চাঁদটাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।আসলে চাঁদ সবসময়ই সুন্দর।মানুষের মন ভাল থাকলে শুধু চাঁদ কেন পৃথিবীরসব কিছুই সুন্দর লাগে তার কাছে।
-এই কি হল চুপ করে আছ কেন?অনন্যা আমার দিকে তাকিয়ে বলল।আসলে তোমরা লেখকরা যে কেমন সব সময় উদাস হয়ে থাকো।মাথার ভেতর সামন্য কিছু একটার চিন্তা ভাবনা ঢুকলেই হল সেটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাও।আশে পাশে যে কেউ আছে বা কিছু আছে সেটা একদম ভুলে যাও।কতদিন বলেছি এত লেখালেখি করনা।লেখা লেখি করতে গেলে কি কম মেধার দরকার হয়।কিন্তু কে শোনে কার কথা।উনার তো ওই একটাই কথা লেখালেখি আমার রক্তে মিশে গেছে।এক নাগাড়ে এত গুলি কথা বলে থামল অনন্যা। শেষের কথাটি বলার সময় কিছুটা মুখ ভাঙিয়েই বলেছে। অনন্যা যখন কথা বলে আমি তখন কিছু বলি না।একদম চুপ থাকি।কোন কথা বললে অনন্যার রাগ আরও বেড়ে যায়। তখন সারাদিনই বকবক করতে থাকে।
-রাত মনে হয় এগারোটা বেজে গেছে ঘরে যাবে না অনন্যা?
অনন্যা কিছুটা ঝাড়ি দিয়েই বলল,না যাব না।অনন্যা আমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।হালকা বাতাস এসে মাঝে মাঝে অনন্যার চুল গুলো উড়িয়ে দিচ্ছে। অনন্যার চুলের গন্ধটা আমার কাছে কামিনি ফুলের গন্ধের চেয়েও ভাল মনে হচ্ছে। আমি আস্তে করে ওর শরীরে হাত বুলায়।তারপর ওর মুখটা আমার মুখের কাছে এনে একটা চুমু দেই।অনন্যা বলে অত ঢং দেখাতে হবে না এবার ঘরে চল। আমি বললাম, আমার ছাদ থেকে যেতে ইচ্ছে করছে না বসনা আমার কাছে।
-বসে থাকতে তো অসুবিধা নেই তবে রাত জাগা চলবে না তাড়াতাড়ি চল।বলেই অন্যন্যা আমার হাত ধরে টানল।আমি সুবোধ বালকের মত ওর পেছন পেছন গেলাম। সকালে ঘুম ভেঙে দেখি অনন্যা আমার পাশে নেই। অন্যদিন অনন্যা আমার পাশ থেকে গেলেই আমি টের পাই।কিন্তু আজ পাইনি।কেন টের পাইনি তার কারন মেলাতে চেষ্টা করি কিন্তু পারিনা।
-এই নাও তোমার জন্য ব্রেক টি।হালকা নীল মেক্সি পরা গায়ে আর কিছু নেই অনন্যার।যেন স্বপ্নের কোন পরী আমার সামনে।
-কি দরকার ছিল এত সকালে চা বানানোর।
-এত সকাল নয় সাহেব আটটা বেজে গেছে।আজ তোমার অফিস বন্ধ তাই নাস্তা করে তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাব।
-কোথায়?
-আমার এক বান্ধবীর বাসায়।
আমি না বলতে গিয়েও বললাম না।না বললে অনন্যা খুব কষ্ট পাবে।আর আমি কখনও চাই না আমার অনন্যা কষ্ট পাক।যে অনন্যা সব সময় সুখে দুখে আমার পাশে থাকে আমি তাকে সামান্য কষ্টও দিতে চাই না।
-ঠিক আছে বাবা যাব না।
-কেন যাবে না কেন? আমি কি মানা করেছি নাকি?
-মুখে মানা করছ না কিন্তু মনে তো সাই দিচ্ছ না।
অনন্যার এই একটা গুন আমার মুখ দেখে ও আমার মনেরকথা বলে দিতে পারে।সব সময় নয় তবে বেশির ভাগ সময়।অনন্যা আমার পাশে বসে চুপ করে থাকে।আমি অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলি, রাগ করলে নাকি?অনন্যা কথা না বলে হালকা মাথা নাড়ায়।আমি চায়ে এক চুমুক দিয়ে অনন্যার হাতটা ধরে আমার কাছে নিয়ে আসি।তারপর ওকে জড়িয়ে ধরে বলি,তোমাকে এই ভাবে জড়িয়ে ধরে আজ সারাটাদিন কাটিয়ে দেব। অনন্যার দু চোঁখ বেয়ে অশ্রু পড়তে থাকে।অনন্যামেয়েটা যে কেমন এখনও ঠিক বুঝলাম না।মাঝে মাঝেএমনই হুক করে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।নারীরা সববোধয় এমনই।কোথায় যেন পড়েছিলাম নারীদের মনবোঝা বড়ই কঠিন।কঠিনই হয়তোবা।
আমি ননন্যার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিসিয়েবলি,এই অনন্যা কাঁদছ কেন?অনন্যা চুপ করে থাকে। জানালা দিয়ে বাতাস আসছে সাথে হালকা একটা সুন্দর ঘ্রান।আমি অনন্যাকে ছেড়ে উঠে দাড়ায় তারপর দরজা জানালা সব বন্ধ করে দেই।ঘরের ভেতর এখন কৃত্তিম অন্ধকার।বাইরের আলো ঘরের ভেতরে ঢুকবার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আমি আর অনন্যা যখন ঘর থেকে বেরিয়েছি তখন দুপুর দুইটা।আজ ঘরে রান্না হয়নি।অসুবিধা নেই আজ দুপুরের খাবার বাইরে থেকেই খেয়ে নেব।অনন্যা এখন আবার আগের মতই হেসে হেসে কথা বলছে।আসলে কথাটি ঠিক নারীদের মন বোঝা বড়ই কঠিন। আমি অনন্যার দিকে তাকিয়ে বলি বিকালে বেড়াতে যাবে?
-অনন্যা বলল ,কোথায়।
-আমি বললাম,গেলেই দেখতে পাবে।
আমি অনন্যা কে যেখানে নিয়ে এসেছি যায়গাটা নির্জন।কেন জানিনা আমার নির্জন জায়গাই বেশি ভাল লাগে।কোলাহল পূর্ন জায়গা আমার মোটেও পছন্দ নয়।একটা হলদে পাখি থেকে থেকে সুন্দর ভাবে ডাকছে।সামনে লেকের পানি কি সচ্ছ।সঙ্গে বাড়তি কাপড় আনলে গোছল করা যেত।অনেক দিন এমন সচ্ছ জলে গোছল করা হয়নি।
-এই অনন্যা কেমন লাগছে তোমার কাছে এই জায়গাটা?
-খুব ভাল।আসলে লেখকদের একটা পছন্দ আছে।
দেখতে দেখতে সময় কখন যে চলে গেল বুঝতেই পারিনি।আসলে আনন্দের মূহুর্ত গুলো সুখের সময় গুলো এমন তাড়াতাড়িই চলে যায়।আমরা উঠে বাসার দিকে রওনা দেই। টেলিফোনটা হাতে নিয়েই কানের কাছে আনলাম। ছোট শালী ফোন করেছে।
-আচ্ছা দুলা ভাই আপনি কেমন বলেন তো আপুকে না দেখে আপনি এতদিন কি করে আছেন?আপনার কথা ভেবে ভেবে আপু এখন অসুস্থ। কি আমার অনন্যা অসুস্থ!আমি এক্ষনই যাব আমার অনন্যার কাছে।সামান্য একটা বিষয় নিয়ে সে দিন দুজনার ঝগড়া হয়েছিল তারপর অনন্যা রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেল।আমি ও যে কেমন যে অনন্যাকে না দেখে একদিনও থাকতে পারতাম না।সেই অনন্যাকে ছাড়া এতদিন কি করে কাটালাম।সত্যি মানুষের মন বড় অদ্ভুদ।আমি অনন্যার কাছে হার মানতে চাইনি।
অনন্যাও হয়তো আমার কাছে হার মানতে চাইনি।কিন্তু জীবনে চলার পথে কাউকে না কউকে তো হার মানতেই হয়।আমিও না হয় অনন্যার কাছে হার মানলাম।জীবনে কিছু কিছু স্থানে ছোট হলে মানুষের মানুষত্ব বাড়ে বৈ কমে না। আজ আবার অনন্যাকে নিয়ে সেই নির্জন জায়গাতে এসেছি।অনন্যার চুল গুলো বাতাসে উড়ছে।ওর চুল থেকে অপূর্ব একটা গন্ধ বের হচ্ছে।যে গন্ধটা কামিনি ফুলের গন্ধকেও হার মানাবে।