আমি তোমার

আমি তোমার

-জুবায়ের তুমি কোথাই
-এই তো টিউশনিতে আছি
-সত্যি বলতেছ তো
-আরে সত্যি
-ওকে,টিউশনি শেষ করে আমাকে কল দিবা
-ওকে

কথা হচ্ছিল জুবায়ের আর শান্তার মাঝে।দুইজন একে অপরকে অনেক ভালোবাসে।দুইজন এক সাথেই পড়ে জুবায়ের লেখাপড়ার পাশাপাশি একটা টিউশনি করে।আর এমন সময় শান্তার ফোন।যাক পরে জুবায়ের শান্তাকে আবার ফোন দিল।

-হে বলো
-কোথাই আছ এখন
-এই তো টিউশনি করে বাসাত থেকে বের হলাম
-জলদি করে আমার বাসার সামনে আস
-আরে এত রাত্রে কেন
-তোমাকে বলছি আসতে,আসবে কি না বলো
-ওকে আসতেছি জুবায়ের তাড়াতাড়ি করে শান্তার বাসার সামনে গেল। গিয়ে ফোন দিল…

-এই আমি আসছি
-কই
-তোমার বাসার নিচে
-ওকে দাঁড়াও আমি আসতেছি তারপর শান্তা জুবায়ের এর কাছে আসল।এসেই বলতেছে….
-চলো ঘুড়তে যাব
-আরে এত রাতে কই যাবে ঘুরতে
-তোমাকে বলছি.. চলো

অতঃপর তারা দুজনে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার এক ধারে গিয়ে বসল।হঠাৎ কিসের জন্য যে শান্তা রাস্তা পার হতে যাবে এমন সময় একটা ট্রাক এসে শান্তাকে এক্সিডেন্ট করে চলে যাই আর জুবায়ের চিৎকার করে বলল….

-শান্তা এমন সময় জুবায়ের ঘুম থেকে লাফ দিয়ে ওঠল। তার সারা শরীল ঘামে বেজা।জুবায়ের এর হার্টবিট দ্রুত গতিতে বাড়তেছে।তার মানে জুবায়ের এতক্ষন স্বপ্ন দেখতেছিল।সাথে সাথে শান্তাকে জুবায়ের কল দিল অনেকটি কল দেওয়ার পর শান্তা ফোন রিসিভ করল…

-এই পাগল নাকি এত রাতে ফোন দিলে যে..
-তুমি কেমন আছ
-আরে আমি তো ভালই,হঠাৎ কি হয়ছে
-তোমাকে নিয়ে অনেক বাজে একটা স্বপ্ন দেখছি
-দুরু পাগল,কিছুই হয় নাই,তুমি ঘুমাও তো
-আমি এখন তোমার বাসার সামনে আসতেছি
-এত রাতে, কি বলো এসব
-আমি কিছু জানি না, আমি আসতেছি,তুমি বারান্দায় দাঁড়াবে
-ওকে আস

এরপর জুবায়ের শান্তার বাসার সামনে গেল।এবং শান্তাকে দেখল শান্তা ঠিক আছে।এতক্ষনে জুবায়ের এর ভয়টা কাটল। সে দিনের মতো জুবায়ের বাড়িতে এসে ঘুমিয়ে পড়ে। জুবায়ের মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান।শহরে একটা মেসে থেকে লেখাপড়া করে।আর শান্তা শহরেরই মেয়ে।বেশি বড় লোক বাবার সন্তান না।মোটামোটি ভালই অবস্থা তাদের।বলতে গেলে জুবায়েরের থেকে অনেক ভাল অবস্থা।জুবায়ের টিউশনি করে লেখা পড়ার খরচ চালাই।তাদের প্রেমটা হয়েছিল ফেসবুক থেকে।অথচ সচারচর ফেসবুকে প্রেম না হলেও তাদের প্রেমটা হয়েছে।কারণ হয়তো তাদের ভালোবাসাটা সত্যিকারের ভালোবাসা ছিল।তাই তাদের প্রেমটা হয়েছে।

ফেসবুকে এক আধটু লেখা লেখি করে জুবায়ের।তবে এত একটা লেখে না।যখন মন ভাল থাকে তখনই লেখে। জুবায়ের কোনো বড় লেখক নয়।তবে লেখক হওয়ার প্রচেষ্টায় আছে।অনেক দিন হলো কোনো গল্প লেখে না।তাই ভাবল এই গল্পটা লেখবে। ফেসবুকে কম আর বেশি সবাই জুবায়েরকে লেখক বলেই চিনে।এই সুবাদে জুবায়ের এর সাথে অনেকেই কথা বলে।গল্প এক সময় প্রত্যেকদিন একটা হলেও লেখতেন।কিন্তু আস্তে আস্তে গল্প লেখা কমিয়ে ফেলেছে।তাই এখন মাঝে মাঝে লেখে।যাই হোক আসুন তাহলে আমরা গল্পে চলে যাই। ১ বছর আগে… একদিন একটা মেয়ে আইডি থেকে মেসেজ আসল।

-ঐ, একটু কথা বলা যাবে জুবায়ের বলল..
-অবশ্যই বলেন
-আপনি কি করেন
-এই তো ঘুরাঘুরি
-ওহ্,এটা ছাড়া আর কি করেন
-এটাই সবচেয়ে বেশি করি,তবে মাঝে মাঝে এক
আধটু গল্প লেখি
-ওহ্,আচ্ছা আপনে কিসে পড়েন
-সবেমাত্র ক্লাস একাদশে,আর আপনি
-আমিও আপনার সাথে পড়ি

-ভাল
-আচ্ছা আপনার বাড়ি কোথাই..?(মেয়ে আইডি)
-এই তো কাছেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আপনার..?(আমি)
-ঢাকা
-আমার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া হলেও ঢাকাতে লেখাপড়া করি
-ঢাকা কোথায় থাকেন
-উত্তরা,৬ নাম্বার সেক্টর, ১২ নাম্বার রোড
-আরে আমাদের তো ৬ নাম্বার সেক্টর ১৪ নাম্বার রোডে বাসা
-ভালো
-আপনার সব ডিটেলস সত্যি বলতেছেন তো,নাকি মিথ্যা
-মিথ্যা মানে
-না কিছু না,রাগ করেন কেন
-রাগ করব কেন
-ওহ্,যদি রাগ না করেন,তাহলে আপনার নাম্বারটা কি
একটু দেওয়া যাবে
-নাম্বার দিয়ে কি করবেন
-না মানে এমনি
-এমনি হলে থাক,আর নাম্বার নিতে হবে না
-প্লিজ দেন না
-যদি বলেন কেন,তাহলে দেব
-কথা বলব
-তাহলে এখন কি করতেছি
-এখন তো কথা বলতেছি,তারপরও একটু নাম্বারটা দেন প্লিজ.

তারপর অনেক জুড়াজুড়ির পর নাম্বারটা জুবায়ের দিল।জুবায়েরকে ধন্যবাদও জানাল।জুবায়ের বুঝল না,কি কারণে তার নাম্বার নিল।আর জুবায়েরও কতো বোকা তার নাম্বারটা দিয়ে দিল।যাক গে,তার সাথে তো একটু কথাই বলবে,তাহলে আর কি।দুপুর বেলা ঘুমথেকে ওঠে গোসল দিয়ে,ভাত খেয়ে মোবাইলটা নিয়ে একটু শুইল জুবায়ের।ফেসবুকেলগইন করে ডুকল।নিউজ ফিড দেখতেছে।এমন সময় এক অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসল।ভাবল ঐ মেয়েটি ছাড়া আর কেউ না।কারণ জুবায়ের যে নাম্বারটা দিয়েছে এই নাম্বারটা তার ব্যক্তিগত। তাই ঐ মেয়ে যে হবে এটা সিউর।ফোনটা ধরল….

-আস্সালামু আলাইকুম(জুবায়ের)
-অলাইকুম ওস্সালাম (এক মেয়েলি কন্ঠ)
-কে বলছেন
-আমি
-আমি টা কে..?
-আমি, যাকে আপনে নাম্বার দিয়েছিলেন
-ও
-চিনতে পারছেন,তো কেমন আছেন
-আলহামদুলিল্লাহ, আপনে কেমন আছেন.?
-ভালো,তো কি করেন
-এই তো শুইয়ে রইলাম

এভাবেই মেয়েটির সাথে জুবায়ের এর রিতিমতো কথা হতে থাকে।সবসময় মেয়েটি তাকে কল দেই।আর হে মেয়েটির নাম।জান্নাত ইসলাম শান্তা। তাকে অনেক কেয়ার করে।জুবায়ের কিছুই বুঝতেছে না। মেয়েটি কি তাকে…না না এসব জুবায়ের কি ভাবছতেছে।জুবায়ের মাঝে মাঝে লেখা-লেখি করে।তাকে দিয়ে এসব।ভাবতেই যে কেমন লাগে।সমস্যা নাই। ইচ্ছে হলে করবে না হলে নাই।।এভাবে প্রায় মাস দুয়েক হয়ে গেছে।মেয়েটিই তাকে সবসময় কল করে।জুবায়ের যে ফোন দিবে,সে সুযোগ টুকু জুবায়েরকে দেয় না।যাক গে এক দিন তো মেয়েটি জুবায়েরকে প্রপোজ করে ফেলল।আর হ্যা তারা আপনে থেকে তুমি তে এসে পড়েছে। শান্তা জুবায়েরকে বলতেছে তোমার সাথে আমার কথা আছে।জুবায়ের বলল বলো।শান্তাবলতেছে তাহলে শুন…

-জুবায়ের আমি জানি না তুমি কথা গুলো কিভাবে নিবা।

তবে আমি যা বলব সব সত্য এবং তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে।যে দিন আমি তোমার লেখা গল্প পড়তে শুরু করি তখন থেকেই তোমাকে না দেখে, তোমার সম্পর্কে কোনো কিছু না জেনে তোমাকে ভালোবেসে ফেলি।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি জুবায়ের। আমাকে তুমি ফিরিয়ে দিও না।আই লাভ ইউ জুবায়ের জুবায়ের হতবম্ব হয় শুধু এতক্ষন শান্তার কথা গুলো শুনতে লাগল।কোনো কিছুই বলল না।জুবায়ের নিশ্চুপ। শান্তা আবার বলতেছে,

-কি হয়েছে জুবায়ের, উত্তর দাও জুবায়ের তখন বলল…
-আমি হাসব নাকি কাঁদব,কোনটা করব তুমি বলো।
-কোনো কিছুই না, তুমি আমাকে ভালোবাস কি না,শুধু তা বলো
-আমাকে ভাবতে হবে
-ওকে,ভেবেই বলো
-ওকে,এখন রাখি
-ওকে

জুবায়ের কিছুই বুঝল না।মেয়ে আমারে কোনো দিন দেখে নাই,ভালোবেসে ফেলছে।এটা আবার কি ভালোবাসা।তবে দেখি কি করা যায়। আমাকে এটা নিয়ে ভাবতে হবে।যাক তাহলে এখন ভাবি।(এসব ভাবতে লাগলেন জুবায়ের) অতপর রাত্রে আবার শান্তা কল দিল।শান্তা বলল…

-আমার কথার উত্তর দাও
-কি বলব
-আমাকে ভালোবাস কি না,যদি না বাস তাহলে আমি….
-তাহলে আমি আবার কি..?
-যা খুশি তা..এবার আমার উত্তর দাও
-হুম উত্তর অবশ্যই দিবো..তার আগে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দাও
-হুম..বলো
-আমাকে তুমি কেনো ভালোবাসো?
-তোমার গল্প আমার খুব ভালোলাগে তাই..
-তাহলে আমি বলবো তুমি আমাকে না..আমার গল্পকে ভালোবাসো
-উহু..তোমার মন থেকে এতসুন্দর কল্পনা থেকে গল্প লেখো..তাই আমি যেহেতুতোমার গল্পকে ভালোবাসি তাহলে তোমার মনকে ভালোবাসি

-এইটা কেমন যুক্তি?
-সে যেমনই হোক..উত্তর দাও আগে
-এতো ব্যাস্ত কেনো?উত্তর তো দিবোই। কিন্তু আমার মনে হয় তুমি খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছো..তুমি এখনো আমাকেপুরোপুরি চিনোনা..কিছুদিন সময় নাও তারপর ভেবে দেখো..

-এই তোমাকে এত জ্ঞান দিতে বলেছি?মনে হচ্ছে আমি ওনার ছাত্রী..সোজা কথায়উত্তর দেও..হ্যা নাকি না?
-আচ্ছা আমি তোমাকে কালকে উত্তর দিতেছি
-ওকে

অতঃপর জুবায়ের পরের দিন শান্তাকে আই লাভ ইউ টু বলে ফেলে।চলে গেল তাদের ভালোবাসার১টি বছর।আজকে তাদের একটি বছর হয়েগেছে।তাই তারা ভাবল যে কোনো এক নদীরতীরে গিয়ে বসে তারা তাদের ভালোবাসার ১টিবছর পূর্ণ করবে।এখন তারা নদীর তীরে বসা।কারো মুখেকোনো শব্দ নেই।হঠাৎ করে শান্তা জুবায়েরএর কাধে মাথা রাখে আর বলতে থাকে..

-আচ্ছা জুবায়ের তোমার মনে আছে
-কি
-তুমি যে বলছিলা,কোনো একদিন নদীর তীরে বসে আমরা দুইজন মিলে সূর্যাস্ত দেখব
-হুম
-আজ তা আমি পূর্ণ করব,কিছুক্ষণ পরেই সূর্যাস্ত হবে

জুবায়ের কিছুই বলতে পারে নাই।শুধু দু এক ফুটা পানিঝড়ালো চোখ থেকে।জুবায়ের ভাবতে থাকেএকটি মেয়ে কিভাবে এত ভালোবাসতে পারে।জুবায়ের যা কখনো আশা করে না সেগুলোওশান্তা করে দেখাই।অনেক আগে একদিনজুবায়ের বলেছিল নদীর তীরে বসে তারাসূর্যাস্ত দেখবে।শান্তা জুবায়ের এর কাধে মাথারাখবে।অনেক্ষন ধরে তারা দুজনে এই প্রকৃতিরলীলাময় সৌন্দর্যটা উপভোগ করবে।সেটা আজসত্যি হতে যাচ্ছে।মেয়াটা পারেও বটে।জুবায়েরকে অনেক ভালোবাসে মেয়েটা।তাই তোজুবায়ের এর সুখের জন্য মেয়েটা সব কিছু করেথাকে।

পশ্চিম আকাশে লাল আবর্ণ ধরে সূর্য তার প্রতিদিনের মতো নিয়ম অনুযায়ী বিদায় লগ্নে প্রকৃতিকে সৌন্দর্যময় করে প্রকৃতির প্রেমিকদের মন জয় করে আড়াল যাচ্ছে। শীতের আগমন উপলক্ষে চারদিকে বয়ছে হালকা কোয়াশা।নিস্তব্ধ হয়ে আসছে চারপাশ।সূর্য তার নিজস্ব গতিতে তলিয়ে যাচ্ছে পশ্চিম আকাশটাকে লাল করে আর চারদিকে অন্ধকারকে ডেকে।এমন একটি সুন্দর দৃশ্যের মাঝে নদীর তীরে বসে আছে জুবায়ের আর শান্তা।শান্তা জুবায়ের এর কাধে মাথা রেখে প্রকৃতির এই দৃশ্যটাকে উপভোগ করতেছে।সুন্দর প্রকৃতি আর সুন্দর তাদের ভালোবাসা। বেঁচে থাকুক তাদের ভালোবাসা আজীবন। বেঁচে থাকুক পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে,শহর থেকে গ্রামে, অলি থেকে গলিতে এমন ফুটন্ত দুইটি পদ্ম ফুলের নেই ভালোবাসা গুলো।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত