথা রাখতে দিচ্ছ না কেন?
~রাস্তার সব মানুষ দেখছে। দেখুক তাতে কি।
~তুমি এত বেহায়া কেন। নীলা রিক্সা থামিয়ে নিলয় কে নামিয়ে দিল।
~হেটে আসো। নিলয় অবাক হয়ে শুধু নীলার দিকে তাকিয়ে আছে। নিলয় আরো বেশি অবাক হলো যখন দেখল ওর মানিব্যাগটা নীলার হাতে।
:-নাহ এই মেয়ে পারেও বটে অগ্যতা নিলয়কে হেটেই কলেজ যেতে হলো। দেখতে দেখতে কলেজ পাশ করে বের হল দুজনে। সামনের মাসেই ওদের বিয়ে।
~নিলয় তুমি কি আমাকে ভালবাস? নিলয় একদৃষ্টিতে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে ।
~কি হল বল?আচ্ছা নিলয় গত দুবছরে কি তোমার একবার ও মনে হয়নি যে আমি তোমাকে সত্যিই ভালবাসি । একবার ও আমাকে অনুভব করতে পারনি। নীলা কাঁদ কাঁদ গলায় কথাগুলো বলল।
~এসব কথা রাখতো ।
~না নিলয় আমি জোর করে তোমাকে বিয়ে করতে চাইনা। জোর করেতো তোমার মনটা আমি কোনদিনই পাব না। নিলয় দৌড়ে গিয়ে দোকান থেকে একটা সদ্য ফোটিত গোলাপ নিয়ে এসে হাটু গেড়ে বসে পড়ল।
~জানিনা কখন তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি,তোমার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহুর্ত আমি এখন অনুভব করি,হয়তো তোমার মতো করে আমি তোমাকে কখনই ভালবাসতে পারব না তবুও সারাজীবন তোমাকে ভালবাসতে চাই। সন্ধার স্নিগ্ধ আলোয় তোমার হাতটা ধরে অজানায় হারিয়ে যেতে চাই ।সেই অধিকার টুকু কি দিবে আমায়।
~না
~আচ্ছা,দেখি গোলাপটা অন্য কাউকে দেওয়া যায় কিনা।
~হাত ভেংগে ফেলব।
~তাই নাকি।
~হুম।শুধু আমাকে ভালবাসবা।
~দেখি আমার হবু বউটা কে একটু জরিয়ে ধরি। নিলয়ের বুকে নীলা, যেন একটি মন একটি দেহ।
(সমাপ্ত)