নিশি আজ সকাল থেকেই কেমন যেন ছটফট করছে।এই একটু পর পর কাছে আসছে আবার দৌড় দিয়ে পাশের রুমে চলে যাচ্ছে।আবার একটু মুচকি হাসছে। কাহিনী কি? ওহ হ্যা,পরিচিত হই। আমি আদিত্য।২৫বছরের একজন পুরুষ। আইটি সেক্টরে জব করি।আর নিশি হলো আমার বিয়ে করা একমাত্র বৌ। ১বছর ৪মাস হলো আমাদের বিয়ের বয়স। যাই হোক যেটা বলছিলাম তা হলো নিশিকে আজ অনেক আলাদা রকম লাগছে।মনে হচ্ছে কিছু বলতে চাচ্ছে আবার চাপিয়েও রাখছে। এমন সময় নিশি এসে গলা জড়িয়ে ধরে বসলো।
– এই কি হয়েছে তোমার বলতো! (আমি)
– কই,কিছুনা তো।কিছুই না। (নিশি)
-হ্যা তা তো দেখতেই পাচ্ছি।কিছু লাগবে? বলে দাও নিয়ে আসবো।
– না গো কিছুই লাগবেনা।এই শুনোনা!
-হুম বলো।
– আজ অফিসে না গেলে হয়না?
-কি বলো? অফিসে না গেলে আমার কাজ করবে কে?
– তুমিই করবা।কাল কইরো।
– পাগল হইছো তুমি।নাস্তা দাও,খেয়ে অফিসে যাবো।
একটা মুখ ভেংচি দিয়ে চলে গেলেন মহারানী নাস্তা বানাতে। নাস্তা খেয়ে অফিসে যাবো এমন সময় বৌ আবার হাত টেনে ধরেছে।
– এই শুনোনা। (নিশি)
– বলেন বৌজান।
– আজ একটু তাড়াতাড়ি আসবা।আর আসার সময় ২টা গোলাপফুল আনবা।ঠিকাছে?
– উমমম!আচ্ছা আনবো।
বেরিয়ে এসে হাটছি আর ভাবছি মেয়েটার হলো টা কি? গত দেড় বছরে একদিন ও তো বলেনি আগে আগে বাসায় যেতে,ফুলও নিতে বলেনি।যদিও আমি আগে প্রায়ই ফুল নিয়ে দিতাম ওকে কিন্তু নিজে থেকে এই প্রথম চাইলো।
যাইহোক,অফিস শেষ করে ৫টার মধ্যে বের হলাম।মার্কেটের সামনে ফুলের দোকান থেকে ফুল কিনলাম ২টা।
বাসায় এসে নক করতেই দরজা খুলে দিলো নিশি,যেন আমার অপেক্ষাতেই ছিলো।
– এই নেও জানু তোমার ফুল।
– উহহু এভাবে না!হাটু গেড়ে বসে বলো।
– আচ্ছা।অনেক ভালোবাসি আপনাকে বৌজান। (হাটু গেড়ে বললাম আমি)
– আহহা,থ্যাংকস মাই ডিয়ার হাসব্যেন্ড।
একটু আধটু রোমান্টিকতা শেষ করে ড্রেস চেঞ্জ করতে যাবো এমন সময় নিশি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
কানের কাছে মুখ নিয়ে এসেছে।নিশ্বাস এর অস্তিত্ব টের পাচ্ছিলাম। ফিসফিস করে বললো – “আপনি বাবা হতে চলেছেন মিস্টার আদিত্য” কথাটা শুনে যেন পুরো মাথা থেকে শরীরের বাকি অংশে একটা আনন্দের শিতল রক্তস্রোত বয়ে গেলো। সাথেসাথেই ঘুরে নিশির সামনে দাড়ালাম।মেয়েটা এবার কিছুটা লজ্জা পেয়েছে।আলতো করে মাথাটা আমার বুকে ঠেকিয়ে রেখেছে। খুশিতে যেন আর বাধঁ মানছেনা আমার।খুব করে জড়িয়ে ধরেছিলাম নিশিকে। আলতো করে ওর গালদুটো ধরে কপালে একটা চুমু একেঁ দিলাম। ইয়াহুউউউউ! আমি বাবা হতে চলেছি। আমার খুশি দেখে নিশি রীতিমত আনন্দে আত্বহারা। সত্যিই বাবা হওয়ার মতো আনন্দের আর হয়তো কিছুই হতে পারেনা।খুশিতেই চোখের কোনে জলবিন্দু চলে এসেছিলো আমার। একটু পরে ড্রেস চেঞ্জ করে আবার শার্ট প্যান্ট পরে নিলাম।
– একি? একটু আগে না অফিস থেকে আসলা? আবার কই যাচ্ছো?
– আমি একা না,তুমিও যাচ্ছো।ওই আমার পছন্দের নীল শাড়ীটা পরে রেডি হও তো,সুন্দর করে কাজল দিও।আজ আমরা বাইরে খাবো।তোমায় নিয়ে ঘুরবো।
– আরে কিন্তু কেন? রান্না করা আছে তো।
-উহু ফ্রিজে রাখো।আপাতত রেডি হও।
– আচ্ছা। (বেশ কিছুটা খুশি হয়ে)
মেয়েটা শাড়ি পরেছে।চোখের হাল্কা কাজল আর কপালের ছোট টিপটা যেন আমাকে ঘায়েল করার জন্য যথেষ্ট ছিলো।আমি অপলক তাকিয়েই ছিলাম,এটা দেখে নিশি কিছুটা লজ্জা পেয়ে বললো
“এই চলো,অনেক দেখছো বৌকে”
“হুম চলো বৌজান”
সেদিন রাতে অনেক ঘুরলাম।রিক্সায় ঘুরেছিলাম পুরো শহড়।মেয়েটা আজ অনেক খুশি কারন বিয়ের পর এভাবে বেশি একটা বের হওয়া হয়নি। আমার হাতটা ধরে কাধে হেলান দিয়ে বসে ছিলো পুরোটা সময়। রাতে বাইরে ডিনার করেই বাসায় আসি। পরেরদিন অফিসে গিয়ে সবাইকে একটা ট্রিট দেই। সবাই নানাভাবে অভিনন্দন জানালো। চিন্তা করলাম এখন থেকে একটু আগে আগেই বাসায় যাবো। এই সময় নিশির অলওয়েজ আমাকে পাশে দরকার। কয়টা গোলাপ আর কিছু বেবির ছবি নিয়ে গেলাম। শুনেছিলাম বেবির ছবি দেখলে নাকি বেবিও সুন্দর হয়।
ফুলগুলো আর বেবির ছবিগুলো পেয়ে নিশি আমার বেজায় খুশি। মেয়েটার মায়াবী চেহারার মায়াটা যেন দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। দিনগুলো অনেক ভালো যাচ্ছে। মেয়েটার অনেক খেয়াল রাখি আমি।অফিসে থাকলেও পিয়ন কে পাঠিয়ে দেই কিছু লাগলে। বাসায় গেলে নিশিকে অনেক্ষন বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখি,আলতো করে কপালে চুমু দেই।এগুলো নাকি বেবির উপর একটা পজিটিভ ইফেক্ট আনে। এভাবে ৬মাস কেটে গিয়েছে। বৌ আমার একেবারে গোলগাল হয়ে গেছে।আমি ওকে আয়নার সামনে গিয়ে বলতাম,ইসস আমার কত্ত সুন্দর বৌটা কত্ত মোটা হয়ে গেছে।কিল ঘুসি যা পরার তখনই পরতো। অফিস ছুটি নিয়েছিলাম ২মাসের। দেখতে দেখতে বেবি আসার সময় হয়ে গেলো।
দিনটা ছিলো রবিবার,আমি টেনশনে প্রায় মুখ থেকে হার্ট বেরিয়ে আসবে এমন অবস্থা।নিশিকে নেওয়া হয়েছে অপারেশন থিয়েটার এ। আমার দুইটা ফ্রেন্ড এসেছে পাশে থাকার জন্য। একটু পরে ওটির বাতি নিভলো। নার্স টাওয়েলে পেচিয়ে আমার জান প্রান কলিজাটাকে নিয়ে আসছে। “অভিনন্দন মিঃ আদিত্য,আপনার মেয়ে হয়েছে” কথাটা শুনেই যেন মনে হচ্ছিলো নার্সকে নিয়ে খুশিতে একটা ড্যান্স দেই। এতোটা খুশি হয়েছিলাম বলে বুঝাতে পারবোনা। নিজের মেয়েকে কোলে নেওয়াতে যে এ কেমন এক অদ্ভুত ভালোলাগা সেটা কাউকে বলে বুঝানো যাবেনা। মেয়েটা আমার চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আম্মাজানের কপালে ছোট্ট করে চুমু একেঁ দিয়ে পকেট থেকে স্বর্নের ব্রেসলেট টা পড়িয়ে দিলাম একটুখানি হাতটায়।
-“নার্স আমার বৌ কই?ওর সাথে দেখা করবো”
-“আসুন আমার সাথে”
নার্সের সাথে চলে গেলাম নিশির কাছে। নিশি দূর থেকে দেখেই মনে হচ্ছে লাফ দিয়ে কোলে তুলে নিবে বেবিকে। ওর সব ক্লান্তি যেন আমায় আর বেবিকে দেখেই শেষ। নিশির কাছে গিয়ে ওর কোলে বেবিকে দিয়ে আলতো করে চুমু দিলাম নিশিকে। মেয়েটা আমার তখনো এদিকে ওদিকে তাকিয়ে সব বুঝার চেষ্টা করছে যে সে কই এলো। আমি আর নিশি দুজনেই বাবুকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। খুশিতেই চোখ থেকে সেদিনের মতো আবার একফোঁটা আনন্দ অশ্রু বেড়িয়ে এলো। নিশি এবার আমার বুকে মাথা দিয়ে বললো
-“এইযে মিস্টার আদিত্য,ছুটি আর ১মাস বাড়িয়ে নিন।এতোদিন একজনের সেবা করেছেন,আজ থেকে দুজনের সেবা করবেন”..