ভালবাসার দাম

ভালবাসার দাম

সকাল সকাল এত চেচামেচি শুনতে কার ভালো লাগে! এই সাত সকালে আম্মু আমাকে ফুফুর বাড়ি যেতে বলতেছে। ধুর গত তিন দিন ধরে একই কথা আর শুনতে আর ভালো লাগছেনা। আগে ফুফুর বাড়ি যাওয়ার কথা বলার লাগতো না তবে সারার অত্যাচারের কারনে ফুফুর বাড়ি যাওয়ার প্রতি অনিহা জেগেছে। গত বছর ৫ম বারের মত আমাকে প্রপোজ করেছিলো, আমিও কষে একটা থাপ্পর বসিয়ে. বাসায় এসেছিলাম। যাই হোক ৭ মাস আগের ঘটনা।এতোদিনে হয়তো প্রেমের ভুত ওর ঘার থেকে নেমে গেছে তাই অনিচ্ছা সত্বেও রওনা দিলাম।

—ফুফু সারা কই?
—কই আবার ছাদে গেছে হয়তো!

শুনে অবাক হলাম বইকি! আমি ওদেরবাসায় আছি ১ ঘন্টা হয়ে গেলো এখনও আমার কাছে আসলো না!!! ছাদে গিয়ে দেখলাম উদাস মনে গোলাপ গাছটার কাছে বসে আছে যেটা ২ বছর আগে আমি লাগিয়েছিলাম। পাশে গিয়ে দাড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম, “আমার উপস্থিতিও আজকাল সবার পছন্দ নয় দুনিয়াটা এত নিষ্ঠুর হয়ে গেছে”। সারা নিরবেই দাড়িয়ে আছে। তাকায় নি পর্যন্ত! বুঝলাম রেগে আছে একটু খারাপ লাগলো। সারার রুমে বসেই ঝিমুচ্ছিলাম।

—ওই তুই আমার রুমে কি করিস! বের হ বলছি, জানিস না, permission ছাড়া মেয়েদের রুমে ঢুকতে নেই।
—এখনও রেগে আছিস?
—না
—কেবল ক্লাস টেন এ উঠলি এই বয়সে প্রেম করা উচিৎ না বুঝলি।নতুন রঙের যেদুনিয়া দেখতেছিস তা আসলে বয়সেরকারনে। বাস্তবতাটা বড়ই কঠিন।

—লেকচার বন্ধ করে বের হয়ে যা আর হ্যাঁ next টাইম আমার অনুমতি ছাড়া রুমে ঢুকবি না!! বুকটা ভারী ভারী অনুভব করলাম, ওর কাছে আমি এই রকম ব্যাবহার কখনওই আশা করিনি। যে মেয়েটা সারাদিন আমার রুমে পড়ে থাকতো সে আমাকেই তার রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলছে।

ফুফুর বাসায় আসার ৩ দিন হয়ে গেল এখন পর্যন্তও ও আমার রুমে আসেনি তো বটেই আমার সাথে কথাও বলে নাই। ফুফু যে ওর ব্যাবহার দেখে কি ভাবতেছে আল্লাহ ভালো জানেন। পরের দিন, ফুফুর কথা মতো সারাকে mস্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্যে দুজন এ একটা রিক্সায় বসেছি।যথেষ্ট দুরুত্ব বজায় রেখে বসেছে! গতবারে তোহ রিক্সায় আমাকে জড়িয়ে পর্যন্ত ধরেছিল। নাহ আমি কেনই বা এসব ভাবতেছি? আমিতো ওকে পাঁচ-পাঁচটা বার ফিরিয়ে দিয়েছি। জীবন তো কারো জন্যে থেমে থাকে না, সেতো ছুটে চলে অবিরাম তার গতিতে। হয়তোবা আজ সে অন্য কারো আকাশের ঘুড়ি।নয়তো আমার প্রতি তার আবেগ গুলোর সলিল সমাধি ঘটেছে ।

—নামবেন না?আইশা পরছি .আপামনি তো চইলা গেল। ভাবনায় ছেদ পড়ল রিক্সাচালক মামার ডাকে।
—-ফিরে চলেন মামা? বিকেল বেলা স্কুল থেকে নিয়ে আসতে গেলাম। সারা একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে বলতে আমার কাছে আসলো।

—আবির ভাইয়া এ হচ্ছে সৌরভ আমার boyfriend। বয়ফ্রেন্ড কথাটা শুনে আমার যে কি হলো।সোজা ফুফুর বাসায় এসে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে বাড়ি চলে আসলাম। ঠিকই ভাবছিলাম আজ সে অন্য কারো আকাশের ঘুড়ি। তবে আমিতো খুশিই হবার কথা, উল্টোটা যে কেনো হচ্ছে বুজতে পারছি নাহ। কেনজানি খুব খারাপ লাগছে।গভীর রাতে গেঞ্জিটা কেন জানি ভেজা ভেজা মনে হচ্ছে বুকের উপরে কেন জানি চাপ অনুভব করছি ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে দেখি সারা আমার বুকে মাথা রেখে কাদছে!! ভয়ে আম্মু করে চিৎকার দিতে গিয়ে থেমে গেলাম।স্বপ্ন হলেও এখন ভালই লাগছে।

—সারা!!?
—হুম।
—কখন এলি?
—-তুমি আসার পর।
—কেনো?
–জানিনা।
—বুকে মাথা দিয়ে কি করছিস?
—তোমার মনের সব না বলা কথা গুলো শুনছি।
—কি শুনতে পেলি?
—-শুনলাম তুমি যে আমাকে খুব ভালবাসো।
—-তাই
—–হুম।
—কিন্তু আমিতো তোকে ভালোবাসি না।
—কিহ?
—–হুম, যা তোর Bf এর কাছে যা। এখানে কি তোর?
—আমার তো একটাই Bf সেটা হলি তুই।
—তাই নাকি তাহলে এতদিন এমন করলি ক্যান?
—যাতে আমাকে মিস করিস, ভালোবাসিস তাই ইগনোর থেরাপি প্রয়োগ করছিলাম।
–তবেরে!

সারা দৌড়ে পালাতে গেলে পাড়লো না ওর হাতটা খপ করে ধরে বুকে টেনে নিলাম।হুম তোকে ভালোবেসে ফেলেছি রে পাগলী….

পরিশেষে :-সবসময় ভালবাসা দেখাতে নেই কারন তা বিরক্ততে পরিনত হতে পারে ।মাঝে মাঝে একটু দূরে গিয়ে তাকে নিজের ভালবাসার দামটা বুঝিয়ে দিতে হয় ॥

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত