বোকার প্রেম

বোকার প্রেম

– আপু আমাকে ক্ষমা করে দেন।
– না।
– এভাবে বলেন কেন!আমি কি খুব বড় আপরাধ করেছি?
– তোর কাছে এটা ছোট অপরাধ মনে হচ্ছে?
– আপনাকে তো জাস্ট জামা ছাড়া দেখে ফেলেছি।এটা কি এমন অপরাধ?প্রমিস করছি এই কথা কাউকে বলবো না।
– তোর প্রমিসের গুষ্টি কিলাই।
– আম্মু বলেছে প্রমিস খালি চোখে দেখা যায় না।তাহলে গুষ্টি কিলাবেন কিভাবে?

– চুপ থাকবি তুই?
– আপনি কি আমার ওপর বিরক্ত?
– আমার ব্যবহার দেখে বুঝিস না?
– তাহলে আমাকে যেতে দেন।
– চুপচাপ এখানে দাঁড়া।আর যা বলি মন দিয়ে শোন।
– জ্বি বলেন।
– শুধু ওপরে তো দেখেছিস তাইনা?
– হি হি হি,বলতে লজ্জা করে।
– বল শালা।
– হুম।
– হুম কি?
– শুধু ওপরে দেখেছি।
– গুড।এই কথা কেউ যেনো জানতে না পারে।ভুলেও কারো সামনে বলবি না।মনে থাকবে?
– ওকে।
– আচ্ছা এখন যেতে পারিস।

অভ্র মাথা নিচু করে চলে এলো। সে বুঝতে পারছে,অপরাধ একটা করে ফেলেছে।কিন্তু জামা ছাড়া দেখা কেমন অপরাধ তা বুঝে উঠতে পারছে না। এর কোন শাস্তি বাংলাদেশ সংবিধানে আছে? থাকলে কত ধারা আইন প্রয়োগ হবে? সিসি ক্যামেরা প্রুফ ছাড়া কি আদালত এটা বিশ্বাস করবে!নাকি এক অর্পার কথায় তাকে জেলে দিয়ে দিবে? হুম এটাই হতে পারে।কারণ সচরাচর দেখা যায় একজন পুরুষের চেয়ে নারীর ক্ষমতা অধিকতর বেশি। বিকালে ফুরফুরা বাতাস বইছে। আকাশ হালকা মেঘলা।কালো মেঘ খন্ড খন্ড ভাবে উড়ে বেড়াচ্ছে। ছিটেফোঁটা রোদের দেখা নেই। আবহাওয়ার এমন প্রতিক্রিয়া দেখে অর্পা ভাবলো ছাদ থেকে ঘুরে আসি। ভাগ্যক্রমে ছাদে এসে তাঁর মেজাজ বিগড়ে গেলো। অভ্রর সামনে এক মেয়ে হাঁটু গেরে বসে।হাতে জবা ফুল। চমকপ্রদ বিষয়,মেয়েটা আর কেউ নয় অর্পার বান্ধবী।

– নেহা তুই?
– শালী তুই কি করস ছাদে?
– আমি যাই করি।তুই না বললি তোর জ্বর আসছে।রুম থেকে বের হতে পারবি না।তাহলে ছাদে আসলি কিভাবে?
– অনেক বড় গল্প।পরে বলবো।যাইহোক,এনাকে তো চিনিসই।মিস্টার অভ্র বাবু।আজ থেকে তোর দুলাভাই।

অভ্র দু’পা পিছিয়ে বললো “কেমন দুলাভাই?কিসের দুলাভাই?আমি কারো দুলাভাই না।” নেহা উঠে দাঁড়িয়ে বললো “অভ্র!please say yes.i love you so much baby.” অভ্র অন্য দিকে তাকিয়ে বললো “না।তোমাকে আমার ভাললাগে না।” নেহা নাছোড়বান্দা।সে অভ্রর কলার ধরে বললো “i love you বলবা নাকি ছাদ থেকে ফেলে দিবো?” অর্পা দৌড়ে এসে নেহাকে ছাড়ালো।”দোস্ত ছেলেটা যখন প্রেম করবে না তাহলে চাপ ক্রিয়েট করছিস কেন?তাছাড়া ও একটা ছেলে হলো!পুড়াই আবাল।” অর্পার মুখে এমন কথা শুনে অভ্রর মন খারাপ হয়ে গেলো।কিন্তু নেহা কথার তেজ দ্বিগুণ করে বললো “দেখ দোস্ত,ও মোটেও আবাল না।একটু সহজসরল।আর একজন্য ওকে আমার চাই।” অর্পা নেহার দিকে রাগি রাগি চোখে তাকিয়ে বললো “অভ্র তোকে চায় না।”

– সেটা আমি বুঝে নিবো।এতে তোর সমস্যা কি?
– তুই আমাদের ফ্লাটে এসে একটা সাধারণ ছেলেকে নিয়ে যা ইচ্ছা করবি আর আমি বসে বসে দেখবো?
– আমি যা ইচ্ছা করছি না।আর তোকে কেউ বলেনি ফ্লাটে অন্যদের খবর রাখতে।নিজের চরকায় তেল দে।
– কি বললি তুই?বের হয়ে যা আমাদের বাড়ি থেকে।এই মুহূর্তে বের হ।
– সারাজীবন থাকলি আমাদের বাড়িতে।আজ দু’টাকার বাড়ি বানিয়ে মালিকানা দেখাচ্ছিস।
– পরে একসময় এসে ভাড়া নিয়ে যাইস।এখন আপাতত হালকা হ।
– তুই আমাকে অপমান করছিস?
– আর এক সেকেন্ড থাকলে চুল ধরে ফেলে দিবো।তোর সাহস কত তুই অভ্রর কলার ধরছিলি।
– অভ্রকে নিয়ে কিসের মাথাব্যথা এত?
– মাথাব্যথা না।তুই ওর সরলতার সুযোগ নিতে চাচ্ছিস।কিন্তু আমি বেঁচে থাকতে এটা সম্ভব না।
– হুহ্।
– যা যা পাতলা হ।

নেহা চলে গেলো।অর্পা এদিকওদিক তাকিয়ে দেখে অভ্র নেই। পরে তাঁর মনে পড়লো তাদের ঝগড়া দেখে বেচারা অনেক আগে চলে গেছে। অর্পার এবার ভাবছে,সে কেন নেহার সাথে এরকম খারাপ ব্যবহার করলো? সচরাচর একটা ছেলের জন্য অর্পার কখনো দয়ামায়া হয় না। অভ্রর পাশে অন্য মেয়েকে দেখলে বা কেন তাঁর রাগ উঠে? তাহলে কি সে! নাহ্।

এটা হতেই পারে না। কিন্তু অভ্রকে অর্পার ভাললাগে।এটাও অর্পা অস্বীকার করতে পারবে না। রাত আড়াইটা বাজে। অর্পা কিছুতে চোখের পাতা এক করতে পারছে। দুদিন যাবত ঘুমাতে গেলে এরকম ঘটছে।অভ্র তাঁর মস্তিষ্ক পুরো গ্রাস করে নিয়েছে। অর্পা অনেক চেষ্টা শেষে ঘুমাতে না পেরে ফেসবুকে গেলো। আশ্চর্য বিষয় অভ্র অনলাইনে। এত রাতে ছেলেটা অনলাইনে কি করে? অর্পা তারাহুরো করে অভ্রর আইডিতে মেসেজ দিলো “হাই।” কিন্তু পাঁচ মিনিট হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও রিপ্লে এলো না।এবার সে রাগে মেসেঞ্জারে কল দিলো। অনেকবার রিং হওয়ার পর অবশেষে রিসিভ হয়েছে।

– ওই শালা এত রাতে অনলাইনে কি করিস?
– অনলাইনে কোথায়?জাস্ট ডাটা অন ছিলো।
– ডাটা অন ছিলো মানে?ঘুমাসনি কেন?
– পড়ছিলাম।কাল হঠাৎ করে ইনকোর্স পরীক্ষা ফেলছে।
– তাই বল।আচ্ছা রাখছি।
– ওকে।

অভ্র ফোন কেটে দিলো। অর্পা ওপাশে আবার রেগে যাচ্ছে।রাগের একপর্যায়ে ফোন দিয়ে বসলো।

– হ্যালো।
– তুই ফোন কাটলি কেন?
– আপনি রেখে দিতে চাইলেন।
– আমি রেখে দিতে চাইলে তুই রেখে দিবি?তোর তো অনেক সাহস হয়ে গেছে।
– সরি।
– নেহা কি আর কিছু বলেছিলো?

– হুম।
– কি বলেছিলো?
– আপনার সাথে কথা না বলতে।বাসা বদলে ফেলতে।পারলে ওদের ফ্লাটে উঠতে।
– তুই কি বললি?
– আমি কিছু বলিনি।
– গুড।আচ্ছা ছাদে আয়।
– উঁহু।আম্মু বুঝতে পারলে বকা দিবে।
– আস্তে আস্তে আয় যাতে বুঝতে না পারে।
– এখন ছাদে এসে কি করবো?
– বেশি কথা বলিস কেন?আসতে বলছি আসবি।
– কিন্তু আমার তো ভয় করে।
– ভূতে?
– হুম।
– আমি আছি।চলে আয়।

অভ্র কল না কেটে চুপিচুপি ছাদে গেলো।অদ্ভুত বিষয় ছাদে কেউ নেই।এদিকে অভ্রর ভয় লাগছে। মাথায় নানান ভৌতিক কাহিনী আসছে। এর মধ্যে আচমকা “ভৌ।” অভ্র কিছু বুঝতে না পেরে চোখমুখ বন্ধ করে কাঁপতে লাগলো। পুরো একটা বাচ্চা পুলাপান। এদিকে কাঁপনি থামছে না। অর্পা প্রথমে মজা পেলেও পরে নিজের কাছে খারাপ বোধ করছে। ছেলেটা ভয়ে গুটিসুটি মেরে আছে। এমন পর্যায়ে কি কয়া যায়? আইডিয়া। সাত-পাঁচ না ভেবে অর্পা অভ্রককে জড়িয়ে ধরলো।খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। অভ্র ধীরেধীরে অদ্ভুত ফিল করছে। অবশেষে অভ্র বলেলো “ছাড়েন প্লিজ।” অর্পা ছেড়ে দিয়ে বললো “সরি।”

– কেন?
– ভয় দেখানোর জন্য।
– ইট্স ওকে।
– আই লাভ্ ইউ।
– আপনিও নেহা আপুর মতন শুরু করলেন?
– আমি কিন্তু নেহার চেয়েও ডেঞ্জারাস।
– জানি।
– তাহলে আমার উত্তর?
– আম্মুর কাছে জিজ্ঞাসা করে বলি?
– না।এখনই বলতে হবে।
– কিন্তু আমি হ্যা বললে তো পরে কষ্ট পাবো।আম্মু বলছে এই যুগের মেয়েরা চাহিদা মিটে গেলে ছেড়ে চলে যায়।
– আমি যাবো না।
– কিভাবে বিশ্বাস করবো?
– ওয়েট প্রমাণ দিচ্ছি।

বাক্যটি বলে অর্পা অভ্রর ঠোঁটে আলতো ভাবে ঠোঁট স্পর্শ করলো। অভ্র এই মুহূর্তে কি করবে না করবে ভেবে ব্যকুল।তবে তাঁর অর্পার কোমড়ে হাত দিতে খুব মন চাচ্ছে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত