-এই যে ম্যাডাম এক মিনিট শুনুন
-প্রতিদিন এভাবে রাস্তা আটকাবেন না প্লিজ
-একমিনিট করে কথা বললেই হয়ে যায়
-আজব,আমি কেনো কথা বলতে যাবো
-ভালবাসি তাই
-আমি ভালবাসিনা,আর এগুলো আমার দ্বারা সম্ভব না
-কেনো
-আমার কোচিং দেরী হচ্ছে।আর আমার পিছু ছেড়ে দেওয়াটাই আপনার জন্য ভালো
-ভালবেসেছি ম্যাডাম,ছেড়ে দিয়ে নয়
কোনো পাত্তা না দিয়ে বালিকা চলে গেলো। দীর্ঘ তিন বছর ধরে বালিকার পেছনে পরে আছি। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এদিকে আমি অনার্স শেষ করেএকটা জবও পেয়ে গেছি। কিন্তু বাচ্চা পুলাপানের মতন পিছু পিছু ঘোরা এক প্রকার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। এভাবে আর কতদিন ঘুরবো! নতুন চমক না দিলে দেবদাসের পাশে আমারনামটাও জমা হয়ে যেতে সময় লাগবেনা। পরেরদিন অফিস থেকে ফিরে আবার বেড়িয়ে পরলাম। ৩৫মিনিট অপেক্ষার পর বালিকার দেখা পেলাম।
– নীলা আজ শেষ কিছু কথা বলতে চাই
-হুম বলুন
-তোমায় এতটাই ভালবেসে ফেলেছি যে,তোমার ভাবনায় সারাদিন পরে থাকি।তোমায় একনজর দেখতে অফিস থেকে এসে না খেয়ে আগে তোমার তরে ছুটে আসি।একটু কথা বলতে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করি।কিন্তু এগুলো হয়তো তোমার ভালোলাগেনা।আর আমি চাইনা আমার জন্য তোমার কোনো কিছুতে খারাপ লাগুক। তাই আমি অফিস থেকে পোস্টিং নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাচ্ছি। ভালো থেকো
-হুম [কথা গুলো বলে অশ্রু চোখে চলে আসতে লাগলাম]
-নয়ন শুনুন
-হুম বলো
-আমিও অনেক আগেই আপনায় ভালবেসে ফেলেছি।কিন্তু বিয়ের আগে ভালবাসা ইসলাম ধর্ম সমর্থন করেনা,তাই কথাগুলো মনের মাঝেই চাপা দিয়ে রেখেছি
-সত্যি
-হুম,কিন্তু আমার কিছু কথা রাখবেন
-সব কথা রাখবো
-আমার ছোটো থেকেই স্বপ্ন আমার জীবন সঙ্গী একজন আদর্শবান পুরুষ হবেন। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে। সকালে উঠে আমার পাশে বসে আমার সাথে কোরআন তেলোয়াত করবে। আর তাঁর মা- বাবার পরেই আমায় ভালবাসবে। আমার এই স্বপ্ন গুলো পূরণ করবেন
-হুম
-তাহলে কাল আমার বাসায় গিয়ে বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েন। আমি বাবাকে বুঝিয়ে বলে রাখবো
-আচ্ছা
-হুম বাই
খুশিতে বাসায় ফিরে গেলাম। তিনবছর আগে ভার্সিটির গেটের সামনে সেইযে বোরখায় মোড়ানো এক জোড়া চোখের প্রেমে পরেছিলাম। অদেখাই রয়ে গিয়েছিলো তাঁর মুখখানা। শুধু শুনেছি মিষ্টি এক মধুময় কন্ঠ। সেদিনই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলাম এই মায়াবীনিকে আমার চাই। সন্ধায় নামাজে যাবার সময় এক আব্বু-আম্মু অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো। তাতে আমার কি আসে যায়, নীলা বলেছে। ওর স্বপ্ন তো পূরণ করতে হয়ই। রাতে আব্বু-আম্মুকে সবটা বলাম। আমার কথা ভেবে তাড়াও রাজী হয়ে গেলেন। পরেরদিন নীলার বাসায় গিয়ে কথা বললেন। নীলা বাসা থেকেও অমত জানালো না। দুই পরিবারের সম্মতিতেই ১৫দিন বাদে আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করা হলো। এই ১৫টা দিন নীলার চোখ জোড়া তো দূরের কথা কন্ঠটাও শুনতে পাইনি।
বিয়েরদিন কোনো ঝামেলা ছাড়াই বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়ে গেলো। কিন্তু ঝামেলা শুরু হলো বাসরঘরের সময়। মনের এক ভয়ের কারণে নিজের ঘরের দরজার সামনে যাচ্ছি আবার ফিরে আসছি। অবশেষে কিছু বন্ধু তাদের সাহস আমার মাঝে দিয়ে ঘরে ঢুকিয়ে দিলো। নীলা আমায় দেখেই উঠে এসে সালাম করলো। আমি ওর ঘোমটা উঠিয়ে মুখ দেখতে যাবো এমন সময় ও বললো “এখন না,আগে ওজু করে আসেন”। অতঃপর ওজু করে ওর সাথে নফল দুই রাকাত নামাজ আদায় করলাম। নামাজ শেষে নীলা বিছানার মাঝে গিয়ে বসে পরলো। আমি বোকার মতন দাঁড়িয়েই আছি।
-এখন চাইলে মুখ দেখতে পারেন [নীলার কথা শুনে এত্তগুলা সাহস নিয়ে ঘোমটা টা তুললাম। কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।মেয়েটা লজ্জায় চোখ নামিয়ে রাখলো। কিছু সুন্দর্যের বিবরন হয়না। নীলাও তাই। সেদিন সারারাত নীলার হাতে হাত রেখে গল্প করলাম। দুজনের বুকের মাঝে জমিয়ে রাখা সব কথা দুজন দুজনকে বললাম। শেষ রাতের আযান শুনে দুজনে ওজু করে নামাজ আদায় করে ঘুমিয়ে পরলাম। সকালটা শুরু হলো নীলার ডাকেই। কয়েকবার ডাকতেই চোখ খুললাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১১টা বাজে।
-এখন কি হবে
-ক্যানো
-বাহিরে যাবো কিকরে
-দরজা দিয়ে
-বিয়ের প্রথম দিনই ১১টা পর্যন্ত ঘুমাইলাম।সবাই কি ভাববে
-হিহিহি,সবাই বলবে বউ পাগল
-সম্মান গেছেরে
-উঠুন এখন,আর দেরী করতে হবেনা
-আগে এদিকেতো আসো
-হুম,কি
-(_____)
<বিয়ের ছয় মাস পূর্ণ হলো>
নীলা পরিবারে আসার পর থেকে সব কিছুতেই এক অন্যরকম শান্তি বিরাজ করছে। আব্বু-আম্মুর মুখে নীলার জন্য হাসি দেখলে মনের মাঝে এক শীতল হাওয়া বয়ে যায়। মেয়েটা আইসক্রিম বা চকলেটের জন্য বায়না ধরেনা শুধু তাঁর পাশে বসে তাঁর সাথে কোরআন তেলাওয়াত করলেই সে খুশি। আমারো ভালো লাগে তাঁর এই ছোট আবদারটা পূরণ করতে।