ভালোবাসার টানে

ভালোবাসার টানে

গৌধুলীর বিকেল ভিন্ন রুপে সজ্জিত প্রকৃতি এক অপরুপ মায়ার বাঁধনে। নীল মুখ ভার করে বসে জানালায়, চোখ দুটো নোনা পানিতে ভর্তি সমুদ্রের মতো দেখাচ্ছে। শুন্যতা তাকে গ্রাস করে নিয়েছে। যে দিকে তাকাচ্ছে সেদিকেই শুন্যতা, থমকে গেছে আকাশ থমকে গেছে নদীর কলকল ধ্বন্নি থমকে গেছে চলমান প্রতিটা গাড়ির চাক। অদূরে চোখে পেতে কিছু একটা ভাবছে নীল।

হুম নীল তন্দ্রার কথা ভাবছে, ফেলে আসা প্রতিটা দিনের চিত্র ভেসে উঠছে নীলের চোখের সামনে। সেই মাঠ সে ছুটাছুটি সেই বীলের জলে ভেসে চলা আর কত কিছু। চোখের জল গড়িয়ে নীলের ঠোঁট স্পর্শ করেছে প্রতিটা মুহূর্ত। নীলের এই বিষাদের মূল কারণ আজ তন্দ্রার বিয়ে।

শেষ দিন যখন তন্দ্রা নীলের সাথে দেখা করতে এসেছিলো সেদিন তন্দ্রা ঠোঁট ফুলিয়ে ফুলিয়ে কেঁদেছিলো। বার বার বলেছিলো নীল তুমি এটা কি করলে ? আমি তোমাকে কতবার বলেছি একটা চাকুরী জোগাড় করো আমার বাসা থেকে বিয়ের চাপ দিচ্ছে তুমি একটি বার এর জন্যও শুনলে না, ভাবলে না আমার কথা, এখন আমি কি করবো?
আমি আমার পরিবারকে কষ্ট দিতে পারবো না তোমাকে অনেক বার বলেছি। নীল মাথা নিচু করে তন্দ্রার কথা শুনে যাচ্ছে, মনে মনে বলছে আজ মেয়েটা বড্ড অভিমানী হয়ে উঠেছে, আসলেই তো আমি এর জন্য দায়ী কিন্ত কি করবো তন্দ্রা আমি খুব চেষ্টা করেছি। যেখানেই যায় ঘুষ ছাড়া চাকুরী হয় না। এই শহরে আপন বলতে আমার কেউ নেই তুমি ছাড়া। টিউশনির টাকা দিয়ে নিজের খরচ চালায়। কে করবে আমার জন্য একটু সুপারিশ।

নীলের চোখ দিয়ে জল পরে সাদা টি-শার্ট ভিজে গেছে। তন্দ্রা তখনও বলেই চলছে, নীল মাথা তুলে তাকালো তন্দ্রার দিকে দেখতে পেল তন্দ্রার চোখেও পানির কমতি নেই। নীল নিজেকে অপরাধী ভাবতে শুরু করলো, আজ আমার জন্য আমার তন্দ্রার চোখে পানি। কি বলবে কি করবে বুঝতে পারছিলো না নীল।

তন্দ্রা কান্না থামিয়ে চোখ মুছে বলে নীল আমার কিছুই করার নেই আমি বাবাকে কষ্ট দিতে পারবো না, ভালো থেকো বলে পা বাড়লো সামনের দিকে। খোলা আকাশের নিচে নীল তবুও দাড়িয়ে হাটবার শক্তি তার কাছে নেই। নেই নিজেকে বোঝাবার শক্তিও। নীল বার বার শুধু তন্দ্রার কথার প্রতিধ্বন্নি শুনতে পাচ্ছে। দেখতে পাচ্ছে তার চোখের জল। বহু কষ্টে রুমে ফেরে নীল, সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত হানা দেই পৃথিবীর বুকে, বাড়তে থাকে নীলের বিষাদ। কাল তন্দ্রা অন্যকরো ঘরে বউ হয়ে চলে যাবে, অপেক্ষা করবে এক অপরিচিত মানুষের জন্য।

বুকটা কেপে ওঠে কথা টা ভাবতেই, বিধাতা আজ কোথায়, নীলকে সান্ত্বনা দেবে এমন একটা লোক ও তার সাথে নেই। তন্দ্রা জানে নীল খুবই সাদা সিদা টাইপের একটা ছেলে নীলের জন্য তন্দ্রার মন ও ব্যকুল হয়ে পড়ে।
নীল তার ভালোবাসায় কোন কমতি রাখেনি ফেলে আসা প্রতিটা দিনের স্মৃতি তন্দ্রার মনেও ঘুড়পাক খেতে থাকে । নীল নিশ্চয় একা বসে কান্না করছে বহুবার এমন হয়েছে কিছু বললেই কান্না করে, ছেলেটা বড্ড অভিমানী। শেষ মুহূর্তে ও বললো না চলো পালিয়ে যায়। সেই নীলকে কিভাবে আমি ছেড়ে অন্য কাউকে বিয়ে করবো বলে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে থাকে তন্দ্রা। তন্দ্রা একদিন নীলকে বলেছিলো নীল আমদের ভালোবাসা যদি বাসা থেকে না মেনে নেই তো আমরা তখন কি করবো।

নীল বলেছিলো পাগলী আমার তোমাকে এইসব ভাবতে কে বেলেছে। তুমি দেখ ঠিক মেনে নিবে। আমি বলেছিলাম যদি মেনে না নেই তো আমার পালিয়ে যাবো। নীল আমার মুখে হাত দিয়ে বলেছিলো এটা বলতে নেই, তোমার বাবা অনেক কষ্ট পাবেন। তুমি জানো না তুমি তোমার বাবার একমাত্র মেয়ে। তুমি এতো কেন ভাবছো আমি দরকার হলে তোমার বাবার কাছে হাত জোর করে তোমকে ভিক্ষা চাইবো।

আমার খুব করে মনে পরে সেদিন আমি নীলকে একটা চড় দিয়েছিলাম তবুও ও আমাকে বুকের মাঝে জাড়িয়ে নিয়েছিলো। আমি সেদিনেই আমার ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলাম। দেখেছিলাম আমার সেই নীলকে যে আমার সারা জীবন সুখে রাখবে। তন্দ্রা হঠাৎ লাফ দিয়ে ওঠে, নীল কিছু করে ফেলবে না তো? ডয়ার থেকে ফোন বের করে নীলের নাম্বারে ফোন দেই তন্দ্রা।

নীল তখনো জানালায় দাড়িয়ে বুক ভেঁজাচ্ছে কন্না করে। ফোন বেঁজে উঠতেই নীল ফোনের দিকে তাকায়, তাকিয়ে হতবাগ হয়ে যায়। তন্দ্রার ফোন। ফোন রিসিভ করতেই ভেসে আসে তন্দ্রার কান্নার আওয়াজ নীল আর ঠিক থাকতে পারে না চিৎকার দিয়ে কেঁদে ফেলে। বার বার বলতে থাকে তন্দ্রা আই এম সরি। আমি তোমার কিছু করতে পারি নাই। তন্দ্রা কাঁন্না ভেঁজা কণ্ঠে বলে নীল তুমি আমাকে নিয়ে যাও আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পাড়বো না।

নীল চোখ মুছে বলে আমিও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তন্দ্রা আমি আজ বলতে বাধ্য হলাম চলো আমরা পালিয়েয়ে যায়। তন্দ্রা বলে পাগল আমার।। আমি বাড়ির নিচে অপেক্ষা করছি তুমি জলদি আমাকে নিয়ে যাও।
এক লাফ দিয়ে খাঠ থেকে নেমে খালি পায়েই বেড়িয়ে পড়ে নীল, ১০ মিনিটা যাবদ দৌড়ানোর পর দেখে তন্দ্রা পথের মাঝে দাড়িয়ে। বেনারসি সারি, হাতে মেহেদীর সাঁজ বড্ড অপরুপ লাগছে ওকে। আমি যেতেই দৌড়ে এসে জাপটে ধরে আমাকে শুরু হয় অভিমানীর কান্না। আমিও জোর করে ধরে আছি তন্দ্রাকে আমার মাঝে অন্যএক অনুভূতি কাজ করছে, পাঁচ বছরের সম্পর্কে এই প্রথম তন্দ্রাকে জড়িয়ে ধরেছি।

বিলাশ রাস্তা জনশুন্য শহর ল্যাম্পপোস্টের আলোর নিচে দুজনে এক হয়ে দাড়িয়ে আছি। তন্দ্রার কান্না থেমেছে…
কিন্তু এখনো ফোঁপাচ্ছে। বলছে আমাকে এই ভাবেই ধরে রেখো আজীবন। নীল তখন স্বপ্নের রাজ্যে। শুন্যতা কেটে গেছে নীলের ভরে গেছে সব তন্দ্রার আগমনে।

বি দ্র : কিছু দিন পরে তন্দ্রার বাবা তাদের সম্পর্কটা মেনে নেই। তন্দ্রা তার বাবার একমাত্র মেয়ে হওয়ায় বেশি দিন রাগ করে থাকতে পারেননি। নীলকে একটা চাকুরীও দিয়ে দিয়েছেন তিনি। নীল আজ তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বাসায় ফিরছে, হাতে গোলাপ ফুল নিয়ে। কারণ আজ নীলের বিবাহ বার্ষিকী, এক বছর পূর্ণ হবে তাদের। তন্দ্রা তার জন্য অপেক্ষা করছে পথ চেয়ে হয়তো।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত