আমি কাজী মুসফিকুর রহমান তমাল।অফিসের কর্মব্যস্ততার জন্য বাসায় যেতে পারি নি।তাই এক অফিস সহকারীকে কিছু টাকা দিয়ে ইফতারি আনতে পাঠাই।সে মিনিট পনেরোর মধ্যে ইফতারি নিয়ে হাজির হলো। ইফতারির মাত্র বাকি মিনিট পঁচিশ , সব কাজ বিরত রেখে ইফতারির জন্য প্রস্তুত হই।আমি একটা প্লেট নেই ইফতারি রাখার জন্য।ইফতারি গুলো প্লেটে রাখলাম, আমার চোখ গেলো তৈলাক্ত ছোলার কাগজের দিকে।হাতের লেখাটা কেমন চেনা চেনা লাগছে।কৌতূহল মনে তৈলাক্ত কাগজটা হাতে নিতে চমকে যাই।এ তো মেহার হাতের লেখা।আমি লেখাটা পড়ে স্তব্ধ হয়ে যাই।
আচ্ছা মি:লেখক সাবেব, আপনি কী আমায় পছন্দ করেন? নাকি ভালোবাসেন কোনটা? মনে তো হয় পছন্দ করেন। না না ভালোই বাসেন। ধ্যাত্ কিছুই বুঝে আসছে না।আচ্ছা আপনি গল্পে শুধু নতুন নতুন মেয়েদের নাম দেন কেন?আমার একদম ভালো লাগে না।আপনি প্রতিটা গল্পে আমার নাম দিয়ে লিখবেন কেমন মি:লেখক সাবেব।জানেন তো আপনার লেখা গল্প আমি নিয়মিত পড়ি।লেখক সাহেব জানেন আপনার গল্প পড়তে পড়তে আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি।ইশশশশ!লজজ্জা করছে আমার।
আমি লেখাটা পড়ে কি করবো বুঝতে পারছি না।কেমন এক অজ্ঞাত অনুভূতির মাঝে হারিয়ে যাই।বুকটা কেপে ওঠে,চোখের কোণে নোনা জল ভিড় জমাতে থাকে।
এতক্ষণ যে মেয়েটার কথা বলছিলাম তার নাম উম্মে হাবিবা।আমি মেহা বলে ডাকি।আমার সাথে ফেসবুকেই পরিচয় তার পর ভালো বন্ধুত্ব।এভাবে কেটে যায় দিন।আমাদের বন্ধুত্বটাও গভীর হতে থাকে।যার ফলে আমরা একে-অপরের প্রতি খুবি দায়িত্বশীল হয়ে যাই।তারপর আমারা দেখা করি।মেহা কে অনেক জাইগায় ঘূরতে নিয়ে যাই।তবে মেয়েটা বেশ ধার্মিক, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,কোরআন তিলওয়াত করে। আর হ্যা মেয়েটার ৩০ পারা কোরআন মুখস্থ ছিলো।আমার সাথে যতবার দেখা করেছে তার চোখ দুটি ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাই নি।কেননা মেয়েটা হাত মুজা,পা মুজা সাথে কালো বোরকা।তবে জানেন তো এর মাঝেই যে তাকে বেশ সুন্দর দেখাতো।মেহা খুবি নরম কোমল মনের অধিকারী ছিলো।চোখ দুটি যেন জলে ফোটা পদ্মের ন্যায়।
আমিও যে মেয়েটার প্রতি দূর্বল হয়ে যাই।মাঝে মাঝে মনে করতাম বলেই দেই না দেখি কি হয়, কিন্তু কোন এক পিছুটানে বলিনি।মেহা আমাকে একদিন একটা চিঠি দিয়েছিলো,সেই চিঠিটা অনেক আবেক ভারাক্রান্ত ছিলো।সেই চিঠিটা আমি আমার সাথেই রেখে দিয়েছি।কারণ ওটা ছিলো আমাকে দেওয়া প্রথম ও শেষ চিঠি। এর পর মেহার সাথে আর কোন যোগাযোগ হয়নি।অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কোন কিছুতে লাভ হয় নি। অনেক বার ওর বাড়িতে গিয়েছি কিন্তু বাড়িটা ছিলো তালাবন্ধ। বাড়ির পাশে কারো কাছেই ছিলো না তাদের খোজ।অনেক কেঁদেছিলাম সেদিন কিন্তু শুনতে পাই নি আমার এই আর্তনাদ। আমিও ঢাকার শহরে চলে আসি এবং এই কম্পানিতে যোগ দেই।আজ বছর পাঁচ পরে জেগে উঠেছে সেই পূরানো স্মৃতি।ধরে রাখতে পারছি না চোখের পানি।চোখের পানি তৈলাক্ত কাগজে পরতেই তেলে-জলে মিশতে চাইলো কিন্তু সেটা কি সম্ভব বলুন।
মসজিদের আযানের ধ্বনি কানে আসতেই বাস্তবে ফিরি।শুধু একটু ঠন্ঠা পানি আর দুইটা খেজুর খেয়ে সেই দোকানে যাই যেখান থেকে ইফতারি এনে ছিলো।দোকানে এক অষ্টাদশী বালককে দেখতে পাই।তৈলাক্ত কাগজটা অষ্টাদশী বালকে দেখিয়ে বলি এই কাগজ কোথায় পেয়েছো।সে আমার দিকে তাকিয়ে বলে ভাইজান কাগজ গুলো ঐ বিল্ডিং এর চার তলায় এক ভাড়াটিয়া থাকে উনাদের থেকে এনেছি।বালকটি ঐ ডায়েরির শেষাংশ ১০-১২ পাতা হবে সেগুলো আমার দিকে এগিয়ে দেয়।হয়তো চোখের পানি দেখে বিষয়টা বুঝে নিয়েছে কষ্ট করে আর কথা খরচ করতে হয় নি।আমি বালকটির হাতের থেকে ডায়েরির শেষাংশ নেই।আমি ডায়েরির শেষাংশের পাতা গুলো একে একে পড়ি।চোখের পানি বৃষ্টির মত অনবরত ঝরতেই থাকে। ডায়েরির শেষ পাতা পড়তেই বুকটা ফেটে যেতে চাইলো। কেমন জানি দম বন্ধ হয়ে আসছে।
আচ্ছা লেখক সাহেব অনেক দিন হলো আপনার লেখা পড়ি নি।আপনি কি আমাকে নিয়ে একটাও গল্প লিখেছেন? আমার কথা কি একবারও মনে পরে না।আর লেখক সাহেব জানি আমি আমার ভালোবাসা,ভালোলাগার কথা আপনাকে বলতে পারবো না।কথা গুলো মনের অগোচরেই রয়ে গেল আর এই ডায়েরির মাঝে।কখনো বলতে পারবো না যে ভালোবাসি আপনাকে।তাই ভালোবাসাটা ডায়েরির পাতার মাঝেই সীমাবদ্ধ রাখি।ভালোবাসি আপনাকে লেখক সাবেব।এই ভালোবসা মনে লুকাইত রয়ে গেলো।বলতে পারলাম না আপনাকে।যেখানেই থাকেন ভালো থাকবেন।আর আমাকে নিয়ে একটা গল্প লিখবেন কেমন।আমি আর বেশিদিন বাঁচবো না।তাই আপানার সাথে কখনো দেখাও হবে না।আর হ্যা আজ খুব কষ্টে লেখাটা লিখলাম লেখক সাহেব।আর তো আপনাকে নিয়ে লিখতে পারবো না।জানেন খুব কষ্ট হচ্ছে আজ মনে হয় আর বেশি সময় নেই আমার হাতে।আপনি যদি কোনদিন এই ডায়েরিটা পান তবে আমার কবরের পাশে গিয়ে একবার বইলেন ভালোবাসেন আমাকে।
আমি কাঁদতে কাঁদতে ঐ বাসায় যাই গিয়েই কেমন জানি পরান টা ছ্যাত করে উঠলো। বয়স্ক এক মহিলা ধ্যাননিষ্ঠ হয়ে আছেন।আমি বাসায় প্রবেশ করে পরিচয় দিতেই চিনে নেয়।আর উনারা বলে বাবা তুমি অনেক দেরি করে ফেলেছো।উম্মে হাবিবা আমাদের মাঝে আর নেই।গত চার বছর যাবৎ ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলো।সে তোমার কথা আমাদের বলেছে কিন্তু তোমার যে কোন খোজ আমরা জানি না।আজ ১ মাস হলো সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।।।
আমি নিজেকে সামলে রাখতে পারছি না।বুকের উপর যে ৫টন পাথর চেপে আছে।কষ্টে ফুকটা ফেটে যাচ্ছে। আমি কন্না আক্রান্ত কন্ঠে বলি আমাকে একটু মেহার কবরের কাছে নিয়ে যাবেন।উনারা আমাকে কবরের কাছে নিয়ে যায়। আমি উনাদের বলি আপনারা এখানে থাকুন আমি মেহার সাথে একা একটু কথা বলবো।এই বলে আমি মেহার কবরের পাশে গিয়ে আর নিজেকে সামলে রাখতে পারি নি।চিৎকার দিয়ে বলি মেহা আমি তোমাকে ভালোবাসি।আমাকে কেন তুমি না বলে চলে গেলে।তোমাকেও আমি ভালোবাসি বলতে পারি নি।তবে তোমাকে বুঝিয়েছি আমার গল্পের মাধ্যেমে। তুমি কেন বুঝেও বলো নি তোমার ভালোবাসার কথা।
এভাবেই আমি কেঁদেই চলছি।আমার আর্তনাদ, আমার চিৎকার মেহার কান পর্যন্ত পৌছাচ্ছে কিনা না জানি না।তার পরও চিৎকার করে বললতে থাকি মেহা ভালোবাসি তোমাকে, ভালোবাসি!ভালোবাসি। তার পর আর আমার কিছু মনে নেই। আমি নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করি।পরে বুঝতে পারি আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। এরি মাঝে ৩তিন কেটে গেছে।আমি মেহা মেহা মেহা বলে আবার চিৎকার দিয়ে কাঁদতে থাকি।নিজের প্রিয় মানুষটাকে নিজের করে পাওয়া হলো না, ভালোবাসাটা মনের মাঝেই লুকাইত রয়ে গেল।
এভাবেই কিছু মানুষের ভালোবাসা লুকাইত থেকে যায়।দূর হতে শুধু মানুষটাকে ভালো বেসে যাওয়া হয় কিন্তু বলবো বলবো করে আর বলা হয়ে ওঠে না।আর রাতে ডায়েরির পাতাগুলো ভিজিয়ে দেয় চোখের জলে।থেকে যায় অনেক ভালোবসা ডায়েরির পাতার মাঝেই সীমাবদ্ধ।