দরজায় দড়াম দড়াম লাথি পড়ছে। দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখি, আব্বা! আমি বললাম, ঘটনা কি আব্বা? বাসায় কি ডাকাত পরছে?
আব্বা বললেন, একটা কথা খোলাসা করে বল তো আমার বাপ! তুই কি সত্যি সত্যি আমার ছেলে?
আমি অতি নিরীহ গলায় বললাম, মা তো বলছিল সত্যি সত্যি আমি তোমার ছেলে। কে জানে মা সত্যি বলছে না মিথ্যা বলছে! তুমি বস আমি ভালো করে জিজ্ঞেস করে আসি,তুমি আমার একমাত্র বাপ কিনা!
জিগ্যেস করার দরকার নাই, আগামীকালই তোকে আমি হাসপাতালে নিয়ে যাবো ডি এন এ টেস্টের জন্য ।
কি হইছে আব্বা? মুখটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো ব্যাকা কইরা রাখছো কেন?
ঐ হারামজাদা! তুই গত মাসে আমার সাথে যে তোর প্রেমিকা লাবনীর পরিচয় করিয়ে দিলি, সে কই?
সে তো অবসর নিছে আব্বা।
অবসর নিছে মানে কি রে হারামী! সে কি সরকারি কর্মকর্তা?
দূর আব্বা! সে প্রেম থেকে অবসর নিছে। গত মাসে আমারে বললো, রিফাত, ভেবে দেখলাম প্রেম ভালোবাসা একটা ফালতু জিনিস। তাই আপাতত এক বছরের জন্য প্রেম ভালোবাসা থেকে অবসর নিলাম। এক বছর পর ভেবে দেখবো তোমার সাথে আমার যায় কি না!
তা জনাব, আপনার কি অবস্থা?
আমিও আপাতত অবসরে আছি আব্বা।ভেবে দেখলাম প্রেম ভালোবাসা আসলেই একটা ফালতু জিনিস।
খুবই মহান কাজ করেছেন আব্বা, আমার উচিত সরকারের কাছে আবেদন করা,যেন সরকারি ভাবে আপনার এই মহান কাজের জন্য রাষ্ট্রীয় পুরস্কার ঘোষণা করা হয়!
আমি ফিসফিস করে বললাম, কি হইছে আব্বা? মেজাজ খারাপ কেন? আম্মা কি দৌড়ানি দিছে? কি করছিলা সত্যি কইরা কও।
ঐ হারামজাদা! জেরি কই?
আমি নিরীহ গলায় বললাম, জেরি কে আব্বা? তোমার প্রেমিকা? বুড়া বয়সে এই সব কি শুরু করলা!
কথা সোজা করে বল,বাড়িওয়ালার মেয়ে জেরি কই?
আমি কি জানি জেরি কই? আমি কি ওর সাথে ঘুমাই? ও কি আমার বউ?
আব্বা পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে বললো, এইটা কি?
কি জানি কি, বাজারের লিস্ট নাকি আব্বা? পড় তো মা কি আনতে বলছে!
আব্বা সুর করে পড়তে লাগলেন,,
প্রানপ্রিয় জেরি রে
সয় না তো দেরি রে
আয় আয় যাইগা
তুই আর আমি ভাইগা,,,,
হায় হায় আব্বা! এইটা কে লিখছে? তুমি পাইলা কই?
বাড়ি ওয়ালা দিয়ে গেছে, নীচে আপনার নাম সিগনেচার করা আছে বাপজান! সত্যি করে বলেন জরি কই,, আমারে আর ফাঁসাইয়েন না। বাড়িওয়ালা আমারে পুলিশে দিবো।
তুমি ফাঁসবা কেন? আমি তোমার পোলা না?দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা! বলেই ড্রয়ার খুলে একটা কাগজ বের করে আব্বার হাতে দিলাম। আব্বা সুর করে পড়তে লাগলেন,,,
রিফাত চ্যাংড়া ছেড়া রে
তুই খুব ম্যাড়া রে
তোর গাল চাপা ভাঙা
করবো না তরে সাঙা,,,
আমি বললাম, নীচে জেরির নাম লেখা আছে না, আব্বা?
আব্বা বললো, আছে।
তাহলে তো প্রমাণ হইলো জেরির সাথে আমি নাই।শুধু শুধু আমাকে সন্দেহ করছে,,,
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই আব্বা পকেট থেকে আরেকটা কাগজ বের করে পড়তে লাগলেন _
প্রানপ্রিয় জেরি_
তুমি হলে গরু আমি হবো ঘাস
তুমি হলে নদী আমি হবো মাছ
তুমি হলে মরিচ আমি হবো ঝাল
তুমি হলে পুকুর আমি হবো খাল।
তুমি হলে গাধী আমি হবো গাধা
মনটা আমার দেখ ফকফকা সাদা,,,
হঠাৎ পড়া থামিয়ে আব্বা বললেন জেরি কই?
আমি বললাম, জেরির তো ইমনের সাথে পালানোর কথা ছিল আব্বা, কিন্তু মাঝখানে লিটন এসে ভাগিয়ে নিয়ে গেছে।
এইখানে আপনে হান্দাইলেন কেমনে বাপজান?
এর আগে তো আমার সাথে পালানোর কথা
ছিল, কিন্তু ইমন হারামজাদা প্যাঁচ লাগিয়ে দিলো!
আব্বা বললো,আমি বোধহয় বেশিদিন বাঁচব না বাপজান, প্রেশার মনে হয় দুই, শ উঠে গেলো, হারামজাদা! বাপকে বাঁচাতে চাইলে তারাতাড়ি একটা প্রেসারের টেবলেট নিয়ে আয়!
আমি দৌড়ে গিয়ে আব্বার রুম থেক প্রেসারের টেবলেট এনে খাইয়ে দিলাম। ঝাড়া দশ মিনিট আব্বা চুপচাপ বসে থেকে বললেন, বাপ আমার, সত্যি কথাটা বল তো, কাহিনি কি!
আমি বললাম, আব্বা জেরির তো আমার সাথে কলেজ গেইট থেকে পালানোর কথা ছিল গতকাল পাঁচটায়, কিন্তু রাস্তায় জ্যাম থাকার কারণে আমার পৌঁছাতে দেরি হয়ে গেলো। ততক্ষণে ইমন সেখানে হাজির!
আব্বা বললেন, এখানে আবার ইমন ঢুকলো কীভাবে?
আরে আব্বা, আগের দিন কি এখন আছে? তোমরা গাড়ি মিস করলে কি কর?
পরের গাড়িতে যাই।
জ্বি আব্বা, অপশন একটা থাকেই।জেরি দুই জনকেই হাতে রেখেছিলো আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে। একজন কোন কারনে আসতে না পারলে যেন কোন সমস্যা না হয়!ইমন আগে এসে জেরিকে বগল দাবা করে নিয়ে গেলো।
আব্বা বললেন,ওরে, আমার বোধ হয় বুক ব্যথা বাড়ছে! এইটা না হয় বুঝলাম, এখানে আবার লিটন ঢুকলো কীভাবে?
জেরি আমাকে বললো, রিফাত তুমি ট্টেন মিস করেছো,আজ থেকে আমি ইমনের।তুমি আমার ভাই হও,আমাদের কে গাড়ি ষ্টেশনে পৌঁছে দাও।
তুই গেলি?
যাবো না? জেরি আমার প্রেমিকা না! আশ্চর্য!
তারপর?
ষ্টেশনে গাড়িতে উঠার সময় লিটনের সাথে দেখা,লিটন হচ্ছে জেরির আগের প্রেমিক। সব শুনে লিটন রেগে গিয়ে ইমনকে দিল এক ধমক। লিটন হচ্ছে মাস্তান টাইপ ছেলে। ধমক খেয়ে ইমন লেজ গুটিয়ে পালিয়ে গেল! কি আর করা! , অবশেষে জেরি লিটনের সাথে পালিয়ে গেল।
কথা শুনে আব্বা কোৎ করে একটা শব্দ করলেন।
আমি বললাম,তুমি শুধু শুধু আমাকে সন্দেহ করছো,আমার মতে ভালো পোলা তুমি আর পাইবা? তুমিই বলো আব্বা?
কথা শেষ হওয়ার আগেই দেখি আব্বা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে!