বাসরঘরে পা দিতেই নতুন বউ বলে উঠল,আমার জন্য তেতুল নিয়ে তারপর ঘরে আসেন।নতুন বউ এর মুখে এমন কথা শুনে রিতিমতর ষ্টক করার অব্যস্থা।হায় হায়!!বিয়ের আগেই ভবিষ্যৎ বাচ্চার বাবা হলাম নাকি!আনমনে এসব ভাবছি,হঠাতি খিলখিল করে হেসে বউ আবারো বলল,ভয় পাইয়েন না,আমি একটু তেতুল ভালবাসি ত তাই আনতে বলছি।আমি চাই আমার নতুন জীবনটা আমার প্রিয় মানুষটির হাতে আমার প্রিয় জিনিস দিয়ে শুর হক।
বউয়ের মুখে এই কথা শুনে কিছুটা সস্তি পেলাম।বুজতে আর বাকি রইল না,বউ আমার তেতুল পাগলি।তারপর ভালই কাটছিল তেতুল পাগলি লিজার সাথে দিনগুলো।অহ পরিচয় দিতেই ত ভুলে গেছি,আমার এই তেতুল পাগলি বউয়ের নাম লিজা।আর আমি ফয়সাল ডিপ্লোমা পাশ করে বেসরকারি একটা কম্পানিতে চাকরি করছি।মা,বাবা,ছোট বোন,আপি, আর আমি মিলেই ছিল পরিবার। সেখেন নতুন করে যোগ হল লিজা।তারপর,,
সকালে লিজার ভিজা চুলের জলের ছিটাই দিনের শুরটা খুবিই আনরোমান্টিক বলা চলে! কি ভাবছেন?এমন একটা রোমান্টিক মুহুর্তকে আনরোমান্টিক বলছি কেন??কারন সকালে গরম চায়ের বদলে তেতুল পাগলি এক কোয়া তেতুল এর বিনিময়ে একটা চুমো পাওয়া যায়।আমিও কম না এই চুমা পাওয়ার জন্য সকালে তিন কোয়া তেতুলও খালি পেটে খেয়ে ফেলি।আর তার বিনিময়ে প্রাপ্য চুমার মধ্যে দুইটা দুই চোখে আরেকটা কই (১৮- বাচ্চাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ জন্য)বলা যাবে না।আর তারসাথে লিজার মুক্ত ঝরা হাসি ত আছেই।হাসিটা আরো সুন্দর লাগে ওর ঠোটের পাসের তিলটার জন্য।প্রতি শুকবার বিকালে আমি আর লিজা চা বিস্কুটের বাদলে তেতুল খাই।কারন একটাই এক কোয়া তেতুল এর জন্য একটি চুমো।পাগলিটা তেতুলের আচারটাও খুব চমৎকার বানায়।টক তেতুল টাও যেন ওর হাতের ছুয়ায় একটু ঝাল মিষ্টি হয়ে যায়।যার ফলসরুপ আমার মত ঝালখোর ছেলেটাও এখন তেতুল পাগল হয়ে গেছে।
একদিন সকালে মুশলধারা বৃষ্টি সময় অফিসের জন্য রেডি হচ্ছি হঠাত পাগলিটা এক প্লেট পানি খেচুরি তেতুল আচার দিয়ে মাখিয়ে আমাকে খাওয়াতে শুর করল।এদিকে আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে।কিন্ত কে শুনে কার কথা।আমিও লিজাকে এক লোকমা খাইয়ে দিয়ে কপালে আলত করে চুমু একে দিলাম তা না হলে যানি মেয়েটা আমাকে ছাড়বে না।পাগলিটা খুব বুদ্ধিমতী,যানে কিভাবে ভালবাসা আদায় করতে হয়।যাক অবশেষে ভালবাসা বিনিময় শেষ করে বের হতে যাব হঠাতি পিছন থেকে হাত টান দিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,আজ আসার সময় একটু তেতুল নিয়ে এসো ত।কথাটা বলার সময় কেমন যানি লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে দৌড় দিল।আমিও খুব অবাক হলাম তেতুল পাগলির হঠাত আজ আবার কি হল???যে সেও তেতুলের কথা বলতে গিয়ে এমন লজ্জা পেল।যাক অফিস শেষ করে তেতুল নিয়ে আসলাম।প্রতিদিনের মত আজো দুষ্টামি ভালবাসা বিনিময় করছি।কিন্ত লিজার মুখ দেখে মনে হচ্ছে ও আজ আরো বেশি কিছু আশা করছে।আমিও ভাবছি আজ কি কোন বিশেষ দিন নাকি? কিন্ত তারিখ বার সব মিলিয়ে দেখলাম।কিন কিছুই্ত খুজে পেলাম না।
সকালে যথারিতি অফিস গেলাম।ঘরে এসে দেখি তেতুল পাগলি লিজা এক কেজি তেতুল টক মিশ্রণ অভিমান দিয়ে একটা গোয়িং লেটার লিখে তার উপর তেতুল এর বিচি দিয়ে ভার দিয়ে চলে গেছে।চিঠি খুলে দেখি তাতে লেখা তুমি বাবা হতে চলেছ তবুও তোমার ভিতর কোন আনন্দ নাই।এতটা আনরোমান্টিক কেন তুমি?পরে মনে মনে ভাবছি ও কখন আমাকে বলছিল আমি বাবা হতে চলেছি??এরপর মনে হল যে এই কারনেই হয়ত সকালে তেতুল পাগলি ঐ দিন তেতুল আনতে বলেও লজ্জা পাইছিল।পরে অনেক বুজিয়ে সুজিয়ে বউ নিজের কাছে আনছি।যাক এভাবে একটু কেয়ারিং শেয়ারিং করতে করতে নয় মাস কেটে গেল।পাগলিটা এখন আগের মত দুষ্টামি আর আমাকে আদর করতে পারে না।তাই আমারো মাঝেমাঝে একটু একা লাগে।
পাগলিটা তা বুজতে পেরে একদিন বিকালে বলে, বাবু এখন থেকে এক কোয়া তেতুল এর জন্য দুইটা করে চুমো দিব।কথাটা শুনেই দুষ্টু মার্কা হাসি দিয়ে তেতুল আচার খেতে শুর করলাম।গুনে গুনে ৫০ কোয়া খাইছি।তাই লিজাও আমাকে ১০০ চুমো দিছে।কিন্ত এত তেতুলের আচার খেয়ে দাত সহ চুকা হয়ে গেছে, তাই রাতে ভাত খেতে পারছিলাম না।আমার খেতে সম্যসা হচ্ছে দেখে পাগলিটা কাঁদতে শুর করল। আর বলে ইশ আমার জন্য পাগলটা খেতে পারছে না।তাই লিজাও না খেয়ে বসে আছে। কি আর করা কোন মতেই পাগলিটাকে আর ভুজাতে পারি না,তুমি না খেলে আমাদের বাচ্চার কষ্ট হবে।পরে লিজার পেটে মাথা রেখে বললাম দেখ বাবু বিচার দিচ্ছে ওর নাকি খুদা লাগছে তুমি খেতে দিচ্ছ না।আমার মুখে এই কথা শুনে তেতুল পাগলি হেসে উঠল।
পরে দুই জন খেলাম আমার একটু কষ্ট হচ্ছিল দেখে লিজা বুদ্ধি করে বলল এক লোকমা ভাতের জন্য দশটা চুমা পরে এই চুকা দাত নিয়েও দশ লোকমা ভাত খাইছি লিজার চুমো পাওয়ার লোভে।দেখতে দেখতে এখন এখন আমি OT সামনে দারিয়ে আছি।ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে পাগলিটাকে একিকে টেনশনে আমি শেষ। ভিতরে যাওয়ার আগে পাগলিটা আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে গিয়ে কপালে একটা চুমু দিয়ে হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে কানেকানে বলল,খাগাউড়া বাজারের মসজিদে গিয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ পরে কাগটা খুলবা।এই কথা শুনে আমার ভিতরে কি এক কৌতুহল জন্ম নিল কি লিখা এই কাগজে??
যে দুই রাকাত নফল নামাজ পরে খুলতে বলল।মনের ভিতর নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে এমন কিছু লেখা নাই ত,যে আমার কিছু হলে আমাদের বাচ্চাকে তুমি দেখে রেখ।আর তুমি আরেকটা বিয়ে করে নিও।তাই তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে মসজিদ ডুকে নামাজ পড়া শেষ করে কাগজিটা খুললাম, লেখা দেখে চোখ কপালে উঠে গেল,কারন তাতে বড় বড় করে লেখা আসার সময় দুই কেজি তেতুল নিয়ে আইস।পাগলিটা OT যাওয়ার আগেও তেতুল এর কথা ভুলে নাই।কিছুটা অভিমানী হাসি দিয়েই তেতুল কিনে হাসপাতালে OT সামনে যেতেই বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পেলাম।একটু পরে নার্স এসে বলল,আপনার মেয়ে হয়েছে । আর মা মেয়ে দুই জনি ভাল আছে।খুশিতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।দৌড়ে ভিতরে গিয়ে দেখি লিজার পাশে আমার মেয়ে শুয়ে আছে।
ঠিক লিজার মত দেখতে হইছে।ঠোটের পাশে লিজার মত একটা তিল।আমাকে দেখে লিজা তার সেই ভুবন ভুলানো হাসিটা দিল।মা মেয়ে যেন এক সাথে হাসছে আর আমি হাদারাম বেশি খুশির আবেগে মুশারোফ করিমের মত কাঁদছি।লিজা আমাকে হাতের এসারায় কাছে ডেকে নিয়ে বলল,ব্যাগের তেতুল গুলো হাসপাতাল এর প্রসূত মহিলাদের কেবিনে গিয়ে সবাইকে দিয়ে আসতে। লিজার মুখের কথা শুনে আমি সহ সবাই অবাক।মানুষ বাচ্চা হলে মিষ্টি বিলাই। আর এই মেয়ে দেখি তেতুল বিলাতে বলে।আমার ভাবনার জগত সাংক করে লিজা বলল, কি হাদারাম দারিয়ে কেন যাও।আর এক কোয়া তেতুল দেও আমাকে।আমি ত অবাক হায় হায় আজকেও তেতুল খাবে নাকি??কিন্ত আমাকে আরো অবাক করে দিয়ে লিজা আংুল একটু তেতুল নিয়ে মেয়ের মুখে মধু চিনির বদলে তেতুল দিয়ে দিল।
আমি অবাক জিজ্ঞাস করলাম এটা কি হল? লিজা মুশকি হাসি দিয়ে বলল দুষ্টু কবির মেয়ে ফাহাকে তেতুল পাগলি বানিয়ে দিলাম। হায়রে তেতুল পাগলি বউ নিজের মেয়েকেও জন্মের দিন তেতুল খাইয়ে তেতুল পাগলি বানিয়ে ছাড়ল।আমি লিজার কান্ড দেখে চোখ মুশতে মুশতে কখন যে হাসে দিছি যানি না।এই হল আমার তেতুল পাগলি।এত কিছুর মাজেও তেতুল লাগবেই।লিজার কান্ড দেখে হাসপাতালের সবাই হাসতে শুর করল।সবার হাসি দেখে আমার মেয়ে ফাহাও খিলখিল করে হাসতে শুর করল,,,,,,, হা হা হা,,,,,,,,