অনিশ্চিত পদধূলি- এই মামুন তোমার কাছে কি এটাই ভালবাসা, যেখানে কাউকে কষ্ট দিয়ে কেউ সুখী হয়। আবার নিজেও কষ্ট পায় কিন্তু কেউ বুঝার ক্ষমতা রাখে না এটা। দুজনের কাছে আসার প্রবনতা অনেক কিন্তু কি এক অদৃশ্য কারনে কেউ কাছে থাকতে পারে না।
শুরুটা হয়েছিল ভার্সিটির নবীন বরন অনুষ্ঠানে। আমি তখন দ্বিতীয় বর্ষে। নিয়ম অনুযায়ী যাবতীয় কাজ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের করতে হবে। আমার কাজ ছিল অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনা করা। সব বন্ধুরা কেন আমাকে এই কাজটি দিল বুঝলাম না। ভার্সিটিতে আমি অনেক সিম্পলভাবেই চলাফেরা করি। একটু চুপচাপ স্বভাবের মধ্যে থাকতে চেষ্টা করি। জিনিসটা আমার বন্ধুদের খুব বিরক্ত লাগতো।
অনেক কথাও শুনাতো আমায়। কিন্তু এসব হেসেই উরিয়ে দিতাম। মেয়ে বন্ধুরা তো কথাই বলত না আমার সাথে। তবে পড়ালেখার ব্যাপারে একটু সচেতন ছিলাম বলে কেউ কেউ এসে একটু হেল্প নিত। এসবের মধ্যেই দিন যাচ্ছিল আমার। এর মাঝে একদিন সায়েম ফোন দিল যে মনির এক্সিডেন্ট করেছে। তার দ্রুতো এ নেগেটিভ রক্ত লাগবে। আমি তখন সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। সেখানে গিয়ে রক্ত দিলাম। রক্ত দিয়ে মনিরকে দেখতে কেবিনে আসলাম। অনেক বন্ধুরা আছে তার সাথে। মনিরের মাথায় ব্যান্ডেজ করা, হাতে প্লাস্টার। আমি কাছে যেতেই দেখলাম তার চোখ ছলছল করছে। সবাই চুপচাপ থেকে পরিবেশটা আরও গুমোট করছে।
আসলে সায়েম মনির এরা আমার ক্লাসমেট। তাই পরিবেশটাকে ভাল করার জন্য মনিরকে বললাম, বেটা নিষেধ করেছিলাম মেয়েদের দিকে তাকিয়ে রাস্তা পার হতে। এখন দেখ কি হয়। ভাল হবি কবে তুই। এরকম কথা আমার মুখে শুনে সবাই থো হয়ে গেল। আসলে সবার সাথে আপনি বা তুমি করেই কথা বলি। হঠাত কাছের বন্ধুদের মত তুই করে বলাতে সবাই অবাক হয়েছে। আবারও বললাম, মেয়েটি দেখতে কেমন ছিল। মনির এবার একটু হেসে ছোট করে বলল, একটা মেয়েকে বাঁচাতেই এই অবস্থা। তখন পাশের বন্ধুরা বলল, ওই মেয়েটাই তাহলে তোকে এখানে নিয়ে এসেছে। মনির হাসলো এটা শুনে। আমি বললাম, তোর কাজ তো হয়েই গেল। তখনি মেয়েটা কেবিনে আসলো। এসেই বলল, কেমন আছেন এখন আপনি। মনির কিছু বলতে যাবে তখনি আমি বললাম, দোস্ত তুই সফল। তোর কাজ হয়ে গেছে।
ভাবিকে একটু সময় দে, আমরা বাইরে আছি। তখন সবাই হেসে উঠলো। যাওয়ার সময় মেয়েটিকে দেখলাম, চোখ দুটো ফুলে আছে, হয়ত কেঁদেছে। সাথে কেমন যেন লাল হয়ে আছে মুখটা। মনিরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি এলো।তারপর সবাই বের হয়ে এলাম। এরপরে কি হয়েছিল জানি না। তবে সবাই মিলে আড্ডা হত অনেক। অনেক হাসি ঠাট্টা হত। এরপর তো আজকে এই নবীন বরন অনুষ্ঠান। সময়মত অনুষ্ঠান শুরু হল। আমিও অনেক ভালভাবে উপস্থাপনা করলাম। অনেক কথার ঝুরি আর ছন্দ নিয়ে অনুষ্ঠান জমিয়ে দিলাম। অনুষ্ঠানের দুদিন পরে ভার্সিটিতে আসলাম। সায়েম বলল, কাল আসি নি কেন। আমি বললাম, এমনি একটু রেস্ট করছিলাম। এরপর ক্লাস শেষ করে সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটির পুকুরের পাশে বাধানো বট গাছটার ওখানে গিয়ে বসলাম।
প্রায় প্রায় এটা করি আমি। নিজেকে নিয়ে ভাবতে ভাল লাগে এসময়। একটু পরে এক মেয়ে আসলো। যেখানে বসে আছি তার কিছু পাশেই মেয়েটা বসল। আমি মেয়েটির দিকে না তাকিয়ে সামনে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে আছি। তুলনা করছি কালকের আমি থেকে আজকের আমিকে। তখনি মেয়েটি বলল, আপনার সাথে কি একটু কথা বলা যাবে। আমি দিগন্তের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করতে করতেই বললাম, প্রেমে পরে যেতে পারেন কথা বললে। আরেকবার ভেবে নিন। মেয়েটি এমন কথা শোনার পর কিরকম চেহারা করেছিল তা আমি দেখতে পারিনি। কিছু পরে মেয়েটি আবার বলল, এই যে আমি আপনাকে বলছি, একটু কথা বলা যাবে। ভাবনায় আবারও ছেদ পরল। তাই ভাবলাম একটু নাটক করি। তখন চমকে উঠে বললাম, আপনি, আপনি কে। আর এখানে কি করছেন। আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি।
কি চান আপনি। একসাথে এসব গড়গড় করে বলে ফেললাম। মেয়েটা একটু মুচকি হাসলো। হাসিটা আমার দেখা তৃতীয় সুন্দর হাসি। মেয়েটা বলল, আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে এসেছিলাম। আপনার সাথে কি একটু কথা বলা যাবে। আমি বললাম, কথা, কি কথা, আমার সাথে কিসের কথা। আমি তো আপনাকে আগে কখনও দেখিনি। মনে মনে ভাবছি নাটক কি একটু ওভার হয়ে যাচ্ছে। মেয়েটি আবারও হাসলো। বলল, আমি এখানে নতুন ভর্তি হয়েছি। সেদিন অনুষ্ঠানের পর থেকেই আপনার সাথে একটু কথা বলার ইচ্ছে হয়েছিল। কিন্তু আপনার দেখা পেলাম না। তাই আজকে এখানে পেলাম। এতো অস্থির হওয়ার কিছু নেই। আপনি শান্ত হয়ে বসুন। আমি বললাম,যা বলার জলদি বলুন। আমাকে যেতে হবে। মেয়েটি বলল, আমার নাম অনামিকা। অনামিকা জাহান ঐশী।
তখন আমি একটু ভালভাবে খেয়াল করলাম, মেয়েটা অনেক সুন্দরী। ক্লিয়ার শ্যাম্পুর একটা এড এর কথা মনে পরে গেল। I have nothing to hide. মেয়েটি অনেকটা এরকমি সুন্দরী। মেয়েটি বলল, আপনি অনেক ভাল উপস্থাপনা করেন। আমি এবার হাসলাম। মেয়েটা বলল, হাসছেন কেন। আমি বললাম, এমনিই। আর ধন্যবাদ আপনাকে। মেয়েটি এবার আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম, আমার একটু কাজ আছে। আমি আসি। মেয়েটি বলল, আপনাকে ডিস্টার্ব করেছি এজন্য সরি। বলেই চলে গেল। গেটের কাছে গিয়ে একটা কাল মার্সিডিজে উঠে চলে গেল। আমি এবার চিন্তা করছি, এক্টিং সেই করছি। যাই হোক মেয়েটা অনেক বড় ঘরের মেয়ে এটা বুঝতে পেরেছি।
পরেরদিন আবার ভার্সিটিতে এসে ক্যান্টিনে আসলাম। তখন আমার সামনের সীটে ঐশী এসে বসল। আমি অনেক শান্ত গলায় বললাম, কিছু বলবে। ঐশী হেসে বলল, একদিনেই এত উন্নতি। আপনি থেকে তুমিতে চলে এসেছেন। আমি আবারও শান্ত গলায় বললাম, তুমি আমার জুনিয়র তাই আরকি।মনে মনে বলছি, এটা তো ভালই বুঝতে পারও, মেয়ে জাতি তাছাড়া আদরের দুলালী বলে কথা।
ও বলল, আমার ভালই লেগেছে আপনি তুমি করে বলাতে। আচ্ছা আপনি কি সবসময় এরকম একা একা থাকেন। আমি বললাম, না। আমি কখনই একা থাকিনা। আমি সবসময় আমার বেস্ট বন্ধুর সাথে থাকি। ঐশী এবার বলল, তো কই আপনার বেস্ট বন্ধু। আমি বললাম, ফ্রান্সিস বেকন একটা কথা বলেছিলেন যে, তোমার অনেক ভাল বন্ধুদের মধ্যে আরেকজন বেস্ট বন্ধু হল তুমি নিজেই। তাই আমি নিজেকে কখনও একা ভাবতে পারি না। আর আমি আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু। এবার বুঝেছো। ঐশী বলল, হ্যা বুঝলাম। তাহলে আমি আসি বলেই চলে আসলাম। ঐশী কেমন যেন অবাক হয়ে গেল।
হয়ত আরও কিছু বলার ছিল। ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে অনেকটা সামনে চলে এসেছি তখনিই ঐশী অনেকটা দৌরে সামনে এসে দাড়ালো। একটু জোরেই শ্বাস নিচ্ছে সে। আমি বললাম, কোন সমস্যা কিছু হয়েছে কি। ও আমার দিকে তাকিয়ে শ্বাস নিতে নিতেই বলল, আপনার সাথে একটু কথা বলতাম। আমরা কি বন্ধু হতে পারি। আমি বললাম, কথা বলার জন্য বন্ধু হওয়া লাগে না। আর তাছাড়া তুমি আমার জুনিয়র। ঐশী বলল, বন্ধু হতে কি সিনিওর জুনিওর এসব চিন্তা করতে হয়। আমি একটু হেসে বললাম, না এসব চিন্তা করতে হয় না। তবে আমার সাথে কথা বলার জন্য তোমাকে বন্ধু হতে হবে না। তুমিই এমনি আমাকে সব বলতে পারও। আর যতদুর মনে হয় ভার্সিটিতে তোমার বন্ধুর অভাব নেই। তাই কোন সমস্যা হবে না। বলেই সামনে থেকে চলে আসলাম। পরেরদিন ক্লাসে এলেই সায়েম আমার পাশে আসলো। বলল, একটা মেয়েকে অনেক পছন্দ হয়েছে। মেয়েটার নাম অনামিকা, আর জুনিয়র।
আমি বললাম, তো গিয়ে প্রোপজ কর। ও বলল, ওরা অনেক বড়লোক। আমি বললাম, তো কি হয়েছে। ভালই বাসিস যদি তবে এসব ভেবে কি লাভ। সায়েম বলল, তুই যদি একটু হেল্প করতি। আমি একটু হেসে বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে, ক্লাস শেষে কথা বলায় দিব। সায়েম খুশি না হয়েই চলে গেল। ব্যাপারটা বুঝলাম না। কথা বলায় দিব বললাম কোথায় ও খুশী হবে তা না করে ও মুখ গোমড়া করে রাখছে। ব্যাপারটা সুবিধার মনে হল না। ক্লাস শেষে সায়েম আমি বাইরে দারিয়ে আছি। একটু পরেই অনামিকা আসল। আমি ওকে ডাকলাম। এই অনামিকা একটু শুনবে। অনামিকা আমাদের কাছে আসল। আমি বললাম, এই হল আমার বন্ধু সায়েম। অনেক ভাল বন্ধু। আর সায়েম ও হল অনামিকা। দুজনে হায় হ্যালো করল। অনামিকাই হল ঐশী। আমি ঐশীকে বললাম, তোমরা দুজন কথা বল আমি আসছি।
সেখান থেকে আমি বাসায় চলে আসি। এর কিছুদিন আর ঐশীর সাথে দেখা হয় নি। একদিন লাইব্রেরীতে জুনিয়র দুই ছেলে আর এক মেয়ে পড়ার ব্যাপারে কিছু সমস্যা নিয়ে এসেছে। ঐশীও লাইব্রেরীতে এসেছে দেখলাম। ছেলেগুলোর সমস্যা বুঝিয়ে দিয়ে আমি মেয়েটাকে পড়া বুঝাতে শুরু করলাম। বুঝানো শেষ হলে মেয়েটি অনেক কথা বলল। অনেক প্রশংসা করল। অনেকভাবে ধন্যবাদও দিল। আমিও বিনিময়ে হাসিমুখে পড়াশুনা ভাল ভাবে চালিয়ে যাওয়ার কথা বলি। তারপর ঐশীর দিকে তাকাতেই দেখি ও আমার দিক থেকে চোখ নামিয়ে নিল। আমি লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে আসলাম। সায়েমকে দেখলাম ক্যান্টিন থেকে বের হতে। ওকে ডেকে বললাম, কিরে তোর খবর কি। কতদুর কি হল। সায়েম বলল, হল আর কই। প্রোপজ যেদিন করলাম সেদিন কিছু না বলেই চলে গেল। তারপরের দিন আমাকে বলল, সে নাকি অন্য কাউকে মন থেকে ভালবাসে। আমাকে ভালবাসা তার পক্ষে সম্ভব না।
আর আমিও নিজের আবেগ কাটিয়ে বের হয়েছি রে। আসলে তার সাথে আমি কোনভাবেই যাই না। এটা শুধুই আমার ভুল। আমি হাসলাম এসব শুনে। সায়েমকে বললাম, চা খাবি আমার সাথে। ও হাসিমুখে বলল, চল, অবশ্যই খাব। দুজনে ক্যান্টিনে এসে বসলাম। সায়েমকে বললাম, তুই রিমাকে কেমন জানিস। সায়েম বলল, কেমন আবার। ও যেমন সেরকমি জানি। আমি বললাম, ক্লাসে ও যে অনেকটা সময় তোর দিকে তাকিয়ে থাকে সেটা জানিস। যেদিন তুই অনামিকার সাথে কথা বলছিলি সেদিন দুর থেকে কেউ চোখের জল ফেলছিল এটা জানিস। তার থেকেও বড় কথা মেয়েটা যে অনেক ভালবাসে এটা জানিস। সায়েম হতভম্ব হয়ে গেল। আমি আরও বললাম, কাল সকালে বাধানো বটগাছে কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করবে। তবে আমি না গিয়ে তুই গেলে মনে হয় সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
সায়েম মনে হয় বুঝতে পারলো কাল কে অপেক্ষা করবে। দুজনেই চুপ হয়ে গেলাম। তখনি ঐশী এসে বলল, আমি আপনাকে ভালবাসি। অনেক বেশি ভালবাসি। হঠাত এরকম কথা শুনে সায়েম আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। তখন সায়েম বলল, তুমি তো অন্য কাউকে ভালবাসতে। ঐশী বলল, হ্যা, সেই অন্যজনই হল ইনি। আমি এবার ঐশীকে বললাম, আমাকে কেন ভালবাসলে। কি এমন দেখেছো আমার মাঝে। ঐশী বলল, মানুষের নির্দিষ্ট কিছু দেখে ভালবাসা হয় না মিঃ মামুন। ওটা শুধুই এক অনুভুতি। আমি সায়েমকে আমার পাশের চেয়ারে বসালাম আর ঐশীকে সামনের চেয়ারে বসতে বললাম। ও বসল। আমি বললাম, তুমি আমাকে ভালবাস। এখন আমি হ্যা বললেই সেটা পরিনত হবে রিলেশনে। একে অপরের প্রতি টেককেয়ার, শাষন আর কিছু লুতুপুতু টাইপ কথাবার্তা দিয়েই শেষ হবে দিন। তারপর কোনসময় ঝগড়া হলে তখন আমাকে রাগ ভাঙ্গাতে হবে। এরপর তোমার রাগ কমলে তোমার কথামত চলতে হবে। এরপর আবার যদি কোন ঝামেলা হয় তখন তুমি মুখের সামনে বলবে ব্রেকআপ। সম্পর্ক শেষ।
তুমি হয়ত কিছুদিন পর নতুন কাউকে খুজে নিবে আর আমি তখন ছেকা খাওয়া কিছু গান আর সিগারেট নিয়ে সুন্দর জিবনটা নষ্ট করব। তোমার কাছে তো ভালবাসা এটাই তাই না। তো এখন বল আমি কিভাবে নিজের জিবন নষ্ট করব। আর আমার মনে হয় তুমি এসব কিছু চিন্তাও করনি। ঐশী অবাক হয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি তখন ওখান থেকে উটতে উটতে বললাম, অল্প বয়সে আবেগটাকে সামলাও। এটাকে ভালবাসা বলে ভালবাসাকে অপমান করিও না। বলেই সায়েম সহ চলে আসলাম। আজ কেন জানি ভাল লাগলো না। ওর সাথে এভাবে কথা না বললেও পারতাম। এসব নিয়ে আর মাথা ঘামাতে চাই না। আমার লক্ষ্য আমাকে মাথায় রাখতে হবে।
পরেরদিন ভার্সিটিতে এসে সায়েম আর রিমাকে দেখলাম একসাথে বসে আছে। ভাল লাগলো অনেক। আরেকটা জিবনের গল্পে অংশ হতে পেরেছি আমি। সামনের দিকে তাকালাম। হঠাত সামনে মনির আসল। তার মুখের ভাব দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা ঠিক নেই। আমার কাছে আসতেই ও আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি ওকে শান্ত করার চেষ্টা করতে করতে বললাম কি হয়েছে। ও বলল, সাথী আমার সাথে আজ ছয়দিন হল কথা বলে না। এমতাবস্থায় দুর থেকে দেখলাম ঐশী আমাদের দেখছে।
তখন আমি মনিরকে বললাম, তোকে একটা কাজ করতে হবে। পারবি? ও বলল কি কাজ। তখন আমি বললাম, কাল একটা মেয়েকে সাথে নিয়ে সাথীকে দেখিয়ে ঘুরতে হবে। পারলে ফেসবুকে ছবিও আপলোড দিস। সাথী যদি তোকে সত্যি ভালবাসে তাহলে কিছু একটা হবে। ও এবার ভয়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, কিছু একটা মানে। আমি হেসে বললাম, পজেটিভ কিছু। তখন ও বলল, অন্য এক মেয়ে পাব কোথায়? আমি এবারও হেসে বললাম, চল। ঐশীর কাছে এসে বললাম, কেমন আছ তুমি। আগ বাড়িয়ে কথা বলতে এসেছি দেখে ও বলল, কি দরকার সেটাই বলেন। এতো ন্যাকামোর দরকার নেই। আমি হেসে বললাম, তোমাকে একটা কাজ করতে হবে বলে ওকে সবকিছু বোঝালাম।
সবকিছু শুনে ও বলল, সবি ঠিক আছে কিন্তু আমি এটা কেন করব? আমি একটু ভাব নিয়ে বললাম, তুমি যদি না করতে চাও তাহলে অন্য কাউকে বলে দেখতে হবে। ও তখন বলল, আর যাই হোক নিজের ভাবটা আছেই তাই না। অন্য কাউকে লাগবে না আমিই হেল্প করছি। তখন আমি হেসে ফেললাম। পরেরদিন প্লান অনুযায়ী সব হল। বিকেলের দিকে দেখলাম সাথী মনিরের সাথে দেখা করে কি কি জানি বলল। ঐশীও ছিল ওখানে। মনে হল সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। তখনি দেখলাম সাথী মনিরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে আর ঐশী হাসছে। আমি আর থাকলাম না। পরেরদিন ভার্সিটিতে এসে বাধানো বটগাছটার দিকে যাচ্ছি। সবাই ক্লাসে গেছে কিন্তু আমার ক্লাস করার ইচ্ছা হল না। তাই বটগাছটার ওখানেই যাচ্ছি।
গিয়ে দেখি ঐশী বসে আছে ওখানে। আমি পাশে বসলেই ও সামনে তাকিয়ে সবার উপরের কথাগুলো বলল, তোমার কাছে কি এটাই ভালবাসা, যেখানে কাউকে কষ্ট দিয়ে কেউ সুখী হয়। আবার নিজেও কষ্ট পায় কিন্তু কেউ বুঝার ক্ষমতা রাখে না এটা। দুজনের কাছে আসার প্রবনতা অনেক কিন্তু কি এক অদৃশ্য কারনে কেউ কাছে থাকতে পারে না। তোমার কি এখনো মনে হচ্ছে যে আমার এটা আবেগ। আমি চুপচাপ সামনে তাকিয়ে আছি। মনে মনে ভাবছি, আচ্ছা আমি কি এই মেয়েটাকে ভালবাসি।
যদি না বাসি তবে তাকে একা দেখলে খারাপ লাগে কেন। কেন তার বিষন্নতা আমার হৃদয় ছুয়ে যায়। তবে কি আমিও দুর্বল হয়ে পরলাম। তখন আবারও আমার ভেতরের আমি আমাকে মনে করিয়ে দিল বাস্তবতার কথা। মনে করিয়ে দিল এর ভবিষ্যত। মনে করিয়ে দিল নিজের লক্ষ্যের কথা। এসব মনে মনে ভাবছিলাম। তখন ঐশী বলল, আমি তোমার সেদিনের কথাগুলো ভেবেছি। কিন্তু বিশ্বাস কর ঐ কথাগুলোর মাঝে কি ছিল জানি না। কেন জানি তখন তোমার প্রতি ভালবাসাটা আরও বেড়ে গেছে। আমি এতক্ষনে খেয়াল করলাম ও আমাকে তুমি করে বলছে। আমি ওকে বললাম, তুমি প্রতিদিন নিত্যনতুন কিছু চিন্তা কর তাই না ঐশী। তুমি কি একটা বুড়ো মানুষকে ভালবাসতে পারবে ঐশী।
পারবে না। তাছাড়া তুমি এখন কোন ধরনের অভাবকে কাছ থেকে দেখনি। আমি দেখেছি ঐশী। আমরা সবাই একসাথে কোন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি কিন্তু তোমার কাছে কোন সমস্যাই কাছে আসে না। তুমি রোজ গাড়িতে করে কলেজে আসও যাও। কিন্তু আমরা এরকম উত্তপ্ত রোদেও রাস্তায় হেটে বা বাসের ভিড়ে যাতায়াত করি। তুমি কি এসব মেনে নিতে পারবে ঐশী। ঐশী একটু চুপ থেকে বলল, আমি আমার ভালবাসার শক্তিকে বিশ্বাস করি। আর তুমি যদি পাশে থাকো তবে আমি সব পারব। আমি হাসলাম এটা শুনে। বললাম, আচ্ছা আমি ধরে নিলাম তোমার বাবা আমাকে তোমার জন্য মেনে নিল। কিন্তু তুমি কি সংসার জিবনের একঘেয়েমিতাকে মেনে নিতে পারবে ঐশী? প্রতিদিন আমি হয়ত অফিসে থাকবো।
তোমাকে খুব একটা সময় দিতে পারবে না। বাসায় একা থাকবে তুমি। রাত্রে বাড়ি ফিরলে তখনও অনেক ক্লান্ত থাকব। তোমার সাথে ভালমত দুটো কথা বলতে পারব না। তুমি কি এটা মেনে নিতে পারবে। এরপরও তুমি যখন আমার থেকে একটু সময় চাইবে তখন আমি হয়ত চেষ্টা করব কিন্তু একটাসময় তুমি বিরক্ত হয়ে যাবে। আমাদের মাঝে তখন অনেক কথা কাটাকাটি হবে, ঝগড়া হবে। তুমি হয়তবা রাগ দেখিয়ে তোমার বাবার কাছে চলে যাবে। কিন্তু এই আমি যে তোমার সাথে নিজেকে অনেক মানিয়ে নিয়েছিলাম। আমি কোথায় যাব বলতে পার। আমি সামনের সব কিছু নিয়ে ভেবেছি ঐশী। আমি সবার থেকে নিজেকে বেশী সময় দেই। আবেগ আর ভালবাসা দিয়ে সব হয় না ঐশী।
বাস্তবতা অন্যরকম। প্রথম প্রথম হয়ত ভালবাসার জোড়ে নিজেকে তুমি মানিয়ে নিবে কিন্তু একসময় বিরক্তি চলে আসবে। আমি এটা বলছিনা যে তুমি পারবে না। আমি জানি অনেক ভাল মেয়েই আছে যে নিজের সবটুকু দিয়ে তার স্বামীর ভালবাসার কটোরে বদ্ধ হয়ে থাকতে পারে কিন্তু এটার সংখ্যা অনেক কম। তাছাড়া এসি গাড়িতে বসে এসব ভালবাসার কথা ভাবাটা অনেক নরমাল। কিন্তু আমি আসলে এরকমটা না। আমার কিছু লক্ষ্য আছে। কিছু ইচ্ছে আছে। যেসব ইচ্ছের কোন বিকল্প নেই। আমি সবার মাঝেই থাকতে চাই। যেমন কাল মনির আর সাথী। সাথী আমার ওপর হয়ত একটু রাগ করেছে কিন্তু তাদের দুজনের জিবনের গল্পে আমি তো রয়েই গেলাম তাই না। অনেকক্ষন এভাবে বলে থেমে গেলাম। আস্তে করে বললাম, আমি মানুষের মাঝে নিজেকে খুজে পেতে চাই। তাই তো একা বেশি থাকতে চাই। ঐশীর চোখ দিয়ে দেখলাম পানি পরছে।
একটু পরে বলল, তুমি অনেক ভাল চিন্তা করতে পারও জানো। কিন্তু আমার ভাগ্যটা শুরু থেকেই একটু খারাপ তাই তোমার চিন্তায় কোন অংশতেই আমি নেই। ছোটবেলায় মা আর বাবা অনেক ঝগড়া করত। একসময় তারা আলাদা হয়ে গেলেন। আমাদের আর্থিক কোন অভাব ছিল না। তারপরও আমি মা বাবাকে একসাথে পাই নি। আর আজ এমন একজনকে ভালবেসেছি যে আমাকে বাস্তবতা বোঝালো সব দিক দিয়েই। যে আমাকে অভাব দিয়ে বোঝালো সময়ের মুল্য। অভাবের তাড়নায় ভালবাসার মানুষকে সময় দিতে না পারা আবার অনেক অর্থের দরুন ব্যস্ততায় ভালবাসার মানুষকে সময় দিতে না পারা দুটোই এক না হলেও ফল একটিই হয়। আমি গর্বিত যে আমি তোমার মত কাউকে ভালবেসেছি। তবুও একটা কথা জানতে ইচ্ছে করছে, আমার জন্য কি তোমার মনে এতটুকুও ভালবাসা নেই।
ওর এমন কথায় আমি কোন জবাব দিতে পারলাম না। এমনকি ওর দিকে চোখ দিয়ে তাকাতেও কেমন ভয় করছে। হ্যা আমি এই মেয়েটাকে ভালবাসি। অনেক বেশিই ভালবাসি। কিন্তু মানুষের কিছু দায়িত্ব কিছু স্বপ্ন রয়েছে আমার কাছে যেসব পুরন না করে আমি অন্য কোন দিকে যেতে পারব না। হয়তবা ঐশী একটু কষ্ট পাবে কিন্তু নিজেকে কখনও স্বার্থপর ভাবতে হবে না। তবুও নিজেকে প্রশ্ন করছি মনে মনে, আমি কি স্বার্থপর নই। কিছু স্বপ্ন পুরনের জন্য আমি কি এই মেয়েটিকে কষ্ট দিয়ে ফেলছি না? নিজেই নিজেকে বললাম, সব প্রশ্নের উত্তর নিজের থেকে জানতে চাইলে হয় না, প্রকৃতির থেকেও পাওয়ার চেষ্টা করতে হয়। সিদ্ধান্ত নিলাম ঐশীকে বলব, আমি তাকে ভালবাসি না। যেই আমি তাকে বলতে যাব, তখনি ও বলল, ভালবাস না এটাই বলবে তো। আমি জানি তোমার কিছু লক্ষ্য আছে কিছু স্বপ্ন আছে সেজন্য তুমি এখন আমাকে এটাই বলবে। কিন্তু তুমি জানো তোমার চোখ আলাদা কিছু বলছে।
আমি অনেকদিন পর একটু অবাক হলাম। ও হেসে বলল, এটা আমার আবেগ কি ভালবাসা সেটা আমি তোমাকে প্রমান করতে যাব না তবে আমি আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তোমার অপেক্ষায় প্রতিটা মুহুর্ত কাটিয়ে দিতে পারব এবং এটাই করব। এটা যদি আবেগ হয় বা জেদ অথবা ভালবাসা হয় তবে তাই হোক। তবে আমাকে যদি অন্য কিছু করতে বাধ্য করা হয় তবে এই পৃথিবীতে আমার আর কোন শ্বাস বইবে না। কথাটি বলেই ও চলে গেল। আমি আজ তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। এরপর অনেকদিন চলে গেল। সত্যি বলতে ঐশীকে অনেক ভালবাসি কিন্তু নিজের বিবেকের কাছে নিজেই বাধা আমি।
তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল শেষ হল। এখন আর কয়েকটা মাস পরেই ইনটার্ন। ঐশীকে কয়েকদিন দেখা গেল না। একদিন ভার্সিটি থেকে বের হয়েই দেখি কালো মার্সিডিজ দারিয়ে আছে। আমি গাড়িটার কাছে গিয়ে দাড়ালাম। একজন মধ্যবয়স্ক লোক এসে বলল, তোমার নাম কি মামুন।
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম। লোকটি বলল, আমার সাথে একটু হাসপাতালে যাবে। আমি কিছু বলতে পারলাম না। লোকটি সহ হাসপাতালে আসলাম। একটা কেবিনের সামনে দাড়িয়ে আছি। আসার সময় শুনলাম ঐশীর এক্সিডেন্ট হয়েছে। গলার কাছে অনেক বেশি আঘাত পেয়েছে। ভেন একটু হলেই ছিড়ে যেত। সে বেঁচে আছে তবে তার বাকশক্তি সে হারিয়ে ফেলেছে বলে ডাক্তাররা মনে করছেন। এরকম অবস্থায় কেউ কথা বলতে পারার কথা না। আমি এখন কেবিনে ঐশীর পাশে বসে আছি। ঐশী ঘুমিয়ে আছে। ঐ ভদ্রলোক বাইরে আছেন। একটু পরে ঐশীর ঘুম ভাংলো। আমি তাকে দেখে হাসলাম। বললাম, কোন ছেলেদের দিকে তাকিয়ে রাস্তা পার হওয়া ভাল নয়, দেখলে তো কি হল। এখন তো আর কথাও বলতে পারবা না। কিভাবে বলবা আমার সাথে কথা। ও হাসলো। অনেক কষ্টের হাসি সেটা। একটু উঠে বসার চেষ্টা করল। পাশে থেজে ডায়রী আর কলম নিয়ে লিখলো, আজ প্রায় ছয়দিন হল আমি এখানে, আর তুমি এখন আসছো।
এভাবে করুনা নিয়ে তাকিওনা প্লিজ। লিখাটি দেখে আমি আবারও হেসেই বললাম, তোমাকে করুনা ছাড়া এই মুহুর্তে আজ কিছু করতে পারছি না। হাহাহা। এখন বল তোমার কি আমার প্রতি এখনও ভালবাসা নামের বস্তুটি আছে। ও লিখল, একজন মানুষকে ভালবাসা যায় কিন্তু কোন জানোয়ারকে নয়। যে একজন মানুষের এমন অবস্থায় হাসতে পারে, তাচ্ছিল্য করতে পারে সে আর যাই হোক মানুষ নয়। এটা দেখিয়েই সে ডায়রী কলম ছুরে মারল। আমি এবার বললাম, কয়েকদিন ধরে তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিল। কেন করছিল জানি না হয়ত আমি জানোয়ার তাই। কিছু কথা বলার জন্য খুব অস্থির লাগছিল নিজেকে কিন্তু বলতে পারছিলাম না। আজ যখন সব কিছু ফেলে তোমাকে এসব বলব বলে আসলাম তখন তুমি আমাকে জানোয়ার বলেই দিলে। হয়ত আমি জানোয়ার বলেই বলেছো।
আমি সঠিক ছিলাম তবে ভবিষ্যত নিয়ে কিছু ভুল ধারনা ছিল। আমি সবার গল্পের মাঝে নিজেকে দেখতে চাইতাম। কিন্তু কখনও এটা ভাবিনি যে এই কাজটা তোমাকে সাথে নিয়ে অনেক সহজভাবে করতে পারব। কিছু স্বপ্ন পুরনের জন্য যদি কোন সত্যিকারের কেউ পাশে থাকে তবে তা অনেক সহজ হয়ে যায়। বুঝতে পারিনি সেটা তুমিই হতে পারতে। সংসারে নানান সমস্যা আসবে। তবে তোমাকে সাথে নিয়েই সেগুলি সমাধান করা যেত। জিবন আমাকে সময় না দিলেও আমি তোমার জন্য সময় দিতে পারতাম। এটা আমি জানি। শুধু এটুকু বুঝিনি যে তোমার সান্নিধ্যে থাকলে আমিও অনেক ভাল থাকব। ঝগড়া করা, তর্ক করা এসব সংসারে হবেই। আমি এটুকুই বুঝিনি যে এই ঝগড়া তর্কেও অনেক সময় ভালবাসার প্রকাশ ঘটে। এসবই ভুল ছিলাম। বাইরে যখন তোমার ব্যাপারে সব শুনলাম তখন আমি এসব কিছু মনে করিনি। শুধু নিজেকে বুঝিয়েছি তুমি যেভাবেই থাকো তোমাকে আমার লাগবেই। তাই এসব কিছুই ভাবি নি আমি। একসময় আমি চুপচাপ থাকতাম, কারও সাথে কথা বলতাম না।
কিন্তু মানুষকে হাসানোর জন্য অনেক সময়েই হাসিখুশি থাকি। এতসবের মাঝেও কেউ কখনও আমার মনের কথাগুলো বুঝতে চায় নি, শুনতে চায় নি। আজ যখন তোমাকে এসব শুনাবো বলে এখানে এসেছি তখন তুমিও পর করে জানোয়ার বানিয়ে দিলে। এখন শুধু এটুকু মনে হচ্ছে, তুমি ভুল কিছু বলনি। আমি সত্যি একটা জানোয়ার। কিন্তু কিছু প্রশ্নের উত্তর তোমার জানা দরকার। আমি সত্যি তোমাকে নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালবাসি। এখন এই অবস্থাতেও তোমাকে বিন্দুমাত্র করুনা করছি না। আমি ভাবতাম তুমি আমাকে মন থেকে বুঝবে কিন্তু তুমিও বুঝলে না। যাক যেটা তোমার ভাল মনে হয়। তবে আমি দুঃখিত নই তোমার জন্য। কারন তুমি সব সময়েই মন থেকে আমার জন্য পার্ফেক্ট। আমি তোমাকে ভালবাসি, তোমার সব কিছুই আমার। তোমার সম্মান, তোমার স্বপ্ন, তোমার ইচ্ছে সবি আমার।
আমি এটা ভাবিনি তুমি কি। আমি ভেবেছি আমি তোমাকে ভালবাসি।এসব কথা বলতেই ওর কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরেছি। একটু পরে ছেড়ে দিয়ে বললাম, সরি। আসলে ভুল করে হয়ে গেছে। ভালো থেকো বলে চলে আসছিলাম। দেখলাম ওর চোখে পানি। অনেক কিছু বলার জন্য ছটফট করছে। ডায়রী আর কলমটাও নেই পাশে। আমি এসব না দেখে দরজার দিকে পা বাড়ালাম, ধীরে ধীরে দরজার কাছে পৌছে গেছি। পেছন থেকে একটা আওয়াজ শুনতে পেলাম, এই মামুন, শুনছো। একটু দাড়াও। থমকে দাড়ালাম। চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এলো। পেছনে অশ্রুমুখে তাকিয়ে দেখলাম, ভালবাসার মানুষটাও যে তার সব অসীম ভালবাসার শক্তি দিয়ে ডাকছে…