ইসিতার সামনে দাঁড়িয়ে আছি মাথা নিচু করে। অনেক বড় অপরাধী আমি। ওয়াসিফার সাথে একটু ফাজলামো করে বলেছি ” হাসিব কে ছেড়ে তুমি আমার কাছে চলে আসো ” আর মেয়েটা এসে বিচার দিয়ে দিলো। এখন ঠ্যালা সামলাও।
– কি বলছিলি ওয়াসিফা কে? (ইসিতা)
-,,,,,,,,,,,,(চুপ)
-কিরে কথা কি কানে যায় না?
-না মানে কিছু বলি নাইতো।
-কিছু না বললে ওয়াসিফা আমার কাছে বিচার দিলো কেনো?
-একটু ফাজলামো করেছিলাম।
ইসিতা একটু চুপ করে নিজের রাগটা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করলো। এখন রাগ কন্ট্রোল করা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই। কারণ ইসিতার হাতের ঝাড়ুর মাইর লাঠির মাইর সব প্রকার মাইর খাইছি কিন্তু আমার কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই ইসিতা এখন রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে।
-ওই শয়তান তোর কি ফাজলামো করা কোনোদিন বন্ধ হবে না? (ইসিতা)
-কেনো বন্ধ করবো হুম? এইটা আমার পারসোনাল মেথড। (আমি)
-সত্যি কইরা বলবি? আমি ছাড়া তোর আর কয়টা গার্লফ্রেন্ড আছে? (ইসিতা)
-তুমি ছাড়া তিনটা। চিন্তা কইরো না নতুন করে নিয়োগ দিছি। আস্তে আস্তে বারবে।(আমি)
– পায়ের জুতো দেখছোস, আজকে কিনেছি, নতুন জুতো দিয়েই কিন্তু আজকের দিনটা যাত্রা করবো। (ইসিতা)
আমি ইসিতার কথায় কান না দিয়ে জুতোজোড়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
-কিরে কি দেখছিস?(ইসিতা)
-দেখছি মানুষের চয়েজ এতো বাজে হতে পারে! (আমি)
-মানে?
-এগুলা কোনো জুতার মধ্যে পরে? চোখে কি ভালো কিছু পরে না। মহিষের পায়ে পিঁপড়ার জুতা। ছিঃ?(আমি)
-ওই ফাজিল কি বললি তুই, আমার মহিষের পা?
-না হাতির পা। একটুও ভালোলাগে না।
-আমাকে ভালো লাগে না তো কাকে ভালোলাগে? ওয়াসিফা কে ? (ইসিতা)
-আরে, সে তো ভালোলাগার বাইরে। কত সুন্দর মিষ্টি মুখ। দেখলেই শান্তি। (আমি)
-এরে জাহিদ্দা তুই কিন্তু সত্যি মাইর খাবি। (ইসিতা)
-সত্যের জন্য আমি মাইর খেতে প্রস্তুত। কাউ কে ভয় পাইনা এখন। (আমি)
-আল্লাহ,,, কি দেখে যে এই ফাজিলটার প্রেমে পরলাম?
-কেনো আমার ফাজলামো দেখে।,, আর আমি কিন্তু দেখতে খারাপ না। এই পর্যন্ত যেই কইটা মেয়েকে প্রপোজ করেছি সবাই রাজি হয়েছে। শুধু এই ওয়াসিফা মেয়েটা রাজি হলো না । একদিন বুঝবে সে সোনার টুকরা মানিক হারিয়েছে হুম,,!(আমি)
-আল্লাহ তুমি আমাকে উঠায়া নেও। (ইসিতা)
-আল্লাহ হুম্মা আমিন। ইসিতা এবার রেগে এগুন।
– এইরে জাহিদ তোর ফাজলামোটা কবে বন্ধ করবি? (ইসিতা)
-এই ফাজলামো দেখেই তো তুমি প্রেমে পরছো।
-সারাদিন হেবার মত পিছন পিছন ঘুরেছিস সেই কথা কি ভুলে গেছিস?
-ওই মুখ সামলিয়ে কথা বলো আমি তোমার পিছন পিছিন ঘুরি নাই সরাসরি সাহসী বীরের মত তোমার বাসায় গিয়ে তোমাকে জরিয়ে ধরে প্রপোজ করেছি। আমার স্ট্যাটাস কে ছোটো করবা না। আর তুমি রুমের দরজা বন্ধ করে আমাকে ,,,, (কথা বলার মাঝ পথে ইসিতা থামিয়ে দিলো)
-ওই খবর দার কোনো বাজে কথা বলবি না। (ইসিতা)
-না মানে, রুমের দরজা বন্ধ করে প্রথম যেই মাইরটা দিছিলা ওই কথাটা বলতে চেয়েছিলাম আর কি। (আমি)
-তাও তো ঠিক হলি না।
-কেনো হবো হুম? আমি এখন প্রতিশোধ নিবো, কঠিন প্রতিশোধ।
-তার মানি তুই আমাকে মারবি?
-আমি মসা মেরে হাত নষ্ট করি না।
ইসিতার রাগের পরিমান এবার হিমালয়ের চুরায়। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। মুখে একটা শব্দ বের হলো যেটা ইসিতার মুখে আর কোনোদিন শুনি নি।
-ব্রেকআপ (ইসিতা)
-মানি?
-মানি তোর সাথে আমার সকল সম্পর্ক শেষ।
-বাবু, জানু, আমার কলিজার টুকরা, এই কানে ধরছি আর কোনোদিন ফাজলামো করবো না। প্লিজ ব্রেকআপ কইরো না, আমি মরে যাবো। (আমি)
-তুই মর, তারপর যদি একটু শান্তি পাই।(ইসিতা)
-এমন করো কেন, ? বলছি না আমি ভালো হয়ে যাবো। তোমার দুইটা পায়ে পরি ।
-মনে থাকিবে তো? আর যেন ফাজলামো না হয়।
-হুম শত বার মনে থাকবে।
-ওকে, চল।
-কোথায় ?
-ফুচকা দোকানে।
-নাহ আমি খেতে পারবো না, আম্মু বাইরের জিনিস খেতে না বলেছে।
-ওরে আমার মদন রে। আম্মুর ভদ্রছেলে হয়েগেছে দেখছি। আমার সাথে একটু খেলে কিছু হবে না।
-না মানে, পকেটে টাকা নেই।
-সেটা আমি জানি , সারা জীবন চেষ্টা করলে তোর কাছ থেকে কিছু পাবো না। আমি খাওয়াবো চল,,,
-হুম চলো,।
ইসিতার সাথে ফুচকার দোকানে যাইতে ছিলাম। পথেই হলো বিপত্তি। লাবিব তার ভাঙা সাইকেলটা নিয়ে ইসিতার সামনে পরলো। আজ আর হইছে ফুচকা খাওয়া । আমি ইসিতার পিছে থেকে দেয়ালের আড়ালে লুকিয়েভ পরলাম।
-কি হয়েছে লাবিব? তোর সাইকেল এর এই অবস্থা কেনো? (ইসিতা)
-আর বইলেন না, । ক্যাম্পাসে আসার পথে একটা ওটোর সাথে ধাক্কা খেয়ে পিছনের গিয়ার ভেঙে গেছে। তারপর যখন ক্যাম্পাসে আসলাম তখন জাহিদের সাথে দেখা। ও এই ভাঙা সাইকেল চলাবে । আমি দেইনাই। সে জন্য সামনের গিয়ারটা ভেঙে ফেললো দুই চাকার হাওয়া ছেড়ে দিলো । (লাবিব) ইসিতা তো এবার তেলে বেগুনে ফুলে উঠলো।
-ইতরটা তো এতক্ষন আমার সাথেই ছিলো এখন আবার কই গেলো? (ইসিতা)
-কাকে খুঁজছেন ? (লাবিব)
-জাহিদ তো আমার সাথেই ছিলো এখন আবার কই গেলো।
-আপনি খুঁজেন আমি যাই। না হয় আবার আমার বারোটা বাজাবে । লাবিব চলে গেলো। আমি এবার বের হলাম। ইসিতা আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন আমি সবে মাত্র জেল পালিয়েছি ।
-বাধ দেওতো ওইসব পাগল ছাগলের কথায় কান দিয়োনা।(আমি)
-আমি আর পারছি না তোকে নিয়ে । (ইসিতা)
-বলছি না আজ থেকে ভালো হয়ে যাবো।
-তুই মর আমার কিছু যায় আসে না, আমি চললাম বাসায়।
-ফুচকা খাওয়াবে না?
-বিষ খাওয়াবো তুই খাবি?
-না ওইটা তুমিই খাও।
ইসিতা চলে গেলো আমিও নিজের মতো করে বাসায় চলে আসলাম। ইসিতার বাসা আর আমার বাসা পাঁচ মিনিটের পথ। মন চাইলেই ছুটে চলে যাই। বিকেল বেলা ইসিতার মোবাইলে ফোন দিলাম। মেয়েটা আমার ফোনের উপর এতোটা সিরিয়াস যে রিং হওয়া মাত্রই রিসিভ করে ফেলে। যাক আমারতো আর ফাজলামো করার শেষ নেই।
-হেল্লোও সুপ্তি, বেবী কতদিন দেখিনা তোমাকে, চলোনা আজকে দেখা করি। (আমি)
-ওই স্টুপিড কি আজে বাজে বলছিস, কে সুপ্তি ?(ইসিতা)
-তুমি সুপ্তি না ?
-আমি তোর যম, ইসিতা।
-ও, sorry wrong number. সুপ্তির কাছে ফোন দিতে গিয়ে তোমার কাছে চলে গেছে। আমি ফোনটা কেটে দিলাম। অপেক্ষা ইসিতা নক দিবে। যেই ভাবা সেই কাজ। কিছুক্ষন পর ইসিতা ফোন দিলো।
-হেল্লোও, কে বলছেন,? (আমি)
-তুই কই এখন? (ইসিতা)
-আমি তো আমার ১৪ নাম্বার গার্লফ্রেন্ডের সাথে ডেটিং এ আসছি।(আমি) ইসিতা কিছুক্ষন চুপ করে রইলো,
-তুই পাঁচ মিনিটের মধ্যে যদি আমার বাসায় না আছিস তাহলে তোর সাথে আজকেই ব্রেকআপ,। (ইসিতা)
-বাহ, বিয়ে না হতেই ডাকা ডাকি শুরো হয়ে গেছে। যাক বাসা কি খালি আছে?
-আর একটা কথা বললে কিন্তু তোর হাড্ডি গুরো করে ফেলবো।
-ওকে, জানু আমি এখনি আসতেছি।তুমি চিন্তা করো না।
ইসিতা মনে মনে ফন্দি আঁকে যে আমাকে উচিত শিক্ষা দিবে। পাঁচ মিনিটের পথ হেটেই চলে গেলাম ইসিতার বাসায়,। কলিং ব্যালের রিংটন, “ধুম্ব চলে ধুম্বা চলে ধুম,,”। ইসিতা এসে দরজা খুললো।
-আসেন ভিতরে আসেন? (ইসিতা)
-শশুর মসাই কি বাড়িতে আছে, ? (আমি) ইসিতা আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো,,
-না মানি আঙ্কেল কি বাসায় আছেন,? (আমি)
-হুম, নিজের রুমে।
-ও,, কি জন্য ডাকছিলা বলো, ।
-বলবো তবে এই মুহূর্তে সকল ফাজলামো বন্ধ রাখতে হবে।
-ওকে,,
-আমি আজকে তোর দৈনিক রুটিং বানিয়েছি।
-কেমন?
-প্রতিদিন আমার সাথে ক্যাম্পাসে যাবি, আবার আমার সাথে ক্যাম্পাস থেকে আসবি। ক্লাস টাইমে ঘুরাঘুরি বন্ধ।
বিকেল না হতে বাসা থেকে বের হওয়া যাবে না, । আছরের পর আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে, খবরদার কোনো রকম ফাজলামো যেনো না হয়। রাতের বেলা প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে এক মিনিটও থাকা যাবে না। আর যদি একটু এদিক সেদিক তাহলে, আমাকে ভুলে যাও। (আমি ইসিতার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি,। এই রুলে চললেতো আমার জীবন পুরাই অন্ধকার।)
-কি বুঝা গেছে? (ইসিতা)
-কি জানি বলছিলা?
-what,,,?
-না মানি টয়লেট কোন দিকে?
-সোজা গিয়ে বাম দিকে!
টয়লেট থেকে আবার ইসিতার কাছে আসলাম। ইসিতা আমার কেমন জানি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি আবার কি করলাম? কিছুইতো মাথায় আসছে না,।
-কি হলো এমন করে তাকিয়ে আছো কেন? (আমি)
-এতোক্ষন লাগে তোর টয়লেট সারতে?(ইসিতা)
-তোমার রুলের কথা শুনে চাপটা বেরে গেছে আমি কি করবো?
-তো বুঝা গেছে, আমি কি বলছি?
-হয়, হয়, আমাকে মারার ফন্দি আকছো,!
-কালকে থেকে এই রুল মুতাবেক চলতে হবে।
-ওকে, আমি রাজি,।
-তাহলে আজকি আপনি আসতে পারেন।
-কি বলো বাসায় ডেকে এনে এভাবে পাঠিয়ে দিচ্ছো,,?
-কাজের জন্য ডাকছে এখন কাজ শেষ। এখন যেতে পারেন।
-আমি এটা মানি না।
-কি মানবি না?
-তোমার রুল,।
–ওই তুই কি বললি,, । আজকে তোর একদিন কি আমার একদিন।
কথাটা বলে পাশে থাকা ইসিতার বাবার লাঠিটা নিয়ে আমাকে তাড়া করতে লাগলো। আমি পিছন থেকে ইসিতাকে জরিয়ে ধরলাম।
-ওই শয়তান ছাড় বলছি, বাবা দেখে ফেলবে। (ইসিতা)
-তাতে কি হইছে,,।
-আমি কিন্তু বাবাকে ডাক দিবো,।
-দেও।
-প্লিজ জাহিদ ছাড় আমার লাগছি,।
-দেখি কোথায় লাগছে । ইসিতা চুপ করে রইলো।
-ফাজিল একটা শুধু শুধু আমাকে কষ্টদিছ। (ইসিতা)
-তুমি কষ্ট পাও কেনো, আমি তোমাকে কষ্ট পেতে বলছি।
-কষ্ট পাবো না, তুই যখন অন্য মেয়েদের সাথে টাংকি মারছ তখন বুঝি আমার কষ্ট লাগে না।
-আহরে কত দরদ।
-হুম, দরদই তো, তোর তো আমার জন্য একটুও দরদ নেই।
-কে বললো আছে তো।
-থাকলে ওয়াসিফা, সুপ্তি ওদের সাথে কথা বলিস কেন।
-একটা গার্লফ্রেন্ডে কি হয় বলো। তাই ওদের কে পোটানোর ট্রাই করতেছি । কিন্তু মেয়ে গুলা এতো ফটকা যে আমাকে বুঝতেই পারে না। ইসিতা আমার হাতে একটা কামর বসিয়ে দিলো।
-ওমা কুত্তা, মানুষ কামড়ায়। (আমি)
-তুই এক্ষনি এই বাসা থেকে বের হো,, (ইসিতা)
-কেনো কি হলো আবার? (আমি)
-তোকে বের হতে বলছি বেত হো।
হাতের লাঠিটা দিয়ে একটা বসিয়ে দিলো। অবস্থা বেগতি পুর্ন এক্ষনী মানুষ জন ঝড় হবে মনে হয়। ইসিতার মাথায় রাগের পরিমান ৫০০+। তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে পরলাম। অপেক্ষা ইসিতার রাগ কমলে আবার একটা দেখা দিবো। কিছুক্ষন পর ভিতরে ডুকলাম।
-ওই তুই আবার আসছিস? (ইসিতা)
-তুমি এমন কর কেনো আমার সাথে?
-আমি তোর সাথে আর কোনোদিন কথা বলবো তুই আর আমার সামনেও আসবি যা বাগ এখান থেকে। (ইসিতা)
কথাটা বলে ইসিতা আমার কাছে এসে আসলো,, । মনে হয় মাইর আর একটা পরবে। আমি সুযোগে সৎ ব্যাবহার করে নিলাম। মানি ইসিতাকে জরিয়ে ধরে আস্তে করে একটা চুমু খেয়ে নিলাম। আর এক মিনিট দাঁড়ানো যাবে না। সোজা দৌড় দিলাম।
-ফাজিল তোরে পাবো না আর কখনো, ? সেদিন বুঝবি কত ধানে কত চাল।(ইসিতা)
সন্ধায় বাড়ি ফিরার পথে। হাসিব, লাবিব, রাহাতের সাথে দেখা। কোন ভুতে পাইলো যে ওদের সাথে ডাব চুরি করতে গেলাম, আর তখনি বিপদ। ছোটো খাটো একটা দৌড়ানি খেতে হলো,,। বাড়ি যেতে যেতে রাত ১২টা। আম্মু তো রেগে আগুন, কিছুতেই দরজা খুলবে না। কোনো মতে বাড়িতে ঢুকলাম। এবার আব্বুর সামনে পরলাম। বাসায় শুধু আম্মুর সাথে ফাজলামো করা যায়। কিন্তু আব্বুর সাথে কথা বলাই দায়।
-কিরে কই গেছিলি? (আব্বু)
-বন্ধুর বাসায়। (আমি)
-শিকদার সাহেবের ডাব চুরি করতে গেছিলি কেন? (আব্বু) ওরে বাবা,, খবর আব্বুর কাছেও এসে পরছে।
-ভালো হয়ে যা পরে ফাঁসতে হবে। (আব্বু)
আমি নিজের রুমে চলে আসলাম। ইসিতাকে আজ রিকশায় অন্য একটা ছেলের সাথে দেখতে পেলাম। পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেলো। কি করবো কিছুই বুঝতে পারতেছেনা। আমি স্বভাবগত ভাবে ফাজিল প্রকৃতির, কিন্তু মাথা গরম হয়ে গেলো কি করতে পারি তা বলার বাইরে। ইসিতার পিছুনিয়ে তার বাড়িতে চলে গেলাম।
-কিরে হঠাৎ আমার বাড়িতে?(ইসিতা)
-তোমার সাথে রিক্সায় কে ছিলো? (আমি)
-একটা ছেলে ছিলো, তাতে তোর কি?
মেজাজটা পুরোটাই গরম হয়ে গেলো। ইসিতার গালে আস্তে করে একটা চোড় বিসিয়ে দিলাম।
-তোর যে চরিত্র খারাপ সেটা আজকে জানালম।(আমি) ইসিতা দুই চোখের পানি ছেড়ে দিলো। মুখে কোনো কথা আসছেনা।
-বের হো আমার বাসা থেকে আর কখনো আসবি না এই বাসায়, , (ইসিতা) কথাটা এতো অভিমানের শুরে বললো যে যত রাগ ছিলো তা এই উক্তির মধ্যে প্রকাশ পেলো।
-তোর বাসা কেন, তোর মুখ যেন আল্লাহ আমায় না দেখায়। (আমি)
আমি চলে আসলাম। ইসিতা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে আস্তে বসে পরলো । আসলে ইসিতা নিজেও কোনোদিন ভাবে নি আমি তার এমন ব্যাবহার করবো। ইসিতার বাসা থেকে বের হতেই দেখলাম সেই ছেলেটা বাসায় ঢুকছে, আমি পিছু নিয়ে তাদের কথা শুনার চেষ্টা করলাম।
-কিরে মা তুই কাদিস কেনো? কি হয়েছে তোর?
-কিছুনা মামা, একটু ঠান্ডা লেগেছিলো।(ইসিতা)
-তোর বাবা আছে বাসায়?
-বাবা একটু বাজারে গেছে, আসতে দেরী হবে।
-তাহলে আমি আজকে যাই, ।
উপরের কথা গুলো শুনে নিজের ভিতর বোধ জাগ্রত হলো। ইসিতার মামা সেই ছেলেটি। আর ইসিতা আমাকে একবার বলে ছিলো, তার একটা মামা আছে, অনেক স্মার্ট, ইয়াং। আরে উনিই তো ইসিতার মামা, । আর আমি কি বুঝে ইসিতার গায়ে হাত তুল্লাম। কত জগন্য কথা বললাম। আমি এটা কি করলাম। মাথায় উপর আকাশ ভেঙে পরলো। কি করবো কিছুই বুঝতে পারতেছি না। ইসিতার বাসায় ঢুকে পরলাম।
– কিরে আবার কি? আর কিছু বাকি আছে বলার। (ইসিতা)
-না মানি বুঝতে পারি নি, প্লিজ আমাকে মাপ করে দাও। ইসিতা একগাল হেসে নিলো,
-হুম, আমার চরিত্র অনেক খারাপ, আমি অন্য ছেলের সাথে চলা ফিরা করি। তুই ভালো মানুষ, তুই কেনো আমার কাছে মাপ চাইতে এসেছিস?
-এরকম করে বলো না প্লিজ,, । আর হবে না কোনোদিন।
-তুই বলে ছিলি আল্লাহ যেন আমার মুখ তোকে আর না দেখায়, কাল থেকে সেটাই হবে।
-আমি বুঝতে পারি নি উনি যে তোমার মামা হয়।
-ক্যাম্পাসে সারাদিন মেয়েদের সাথে আড্ডা দিস। রাস্তায় রাস্তায় ফাজলামো করে ভেড়াস, কই কোনো দিন তো তোকে কিছুই বলিনি। ভাবছি একদিন তুই বদলে যাবি। হুম আমার ধারনা ঠিক তুই বদলে গেছিস, তুই ভালো হয়ে গেছিস আর আমি খারাপ।
আমি কিছু না বলতে পেরে ইসিতার দিকে অগ্রসর হতে লাগলাম।
-খবরদার আমার কাছে আসবি না। বের হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে। (ইসিতা) আমি কিছুই না বলেই ইসিতাকে জড়িয়ে ধরলাম।
-আমি মরে যাবো, হুম মরে যাবো। তুমি যদি এরকম করো। প্লিজ এবারের মত ক্ষমা করো আর কোনো দিন এরকম হবে না। একটা সুযোগ দেও।(আমি)
-এই অনেক হয়েছে, আমি আর পারছিনা তোকে নিয়ে। তোর কাছে আমি ক্ষমা চাই, আমাকে মুক্তি দে।(ইসিতা)
আমি ইসিতাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম। ইসিতা অনেক বার নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে , অবশেষে সে চুপ করে রইলো।
-অনেক ভালোবাসি তোমায়, তাইতো তোমাকে অন্য ছেলের সাথে দেখলে মাথা গরম হয়ে যায়। (আমি)
-আমাকে যদি ভালবাসতি তাহলে এতদিন ফাজলামো করাটা ছেড়েদিতি।
-আজকে থেকে ওয়াদা করছি আর কোনোদিন কারো সাথে ফাজলামো করবো না, । অন্য মেয়েদের দিকে তাকাবো না।
-আমি আর কিছুই শুনতে চাইনা তুই ভালো থাক,, ।
সেদিনের পর থেকে ইসিতা আমার কাছ থেকে কিছুটা দূরে দূরে থাকে, । ক্লাসের সবার সাথে হেসে হেসে কথা বল্লেও। আমার সাথে তেমন কথা বলে না। মাঝে মাঝে আমি তার সাথে নিজের ইচ্ছায় কথা বলতে যাই। তখনো ইসিতা তেমন একটা পাত্তা দেয় না আমাকে। ক্যাম্পাস থেকে বাসায় আসার সময় ইসিতার জন্য দাঁড়িয়ে থাকি। ইসিতা তখন আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে আসে। এভাবেই দিন গুলো কাঁটতে লাগলো। আমার ফাজলামোটা এখন আর নেই। ইসিতার সাথে ভালোভাবে কথা বলতে পারিনা আজ অনেক দিন। মনে কেমন ভয় লাগে ইসিতা আর আমাকে পছন্দ করে না। আজকে বাড়ি থেকে প্রস্তুতি নিয়ে আসছি ইসিতার সাথে মন খুলে কথা বলবো। ক্যাম্পাসে ঢুকতেই দেখি ইসিতা তার বান্ধবীদের সাথে হাসি তামাশায় ব্যস্ত। আমি গিয়ে ইসিতার পাশে দাঁড়ালাম।
-কিরে কিছু বলবি? (ইসিতা)
-তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো। (আমি)
-এখন সময় নেই পরে দেখা যাবে।
মেজাজটা গরম হয়ে গেলো, এখানে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে আর আমার সাথে কথা বলতে গেলে সময় নেই।
আমি ইসিতার হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসলাম।
-আরে কি করছিস? (ইসিতা)
-কিডন্যাপ করবো তোমাকে আজ। (আমি)
-এইদেখ ভালো হবেনা বলেদিলাম ।
-ভালো খারাপ পরে দেখা যাবে। ইসিতাকে নিয়ে একটা নিরিবিলি জায়গায় চলে আসলাম।
-এখানে আনলি কেন?
-আজকে তোমাকে সিরিয়াস কিছু প্রশ্ন করবো তুমি ছাপ ছাপ উত্তর দিবা।
-ওকে, কর দেখি।
-আমার প্রথম প্রশ্ন,, তুমি কেনো আমার সাথে কথা বলতে চাওনা?
-কই চাইনা, এখনো তো কথা বলতেছি।
-দ্বিতীয় প্রশ্ন, আমার ফোন কেনো রিসিভ কর না? আগেতো ফোন করার সাথে সাথে রিসিভ হতো।
-আসলে আব্বু পাশে থাকে তো তাই।
-তৃতীয় প্রশ্ন,, তুমি কি আমাকে ভালোবাসো? কথাটা শুনে ইসিতা একটি চমকে গেলো,।উত্তর দিতে গিয়ে আটকে পরলো।
-আমি জানি সেদিনের পর থেকে তুমি আমাকে দেখতে পারো না , তাই তো আমার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকো।
দেখো ইসিতা সেই দিনের ব্যাপারটায় sorry বলাটা অহেতুক। আমি যেই ভুল করেছি সেখানে হয় উচ্চ শাস্তি পেতে হবে না হয় সরাসরি তুমি ক্ষমা করে দিতে পারো। আমি অনেক দিন তোমার পিছু পিছু ঘুরেছি আমার অপরাধ ক্ষমা করানোর জন্য। তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারোনি। এখন প্লিজ তোমার মনে যা চায় তাই করতে পারো । যে টুকো শাস্তি দিতে চাও দিতে পারো। আর যদি বলো জাহিদ তুই আর আমার পিছু ছুটিস না আমি তকে অপছন্দ করি,! বিশ্বাস কর আমি হাসি মুখে তা মেনে নিতে পারবো। কারণ আমি তখন অপরাধের শাস্তি পাবো। তুমি যদি বলো কোনো দিন তোমার সামনে না আসতে। আমি আসবো না দূরে কোথাও চলে যাবো। আমি আর পারিনা তোমার অবহেলা সইতে। ইসিতা কিছুক্ষন চুপ করে রইলো, আমি জানি ইসিতার উত্তর না ই হবে। তাই চলে আসতে লাগলাম।
-কিরে কোথায় যাস?(ইসিতা)
-জানি না
-জানি না মানি? আমি একা থাকবো নাকি এখানে?
-চলে যাও,,।
-আমি কিন্তু সত্যি সত্যি চলে যাবো তখন কিন্তু কাঁদতে পারবি না।
-না কাঁদবো না, কেঁদেই কি লাভ তুমি তো আমাকে দেখতে পারো না। আমার কাঁন্নার আওয়াজ তোমার কাছে শব্দ দূষণ। ইসিতা আমার সামনে এসে দাড়ালো।
-কি নিজেকে সিনেমার হিরো মনে হয়, । নিজেই সব কিছু করতে পারো? ওই শয়তান তোকে কখন বললাম আমি তোকে দেখতে পারি না,হুম?
-তাহলে কথা বলো না কেন?
-কার সাথে কথা বলবো, আমার আগের জাহিদ নেই।
-নেই মানি , আমি কে?
-আগের জাহিদ সব সময় ফাজলামো করতো, কথায় কথায় আমাকে জরিয়ে ধরতো, কিন্তু এখন আর সেই জাহিদ নেই।
-তুমিতো বললা ফাজলামো করা যাবে না। তাই ছেড়ে দিলাম।
-আমি কি বলেছি আমার সাথে ফাজলামো করা যাবে না? বলেছি অন্য কারো সাথে ফাজলামো না করতে।
-এক মিনিট তুমি, তুমি আমাকে না আমার ফাজলামোটা কে পছন্দ করো।
-হুম,,,
-একটা কথা বলবো ?
-বলো
-তোমার ব্যাগটা একটু চেক করবে?
-কেনো
-আরে করো না একটু।
ইসিতা ব্যাগ চেক করার পর। ইসিতা আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। ফাজিল আমার দুইশত টাকা কই,। আমার টাকা দে। চোর একটা।
-মুখ সামলিয়ে কথা বলো এটা চুরি না ডাকাতি, হুম।
-ওই ফাজিল আমার টাকা দে, ?
-দিবো তোবে তোমাকে বলতে হবে তুমি আমাকে ভালবাসো?
-না আমি পারবো না।
-তাহলে আর কি করার, আমাকে অন্য মেয়ে খুজতে হবে। বাই,,
-ওই দাড়া,,
-হুম, বলো?
-একবারি কিন্তু বলবো।
-ওকে
-I LOVE YOU.
-SORRY, I AM MARRIED,,
-ওই দাড়া তুই তোকে আমি আজ মেরেই ফেলবো,,,
আমি আর কি করবো, ইসিতা রাগ করলে যা করি আর কি। জড়িয়ে ধরে আস্তে করে একটা চুমু খেয়ে নিলাম। আর এখানেই গল্পটার ইতি ঘোষিত হলো।