কাজের মেয়ে

কাজের মেয়ে

কাজের মেয়েকে বিয়ে করে সুখেই আছি ৷ যদিও বিয়েটা হয়েছিল আমাকে ব্লাকমেইলকরে ৷ আমি ভুলেও চাইনি তাকে বিয়ে করতে কিন্তু বিয়েটা ঠিকই হয়ে গেল!

সেই গল্পটা আজ বলবো! ২ বছর ৯ মাস আগের ঘটনাঃযে বাসাতে থাকি সেই বাসার মালিক আমাকে একটা কাজ দিয়েছে ৷ এর বিনিময়েঅামাকে দু’মাসের ভাড়া দিতে হবেনা ৷ কাজটা হলো- পার্কে গিয়ে দেখতে হবে তারছেলে প্রতিদিন বিকেলে সেখানে কি করে?প্রতিদিন বিকেলে পার্কে গিয়ে টহল দিতে হবে এটা কেমন যেনো লাগল! তবুও টাকা বাঁচাতে কাজটা করতে রাজি হলাম ৷ হুম, প্রথম দিনেই দেখতে পেলাম ছেলেটা একটা মেয়ের সাথে বসে বাদাম খাচ্ছে ৷ বুঝতে বাকি রইলোনা তারা প্রেম করছে! পরের দিন আবারো গেলাম এবার আরেকটি মেয়েকে নিয়ে তার কাঁধে মাথা রেখে হাতে হাত রেখে গান গাচ্ছিল ৷ পরেরদিন আরেকটা মেয়ের সাথে ৷ এভাবে সাতদিন সাতটা মেয়ের সাথে তাকে দেখলাম ৷ বাড়ির মালিককে তার ছেলের সম্পর্কে বললাম যে

_কলেজ থেকে ফিরে পার্কে নিরিবিলি জায়গায় বসে একটু লেখাপড়া করে সে ৷ এটা বলাতে বাড়ির মালিক খুশিই হলো এবং বললো

_ঠিক আছে কাল থেকে তোমার সেখানে আর যাবার দরকার নেই ৷ তোমার নতুন কাজ হচ্ছে আমার মেয়েকে পড়ানো ৷
_আচ্ছা ৷
_কাল থেকে পড়াবে ৷

আমি সম্মতি জানালাম ৷ প্রথম দিন বাড়িওয়ালার মেয়েকে পড়াতে গিয়েই মেয়েটা বলল

_শুনুন,আমি জানি বাসায় কেউ কোন ছাত্রীকে পড়ালে সেই ছাত্রী স্যারের প্রেমে পড়ে যায় ৷ তাই আপনাকে বলছি আপনি যেহেতু হ্যান্ডসাম আছেন এজন্য পড়াতে আসার আগে স্মার্ট হয়ে আসবেন না; ক্ষেত ক্ষেত ভাব নিয়ে আমাকে পড়াতে আসবেন ৷ স্নো পাউডার ক্রিমমাখা বন্ধ দিবেন যতদিন পড়াবেন, ভালপোশাকও পড়ে আসবেন না ৷ আমার বয়ফ্রেন্ডআছে, তাকে ছেড়ে অন্য কাউকে ভালবাসতে পারবোনা ৷ আর আপনি মিষ্টি করে কথা কম বলবেন ৷ আমার প্রশংসাও করবেন না ৷একটা পিচ্চি মেয়ের মুখে এসব কথা শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না ৷ তব্দা খেয়ে খেলাম ৷ ভাবলাম ভাই বোন দেখি ভালবাসার দোকান খুলে বসেছে ৷ ভাইয়ের গার্লফেন্ড সাতটা, এই মেয়ের যে কয়টা বয়ফ্রেন্ড তার কথাতে বুঝা যাচ্ছেনা ৷ আমি তাকে বললাম

_আমি যে বিবাহিত তা জানো ৷
_না, সত্যি কি আপনি বিয়ে করছেন?
_৩বছর হলো ৷ মেয়েটার মুখ ছোট হয়ে গেল শুনে ৷ বলল
_ও আচ্ছা, আপনার বউটা লাকি!
_তা ঠিক বলছো ৷ এবার বই বের করো ৷

প্রথম দিন পুরো দেড় ঘন্টা ক্লাস করালাম, মেয়েটা মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করলো ৷এদিকে ছাত্রীর ভাই সাতটা গার্লফ্রেন্ডের প্যাদানি খেয়ে নাক মুখ ফুলিয়ে এসেছে ৷ বাড়ির মালিক ছেলের অধঃপতন দেখে তাকে আস্থামত শাসালো ৷ দোষ ঘারে এসে পড়লো আমার উপর ৷ আমি নাকি ঐ সাতদিন তার খোঁজই নিইনি পার্কে ৷ দু মাসের টাকা আর মাফ হলোনা ৷

ছেলেটা আমাকে ধরলো তার যেকোনো একটা গার্লফ্রেন্ডের সাথে সম্পর্ক জোড়া লাগিয়ে দিতে ৷ পড়ে গেলাম বিপাকে ৷ প্রেম সম্পর্কে অভিজ্ঞতা নেই বলেই জীবনে প্রেম করতে পারেনি, তাছাড়া এসব অসহ্য ৷ কিভাবে এই ছেলের প্রেম আমি জোড়া লাগাবো বুঝতে পারলাম না ৷ তবুও চেষ্টা করতে লাগলাম ৷ সর্বশেষ যে মেয়েটা তার গার্লফ্রেন্ড ছিল সে তাকে বিশ্বাস করলো এবং তারা রিলেশনশিপ কন্টিনিউ করতে লাগলো ৷ বাড়ির একমাত্র ছেলে ওর নাম হ্নদয়, ও আমাকে থ্যাংকস জানালো এবং বললো এর প্রতিদান আপনি পাবেন ভাইয়া ৷

বাড়ির বড় মেয়ে সুস্মি হোস্টেল থেকে বাড়ি ফিরলো আজ ৷ আমি যাচ্ছিলাম বাইরে ৷ গেটে তার সাথে দেখা হলো ৷ বুঝতে পারলাম সে বাড়ির মেয়েই হবে ৷ ভাবলাম- সে যে সুন্দরী এর সাথে কথা তো দূর তার দিকে তাকাতে গেলেই মাইর দিবে ৷ কিন্তু না, সে দেখি হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ৷ চোখের চশমাটা খুলে মেয়ের এক্সপ্রেশনটা দেখার চেষ্টা করছিলাম ৷ পর্যবেক্ষণে বুঝলাম মেয়ে যে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেটা কেবল ভালবাসা তৈরী করে ৷ আমি আবার এসব ভালবাসায় বিশ্বাসী না ৷ যাইহোক, মেয়ে ছোট্ট করে চোখ মেরে সাথে পাগল করা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল ৷

আমি বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিলাম না, চোখ মারাটাকে মনে করলাম তার চোখের সমস্যা আর মুচকি হাসিটা হয়তো সৌজন্যতায় দিয়েছে ৷ চলে গেল ৩ মাস ৷ বাড়ির বড় মেয়ে হোস্টেলে আর যাচ্ছেনা ৷ সবসময় আমাকে ফলৌ করতে থাকে ৷ এ এক আজব কাহিনী ৷ ফলৌ করার কথা কার আর করে কে? তার মত এত সুন্দরী মেয়ে আমাকে ফলৌ করবে, চুরি করে দেখবে ব্যাপারটা অকল্পনীয় ৷ বুঝতে বাকি রইলোনা যে আল্লাহ আমাকে হেব্বি সৌন্দর্য দিয়েছে, নাহলে হুরপরীর মত একটা সুন্দরী মেয়ে আমার প্রতি পাগল হবে কেন, কোন যুক্তিতে? হ্যান্ডসাম বলেই সে পাগল? হঠাৎ আমার ছাত্রী তথা বাড়ির ছোট মেয়ে মাইশা আমাকে প্রোপস করে বসে ৷ প্রোপসটা করে এভাবে,

_স্যার, পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী রিলেশন কোনটা জানেন?
_কোনটা বলোতো?
_ছাত্রীর সঙ্গে স্যারের প্রেম ৷ আমি কথাটি শুনে বেষম খেয়ে বললাম পানি দাও, সে এক গ্লাস পানি দিল ৷ খাওয়া শেষ হলে বললাম,

_এটা আমাকে শুনাচ্ছ কেন ?
_আমি আপনার প্রেমে পড়ে গেছি স্যার ৷
_তোমার না বয়ফ্রেন্ড আছে?
_ওসব ভূয়া প্রেম, টাইম পাস ছিল ৷ আমি তো আপনাকে ভালবাসি স্যার ৷
_তোমার আব্বাকে বলে দিবো, হুম!
_বলেন, দোষ আপনারই হবে ৷
_আমি বিবাহিত সেটা কি ভুলে গেছো?
_সমস্যা নেই সতীনের ঘর করবো! আর বলুন আমাকে ভালবাসবেন কিনা?
_না, পিচ্চি মেয়েকে ভালবাসা অন্যায় ৷
_আব্বাকে বলবো?
_আচ্ছা মেয়ে দেখছি! বাবা বাবা করো কেন? আচ্ছা যদি মিছামিছি যদি বলি ভালবাসি তখন কি হবে?
_মিছামিছি বললে টের পাবো!
_ওকে তোমার বিষয়টা ভেবে দেখবো! চলছিল এভাবে ৷

এদিকে যাচ্ছিলাম বাজারের দিকে রিকশা করে ৷ হঠাৎ সুস্মি রিকশা থামিয়ে দিয়ে উঠেপড়লো ৷ আমার একেবারে গা ঘেষে বসলো ৷ মনে হচ্ছিল দুনিয়ার যত ঝামেলা এসে জড়ো হয়েছে আমার কাছে ৷ সে দেখি ধীরে ধীরে আমার দিকে চেপে বসছে ৷ তার নরম তুলতুলে শরিরটা আমার শরিরে লেপ্টে রইলো ৷ হঠাৎ করে সুস্মি আমাকে বলল

_আমরা বিয়ে করবো কবে? কথাটা শুনে ভেতরটা লাফিয়ে উঠল, মনে হলো রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে ৷ ভাবলাম- এদের পুরো পরিবার ধরে প্রেমের জরে আক্রান্ত! আমি তারে বললাম

_আমরা বিয়ে করবো মানে? আমি কি তোমার প্রেমিক ? নাকি বিয়ে পাকা হয়ে গেছে শুধু দিন তারিখ ঠিক করাটা বাকি?
_তুমি প্রস্তাবে রাজি হলেই বিয়েটা হবে ৷ তাই ভবিষ্যতের কথাটা আগেই বললাম ৷ এবার বলো- আমাকে ভালবাসো কিনা?
_আমি বিবাহিত ৷৷
_তাতে কি? সতিনের ঘরই করবো ৷ ওহ নো! এ দেখি দু-বোন ধরে আমার সাথে নাটক করছে ৷ নাহলে এমনটা তো স্বপ্নেও হবার কথা না ৷ যাহোক, এই মেয়ের কথাও সিরিয়াসলি নিলাম না ৷ ভাবলাম আমার সাথে মশকরা করছে ৷ সুস্মিকে বললাম

_ওকে, ভেবে দেখবো ৷

সে রিকশা থেকে নেমে গেল ৷ আর মুচকি একটা হাসি দিয়ে চলে গেল ৷ তিনদিন পার হয়ে গেল ৷ দু বোনের একজনকেও রিপ্লাই দিচ্ছিনা প্রস্তাবের ৷ হঠাৎ পরদিন সকালেঃদু-বোনের চিৎকার চেচামেচির আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে উঠে তাদের ঝগড়া আড়িপেতে শুনতে লাগলাম ৷ সুস্মি বলছে

_লজ্জা করেনা, স্যারের সাথে প্রেম করতে? এতটুকু বাচ্চা মেয়ে!
_তোমার লজ্জা করেনা হবু ছোট বোনের জামাইয়ের সাথে ভাব মারতে?
_একশবার মারব!
_আমিও স্যারকে একশবার বলবো ভালবাসি ৷

তাদের ঝগড়া শুনে বুঝতে আর বাকি রইলোনা যে দুটাই পাগলী ৷৷ আজ বাসায় আঙ্কেল নেই বলে তারা ঝগড়া লাগিয়ে দিয়েছে তাও প্রেমের ব্যাপারে ৷ পরেরদিন দুজনকে সোজা বলে দিলাম

_তোমাদের প্রস্তাবে একটুও রাজি নই আমি ৷ আমি আমার বউকে ফাঁকি দিতে পারবোনা ৷ তোমাদের যা করার করো ৷ দু বোনকেই এটা বলার পর তারা দুজনই চোখের পানি ফেলে বাচ্চাদের মত কান্না করতে করতে চলে গেল ৷ কয়েকদিন পর ছাত্রী বলছে

_আমি আপনার নিকট আর পড়বোনা ৷
_কেন?
_সেটা আপনি জানেন সেটা!
_ওকে ৷

আবার ওদিকে, সুস্মিও হোস্টেলে চলে গেল ৷ আমার উপর থেকে ঝঞ্জাল উদ্ধার হলো ৷ কিন্তু বাড়িতে নতুন একটা কাজের মেয়ে এসে হাজির ৷ মেয়েটা এতো কালোর কালো যে দেখে মনে হয় আলকাতরা মেখে আসছে ৷ তবে কালো হলেও চেহারাতে সৌন্দর্য আছে ৷ নামও চমৎকার তামান্না ৷ আমার নামের সাথে মিল আছে ৷ তামিম আমার নাম ৷ দূঃখিত নামটা বলতে ভুলে গেছিলাম ৷ কয়েকদিন পর টের পেলাম মেয়েটা আমার দিকে কেমন কেমন করে যেনো তাকায়! আমি বুঝতে পারলাম না এই বাড়িতে যেই মেয়ের আগমন হয় সবাই দেখি আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়! কেন হয়? আমি সুদর্শন বলে? ওদিকে হঠাৎ মাইশা আবারো আমার পিছু ধরলো ৷ হঠাৎ বলছে,

_আজ বিকেলে আমাকে নিয়ে পালাতে হবে ৷
_কি আবল তাবল বলছো? মাথা ঠিক আছে?
_এত কিছু বুঝিনা, আজ আমাকে নিয়ে না পালালে বিষ খাব ৷
_খাও, কে বারণ করলো?

তুমি মরলে আমার কি? ওমা, এটা বলাতে মেয়েটা হাউমাউ করে কান্না করতে করতে তার মায়ের কাছে চলে গেল ৷ এদিকে দুপুর বেলা গোসল শেষ করে আমি আমার রুমে শুয়ে আছি ৷ হঠাৎ, কাজের মেয়েটা আমার রুমে ঢুকে পড়লো ৷ এরপর দরজাটা সুন্দর করে আটকালো ৷এরপর সে তার পড়নের সালোয়ার টান দিয়েছিঁড়লো ৷ এরপর আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো ৷ আমার হাত পা কাঁপছিল ৷ আর কোনো উপায় দেখলাম না ৷ চোখে মুখে সবকিছু আন্ধার দেখলাম ৷ বুঝতে পারলাম এই বুঝি মরণ আসছে ৷ আর উপায় নেই ৷ মেয়েটা আমার টিশার্ট টান দিয়ে খুলে ফেলল ৷ এরপর চেঁচিয়ে কান্না করতে করতে বলতে লাগল,

_কে, কই আছেন আমারে বাঁচান আমারে লম্পটটা নষ্ট কইরা ফালাইলো? না, মেয়েটা থামলোনা, বলেই যাচ্ছিল ৷ মেনেই নিলাম আজ সমস্ত প্রেস্টিজ পান্সার হয়ে যাবে, কোন উপায় নাই ৷ বাড়ির মালিক দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে আমাদের দুজনকে দেখে চোখ চিতাবাঘের মত করে তাকিয়ে রইলো ৷ কিন্তু আমাকে কিছুই বললোনা ৷ মনে মনে বললাম কিছু তো বলেনা ৷ নাকি খুন করার প্ল্যান করছে! কিছুক্ষণ পর হ্নদয় বললো

_আব্বু, ভাইয়াকে কিছু বলোনা ৷ দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি কাজের মেয়েকে ভালবাসে ৷ তাই এনাদের বিয়েটা দিয়ে দাও ৷ ছেলের কথাটা শুনে বাড়ির মালিক দিল ফোন ৷ বুঝে গেলাম পুলিশকে খবর দিতে ফোন দিচ্ছে, ছেলের কথা মোটেও শুনবেন না সে ৷ কিন্তু না, আমি ভুল ৷৷ ফোন রিসিভ হলেই বলল

_কাজী সাহেব, এই ঠিকানায় দ্রুত চলে আসুন ৷ বলেই ফোন কেটে দিল ৷ আমার মাথায় হাত ৷ এই ছিল কপালে? দু দুটা সুন্দরী মেয়ে আমাকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসতো ৷ তাদের পাত্তা দিলাম না ৷ আর এই কালো মেয়ে এসে কপালে জুটলো ৷ তাও এত বাজে ভাবে! ফুফিয়ে কান্না করতে লাগলাম ৷ হ্নদয় বলে উঠল,

_ভাইজান বলেছিলাম না প্রতিদান পাবেন, সেদিনের উপকারের প্রতিদান ৷
_অকৃতজ্ঞ!
_ছিঃ, ভাইজান; আমি আপনার উপকার করলাম আর গালি দিচ্ছেন ৷ কয়েকদিন পরই বুঝতে পারবেন ৷ মাইশা এসে গালি দিয়ে বলতে লাগল,
_লুচ্চা বদমাইস, কাজের মেয়ের সাথে নষ্টামী ছিঃ তাও একটা বউ রেখে ৷ ছিঃ!
_মাইশা, আমি ভুল বলেছিলাম, আমি বিয়ে করিনি ৷ আর আমি নির্দোষ এই মেয়ে আমাকে ফাসাচ্ছে!
_চুপ কর লম্পট কোথাকার!

কাজী এলো, আমাদের বিয়ে হয়ে গেল ৷ হ্নদয় মিটমিট করে হাসছিল ৷ তার এত হাসির কারণ বুঝতে পারলাম না ৷ মাইশা জ্বলে পুড়ে ছাই হচ্ছিল ৷ আর আমি আপসোস করছিলাম সুস্মির জন্য ৷ মেয়েটাকে কিছুটা ভাললাগতো ৷ ধীরে ধীরে ভালবাসা জন্ম নিচ্ছিল ৷ কিন্তু সে হোস্টেল যাওয়ায় তাকে শেষ মুহূর্তের মনের কথাটা বলতে পারলাম না ৷ তবে এও ভাবনায় ছিল যে আমি প্রেম অপছন্দ করি তাই গুরুত্ব দেইনি ৷ বাসর ঘরে বউ আমার জন্য অপেক্ষা করছে! যেতে মন চাচ্ছিলনা, আবার না যেয়েও পারলামনা, নতুন বউ বলে কথা ৷ তাকে অপেক্ষায় রেখে আমারই লস ৷ রুমে ঢুকলাম ৷ ওমা একি? সুস্মি কেন রুমে? সালোয়ার পড়া ৷ মনে মনে ভাবলাম আমার বউটাকে মেরে লুকিয়ে রাখলো কিনা? ভয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলাম সে দরজাটা আটকিয়ে দিল ৷ তারপর বলল,

_শালা, আমাকে ফাঁকি দাও? বলে কিনা আমি বিবাহিত!! ঐ ফালতু, আমারে চিনস? কত ছেলে পাগল ছিল আমার জন্য পাত্তা দেইনি, হয়তো তোর জন্যই প্রেমটা আগে কারো সাথে করিনি ৷ সুস্মির কথা শুনে ভয়ে কাঁপছিলাম ৷একটু পর সে একটা চাকু বের করলো ৷তারপর বলল

_এইযে এটা কি? কথার অবাধ্য হলেই মেরে দিবো ৷৷তোর জন্য অনেক কষ্ট করেছি ৷৷এবার যা বলবো তাই শুনবি ৷বল- I Love You.আমি বাচ্চা ছেলেদের আওয়াজে বললাম

_I Love You. কিন্তু আমার বউটা কই? আর তুমি করো বলো তুই কেন?
_I Love You জোরে বলো ৷ আর তুমি করেই বললাম ঠিকআছে? আমি গলা ফাটিয়ে সুস্মিকে বললাম
_I Love You. কিন্তু আমার বউকে কি করছো তুমি?
_আরে বেকুপ! তোমার কি চোখ নাই? অন্ধ তুমি? সামনে বউকে রেখে বলছে বউ কই! পুরাই ইডিয়ট একটা ৷ আমি তাজ্জব হয়ে গেলাম সুস্মির কথা শুনে ৷মনে করলাম আমার সাথে সে মশকরা করছে
_ধুর, সত্যি করে বলো তো আমার বউকে লুকিয়ে রাখছো কই? এটা বলার সাথে সাথে ঠাস ঠাস করে লাগিয়ে দিল থাপ্পর বললো

_আমি কেন তোমার রুমে? বোকা একটা! কাজের মেয়েটা আমিই ছিলাম ৷ দাঁড়াও একমিনিট ৷ সুস্মি তার ভাই হ্নদয়কে ফোন দিয়ে কি নিয়েযেনো আসতে বললো ? সে মেকাপ বক্স নিয়ে হাজির ৷ তার ভাই মে়কাপ করা শুরু করলো ৷ মেকাপ করা শেষ হলে আমি অবাক হয়ে গেলাম ৷মাত্র পনের মিনিটে সুস্মি কালো কুচকুচে হয়ে গেল? বুঝায় যাচ্ছেনা যে মুখে মেকাপ করা ৷ হ্নদয় বলল

_জানেন দুলাভাই এটার দাম কত?
_কত?
_১লাখ টাকা ৷ ইউরোপ থেকে আনা ৷
_তাহলে তোমাদের দুজনের প্ল্যান ছিল?
_জ্বী না, মাইশা বাদে সবার প্ল্যান ছিল ৷

আপনি যেদিন আপনাদের বাসা থেকেপালিয়ে এখানে উঠছেন সেদিন থেকেপ্ল্যান ছিল ৷ আপনার সাথে সুস্মি আপুর বিয়ে ঠিক হয়েছিল ৷ আপনি আপুর ফটো না দেখেই বিয়ে করবেন না বলে পালিয়েছেন ৷ তাও এসে পড়েছেন আমাদের বাড়ি ৷

_স্টুপিড একটা, আজকে রাতে স্টুপিডটাকে জন্মের শিক্ষা দিবো ৷ ভাই তুই যা এখন ৷হ্নদয় চলে গেল ৷ সুস্মি বলল,
_বিয়ে কেন করতে চাওনি?
_এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করার ইচ্ছা ছিলনা ৷
_সত্যি এই কারণ?
_হুম, না; আসলে আমার বিয়ে সাধী প্রেম এসব অসহ্য লাগে!
_কেন? তুমি কি স্বাভাবিক?
_ধুরো ফাজলামী ছাড়ো ৷

আমার দুর্বিষহ লাইফের কাহিনী শোনো ৷ আমার মাকেদেখেছি প্রতিটা দিন বাবার হাতে মার খেতে ৷ তুচ্ছ কারণে ঝগড়া করতো তারা ৷ যখন আমার বুঝ হয়েছে তখন থেকে এই দৃশ্য দেখে মূখস্ত হয়ে গেছিল ৷ যখন আমার বয়স ১৩ তখন বাবা আরেকটি মেয়েকে বিয়ে করে আনে ৷ মা বাধ্য হয়ে বাসা ছেড়ে চলে যান আমাকে নিয়ে ৷ এরপর থেকে রিলেশন জিনিসটার প্রতি প্রচন্ড ক্ষোভ তৈরী হয়ে যায় ৷ আর প্রেম তো একটা সস্তা রিলেশন ওটাকে আমি হাস্যকর বিষয় মনে করতাম ৷ মা আমার বিয়ে নিয়ে খুব চিন্তা করতো ৷ আমি তাকে নানা ভাবে বুঝিয়েও কাজ হয়নি ৷৷তাই তোমার সাথে যখন বিয়ে ঠিক হলো সেদিনই বাসা থেকে পালিয়ে এই বাড়িতেই চলে আসি ৷

_তোমার বাবা মায়ের দোষকে পুরো সম্পর্কের উপর চাপিয়ে দিলে? এটা কি যৌক্তিক কিছু হলো?
_আমি যে সিচুয়েশনে বড় হয়েছি সেখানেআমার জায়গায় তুমি থাকলে বুঝতে ৷
_এখন কি করবে? তুমি কি চাও আমি তোমাকে ছেড়ে যাই? যদি এটা চাও তবে চলে যাবো ৷আর খুব শীগ্রই ডিভোর্স দিতে পারবে আমাকে ৷
_আমি বুঝতে পারছিনা কি করবো! সময় লাগবে ৷
_ওকে, দিলাম সময় ৷

পরের দিন তামিম তার বাসায় চলে গেল ৷ তারমা ছেলেকে অনেক দিন পর দেখে আবেগেনিজেকে ধরে রাখতে না পেরে কান্নাকরতে থাকেন ৷তামিম তার বিয়ের ব্যাপারে বলেন ৷ তার মা শুনে খুশি হউন ৷ কিন্তু তামিম বলে সে তাকে ডিভোর্স দিবে ৷৷ কারণ হিসেবে সে বলছে সে কখনো বিয়ে করবেনা ৷ তার মা এটা শুনে খুব কষ্ট পান ৷ছেলেকে হাতজোর করে তামিমের মা বলেন,

_এমন কাজ করিস না বাবা, আমি সারাজীবন তোকে আগলে রেখেছি ৷ তোর সমস্ত আবদার পূরণ করেছি ৷ বিনিময়ে তোর থেকে একটা জিনিসই চেয়েছি ঘরের ফুল! তুই বিয়েও করলি কিন্তু এরপরও তাকে ডিভোর্স দিতে চাস?

_মা, তুমি বারবার কেন একই কথা বলো? আমি কারো সাথে সংসার করতে পারবোনা,এটাই ফাইনাল ৷ কেটে গেল সাতটা মাস ৷ সুস্মি তার বাড়িতে ছিল ৷ তামিমও তার বাড়িতে ৷ তামিমের সিদ্ধান্ত বদলালোনা ৷ সুস্মি মনেপ্রাণে চাইছে সম্পর্কটা যেনো ভেঙ্গে না যায় ৷ এবং তামিমের যেন নিজেরভুল ভাঙ্গে ৷ বিয়ের এক বছর ৩ মাস পর ডিভোর্স দেবার সর্বশেষ দিনে দুজনে গাড়ি করে যাচ্ছিল ৷ রাস্তার পাশে ফুস্কার দোকান দেখতে পেয়ে সুস্মি তামিমকে অনুরোধ করে ফুস্কা কিনে দিতে ৷৷ তামিম বাধ্য হয়ে ফুস্কা কিনতে গাড়ি থেকে নামে ৷ ফুস্কা কিনে অমনোযোগি হয়ে গাড়িতেওঠার সময় কোথা থেকে গাড়ি এসে তাকে ধাক্কা দেয়ে এবং সে মাটিতে লুটিয়েপড়ে, আরেকটি গাড়ি এসে তার পায়ের উপরদিয়ে চালিয়ে দেয় ৷

দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয় ৷ অপারেশন ভাল ভাবেই হয় ৷ দশদিন হসপিটালে থাকার পরবাসায় নেওয়া হয় ৷ হসপিতালে তামিমকে সারাক্ষণ সেবা যত্নকরে তার স্ত্রী সুস্মি ৷ বাসায়ও তামিমের পাশে সারাক্ষণ ছায়ার মত থাকে সে ৷হাঁটতে অক্ষম তামিমের যতরকমের সেবা রয়েছে সে করতে থাকে যত্ন সহকারে ৷ তামিমকে নিয়ে প্রতিদিন বিকেলেবাগানে হাটানোর চেষ্টা করতো ৷ আরো একমাস কেটে যায় ৷ তামিম পুরোপুরি সুস্থ্য হয়, তবে হাঁটতে একটু অসুবিধা হয় ৷রাত্রীতে সুস্মি তামিম একই বিছানায় এতদিনধরে ঘুমাতো ৷ এতদিন সুস্মিই তাকে জড়িয়েধরে ঘুমাতো কিন্তু তামিম বুঝতে পারতোনা ৷ কিন্তু একদিন তামিমই সুস্মিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমায় ৷৷ সকালে ঘুম ভেঙ্গে সুস্মি বুঝতে পেরে তামিমকে বলে

_তুমি তো পুরোপুরি সুস্থ্য এবার কি ডিভোর্সটা দিবা? তামিম কথাটি শুনে বড় বড় ধরণের আঘাত পায় ৷ যে কথাটা সে অন্তর থেকে মুছে ফেলেছিল সেই কথা সুস্মির মুখে শুনতে পেয়ে শক খেলে ৷ তামিম বলে

_কিসের ডিভোর্স ? আমি তো তোমাকে ডিভোর্স দিতেপারবোনা ৷ আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি ৷
_এখন তো এসব বলে লাভ নাই ৷৷তুমি ডিভোর্স দিতে না চাইলেও আমি তো চাই ৷ অনেক ভেবে দেখেছি কারো সাথে জোর করে সম্পর্ক টিকিয়ে রেখে সুখী হওয়া যায়না ৷

_আমি তো তোমাকে পেয়ে সুখী ৷৷ এতদিন আমি ভুল ছিলাম সেটা উপলদ্ধি করতে পারছি ৷
_আমি ডিভোর্স চাই ৷তামিম তার আম্মাকে ডেকে বলে
_আম্মা, আমার জন্য পাত্রী দেখ ৷ আরেকটা বিয়ে করবো ৷
_কি যা তা বলছিস? বলে তামিমের মা ৷ তামিম বলে,
_হুম, তোমার বউমা তো ডিভোর্স চাই ৷
_এটা কি সত্যি বউমা ?
_আপনার ছেলে আরেকটা বউ নিয়ে থাকুক ৷ আমাকে তার লাগবেনা ৷
_আশ্চর্য! এত তাড়াতাড়ি সুর পাল্টিয়ে ফেললে?
_তো কি করবো? তোমার মত কি আমি মাথামোটা যে সারা জীবন ধরে বলবো আমি বিয়ে করবোনা বিয়ে করবোনা (থরের মত মোটা গলায়)
_এই তুমি আমাকে ভেংগাচ্ছ?
_এই তুমি আমাকে ভেংগাচ্ছ? (ভেংচি কেটে)
_আম্মা, তোমার বউমাকে কিছু বলছোনা যে?
_আম্মা, আপনার ছেলেকে কিছু বলছেন না যে? তামিমের মা তার ছেলে আর ছেলের বউয়ের এমন দৃশ্য দেখে হাসতে হাসতে রুম থেকে চলে গেল ৷ সুস্মি চোখ মেরে আর ভেংচি কেটে বললো

_ছাগল একটা ৷
_মা, দেখো আমাকে গালি দিচ্ছে!
_ঐ বেকুপ, মাকে ডাকো কেন? স্টুপিড একটা, এতদিন ধরে বিয়ে করে ঘরে বউ আনছে অথচ একটা কিস পর্যন্ত করলোনা ৷ স্টুপিড!
_তবে রে! সুস্মিই উল্টা হুকমি দিয়ে বলে
_দাড়াও দেখাচ্ছি মজা! বলেই দরজা আটকিয়ে তামিমের উপর ঝাপিয়ে পড়ে!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত