খুব ভালোবাসি তোমায়

খুব ভালোবাসি তোমায়

কিরে ক্লাস করবি না ?? { ইবু }
: নাহ, আজ ভাল লাগছে না। { আমি }
: এই সিয়াম, তোকে এমণ দেখাচ্ছে কেন ?? কি হয়েছে তোর ??
: মন খারাপ রে ভাই,
: কেন ?? আজ আবার ঐশীর সাথে ঝগড়া হইছে নাকি??{বলেই ইবু হাসতে শুরু করলো  ইবু র হাসি দেখে অনেকটাই বিরক্ত হলাম যা আমার চেহারায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। আমার সিরিয়াস ভাব দেখে ইবু নিজের চেহারায় সিরিয়াস ভাবটা আমদানি করলাম। ইবু আবারও বললো,

: কি হয়েছে বলবি তো ??
: দোস্ত, ঐশীর সাথে আমার রিলেশনটা মনে হয় টিকবে না রে। {আমি }
: কেন?? কি হয়েছে??
: ধুর,,ভালোবাসা এতো ফরমালিন মুক্ত দেশি তিতা আগে জানলে জীবনে ও প্রেম-টেম করতাম না। মনে হয় কি জানিস, এখন আমার সবকিছুই ওর অসহ্য লাগে।.{ আমি }

: কথাটা ঠিক বুঝলাম না,দোস্ত।
: এখনো বুঝিস নি { আমি } ইবু শুধু মাথা নাড়িয়ে “না”বোধক ইশারা করলো,
: আরে, ও এখন আমার সাথে কথায় কথায় ঝগড়া করে। আমি এটা কেন করি, ওটা কেন করি নাই ?? ওর কথা মতো প্রত্যেকটা কাজ করা লাগে। না হলে কথা বন্ধ করে দেয়। ওর সাথে দেখা করতে গেলে কি পড়ে আসবো তাও ও ঠিক করে দেয়। ওর জন্য আমার চুলগুলোও বড় রাখতে পারিনা!..মনে হয় কি জানিস…ভালবাসার ফাঁদে পড়ে নিজের স্বাধীনতাকে নিজ হাতে গলা টিপে মেরে ফেলছি  {আমি }

: তো কি হয়েছে?? {ইবু }
: কি হয়েছে মানে?? ওহহ, আমার মনেই ছিল না,তুই তো কোনো মেয়েকে কখনো ভালবাসিস নাই, যদি কাউকে ভালবাসতি তখন বুঝতি।

: তাই,

এই বলে ইবু আবার ও মৃদু হাসলো ; কেন জানি হাসিটা আমার বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়ালো ; খুব বিরক্ত লাগছে ;এমনিতেই ভালো লাগছে না ; তার উপর ওর এই হাসি!!! ইবু এমনিই, বেশি কথা বলে। বেশি হাসে, যা আমার খুব বিরক্তলাগে। এতো বেশি হাসে কেন ও ?? সেটাও জানি না। ছেলেটা অন্য রকম; বর্তমানে সে আমার বিরক্তির কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ও হাসি থামিয়ে বেশ সিরিয়াস ভাব নিয়ে বলল,

: আচ্ছা তুই ওকে ভালবাসিস?

ওর এমন কথা শুনে আমি বেশ অবাক হলাম।এতো সিরিয়াস ভাব ! ওর চেহারাটা ও কেমন যেন অচেনা লাগছে। আমি ওর এমন দৃষ্টি ভঙ্গী আর দেখি নি ; অন্তত এই কয়েক বছরে আমি এমন দেখি নি ; আমি খুব অবাক হলাম, খুব! আমার চুপ থাকা দেখেও আবার বলল,

:কি রে কথা বলছিস না যে? { ইবু } আমি বিস্ময় কাটিয়ে বললাম,
:আচ্ছা তুইই বল এমন একটা মেয়েকে কার না ভালবাসতে ইচ্ছে হয়। { আসলেই ঐশী নম্র, ভদ্র এবং সুন্দরী একটা মেয়ে, আর সিয়াম ও কম কিসে। কিন্তু কেন জানি ওদের মধ্যে সন্দেহ আর ঝগড়ার পরিমাণ টা একটু বেশিই,..হয়তো একে অপরকে একটু বেশিই ভালবেসে ফেলেছে }

: আচ্ছা, কাল তোকে নিয়ে এক জায়গায় যাব।তুই তো আমাকে অনেক প্রশ্ন করতি।সবগুলোর উত্তর পাবি। কাল সন্ধ্যা হলেই যাব। { ইবু }
:আচ্ছা, ঠিক আছে।

রাতে ঘুমও আসছে না..; ইবু কাল কি এমন দেখাবে আমাকে উত্তেজনায় ঘুম আসছে না। আবার ঐশী কে নিয়ে টেনশনে আছি। নাহহ! ঘুম আসছে না। একবার ছাদে গিয়ে ঘুরে আসি। পরের দিন সন্ধ্যায় ইবু বলল,

: চল!
: কোথায়? {আমি }
: আরে তোকে কাল বললাম না যে এক জায়গায় নিয়ে যাব।
: ওহহো ! সরি দোস্ত। আমি ভুলে গিয়েছি।
: হুম, এখন চল।
: ওকে, চল।

বেশ জমকালো অন্ধকার এখানে ; পথ টা ও সরু ; ওর হাতে মোবাইলের আলো। আশেপাশে কয়েকটা জোনাকি পোকা আছে। তবে আমরা যতই সামনে যাচ্ছি ততই তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইবু র মোবাইলের আবছা আলোয় আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে ওর মুখটা খুব গম্ভির হয়ে আছে। বিষন্নতায় ঘেরা ওর চেহারা। যতই সামনে যাচ্ছি ওর গম্ভিরতা বাড়ছে। সাথে সাথে ওকে খুব অচেনা মনে হচ্ছে; ওর চেহারার ভাব মূর্তির পরিবর্তন হচ্ছে। ওকে এখন বড় অচেনা মনে হচ্ছে।অচেনা রূপ ; আমি অবাক হয়ে ওকে দেখছি। ও এক চোখে সামনে তাকিয়ে আছে।এমন ভাবে হাটছে যেন অনেক আগ থেকেই সব চেনা ওর।

হঠাৎ-ই ইবু এক জায়গায় এসে থামলো। একটা বেঞ্চ দেওয়া সেখানে। এই একটাই বেঞ্চ এখানে দেখলাম ; অনেকটা পথ হেটে এসেছি। ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি, তাই বসেই পড়লাম ।কিন্তু ইবু বসলো না ; ও দাঁড়িয়ে রইল। মোবাইলের লাইটটা ওফ করে দিল।খুব অন্ধকার হয়ে গেল জায়গাটা ; আমি লক্ষ্য করলাম লাইটটা বন্ধ করার সাথে সাথে কোথায় থেকে যেন হাজারো জোনাকিপোকা এসে জড়ো হলো ; একেবারে আমাদের কাছেই।আমার কানের পাশে একটা; নাকের সামনে একটা ; মাথার উপর একটা। আমি বেশবিস্ময় নিয়ে ব্যাপারটা উপভোগ করলাম। আমি মৃদু হাসলাম। এক রাস ভালো লাগা কাজ করা শুরু করে দিল। মনটা ভীষণ ভালো হয়ে গেল। আমি জীবনে এত জোনাকিপোকা একসাথে দেখি নি। হঠাৎ ইবু বলে উঠল,

:এরা কারা জানিস?
.:কারা আবার..জোনাকিপোকা?
: এরা শুধু জোনাকিপোকা না। এরা আমার বন্ধু। আমার আর মীমের ভালোবাসার সাক্ষী। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।অবাক হয়ে বললাম,
: তোর আর মীমের ভালোবাসার সাক্ষী,মানে??

: হ্যাঁ। মীম আমার প্রথম ভালোবাসা ; আমার হৃদ স্পন্দন ছিল ও। তোরা বলতি না যে আমি এত হাসি কেন?? এত মজা আমি কিভাবে করি?? আমি কেন বছরে দুইবার জন্ম দিন পালন করি? প্রতি রাতে তোদের না বলে আমি কোথায় চলে যাই? এই সব গুলোর উত্তর হচ্ছে মীম। এই বলে ও থামলো। আমি শুধু ওর দিকে তাকাই রইলাম। কিন্তু কিছুই বললাম না। ইবু আবার বলল,

:মীমের সাথে আমার ভার্সিটিতেই পরিচয়। অনার্স প্রথম বর্ষেই ওর সাথে আমার বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। জানিস সেদিনের সেই মীম ও এতো হাসতো ; বেশি কথা বলতো ;ঘুরাঘুরি করত ; আড্ডা মাস্তিতে লেগে থাকত। আর আমি ছিলাম রস-কস হীন এক মানুষ। ওর সাথে থেকে আমি হেসেছি ; বেশি কথা বলা শিখেছি। কিন্তু আমি তখনো জানতাম না যে ও কেন এতো হাসতো?? কেন এতো আমেজে থাকত?? যদি জিজ্ঞেস করি তো সে এড়িয়ে যায়। তারপর আমি ওকে প্রোপোজ করি ।ও রাজি হয় না। কিন্তু আমি জানতাম মীম ও আমাকে পছন্দ করে কিন্তু কি কারণে আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে তা আমার অজানা ছিলো। আমি ওর কাছে যতবারই যাই ও ততবার আমাকে ফিরিয়ে দেয়। আমি তখনো জানতাম না যে ও কেন এমন করছে। এদিকে আমার অবস্থার খুব অবনতি হচ্ছে এমন দেখে মীম একদিন বলল,

:কাল সন্ধায় আমার বাসার সামনে আসিছ।

তোকে এক জায়গায় নিয়ে যাব। { মীম} আমি তো মহা খুশি, সন্ধায় গেলাম। মীম আমাকে সোজা এখানে নিয়ে আসল। আমি বেশ অবাক হলাম ; তবে এমন পরিবেশে আসলে সবার মনই ভালো হয়ে যাবে। আমি হাসলাম ; খুব হাসলাম। কিন্তু ও হাসে নি ; একটুও হাসে নি। মুখ কালো করে এই বেঞ্চিতেই বসে ছিল। জানিস এই বেঞ্চটা ও নিজেই দিয়েছে ; ওর বসার জন্যে। কিছুক্ষণ পরেই আমার সব অবসান কাটিয়ে ও আমার প্রশ্নের উত্তর দিল।

আমার সকল প্রশ্নে উত্তর ও এক কথায় দিল। আমি যেন স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি স্থির হয়ে গেলাম। আমার নীল আকাশটাতে কালো মেঘে আসন্ন হয়ে গেল, ঘন কালো মেঘ। আমি বসে আছি ; আর ও বসে বসে কান্না করছে ; খুব কান্না করছে। সেও আমাকে ভালোবাসে ; খুব ভালোবাসে। কিন্তু ও যে আর বেশি দিন নেই এই পৃথিবীতে ; তাই বলতে পারে নি। খুব নিরাবতা চারপাশে ; ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে। আমি আস্তে করে মীমের হাতটা ধরলাম। ওর থুতুনি ধরে মাথাটা উপরে উঠালাম।কপালে একটা চুমু দিয়ে আলতো করে জড়িয়ে ধরলাম। ও আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। বুকে মাথা রেখে খুব কান্না করছে। সেদিন ওকে ভালোবাসার অঙ্গিকার দিলাম যত দিন বাঁচবে তত দিন।আমরা প্রতি রাতেই এখানে আসতাম। দুজনে দুজনের হাত ধরে বসে থাকতাম। আর জোনাকি গুলো আমাদের ঘিরে উড়ে বেড়াত।

আমি ওর ছোট ছোট ইচ্ছে গুলো পূরন করার চেষ্টা করতাম। জানিস প্রতিদিন রাতে ও ফোন করে খুব কান্না করত। জানিস যেদিন ওর অবস্থা খুব বেগতিক সেদিন আমাকে হাসপাতালে ডেকে নিল । একে বারে শুকিয়ে গেছে ও।আমি আসা মাত্রই ওর বাবা মা বের হয়ে গেল। আমি ওর পাশে বসলাম ; ওর কোমল হাতটা ধরি ; ও মিট মিট করে আমার দিকে তাকালো। কয়েকফোটা জল ওর গাল বেয়ে পড়ল। জানিস ওর অন্তিম সময়ে ও আমাকে ওর পাশে চেয়েছিল ; আমি ছিলাম ওর পাশে। জানিস সেদিন ও আমার বুকে মাথা রেখেই হারিয়ে গেল। কোথায় হারিয়ে যেন গেল ; আর পেলাম না ওকে। আমি ওকে একে বারে হারিয়ে ফেলি।

এই বলে ও জোড়ে কান্না শুরু করে দিল। মাটিতে বসে পড়ল। পাগলের মতো কান্না করছে সে। কিন্তু আজিব ব্যাপার হলো জোনাকিপোকা গুলো, সেগুলো যেন ইবু কে জড়িয়ে ধরে আছে। ওর গায়ে বসে আছে ; ওকে সান্তনা দিচ্ছে। আমি আর পারছিলাম না। বন্ধুর এমন কান্না দেখে আমিও কেঁদে দিলাম। তাহলে কি ও এই কারনে দুইবার জন্মদিন পালন করে?? প্রতিরাতে আমাদের না বলে এখানে আসে?? নিজের কষ্ট চাপা দিতেই কি এত হাসে?? ওর যে এমন এক অতীত আছে তা কেউই বলতে পারবে না। এই ইবু র সাথে আগের ইবু র মাঝে যেন কোনো মিল নেই ; আকাশ জমিন তফাত। ইবু নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

: কিছু ভালোবাসা আছে যা বাস্তবতাকেও হার মানায়।

এই মেয়েই তার উদাহরন। { পিছনে তাকিয়ে দেখি ঐশী দাড়িঁয়ে আছে, ও এখানে কিভাবে এলো ; তাহলে কি ইবু ওকে এখানে আসতে বলেছে????? } ইবু আবারও বলল, জানিস তোর খোঁজ খবর নেওয়ার জন্যে, তুই কি করিস না করিস, তোর খেয়াল রাখার জন্যে ও আমাকে সব সময়ই বলত তোকে যেন দেখে রাখি। ভাই দেখে রাখিস ওরে। ওকে খুব শক্ত করে তোর সাথে বেঁধে রাখিস। জগৎ-এ এমন মেয়ে পাওয়া আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার । তোরা থাক, আমি গেলাম। কিছুক্ষণ নিরবতার পর,, আমি কিছু না বলেই ঐশীকে জড়িয়ে ধরলাম। কারণ আমি তাকে হারাতে চাই না। লক্ষ্য করলাম,আমার শার্ট টা ভিজে যাচ্ছে। দেখি পাগলীটাও কান্না করছে। আমি ওর চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম,

: সত্যি অনেক ভালবাসি তোমায়, { সিয়াম}
: আমিও তোমায় অনেক ভালবাসি। { ঐশী }
: পাগলি
: হু, তোমার জন্য

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত