একটি ভালোবাসার গল্প

একটি ভালোবাসার গল্প

-এই যে শুনছো?(আরোহী )
-কি?(আমি)
-উঠো না প্লিজ?
-এতো তাড়াতাড়ি?
-সপ্তাহে শুধু তো এই দিনটাতে শুধু তুমি ফ্রি থাকো আর আজকেও যদি তুমি ঘুমাও?
-কেনো অন্যদিন গুলোতে কি আমি চাদের দেশে থাকি?অন্যদিনগুলোতেও তো আমি তোমাকে সময় দেয়!!
-শুধু রাতে আর কি?আমার তো সারাক্ষণ তোমার পাশে থাকতে ইচ্ছা করে?
-তাই বুঝি?
-হুম প্লিজ উঠো না?
-আর একটু ঘুমাই প্লিজ!!
-আচ্ছা(মুখ কালো করে চলে গেলো)

আমি ইমরান আর এতক্ষন যার সাথে কথা বলতেছিলাম সে আমার স্ত্রী আরোহী । আমাদের ছয় বছরের রিলেশন তারপর বিয়ে…সপ্তাহের প্রতিদিন অফিসের কাজে ব্যাস্ত থাকি তাই তাকে ভালো মতো সময় দিতে পারি না। আজ শুক্রবার আজকের দিনটাই শুধু তার সাথে ভালোমত কাটাই। জানি পাগলি টা রাগ করেছে।চুপি চুপিউঠে রান্না ঘরে গেলাম,দেখলাম ও রান্না করছে,চোখের পানি মুখ বেয়ে নামছে, পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম,

-ছাড়ো আমায়,ছাড়ো???
-না ছাড়বো না!!
-এতক্ষন পর আসছে দরদ দেখাতে!!
-I Love You Babuni
-কচু
-না রান্না করো না আমি খাবো না??
-ইমরান তুমি(ও আমাকে ইমরান ডাকে)
-আচ্ছা বাবা আর ফান করবো না?
-জানো আমি যখন বাসায় একা থাকি তখন আমার খুব খারাপ লাগে!!
-তাই বুঝি??
-তাই বুঝি মানে তুমি আবার ফান করছো?
-আচ্ছা বাবা সরি,আর শোনো না আমার না খুব ক্ষিদা লাগছে?
-দাড়াও দুই মিনিটের মধ্যে নাস্তা রেডি করছি?
-না দুই মিনিট সহ্য করতে পারবো না!!
-তাহলে?
-অন্যকিছু??
-অন্যকিছু মানে?এই তুমি কাছে আসতেছো কেন?কাছে আসবা না,সকাল সকাল তোমার দুষ্টুমি শুরু হইছে?
-আমি আমার বউয়ের সাথে দুষ্টুমি করছি আপনার কি?

-আপনার বঊ টা কে?
-যার সাথে দুষ্টুমি করছি!
-সেটা কে?
-আমার বউ!
-ইমরান????আমি কে?
-আমার বউ!!
-তুমিও না?
-আচ্ছা এইবার দেয়?
-না!!
-ওকে দিবো না.
-দিবা না কেনো?
-না দিবো না।
-তা তো দিবা না,এখন তো আর আমাকে ভালোলাগে না!!(মুখ কালো করে)
-তোমাদের মেয়েদের এইএক সমস্যা তোমাদের দিলেও দোষ,না দিলেও দোষ,আরকথায় কথায় সেই এক ডায়লাগ এখন তো আর ভালোলাগে না ব্লা ব্লা….
-ইমরান তুমি এখানে অন্যমেয়েদের কথা আনছো কেনো?আর তোমার মাথায় এতো মেয়ে মেয়ে ঘুরে কেনো??(বুঝতে পারছি ঊনি রেগে লাল হয়ে যাচ্ছেন)

-আচ্ছা বাবু আমার কিন্তু খুব ক্ষিধা লাগছে!!
-তুমি তো শুরু করছো.
-কি আমি শুরু করছি নাকি তুমি??
-তারমানে তুমি বুঝাতে চাইছো আমি ঝগড়াটে? ??
-ধুর বাবা আমি তা বল্লাম কখন?
-এই যে এখন?আজকে বাসায় কোনো রান্না হবে না?
-তাহলে আমি কি খাবো?
-খেতে হবে না!!
-ধুর বাবা প্রতিদিন এই ফালতু নাটক ভালোলাগে না??আমি গেলাম।
-এই কোথায় যাচ্ছো?
-ঘুমাতে বলে চলে আসলাম।এসে আবার কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুম। কিছুক্ষন পর হঠাৎ চোখ খুলে দেখছি রানী আমার দিকে এক দৃষ্টিতে থাকায় আছেন। আর কফির মগ পাশের টেবিলে ডাকনাদেওয়া।

-এই যে কি দেখো?
– তোমায়!!
-এই যে???
-একি তুমি জেগে গেছো (লজ্জা পাইছে)
-আমার কফি যে ঠান্ডা হয়ে গেলো?
-দাড়াও আমি গরম করে আনছি?
-না লাগবে না ঠান্ডা খাবো?
-একি তুমি তো ঠান্ডা কফি খাওনা!!
-আজ খাবো?তুমি এখানে বসো।
-আচ্ছা। আমি কফি খাচ্ছি আর ও তাকিয়ে আছে। কিছুক্ষন পর…..
-ইমরান তুমি আজো ভুলে গেছো?
-কি?
-এই যে আমি প্রতিদিন এক কাফ কফি বানাই.
-না ভুলিনি?
-তাহলেও দাও।
-নাও। পাগলি টা বাকি কফি খাচ্ছে আর আমি থাকিয়ে আছি।
-এই ভাবে কি দেখছ(আরোহী )
-তোমাকে! ! তুমি ছোট বাচ্চাদের মতো কফি খাচ্ছো। কফি রেখে আমার বুকে এসে মুখ লুকালো? রাতে খেয়ে শুয়ে আছি তখন
-বাবু তুমি তো সারাদিন তাই তোমার জন্য একটা সঙ্গী প্রয়োজন।তাই ভাবতেছি একটা কাজের মেয়ে রাখবো।(আমি)
-দুর বাসার সব কাজ আমি একা করতে পারবো কাজের লোক রাখবে না।
-তাহলে?
-তাহলে কি?
-ভাবতেছি আমাদের দুই জনের মাঝে আর একজন আনলে কেমন হয়।

-তৃতীয় ব্যাক্তি।আমি তোমার আর আমার মাঝে আর কাঊকে আসতে দিবো না
-ধুর পাগলি আমি আমাদের বেবির কথা বলছি?
-ইমরান তুমি ভীষন দুষ্টু হইছো?
-কেনো ঠিক বলিনি?
-হুম ঠিক বলেছো?
-তাহলে তো পরিকল্পনা শুরু করা উচিত?
-কিসের??
-বেবির!!
-এই তুমি কি করতেছে হুম।দুষ্টুমি করবা না।
-আমি তো দুষ্টুমি করবো না। কিছুদিন পর অফিসে কাজ করছি এমন সময় পাগলিটার ফোন–
-হ্যালো বাবু(আমি)
-হুম বাবু কি করো?
-এইতো একটা ফাইলদেখতে ছিলাম!
-তোমার কি অফিসে কোনো জরুরী কাজ আছে?
-না কেনো?
-আমার খুব খারাপ লাগছে.প্লিজ একটু বাসায় আসবা??
-আমি এক্ষুনি আসছে.তুমি চিন্তা করো না,আর ডাক্তার সহ নিয়ে আসছি +না বাবু ডাক্তার লাগবে না।
-আচ্ছা আমি আসছি। কিছুক্ষন পর বাসায় আসলাম।দেখলাম ও ক্লান্ত।
-কি হয়েছে তোমার (আমি)
-কিছুনা?তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে?
-কি?
-চোখ বন্ধ করো?
-কেনো?
-করবা?
-আচ্ছা করছি বলো?
-তুমি বাবা হতে যাচ্ছো(কানে কানে)
-সত্যি??

-হুম(লজ্জায় আমার বুকে মাথা লুকালো ,কিছুক্ষন পর আমার শার্ট টা ভেজা অনুভব করলাম)
-আরোহী তুমি কাদতেছো কেন?তুমি কি বেবী নিতে চাও না?
-না ইমরান তা না।আমি আজ অনেক খুশি।আমি মা ডাক শুনবো।
-আর আমি বাবা ডাক শুনবো
-হুম আমি এখন থেকে শুধু আমার বেবিকে আদরকরবো
-আর আমি?
-তুমি বাদ!! হি হি হি
-ওকে আমিও আমার বেবিকে আদর করবো?
-আমাকে করবা না?
-না
-দাড়াও তুমি(দোড়িয়ে আসতেছে)
-এই সময় তোমার দোড়া ঠিক না।
-এতো তাড়াতাড়ি কেয়ার শুরু করে দিছো।
-তোমার না আমার বেবির?
-ইমরান….
-হা হা হা। রাতে শুয়ে আছি ….
-আচ্ছা বাবু আমাদের ছেলে হবে নাকিমেয়ে?(আরোহী )
-যাই হোক?তোমার কি চাই?
-মেয়ে।
-আমারো।
-আমাদের ছেলে হলে নাম হবে ইমতুল লোভান আর মেয়ে ইতুমালিসা
-বাব্বাহ তুমি নাম ও ঠিক করে রাখছো
-হুম
-পাগল
-তোমার জন্য পরদিন সকালে অফিসে যাচ্ছি এমন সময়….

-এই শোনো?
-কি
-আসার সময় বেবির জন্য খেলনা নিয়ে আসবে
-এখনো তো বেবি আসে নি?
-আসেনি আসবে তোমাকে আনতে বলছি আনবা ওকে?
-কিন্তু আমি তো চিনি না?
-তুমি দোকানদারকে বলো উনি তোমাকে দিবে আসলেই পাগলি এখনো বেবি আসে নি আরউনি খেলনা নিয়ে। এর পর থেকে শুরু হলো আমাদেরপরিকল্পনা.বেবি কি করবে,বেবিকে নিয়েকোন দিন কোথায় যাবো,বেবিকে কি দিয়ে গোসল করাবে,কখন কে কোলে নিবে সব। কিছুদিন পর যখন বেরাতে বের হলাম ও তখন একটি পুতুল কিনলো

-এটা নিয়ে আমাদের বাবু সব সময় খেলা করবে?
-আচ্ছা।

আজ আমার পাগলীটা হাসপাতালের বেডেব্যাথায় কাতরাচ্ছে। ওর চিৎকার যেন আমার বুকে এসে লাগছে। কিছুক্ষন পর ডাক্তার এসে যা বললো তাতে আমার পায়ের নিচের মাটি সরে গেলো বাচ্চার অবস্থা ভালো না,যেকোনো একজন কে বেচে নিতে হবে বাচ্চা না হয় মা? অনেক ভেবে পাগলিকে বেচে নিলাম। কিন্তু পর মুহুর্তে আবার ভাবলাম বাচ্চা ছাড়া ও কিভাবে থাকবে ওর এতো দিনের ইচ্ছা গুলো কিছুক্ষন পর ওর জ্ঞান ফিরলো…

-আমার বেবি কোথায়?
-………
-ইমরান আমার বেবি কোথায়?
-……..
-ইমরান প্লিজ বলো?
-সরি বাবু ওনারা তোমার বাবুকে বাচাতেপারে নি?
-না আমি বিশ্বাস করিনা ওনারা আমার বেবিকে মেরে ফেলেছে ইমরান তুমি পুলিশকে কল করো??? সাথে সাথে জ্ঞান হারালো যখন ওর জ্ঞান ফিরলো তখন ও আর আমার আগের আরোহী নেই। ও মানসিক ভারসাম্য হীন হয়ে গেছে। ও সেই পুতুল কে বেবি ভাবে। কিছুদিন পর অফিসে কাজ করছি তখন ওর ফোন

-ইমরান তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি বাসায় আসো?
-আচ্ছা আসছি।বাসায় আসার পর …..
-দেখো ইমতুল কিভাবে কান্না করছে।
-আমাকে দাও।
-যাও বাবু বাবার কোলে যাও(বলে ওকেআমার কোলে দিলো)…..আরে এইদিকে দাওতো তোমার কাছে আরো বেশি কান্না করছে। আমি শুধু অবাক হয়ে ওকে দেখছি। কিছুদিন পর কি জন্য ওকে বকা দিছিলাম ও বলেছিলো

-আরেকবার বকা দিলে আমি আর বাবু তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো। এরকিছুদিন পর অফিসে ছিলাম অচেনা নাম্বার থেকে কল আসলো
-ইমরান ভাই আপনি তাড়াতাড়ি বাসায় আসেন।

বাসার নিচে এসে যা দেখলাম তাদেখে নির্বাক হয়ে গেলাম রক্তমাখা আরোহী শুয়ে আছে আর ওর হাতে সেই পুতুল।এক জনের কাছে শুনলাম -ও নাকি ছাদে ইমতুল যাস না যাস না বলে চিৎকার করছিলো আর দোড়াচ্ছিলো আর দোড়াতে গিয়ে নিচে পড়ে গিয়েছিলো। ওর মাথা কোলে নিলাম- কেনো জানি মনে হলো ও আমাকে কানে কানে বলছে

-ইমরান আমি ইমতুলের কাছে চলে গেলাম। তুমিও তাড়াতাড়ি চলে এসো সবাই মিলে খেলা করবো…

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত