স্যার একটু এদিকে আইবেন? রহিম মিয়া কি হলো বলুন।স্যার মাইয়াডার অবস্থা খারাপ একটু দেইখা জান কেমন জানি করতেছে।সাথে সাথে নিজের চেয়ার ছেড়ে দাড়িঁয়ে গেলো ফারহান।ওনি হলেন এই হাসপাতালের সরকারি ডাক্তার।বেশ কিছুদিন হলো এখানে আছেন।আর রহিম মিয়া হলো ওনার সহকারী।রোগীর রুমে ঢুকতেই রহিম মিয়া বলে উঠলো স্যার দেখেন মাইয়াডার অবস্থা,কিছু একটা করেন।ফারহান সবকিছু দেখে বললো ওর অবস্থা বেশি ভালো না।শহরে নেয়া লাগবে ভালো চিকিৎসা লাগবে। রহিম মিয়া কান্নায় ভেঙে পড়লো বললো-স্যার আমি সামান্য বেতনে এহানে আছি।এতো টাকা কই পামু।
-আরে চিন্তা কেন করছেন আমি তো আছি।আপনি নিয়ে যান আপনার মেয়ে কে চিকিৎসা করান যা লাগে আমি দিবো বলেই পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে হাতে ধরিয়ে দিলো আর বললো লাগলে বলবেন আমি পাঠিয়ে দিবো
-স্যার আপনারে কি বলে ধন্যবাদ দিমু..আপনি মানুষ নদ ফেরেশতা।
-আরে ধন্যবাদের কিছু নেই।আমরা তো আপনাদের জন্যই।ওকে নিয়ে তাড়াতাড়ি রওনা হন আমি এদিকটা সামলিয়ে নিবো।
কিছুক্ষণ পর ওনাদের গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে বাসায় চলে আসলো ফারহান।বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতে লাগলো।হাসপাতালের একটু পাশেই পাহাড়ের উপর বাসা তার।দুরুমের সুন্দর করে গোছানো,পরিপাটি।বাসায় ঢুকেই বিছানায় শুয়ে পড়লো সারাদিনের ক্লান্তিতে।হঠাৎ তার মনে পড়লো বেশিদিন আগের কতা না তার কাছে টাকা ছিলোনা বলে রিমি তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো অন্যের হাত ধরে।কিন্তু আজ তার টাকা, সম্মান সবকিছুই আছে কিন্তু সে নেই।অনেক ভালোবাসতো ফারহান রিমিকে।ফারহান মেডিকেলে পড়তো,আর রিমি একটা ভার্সিটিতে পড়তো।দুজনে ঠিক করেছিলো ফারহানের পড়া শেষ হলেই বিয়ের কথা ফ্যামিলিতে জানাবে।
কিন্তু তার আগেই ভার্সিটির এক বড়লোক ছেলের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে রিমির।যা ফারহান পছন্দ করতো না জবাবে বিভিন্ন কথা বলে অপমান করতো রিমি তাকে।ফারহান কোন উত্তর দিতে পারতোনা কারণ সেসময় তার টাকা পয়সা ছিলোনা, রিমির আবদার গুলো পূরণ করতে পারতোনা।তাই ফারহান কে সবসময় ছোট হয়ে থাকতে হতো।ফারহান রিমিকে অনেক বুঝাতো কিন্তু রিমি ঐ এককথায় বলতো সে আর এভাবে রিলেশন রাখতে পারবেনা।হয় তার চাহিদা গুলো পূরণ করতে হবে না-হয় ব্রেকআপ করতে হবে।সেসময় রিমির চাহিদা পূরনের মতো অবস্থা ফারহানের ছিলো না তাই শেষ শর্তই মেনে নিতে হলো।অনেক কষ্ট পেয়েছিলো সে কিন্তু কিছুই করতে পারেনি সে।সব স্বপ্ন ভেঙে যায়।সে স্মৃতিগুলো ভাবতে ভাবতে কবে যে গভীর ভাবনায় ডুবে যায় টের পায়নি।হঠাৎ ঝুমুর ধাক্কায় ভাবনায় ছেদ পড়ে তার।বলে উঠে-
-আরে তুমি কখন এলে?(ফারহান)
-এইতো মাত্র।অনেক ডাকলাম কিন্তু দরজা খুলছেন না দেখে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে আসলাম।(ঝুমু)
-ওহ আচ্ছা।তা এই সন্ধ্যায় হঠাৎ কি মনে করে এলে?
-কি সন্ধ্যা হয়েছে বলে আসতে বারণ নাকি?
-না ঠিক তা না।
-আচ্ছা বুঝছি বলতে হবেনা বলে এই নিন আম্মু পিঠা পাঠিয়েছে আপনার জন্য খেয়ে নিন।
-কি দরকার ছিলো এতে কষ্ট করে আনার।
-বেশি কথা বলবেন না খেয়ে নিন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
ঝুমুকে অনেক ভালো লাগে ফারহানের।লম্বা চুল,কাজল কালো চোখ,সুন্দর হাসি,কথা বলার ধরন সবকিছুতে মেয়েটি যেন অপূর্ব।সেই প্রথম যখন এখানে যোগ দিয়েছে তখন থেকে তার সাথে পরিচয়।ঝুমুর বাবা-মা ফারহানকে খুব আদর করে।পাশাপাশিয়ে তাদের বাসা।ঝুমু কিছুদিন আগে একটা এনজিও খুলে ও স্কুলে শিক্ষকতা করে।ছোট থেকে তার স্বপ্ন ছিলো গ্রামের মানুষের জন্য কিছু করা।সেই থেকেই এখানে আসা।শহরে পড়ালেখা করেছে ওখানেই বড় হয়েছে কিন্তু এখানে এসে যেভাবে মানিয়ে নিয়েছে তা ফারহান কে মুগ্ধ করে।ঝুমু বলে উঠে হঠাৎ,
-আচ্ছা আপনার কি ছুটি নিতে পারবেন কিছুদিনের জন্য?(ঝুমু)
-এ কথা শুনে মাথা উপরে তুলে কিছুক্ষণ ঝুমুর দিকে তাকিয়ে রইল তারপর বললো কেন বলুনতো?(ফারহান)
-না মানে অনেক দিন ঘুরতে যাওনা হয়নাতো আমার আর আপনিও যাননা তাই ভাবলাম কিছুদিন শহর থেকে ঘুরে আসি ভালো লাগবে।
-তা নাহয় যাওয়া যাবে।কিন্তু আমার সাথে কিভাবে যাবেন আপনার মা-বাবা কি যেতে দিবে?
-অবশ্যই।আপনার সাথে যাবো বললে তো কোন সমস্যাই নেই।
-ফারহান একটু কৌতুহলি হয়ে বললো কেন বলুনতো?
-লজ্জিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে একটা মুসকি হাসি দিয়ে বললো জানিনা পিঠা খেয়ে নিন বলে দৌড়ে চলে গেলো।
-ঝুমুর কথায় কিছুই বুঝলোনা ফারহান।মনে হয় মেয়ে টা তাকে পছন্দ করে।অনেক দিন ধরে খেয়াল করছে সে।কিন্তু কিছুই বলতে পারছেনা।যাক এইবার অন্তত বলার সুযোগ হবে কথাটা যে তাকে পছন্দ করে।এইভেবে নিজেই হেসে দিলো।
কিছুদিন পর পাঁচদিনের ছুটি নিলো ফারহান।ঐ দিন সকাল রওনা হলো ঢাকার উদ্দেশ্যে।আসার সময় ঝুমুর মা-বাবা বলেছিলো তাকে দেখে রাখতে।পাশাপাশি সিটে বসে দুজনে।একটু আধটু কথা বলে আর প্লান করে কোথায় কোথায় যাবে।কথা বলতে বলতে কখন যে ঝুমু ঘুমিয়ে যায় বলতে পারেনি।যখন ঘুম ভাঙলো দেখলো ফারহানের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে এতক্ষণ আর ফারহান একহাত দিয়ে তাকে আগলে রেখেছে যাতে পড়ে না যায়।বাস হঠাৎ ব্রেক করায় ঘুম ভেঙে যায় ঝুমুর।ঘুম থেকে জেগে এভাবে নিজেকে পেয়ে একটু লজ্জা পেলো বললোঃ-
-আমাকে ঢেকে দেননি কেন?
-না আপনি ঘুমাচ্ছেন তাই ভাবলাম না ডাকি।
-হুমম আপনার মাথা আমি বুঝছি আপনার মতলব বলেই হাসি দিলো ঝুমু।
-একথা শুনে ফারহান বললো তাহলে ফেলে দেয়াই উচিৎ ছিলো।
-ঐ কি বললেন?
-না না মজা করলাম।
একটু পরই তারা এসে পৌঁছে গেলো।ঢাকা এসে ফারহানের বন্ধু মামুনের বাসায় উঠলো তারা।ফারহানের সাথে ঝুমুকে দেখে মামুন বলে উঠলো-কিরে তুই বিয়ে করলি কবে?আমাকে একবার জানালি না!!আর ভাবি কে নিয়ে আসবি বলবিনা?মামুনের এসব কথা শুনে লজ্জায় নিচের দিকে তাকিয়ে গেলো ঝুমু।ফারহান বুঝতে পেরে মামুন কে থামিয়ে দিয়ে বললো আরে বিয়ে করলাম কবে?এটা আমার ফ্রেন্ড।পাশাপাশি থাকি দুজনে ঘুরতে আসবো বলে ঠিক করি তাই একসাথে আসা।ফারহানের কথায় একটু স্বাভাবিক হয় ঝুমু।তবে মামুন আবার মজার ছলে বলে তবে যাই বল তোদের মানিয়েছে বেশ।
হঠাৎ একথা শুনে ঝুমুর ইচ্ছে হচ্ছে দৌড়ে পালাতে লজ্জায় একেবারে লাল হয়ে গেলো তার ফর্সা মুখ।ফারহান মামুন কে কি বললি বলেই উত্তম-মধ্যম শুরু করলো।কিছুক্ষণ পর তারা ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার খেয়ে নিলো।একটি রুম দেখিয়ে ঝুমুকে ফারহান বললো-আপনি এখানেই থাকুন রেস্ট নেন।আমি পাশের রুমে আছি,দরকার পড়লে ডাকবেন বলে মামুনের কাছে চলে গেলো ফারহান।দুজনের অনেকদিন পর দেখা।কাছে পেয়ে একেঅপর কে আনন্দে আত্মহারা।নানা বিষয়ে গল্প করতে করতে রাত হয়ে গেলো খেয়ালই করেনি।হঠাৎ ঝুমুর কথা মনে পড়তেই তার রুমে সামনে গিয়ে ডাকে ফারহান।
কয়েকবার ডাকার পর বের হয়ে আসে ঝুমু।মাত্র ঘুম থেকে উঠলো এলোমেলো হয়ে আছে চুলগুলো যেন আরও অপরূপ লাগছে তাকে।ফারহান বললো-রেড়ি হয়ে নেন।বাইরে খেতে যাবো।ঠিক আছে বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো ঝুমু।এদিকে তারা রেড়ি হয়ে অপেক্ষা করছে ঝুমুর জন্য।একটু পরই ঝুমু আসলো।পড়নে একটা কালো শাড়ি,হালকা সাজ অপরূপ লাগছে তাকে।ফারহান উঠা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো।এভাবে ফারহানের তাকিয়ে থাকা দেখে লজ্জা পেলো ঝুমু।মামুন বলে উঠলো কি দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি না বের হবি।মামুনের কথায় বাস্তবে ফিরে আসে ফারহান বললো চল যাওয়া যাক।রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে একটু হাঁটাহাটি করে এসে শুয়ে পড়লো সবাই।অনেক জার্নি করছে ক্লান্ত সবাই।
পরেরদিন অনেক জায়গায় ঘুরোঘুরি করে রাতের খাওয়া শেষে বাসায় ফিরলো দুজনে।হঠাৎ ঝুমু আবদার করে ছাদে যাবে আজ।তার কথা পেলতে পারলোনা তাই গেলো দুজনে।আকাশে তারা দেখা যাচ্ছে অনেক।সুন্দর লাগছে অনেক।ঝুমু বললো-আপনি রাতের বেলায় চাঁদ দেখতে পছন্দ করেন?হুমম অনেক।কিন্তু সাথি নাইতো তাই দেখা হয়না।ফারহানের কথা শুনে ঝুমু বললো তা সাথি বানিয়ে ফেলেন।বানাতে তো চাই কিন্তু হবে কিনা ভয় পাচ্ছি।
এতো ভয় কিসের তাকে বলে দেখুন হয়কিনা প্রত্যুত্তরে বললো ঝুমু।ফারহান হঠাৎ ঝুমুর হাতের উপর হাত রেখে বললো হবে আমার চাঁদ দেখার সঙ্গী?অনেক ভালেবাসি তোমায় কিন্তু বলতে পারিনি।প্রতিদিন চেষ্টা করতাম কিন্তু তুমি সামনে আসলে এলোমেলো করে ফেলতাম কিভাবে বলবো।ফারহানের কথা শুনে কান্না করে দিলো ঝুমু।ফারহানের বুকে মুখ লুকিয়ে বললো আমিও যে তোমায় খুব ভালোবাসি।এতোদিন বলোনি কেন আমায় শুধু শুধু এতো কষ্ট দিছো আমায়।ঝুমুর কথায় হেসে ফেললো ফারহান।বললো কিছু কিছু পাওয়া দেরিতে হলেও ভালো হয়।ভালোবাসা বাড়ে।হইছে আর বলতে হবেনা স্যার বুঝি আমি।
আজ ফারহানের অনেক আনন্দ হচ্ছে রিমি তাকে ছেড়ে চলে গেলোও এমন একজন কে আজ পেয়েছে যে নিজের চাইতেও বেশি ভালো রাখবে।কিছু কিছু অপেক্ষা অনেক ভালো হয়।যা আজ বুঝলো।ঝুমু বলে উঠলো এই শুনো আমার বেশিকিছু লাগবেনা শুধু তোমার পাশে থাকা চাই,রাতে দুজনে চাঁদ দেখবো আর আমাকে তোমার বুকে রেখে ঘুমোতে হবে।অবশ্যই মহারাণী আপনার কথা চিরধার্য্য।ঝুমুকে নিজের কাছে এনে জড়িয়ে ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো চলোনা আজই বিয়ে করে ফেলি।
ইশশ শখ কতো।এতো তাড়া কিসের জনাব বলেই দৌঁড় দিলো।দাঁড়িয়ে থেকে থেকে ঝুমুর পথের দিকে চেয়ে পরম সুখ খুঁজতে লাগলো ফারহান।