বলেছিলাম না তোমায়, একদিন তুই সব কিছু বুঝবি আর পুরনো সময় গুলো ফিরে পাওয়ার জন্য অনেক ছটফট করবি অফিসে মিটিং শেষ করে দুপুরে স্যারের থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় আসছি। পুরনো প্রজেক্টের কাজ কালকেই শেষ করেছি আজ ওই প্রজেক্টের জন্যই মিটিং টা ছিল। কয়েকদিন আমার ওপর অনেক প্রেশার ছিল কাজের। তাই স্যারকে দুপুরের পর ছুটির কথা বলাতে তিনি না করেন নি। বাসে করে আসছিলাম কিন্তু এই ব্যস্ত শহরের প্রধান সমস্যা জ্যামের কারনে আটকে যেতে হল। চিন্তা করেছিলাম বাসায় এসে নাকে সরষে তেল দিয়ে বেশ কয়েক ঘন্টার একটা ঘুম দিব। কিন্তু সেটা আর হল না। বাসে বসেই জানালা দিয়ে বাইরের দিগন্তটাকে দেখছিলাম। প্রচুর রোদ বাইরে। রোদের আলোতে বাসের পাশে অনেকটা ছায়া পড়েছে।
তখনি এক মহিলা ফুটপাতে রোদের মাঝে এসে দাড়ালো। কলে এক ফুটফুটে বাচ্চা। মহিলার দিকে আমি খুব একটা খেয়াল করলাম না। কারন বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে আমি অবাক। বাচ্চাটার প্রতি কেমন করে জানি এক মায়ায় জড়িয়ে পরলাম। তার এদিক সেদিক তাকানো। বলতে তার মা যে পাশে কলে নিচ্ছে সে পাশেই তাকিয়ে থাকছে বাচ্চাটি। তবে রোদের কারনে বাচ্চাটিরও খুব সমস্যা হচ্ছিল মনে হয়। তার মাও এটা বুঝতে পারল। তখন মহিলাটি এই বাসের ছায়ার পাশে এসে দাড়ালো। পাশে এসে দাড়াতেই আমি মহিলার দিকে তাকিয়ে অনেকটা ঘাবড়ে গেলাম। মহিলাটি ইমিশা ছিল। আমার ইমু। সে এখন এক বাচ্চার মা। অনেক খুশি লাগছে আজ এতোদিন পর তার মুখটা দেখলাম।
আমি তার দিকেই অনেকক্ষন ধরে চেয়ে আছি। এদিক ওদিক তাকাতেই সেও আমাকে দেখল। তবে চিনতে পারল না মনে হয়। একটু পরে আবারও আমাকে দেখল। এবার কিছুক্ষন চেয়ে থাকল। তাকে একটু ভ্রু কুচকাতে দেখলাম, মনে হয় তার একটু চেনা চেনা লাগছে তবে নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না। হঠাত বাস ছেড়ে দিল। সামনে এগিয়ে চলছে বাস। ছায়াটা ইমিশার থেকে সরে গেল। আরে ধুর, আমি কিছু না চিন্তা করেই বাস থেকে নেমে এলাম। ইমিশা ততোক্ষনে আবারও ফুটপাতে উঠে গেছে। জ্যামটা ছেড়ে দিতেই চারপাশের সবকিছুই গতিশীল হয়ে গেল শুধু দুটো মানুষ দাড়িয়ে আছে স্থির হয়ে। ইমিশা অন্য দিকে তাকিয়ে কোন কিছুর জন্য হয়ত অপেক্ষা করছে। আমি ধীর পায়ে তার দিকে এগিয়ে একসময় সামনে গিয়ে দাড়ালাম। তার কোলের বাচ্চাটি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। অন্যদিক থেকে আমার দিকে তাকাতেই হঠাৎ আমাকে দেখে সে দু পা পিছিয়ে অনেকটা চমকে উঠল।
আমি তার চোখ থেকে আমার দৃষ্টি ফেরাতেই পারছি না। একটু পরে সে আমাকে ভালভাবে দেখল। দেখে কেমন যেন অবাক হয়ে গেল। মনে হচ্ছে এখন চিনতে পেরেছে। আমি একটু হাসলাম তার দিকে তাকিয়ে। আমি পকেট থেকে আমার রুমালটা বের করে ওর বাচ্চাটার মাথায় দিলাম। তারপর বাচ্চাটা কোলে নিলাম। ও কিছুই বলল না। শুধু মুখে হাত দিয়ে আছে। হয়তো কান্না আটকানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। আমি এসব না দেখে ওর বাচ্চাটাকে কোলে থেকেই একটু খেলতে লাগলাম। এর মাঝে ওকে ওরনা দিয়ে চোখ মুছতে দেখলাম। ওকে বললাম, তোর হয়ে গেলে চল ওই সামনের রেষ্টুরেন্টে বসি। যদি তোর কোন কাজ বা সমস্যা না থাকে আরকি। ও আমার দিকে অনেকটা কষ্ট নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি আবারও বললাম, যাবি তো? ও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।
তারপর ওর বাবুর সাথে খেলতে খেলতে ওকে নিয়ে রেষ্টুরেন্টে আসলাম। টেবিলে বসে আমি ওর বাবুর সাথে খেলছি আর ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওকে শুধু জিজ্ঞেস করলাম, কেমন আছিস তুই? একটু চুপ থেকে ও হয়তো বলতে শুরু করত ঠিক তখনি ওয়েটার বলল, স্যার অর্ডার টা? আমি ওয়েটারের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। মনে মনে বলছি কি টাইমিং ভাই তোর। তারপর বললাম, ম্যামকে জিজ্ঞেস করেন। ওয়েটার ওকে জিজ্ঞেস করল, ম্যাম অর্ডার টা? ও চুপ থেকেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
তারপর আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, তিনটি চিকেন বিরিয়ানি, তিনটি কোক সাথে ভেজিটেবল। ও অর্ডার টা লিখেই চলে গেল? এদিকে ইমশাকে আমি আবার বললাম, কেমন আছিস বললিনা? ও শুকনো মুখে বলল, ভাল আছি। তুই কেমন আছিস? আমি একটু স্টাইল করেই বললাম, আরে আমি তো বিন্দাস আছি। যেমনটা চেয়েছিলাম আরকি। জব করব, বন্ধুদের সাথে মাস্তি আর ব্যাচেলর থাকব। তেমনটাই আছি। বলতে গেলে ওয়াও। তারপর আরও বললাম, বিয়েতে দাওয়াত দিতে পারতি। তোর বিয়ে, আমার একটা হোক তো থাকেই। তাই না? ও মাথা নিচু করে আছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তো এখানে কোথায় থাকিস? ও বলল, এইতো উত্তরায়।
আসলে ওর(বাবুকে দেখিয়ে) বাবা নিতে আসার কথা কিন্তু আজ হয়তো একটু দেরী হচ্ছে। আমি বললাম, তো ওর বাবা কি করছে? মাল্টিন্যাশনালে জব করছে নাকি বড় কোন শিল্পপতি? ও এবার একটু হাসল। বলল, ও একটা ভার্সিটিতে শিক্ষক। আমি বললাম, তোর তো খুব ইচ্ছে ছিল না ভার্সিটির শিক্ষক হবি? ও মলিন মুখে বলল, সব ইচ্ছাই কি মানুষের পুরন হয়? এটা শুনে আমি হাসলাম। অনেকটা ক্লান্তি নিয়েই বললাম, হুম সেটাই, সব ইচ্ছে কি আর পুরন হয়? এর মধ্যেই ইমিশার ফোনে ফোন আসল। ফোন ধরে বলল, আমি স্টান্ডের ওপাশে যে রেষ্টুরেন্ট আছে সেখানে আছি। তারপর রেখে দিল। আমি বললাম, কে? ও বলল, ওর বাবা। আমি উচ্ছসিত হয়ে বললাম, ওয়াও, পারফেক্ট টাইমিং। আমার কত আগের ইচ্ছে ছিল যে, তোর হাসবেন্ড এর টাকায় আমরা খাব, ঘুরব। আজ সেটা পুরন হতে যাচ্ছে। আগে জানলে নামী এক রেষ্টুরেন্টে বসতাম। ও এসব শুনে মৃদু হাসল। একটু পরে এক লোক ভেতরে ঢুকলো। আমি এই লোকটাকে চিনি।
ইমিশা কে দেখেই বলল, আসলে আমি অনেক সরি, জ্যামের কারনে আসতে একটু লেইট হল, আপনি দয়া করে কিছু মনে করবেন না। আমি ওনার কথা শুনে অবাক। এই লোক যদি ইমিশার হাসবেন্ড হয় তবে ওকে আপনি বলে ডাকছেন কেন? ইমিশা মৃদু গলায় বলল, আমি কিছু মনে করিনি। আপনি এতো অস্থির হবেন না। এরপর লোকটি আমার দিকে তাকালো সাথে দেখল উনার ছেলে আমার কোলে। আমি হাসিমুখে দাড়িয়ে হাত বাড়িয়ে বললাম, কেমন আছেন রিহান সাহেব? উনি একটু হেসে বললেন, মামুন সাহেব আপনি এখানে? আমি হেসে বললাম, নিয়তি রিহান সাহেব, সবি নিয়তি। তো পরিচয় করিয়ে দেই। আমার পুরনো বন্ধু ইমিশা আর আমার কোলে তার ছেলে। আর ইমিশা, ইনি হলেন মি. রিহান, আমরা কিছু কাজ একসাথে করেছিলাম পুর্বে। রিহান সাহেব আর ইমিশা দুজনেই আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে।
দুজনে দুজনের দিকে ইশারা করে বলল, একে অপরকে চিনি কি আমি? আমি দুজনের প্রশ্ন শুনে হেসে বললাম, একজন সবচেয়ে কাছের বান্ধবী আর একজন কিছু ভাল কাজের সঙ্গী সাথে ভাল মানুষ হিসেবে পরিচিত। রিহান সাহেব তখন হেসে ফেলে আমার কোলে থেকে তার বাচ্চাকে নিলেন। ইমিশা মৃদু গলায় বলল, ও আমার হাসবেন্ড। আমি বললাম, তুই না বললে তো বুঝতেই পারতাম না। তখনি ওয়েটার খাওয়ার নিয়ে এলো। খাবারে সবকিছু তিন টাইপের দেখে রিহান সাহেব বললেন, আপনি জানতেন নাকি যে আমি আসব? ইমিশা বলল, হ্যা ঠিকি তো, আমি তো তোকে ওর আসার কথা বলিনি অর্ডার করার সময়? আমি বললাম, আচ্ছা রিহান সাহেব আপনি কখনও একজন মেয়েকে তার বাচ্চাসহ রোদের মধ্যে বিনা করানে দাড়িয়ে থাকতে দেখেছেন? রিহান সাহেব কিছুই বললেন না।
একটা বাচ্চাসহ মা গাড়ি থাকা সত্যেও দাড়িয়ে আছে। কোন বাসেই উঠছে না। আবার বামে রাস্তার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। এর মানে কি হতে পারে? সে নিশ্চয়ই কারও জন্য অপেক্ষা করছে। এখন এই ভর দুপুরে নিশ্চয়ই এক মেয়ে তার কয়েক মাসের বাচ্চাকে নিয়ে কোন স্কুলবাসের অপেক্ষা করবে না। তো এটা নিশ্চিত যে সে তার পরিবারের কারও জন্য দাড়িয়ে আছে। হতে পারে তার বাবা বা ভাই বা স্বামী। আর একজন ভাল দায়িত্ববান মানুষ তার স্ত্রীকে এই দুপুরে অন্য কাউকে দাড়া পিক করাবেন না। বাবা বয়স্ক হবে তাই বাবা হবে না তবে এটা হতে পারত তার ভাই। এটার ওপর নির্ভর করেই তিনটে করে খাবারের অর্ডার দিয়েছি। কিন্তু মেয়েটার স্বামীই আসলো তাকে নিতে। ইমিশা হাসলো এসব শুনে। রিহান সাহেব ইমিশার দিকে তাকিয়ে আছে। ইমিশা বলল, আগের মত নিজের চিন্তার জগৎকে সঙ্গে নিয়ে সব কিছু ভেবে বলে দিলি। আমি হাসলাম। রিহান সাহেবকে বললাম, দুপুরে কিছু খাইনি।
তারাতারী শুরু করুন খুব খিদে পেয়েছে। তিনজনই খেতে শুরু করলাম। বাবুকে ইমিশা কোলে নিয়ে ছিল। খেতে খেতে কথা হল বাবুকে নিয়ে। বাবুর নামটা শুনে এবার আমি অবাক হয়ে গেলাম। বাবুর নাম রেখেছে প্রনব হাসান ইফতি। এই নামটা ইমিশার অনেক প্রিয় নাম ছিল যেটা আমি আর ও ছাড়া আরও একজন জানে। যাক ওসব পরে বলছি। খাওয়া শেষে ওয়েটার বিলের কাগজ দিয়ে গেল। আমি সুন্দর করে রিহান সাহেবের দিকে এগিয়ে দিলাম। ইমিশা হাসলো এটা দেখে। বলল, হয়েছে তো ইচ্ছে পুরন এবার। দে এবার কিটকেট দে। বলতেই কেমন যেন ওর হাসিমুখটা আবার মলিন হয়ে গেল। রিহান সাহেবকে দেখলাম অনেকটা অবাক হয়ে আছে। এরপর উনি বিলটা দিলে আমরা উঠে পরি। ইমিশা শুধু এটুকু বলল, আসি আমি। আর কিছু বলল না অথচ কত কিছুই তো জানার ছিল।
এদিকে রিহান সাহেব ইমিশা একটু দুরে যেতেই বলল, ভাই আপনার ফোন নাম্বারটা কি পেতে পারি। আসলে ইমিশাকে আমি এভাবে একটু হাসি খুশি দেখতে পারিনি বলেই চলে। আমি তাকে আমার একটা ভিজিটিং কার্ড দিয়ে দিলাম। মনে মনে ভাবছি, আপনাকে আমার দরকার। অনেক কিছু যে জানার আছে। তারপর ইমিশাকে একটা কিটকেট দিয়ে তাদের থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসি। এর দুদিন পর একটা অজানা নাম্বার থেকে ফোন আসল। ফোন ধরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে শুনতে পেলাম, হ্যালো মামুন সাহেব আমি রিহান বলছিলাম। আমি বললাম, ও আপনি, কেমন আছেন? উনি বললেন, জি ভাই ভাল আছি। ভাই আজ বিকেলে কি একটু সময় হবে আপনার? আমি বললাম, হুম হবে ভাই। আপনি টি এস সি তে চলে আসেন। আমিও পৌছে যাব। উনি ওকে বলেই বললেন বিকেল পাঁচটা ভাই। আমিও ওকে বলেই রেখে দিলাম।
টি এস সি তে দুজনি দুকাপ চায়ের সাথে নিজেদের কথা বলে যাচ্ছি। হঠাত উনি বললেন, আপনি ইমিশাকে কতদিন থেকে চেনেন? আমি বললাম, আমার অনেক পুরনো বন্ধু সে। উনি বললেন, ভাই আপনাকে বিশ্বাস করে কিছু বলতে পারি? আমি তার ঘাড়ে হাত দিয়ে বললাম, চিন্তা করবেন না। আমরা একে অপরকে যেভাবে চিনি তাতে আর এসবের দরকার পরবে না। উনি একটু চুপ থেকে বলতে শুরু করলেন।
তিন বছর পেরিয়ে গেছে আমাদের বিয়ের। আমার জন্য সে সব কিছুই করার চেষ্টা করে। আমার প্রতি সে তার কোন দায়িত্ব বাকি রাখেনি শুধু একটা ছাড়া। সে হয়তো আমাকে মন থেকে ভালবাসতে পারিনি। কিন্তু আমি তাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি। আমাদের একটা ছেলে আছে কিন্তু তার প্রতি আমার ভালবাসাকেও সে দায়িত্বে পরিনত করেছে। বিয়ে করেছি বলেই হয়তো তার দেহের অধিকার টুকু পেয়েছি কিন্তু তার মনে এখনো স্থান পাই নি। জানি না কেন।
অনেক কিছু বলেছি, কতবার তাকে অনেক কড়া কথাও শুনিয়েছি কিন্তু সে নিঃশব্দে কেঁদে সব সহ্য করেছে। আমি জানি না কেন এরকম আমার ভাগ্যে হল। আমি সব পেয়েছি তবে কেন যে তার একটু ভালবাসা পেতে মরিয়া আমি? আমি তার কথাগুলো চুপচাপ শুনে যাচ্ছিলাম। তার বলা শেষ হলে আমি বললাম, মেয়েটা অনেক হাসিখুশি ছিল জানেন। সবসময় হাসিখুশি থাকত। সবাইকে নিয়ে মজা করা, দুষ্টুমি এসব নিয়েই মেতে থাকত সে। তার কাছে এই দুনিয়াটা অনেকটা স্বপ্নের মত। তার মত করেই সবকিছু রাঙ্গিয়ে রাখত সে। মনে করত এই দুনিয়াতে তার ভাল কাজগুলো তাকে কখনও খারাপ থাকতে দেবে না।
আমরা যখন ভার্সিটির শেষ বছরে তখন বারবার সে বলত, এরপর তো সবাই আলাদা হয়ে যাব, কারও সাথে খুব একটা যোগাযোগ হবে না। সবাই তো ভুলে যাবি আমায় তাই না? আমরা বলতাম, নারে, এরকম কিছুই হবে না। আরও অনেক কিছু বলে বুঝানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ও একটু জেদি ছিল কিনা। সবকিছু বুঝার পরও বলল, আচ্ছা দেখা যাবে। তারপর ভালই চলছিল কিন্তু ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার দুমাস পর থেকেই তার কোন খোজ নেই। কি এমন হল যে হঠাৎ ও এমন কিছু করল। তারপর তো সেদিন রাস্তায় দেখা এই আরকি। রিহান সাহেব বললেন, তবে কি আপনিও কিছু জানেন না। আমি হয়তো জানি না তবে জেনে নেব। এখন যেহেতু খুজে পেয়েছি আমাকে সবটা জানতেই হবে। রিহান সাহেবকে বললাম, আমি দেখা করব ওর সাথে। আপনি চিন্তা করবেন না। রিহান সাহেব বলল, আমি আস্থা রাখলাম আপনার উপর। প্লিজ আমার জিবনে ওর হাসিটা ফিরিয়ে দিন। রিহানের থেকে ইমিশার নাম্বারটা নিয়ে আমি তাকে বিদায় জানালাম।
পরেরদিন সকালে ইমিশাকে ফোন দিলাম। প্রথমবার ধরল না। পরেরবার ফোন দিলে সে ধরে চুপ করে থাকল৷ আমিও কিছু বলছি না। একটু পরেই বলল, কেমন আছিস? আমি বললাম, আমার নাম্বারটাও তোর ফোনে সেভকরা আছে। ও কিছু বলল না। আমি অন্য কিছু না বলে সরাসরি বললাম, বিকেলে তৈরী থাকতে একসাথে ঘুরে আসব কথা থেকে। ও বলল, আমি বিবাহিত মামুন। আমি চাইলেও সব কিছু করতে পারি না এখন। আমি বললাম, রিহান সাহেবের সাথে কথা বল যদি নিষেধ করে তাহলে যাব না। ও চুপ করেই থাকল। আমি বললাম, বিকেল চারটার দিকে আমি তোর বাসার পাশের মোড়ে অপেক্ষা করব। বাকিটা তোর উপর।
বিকেলে ওর বাড়ির পাশের মোড়ে দাড়িয়ে আছি। একটু পরেই দেখলাম ও তাড়াহুরো করে আসল। বলল, কি এমন হল যে হঠাত ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে হল? আমি হেসে বললাম চল। তারপর একটা পার্কের পেছনের লেকে গিয়ে বসলাম। ও চুপ করে সামনে তাকিয়ে আছে। আমি একটা হাইনিঃশ্বাস নিয়ে বললাম, তারপর কি হল? ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল, কোথায় কি হল? আমি চুপ করে সামনে তাকিয়ে আছি। ও কিছুই বলছে না। আমি আবারও বললাম, কি এমন হয়েছিল যে সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলি? ও বলল, তুই কি এসব বলার জন্য এখানে নিয়ে এসেছিস? আমি বললাম, যদি বলি অনেকটা এরকমি। ও বলল, তাহলে তুই থাক আমি উঠব। আমি বললাম, তুই কি ভয় পাচ্ছিস? ও বলল, তোকে সব কিছু বলতে বাধ্য নই আমি। আর আমার সমস্যা এটাই যে আমি এখন আর ভয় পাই না। বলেই উঠে চলে যাচ্ছিল।
তখনি ওর হাতটা শক্ত করে ধরে আবার বসিয়ে দেই আমি। দুহাত শক্ত করে ধরে তার চোখের সামনে আমার চোখ রেখে অনেকটা পিশাচের ন্যায় বললাম, আমি তো সব শুনবই। যদি না বলতে চাস তাহলে তোকে মেরে ফেলে নিজের জমানো কথাগুলোকে কবর দিব৷ দয়া করে আজ আমাকে আগের মামুন মনে করিস না। তুই আমাকে এখন চিনিসও না এটা মাথায় রাখিস। ও হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল, মামুন হাত ছাড়। কি করছিস তুই এসব? তুই আমার বন্ধু এটা ভুলে যাস না। আমি রেগে বললাম, গুল্লি মার তোর বন্ধুর। আমার চোখে তাকিয়ে দেখ তুই কি মামুনকে দেখছিস নাকি অন্য কেউ। ও আমার রাগী চেহারার দিকে তাকিয়ে কেমন যেন চুপ হয়ে গেল। একটু পরে হেসে বলল, সব মানুষই পরিবর্তনশীল। তুই বা বাদ যাবি কেন? যাই হোক শোন তাহলে।
আবীর কে ভার্সিটির শুরু থেকেই একটু একটু করে পছন্দ করতাম। তাই ওর সাথে একটু বেশিই মেশার চেষ্টা করতাম। আবিরও আমার সাথে একটু বেশি কাছের হয়ে গেছিল। একসময় আবীর আমাকে প্রপোজ করল। আমিও অনেক খুশিমনে রাজী হলাম। তোদের কাউকেই এমনকি তোকেও জানাই নি এটা। আবীরকে আমি অনেক ভালবেসে ফেলি। ভার্সিটির শেষ দিকে সে আমাকে একদিন এক পার্কে ডেকে পাঠায়। নির্জন এক জায়গায় আমি ওর হাতে মাথা রেখে বসে ছিলাম।
কিন্তু আবীর সেদিন স্বাভাবিক ছিল না। তার ভেতরের পশুটা সেদিন বের হয়ে আসছিল। সে আমার দেহকে ভালবেসেছিল। আমি অনেকবার বলছিলাম, আবীর কি করছ এসব। ছাড় আমাকে। কিন্তু এসব সে কিছুই শোনেনি। এত পরিমান উদ্ভট হয়ছিল যে সে আমার কামিজটাও ছিড়ে ফেলে। আমি তখন লজ্জায় চোখ বন্ধ করে তাকে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিই। তারপর দৌড়ে পালিয়ে আসি সেখান থেকে। বাসায় এসে আমি অনেক কেঁদেছিলাম সেদিন। যাকে সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে ভালবেসেছি সেই এমন করল আমার সাথে। তারপরও ভেবেছি ও হয়তো ওর ভুলের জন্য অনুতপ্ত হবে।
নিজেকে শুধরে নেবে। কিন্তু পরেরদিন যখন সে আরেকটা মেয়েকে নিয়ে বিছানায় যায় আবার আমাকে কিছু পিক সেন্ড করে, সেদিন আমার সবার থেকে বিশ্বাস উঠে গেছে। তারপর থেকেই নিজেকে ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করি না। সমাজের রীতি মেনে সবার মতই থাকার চেষ্টায় আর কি। অনেকক্ষন এসব শুনে বললাম, একজনের থেকে খারাপ কিছু পেয়ে সবাইকেই এমনভাবে দেখছিস? ও হেসেই বলল, তুই একটু আগে কি করলি? আমি অনেক জোরে হেসে উঠলাম। বললাম, এতো কিছু বললি তো একটু আগে যা করলাম ওটার জন্যই। তবে তোর একটু জানার কমতি আছে। আমি চাইলেই এখন আবীরকে এসবের জন্য দোষ দিব না। আমি জানি আবীর নির্দোষ। ইমিশা বলল, মানে কি বলতে চাইছিস তুই? আবীর যেদিন মারা যায় সেদিন আমি হাসপাতালেই ছিলাম।
শুধু বলেছিল, ইমিশাকে দেখে রাখিস। আজ বুঝতে পারছি কেন সে তোর সাথে এমনটা করেছিল। ও বলল, কেন আবার? এসব ছেলেদের মত নিকৃষ্ট কেউ হয় না। আমি বললাম, ঠিক বলেছিস। আচ্ছা বলত, যেই ছেলেটা নিজে থেকে কখনও তোর হাত ধরতে চায় নি সে কেন এমনটা করেছিল? আর তোর সাথে এমন করার পর কি দরকার ছিল যে সে তোকে অন্য এক মেয়ের সাথে বিছানায় ছবি তুলে পাঠিয়ে দিবে। কেন বলত? ও এখন অবাক চোখে চেয়ে আছে। আমি বললাম, আসলে ও চেয়েছিল যে তুই ওকে ঘৃনা করে সরে যা। যেদিন ওর ব্লাড ক্যান্সার ধরা পরে তারপর থেকেই ও এসবের প্লান করে। ও চায় নি যে ওর সাথে থেকে তুই তোর জিবনটা নষ্ট কর।
আমি ওর মুখেই তোরসাথে সম্পর্কের কথা শুনি। তুই অনেক ভেঙ্গে পড়েছিলি এ জন্য ও তোর সাথে কথাও বলতে চেয়েছিল কিন্তু তোকে কোথাও পাওয়া যায় নি। এবার ইমিশা আমার কলার ধরে বলল, কি বলছিস এসব তুই? এখনি বল যা বললি সবি মিথ্যে। আমি বললাম, সে চেয়েছিল ওকে ভুলে গিয়ে তুই নতুন করে জিবন শুরু করবি কিন্তু তার ইচ্ছেটা পুরন হল না আর। সে আমাকে ছেড়ে দিল। তার চোখ দিয়ে পানি সরবভাবে পড়তে লাগলো। আবীর আমাকে এসব বলত না কখনই। যদি না তার সাথে কোন ভাল কাজের অংশীদার হতে না পারতাম। আচ্ছা তুই কি আরেকটা কথা জানিস, রিহান সাহেবও আবীরকে চেনে শুধু জানে না যে ও তোর কেউ ছিল। ও এবার বলল, কিভাবে চেনে? আমি বলতে শুরু করলাম,
রোজার সময় ট্রেনে করে বাড়ি ফিরছিলাম। ঠিক মাঝখানে সিট পরেছিল আমাদের। আমি আবীর পাশাপাশি সিটে। ইফতারীর সময় আমাদের সামনে এক কাপল সাথে তাদের বাচ্চা ছিল যারা হিন্দু। আমরা যখন ইফতার বের করছিলাম তখন আমি আবীরকে বললাম, সামনের ভাইয়া ভাবীকেও আমরা শরীক হতে বলি। ও এটা শুনে ইফতারী দেখল যে এইটুকুতে হবে না। পাশে থেকেই রিহান সাহেব এসব লক্ষ করছিল। এসব দেখে তিনি তার ইফতারী গুলো আমাদের দিয়ে বলল, ভাই একসাথে সবাই ইফতার করি।
উনাদেরও শরীক হতে বলুন। অজানা কারও মানসিকতা এতো ভাল দেখে অনেক ভাল লেগেছিল। সবাই মিলে ইফতারর শেষ করলাম। তারপর অনেকদিন দেখা হয়নি তার সাথে। আবীর মারা যাওয়ার পর ওর পরিচিত একটা অনাথ আশ্রমে মাসে একবার খাওয়াই কিছু লোক মিলে। একদিন হঠাত করেই রিহান সাহেবকে দেখলাম সেই আশ্রমে অনাথদের কে খাওয়াতে। আমাকে ওখানে দেখে সে অবাক হয়ে গিয়েছিল। বলেছিল, আপনিও কি তবে? আমি হাসলাম। উনি আবারও বললেন, আপনাদের মত লোকদের সাথে একদিন ইফতারী করেছি এটা আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া। আমি একটু হেসে বললাম, ভাই ভাল মানুষেরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে কখনও ভুল করে না।
আমিও মনে রাখব ভাই যে কিছু মানুষের সাথে আমি একদিন ইফতারে শরীক হতে পেরেছি। সেদিনের পর থেকে দুটো অজানা মানুষের মনে দুটো মানুষ নাম লিখিয়ে নিল। এভাবেই চেনা জানা আমাদের। তবে আবীর বুঝতে পেরেছিল যে, তুই যদি জানতি যে ওর ব্লাড ক্যান্সার তবে সেটা তুই সহ্য করতে পারতি না। তের জিবনটা অগোছালো ভাবেই শেষ হয়ে যেত। পারতি না অন্য কাউকে মন থেকে মেনে নিতে। কিন্তু এখন যা হচ্ছে সেটা আরও খারাপ হচ্ছে। আসলে এখানে রিহান সাহেব কি দোষ করল বুঝলাম না। আর তোর হাত ধরে যে টেনে বসিয়েছি না, জানি আমাকেও তোর পশুর ন্যায় কিছু একটা মনে হয়েছে। তবে কি নিজের মনের ভেতরের কথাগুলো আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। তাই আজ কিছু না বলে বা না শুনে যাওয়ার কোন ইচ্ছে ছিল না। এসব বলার পর আরও কিছু বলতে যাব তখন ও আমার বাহু জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। আমার মুখ দিয়ে আর কোন কথা বের হচ্ছে না।
এই এই ইমিশা কি করছিস? এই দেখ আশে পাশে সবাই দেখছে। ও কিছু না বলে শুধু আমাকে ছেড়ে দিল। আমি বললাম, কেঁদে আর কি হবে বল? আবীর তোর ভালর জন্যই এসব করেছিল। কিন্তু তুই এখনো এটা থেকে বের হতে পারিস নি। আর রিহান সাহেব অনেক ভাল মানুষ। সে বিনা দোষে কেন কষ্ট পাচ্ছে বলতে পারিস? ইমিশা বলল, তুই আমার ওপর অনেক রেগে আছিস তাই না? আমি হাসলাম। কিসের সাথে কি? বললাম, এটা তোর বা আমার সময় নয় ইমিশা। এখন সময় তোর আর রিহানের। ও একটু চুপ থেকে বলল, আমি মেয়েটা অনেক খারাপ আর জেদী তাই না রে? আমি বললাম, খারাপ তো বলা যাবে না তবে জেদী হলেও তোকে মানাতো বেশ। অনেক কথা হল। আজ উঠি। রিহান সাহেব তোর জন্য অপেক্ষা করছে হয়তো। দুজনে উঠলাম। ইমিশাকে ওর বাসায় পৌছে দিলাম।
এরপর এক মাস পেরিয়ে গেছে। অনেক বার মনে হয়েছে ইমিশার কথা। ফোন দেই নি। শুধু ভেবেছি, সে আমাকে তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু বলেছিল। আমাকে তো জানাতে পারত। আমি তার কি ক্ষতি করেছি। বন্ধু হয়ে তার পাশে তো থাকতে পারতাম। তারপর তার কিছু বাচ্চামী টাইপের দুষ্টুমি গুলো মনে করেই হেসেছি অনেক। এমনি এক বিকেলে দিয়াবাড়িতে কাশফুলের মাঝে বসে দিগন্ত দেখছি। একটু পরে ইমিশা কোথা থেকে যেন আমার পাশে এসে বসল। আমি অনেকদিন পর অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছি। এভাবে তাকিয়ে আছি দেখ সে আমার নাকটা টিপে দিয়ে বলল, অনেক অভিমান জমে আছে তাই না? আমি বিনয়ী সুরে বললাম, কই নাতো। ও বলল, তোকে আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু মনে করেছি। তুইও হয়তো সেটাই ভেবেছিলি। তবে নিয়তি দেখলি, তুই ঠিকই তোর কথা রেখে গেলি অথচ আমিই পারলাম না। আমি কিছু বলছি না এসব শুনে। ও বলল, সময় তো অনেক ফেলে এসেছি। এখন এই ফেলে আসা সময় গুলো কি ফিরে পাওয়া সম্ভব।
আমি বললাম,বলেছিলাম না তোকে, একদিন তুই সব কিছু বুঝবি আর পুরনো সময় গুলো ফিরে পাওয়ার জন্য অনেক ছটফট করবি কিন্তু সেটা তখন আপেক্ষিক হয়েই থাকবে। ও বলল, একটাবার কি আমাদের বন্ধুত্বটাকে পুর্নতা দেওয়া যায় না। আমি বললাম, হুম যায়, তো কিভাবে? তখনি রিহান সাহেব তার কোলে বাবুকে নিয়ে আসল। আমি বললাম, আপনারা কি জানতেন আমি এখানে থাকব? রিহান সাহেব বললেন, আপনার মতই একটু রহস্যময়ী হওয়ার চেষ্টা করছি। আরও বললেন, কাল আমাদের বাসায় যদি ডিনারটা করতেন তাহলে খুব খুশি হতাম। আর আসার সময় ইমিশার পছন্দের আপনার হাতে কেনা কিটকেট নিয়ে আসলে আরও খুশি হতাম। আমি হাসছি এসব শুনে।
ইমিশার দিকে তাকিয়ে বললাম, জিবন কখনও কারও জন্য থেমে থাকে না ইমিশা। তবে চলতি পথে কিছু অপুর্নতা থেকেই যায় তবুও জিবন চলে যায়। কি লাভ বলত এই চলমান জিবনে অযথা জেদ, রাগ, উদ্ভট সব কীর্তি নিয়ে নিজের অপুর্নতাকে বাড়িয়ে তোলাটা। তুই আমি জিবনে কেউই স্থায়ী নয়। ও বলল, তুই কি এখনো ক্ষমা করিস নি আমাকে? আমি হেসে বললাম, আমি তো বন্ধুত্বের সম্পর্কে কখনও রাগের কারনে রেগে থাকি না তবে তুই এই সম্পর্কে ক্ষমা চাওয়া কবে থেকে শিখলি? ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আমি এটা দেখ ওর চোখের পানি মুছতে যাব কিন্তু তখনি আমি রিহান সাহেবের থেকে কোলের বাচ্চাকে নিয়ে বললাম, চোখের পানিটা মুছে দেওয়ার দায়িত্ব আপনার।
আমি মুছলে তো এতোক্ষনে সাত রামায়ন ভেবে বসতেন। উনি হাসলেন এটা শুনে। তারপর এগিয়ে গিয়ে ইমিশার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল, এই কেঁদো না, আমি আছি তো। আমি লক্ষ করলাম রিহান সাহেব ওকে তুমি করে বলছে। আমি দুষ্টুমি করে বললাম, আমার ওভাব আপনার দারা মিটবে তো? বলেই হেসে বললাম,এভাবেই পাশে থাকবেন সবসময়। ইমিশা চুলগুলো গুছিয়ে বলল, তুই বিয়ে করিস নি কেন? আমি বললাম, তোর বাবু যখন বলবে যে মামা মামা, আমিও তোমাকে হলুূদ মাখাবো তখনি বিয়ে করব। ও হেসে ফেলে বলল, এখনও মনে রেখেছিস। আমি বললাম, আমি তো আমার জিবনটাকে ভুলতে পারি না। এরপর আরও অনেক কথার পর ওদের বিদায় জানানোর সময় হল।
আমি ইমিশাকে বললাম, কাল তোর বাসায় যেতে পারি এক শর্তে। ও বলল, কি শর্ত? আমি বললাম, শুধু একটা কিটকেট কিনে নিয়ে যাব আর পারব না। ও অনেকটা রাগি মুড নিয়ে বলল, কি বললি, তুই জানিস তোর থেকে কতগুলো কিটকেট পাই আমি? আমি বললাম, হুম জানি, তবে আমি পারব না দিতে। কারন তোর এখন কিটকেট কিনে দেওয়ার লোক আছে। ওই লোকটাই কিনে দিবে সাথে রোমান্স ফ্রিতে। এবার ও একটু লজ্জা পেল। এটা দেখে আমি হেসে বললাম, তুই তাহলে লজ্জাও পাস। এটা শুনে ও একটা কিল মেরে হেসে ফেলল। তারপর একে অপরকে বিদায় জানিয়ে বিপরীত দিকে হেঁটে চলেছি। কিছুক্ষন দাড়িয়ে ওদের দেখলাম।
রিহান সাহেবের কোলে বাবু আর ইমিশা রিহান সাহেবের হাত জড়িয়ে মাথাটা তার বাহুতে রেখে তারা এগিয়ে চলেছে। সূর্যটাও হেলে পরেছে। দেখতে অনেক ভাল লাগছে তাদের। এটাই হয়তবা পুর্নতা। অনেকদিন পর মেয়েটাকে তার আগের রুপে একটু দেখলাম। পুরনো সেই বন্ধটিু সাথে কিছু পুরনো আচরন। যেগুলো মিস করি সেগুলো হঠাত পেয়ে যাওয়া। কতটা স্বাচ্ছন্দ থাকে এতে। শুধু হল না তাকে নিজের কিছু বলা। হল না তার সাথে তার আমার মত করে কাটানো কিছু সময়। আর দাড়ালাম না। এগিয়ে চললাম সূর্যাস্তের পথে। পথ অনেকটা দুর তবে আমার মত পথিক সেটা ভেবে কখনও পথে নামে নি….