আজ আমি জেরিনের সাথে ব্রেকাপ করে আসলাম।এর প্রধান কারন হলো ও আমাকে অতিরিক্ত সন্দেহ করে।
রিলেশনে সন্দেহ থাকাটা ভাল কিন্তু অতিরিক্ত সন্দেহ ভাল না।তাই আমি ব্রেকাপ করতে বাধ্য হলাম। বেশ কিছুদিন ধরে আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম যার কারনে ওর সাথে ঠিকমত যোগাযোগ রাখতে পারি নি। আর এতে ও আমাকে সন্দেহ করল। কাল জেরিন আমাকে ফোন দিয়ে বলল
আমিঃ হে জেরিন বল
জেরিনঃ ফোন ধরতে এতক্ষন লাগে।
আমিঃ আসলে একটু কাজ করছিলাম আর ফোন সাইলেন্ট ছিল।
জেরিনঃ মিথ্যা বলা লাগবে না কার সাথে কথা বলছিলে সেটা বল
আমিঃ কি বলছ এইসব আমি আবার কার সাথে কথা বলব
জেরিনঃ আমাকে ভাল লাগে না বললেই পার এমন এভোয়েড করার কি আছে
আমিঃ দেখ জেরিন এসব কিছুই না তুমি একটু বেশি বুঝছ
জেরিনঃ ও এখন আমি বেশি বুঝি তাই না।আমার সাথে তো এতদিন থেকেছ এখন আর ভাল লাগে না পুরোনো হয়ে গেছি তাই না
আমিঃ দেখ সব কিছুর একটা সিমা থাকা দরকার আর তুমি কিছু না জেনে সেই সিমা অতিক্রম করছ।
জেরিনঃ ও আমার কথা তো এখন তোমার ভাল লাগবে না তাই না এখন তো নতুন কাউকে পেয়েছ।
আমিঃ তোমার সাথে এখন আমার এই বিষয় নিয়ে ঝগরা করার ইচ্ছা নেই বায়।
একথা বলে আমি ফোন রেখে দিয়েছিলাম। আপনারাই বলেন সবসময় যদি এত সন্দেহ করে তাহলে কি রিলেশন কন্টিনিউ করা যায়। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমি ওর সাথে ব্রেকাপ করব। তো আজকে জেরিনকে ফোন দিয়ে বললাম নদীর পারে আসতে। ওকে নদীর পারে আসতে বলায় মেয়েটা মনেহয় একটু খুশি হয়েছিল। তারপর ও আসার পর আমি ওকে বললাম
আমিঃ জেরিন আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই
জেরিনঃ হুম বল
আমিঃ দেখ কথাটা হলো
জেরিনঃ হুম বল থেমে গেলে কেন
আমিঃ আমি তোমার সাথে আর রিলেশন রাখতে চাই না
জেরিনঃ কি বলছ এইসব।তুমি নিশ্চই ফান করছ
আমিঃ না আমি সিরিয়াস।
জেরিনঃ কিন্তু আমার অপরাধ টা কি(হাল্কা কান্না করে)
আমিঃ আসলে কোন কিছুই অতিরিক্ত ভাল না।
জেরিনঃ দেখ আমি আর কোনদিন তোমাকে সন্দেহ করব না তবুও তুমি এইকথা বলো না(পুরো কান্না করে)
আমিঃ দেখ আমি এতকিছু বুঝি না।
জেরিনঃ ও বুঝেছি আমি তোমাকে হাত ধরতে দেই না জড়িয়ে ধরি না তাই এমন করছ।
আমিঃ জেরিন তুমি ভাল করেই জান আমি ওরকম ছেলে না। আর আমারর কখনও ইচ্ছাও ছিল না বিয়ের আগে তোমার হাত ধরা জরিয়ে ধরা।
জেরিনঃ তাহলে।
আমিঃ তুমি আমাকে যে পরিমানে সন্দেহ কর আমি আর নিতে পারছি না।
জেরিনঃ আমি আর তোমাকে সন্দেহ করব না তবুও তুমি এমনটা করো না।
আমিঃ আমার পক্ষে এই রিলেশন রাখা সম্ভব না। ভাল থেকো বায়।
একথা বলে আমি চলে আসলাম।কথাগুলো বলতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল তবুও বলে ফেল্লাম।এত সন্দেহ আমি আর নিতে পারছিলাম না।এভাবে জেরিনকে ছারা ভালভাবেই দিন কাটছে কিন্তু প্রতিদিন জেরিনের সন্দেহ বাক্যগুলো খুব মিছ করছিলাম। আজ তিনমাস ধরে জেরিনের সাথে কোন যোগাযোগ নেই। হয়তো ইগোর কারনে আমি যোগাযোগ করিনি আবার জেরিন ও করে নি।
আমি জয় বাবা মায়ের দুইমাএ সন্তান। মানে আমার একটি বড়ভাই আছে। আর যার কথা বলছিলাম সে জেরিন আমার গার্লফ্রেন্ড বর্তমানে ex। বেশ কিছুদিন ধরে আম্মু বিয়ের জন্য খুব চাপ দিচ্ছে।আমি আম্মুকে কিছুতেই বোজাতে পারছি না যে আমি এখন বিয়ে করব না। তারপর ভাইয়া ভাবি আর আম্মুর জোরাজুরিতে আজ মেয়ে দেখতে গেলাম। তো আমি বসে আছি পাশে ভাইয়া ভাবি। একটুপর মেয়েকে আনা হলো।মেয়ে মোটামুটি সুন্দর কিন্তু জেরিনের মত সুন্দর না। মেয়েকে দেখেই আমার জেরিনের কথা মনে পরে গেল। তাই আমি জেরিনের ভাবনায় পরে গেলাম।হঠাৎ ভাবি কথায় বাস্তবে আসলাম।
ভাবি আমার কানে কানে বলল
ভাবিঃ মেয়ে পছন্দ হয়েছে
আমিঃ না ভাবি।
ভাবিঃ কি বল মেয়েতো ভালই সুন্দর।
আমিঃ না আমার কাছে ভাল লাগে নি। বাসায় জাওয়ার ব্যবস্থা কর। তারপর আর কি বাসায় চলে এলাম।
বাসায় আসার পর ভাবি আমাকে বলল
ভাবিঃ মেয়েটা কত সুন্দর আর তোমার কাছে ভাল লাগল না
আমিঃ না ভাবি।
ভাবিঃ তা দেবরজি আপনার কি রকম মেয়ে পছন্দ।
আমিঃ এমন একটা মেয়ে যার চোখগুলো টানা টানা মানে হরিণি চোখ। হাসলে গালে টোল পরে।যার মুখে সবসময় হাসি খুসি লেগে থাকে আর কিছুটা তোমার মত।
ভাবিঃ কি বলিস এমন মেয়ে পাব কোথায়।
আমিঃ এজন্যইতো বলি যে এখন বিয়ে করার দরকার নেই।
ভাবিঃ চুপ একদম মাইর খাবি।
আমিঃ তোমাদের যেটা ইচ্ছা কর আমি গেলাম। এভাবে একসপ্তাহ ভালই গেল কোন বিয়ের কথা নেই কিন্তু গতকাল রাতে ভাবি আমাকে বলল
ভাবিঃ জয় শোন
আমিঃ হুম বল
ভাবিঃ কাল মেয়ে দেখতে যাব।
আমিঃ আমি বুঝলাম না আমার বিয়ের জন্য তুমি আর ভাইয়া এত উঠেপরে লেগেছ কেন।
ভাবিঃ কারন তুমি যে আমাদের রিলেশন থেকে শুরু করে বিয়ে পর্যন্ত সব ঠিক করে দিয়েছ।
আমিঃ তাই বলে এখন তার ঋন শোধ করছ।
ভাবিঃ ছি কি বলছ। জয় এখন কিন্তু তুই আমার দেবর না আমার ছোট ভাই তাই আমি আমার ভাইকে বিয়ে করাব তাতে তোর সমস্যা কোথায়।
আমিঃ হুম হয়েছে এবার যাও।
ভাবিঃ হুম যাচ্ছি আর মনে যেন থাকে কাল মেয়ে দেখতে যাচ্ছি।
পরদিন আমরা মেয়ে দেখতে গেলাম।কিন্তু যে বারিতে গেলাম সেই বাড়ি জেরিনদের। তার মানে কি আমি জেরিনকে দেখতে এসেছি। যখন মেয়েকে আনা হলো তখন বুঝতে পারলাম যে আমি জেরনকেই দেখতে এসেছি। আমার মনটা হঠাৎ ভাল হয়ে গেল। জেরিন এখনও আমাকে দেখেনি।তারপর ও যখন আমার দিকে তাকাল তখন মনে হয় ভুত দেখেছে এমন ভাবে আমার দিকে তাকাল।তারপর ভাবি আমাকে একটা খোচা দিল আমি একটা মুচকি হাসি দিলাম। ভাবি মনেহয় বুঝতে পেরেছে যে আমার মেয়ে পছন্দ হয়েছে তাই ভাবি সবার উদ্দেশ্যে বলল ওদের দুজনকে আলাদা কথা বলতে দেয়া দরকার সবাই সম্মতি জানাল তারপর জেরিন আমাকে ওর রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দিল।
জেরিনঃ তুমি এখানে এসেছ কেন(রাগী মুডে)
আমিঃ কেন মেয়ে দেখতে।
জেরিনঃ তা এই পর্যন্ত কয়টা মেয়ে দেখেছ।
আমিঃ তোমাকে নিয়ে দুইটা।
জেরিনঃ ওহ।তা বাহিরে গিয়ে কি বলবে
আমিঃ বলব যে
জেরিনঃ বলবে আমার মেয়ে পছন্দ হয় নি।
আমিঃ হুম এটাই বলব তোমাকেতো আমি বিয়ে করব না একথা বলে জেরিনের দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছে।তারপর আমি দরজা খুলে হাসতে হাসতে বের হলাম সবাই বুঝে গেল যে মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে তাই সবাই মিলে আমাদের বিয়ে ঠিক করে ফেল্ল। রাতে আমার রুমে বসে লেপটপ এ কাজ করছিলাম তখনই জেরিনের নাম্বার থেকে কল আসল।
আমিঃ হেল।
জেরিনঃ ঐ তোকে না বললাম বলবি আমাকে তোর পছন্দ হয়নি।
আমিঃ হুম বলেছ। আর আমার পছন্দ আমার কাছে তোমার কথায় হবে নাকি
জেরিনঃ তুই বিয়েটা ভেঙে দে।
আমিঃ পারব না। আর তোমার দরকার হলে তুমি ভেঙে দেও।
তারপর জেরিন রাগে কল কেটে দিল।আমি ওর কথা শুনে হাসছি। অল্পের জন্য পাগলীটাকে হারিয়ে ফেলেছিলাম আমি ওকে আর হারাতে চাই না।পরদিন জেরিন আমাকে ফোন দিয়ে নদীর পারে আসতে বলল। আমিও ঠিকমত পৌছে গেলাম। গিয়ে দেখি জেরিন বসে আছে।
আমিঃ হাই
জেরিনঃ
আমিঃ তা হঠাৎ এখানে ডাকলে কেন।
জেরিনঃ দেখ আমি তোমাকে ভালভাবে বলছি আমি তোমাকে বিয়ে করব না তুমি বিয়েটা ভেঙে দাও। ওর একথা শুনে আমি ইচ্ছে করে একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।আর তখনি জেরিন বলল
জেরিনঃ এই আমি তোকে কিছু বলছি আর তুই ঐ মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছস। কয়দিনপর আমাকে বিয়ে করবিতুই আমার দিকে তাকিয়ে থাকবি তানা তুই ঐ মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছিস।
আমিঃ তো কি করব কথায় কথায় বল বিয়ে ভেঙে দেয়ার জন্য।
জেরিনঃ তাই বলে তুমি অন্য মেয়ের দিকে তাকাবে।
আমি কোন কথা বললাম না।তাই জেরিন রাগ করে চলে গেল। আমি জানি জেরিন আমাকে এখনও অনেক ভালবাসে। এভাবেই যাচ্ছিল দিন।এখন প্রতিদিনই জেরিনের সাথে আমার ঝগরা হয় আর ঝগরার মূল কারন হলো সন্দেহ। আস্তে আস্তে আমাদের বিয়ের দিন ঘনিয়ে এল। আজ আমাদের বিয়ে।তারপর বিয়েও হয়ে গেল। এখন আমি দারিয়ে আছি বাশোর ঘরের দরজার সামনে। আমার একটু একটু ভয় করছে। তারপর সকল ভয়কে জয় করে দড়জা ঠেলে ভিতরে ঢুকলাম। আমি ঢোকা মাএই জেরিন আমাকে এসে সালাম করল।আমি ওকে উঠিয়ে জরিয়ে ধরা মাএই জেরিন আমাকে বলল
জেরিনঃ এই একদম আমাকে জরিয়ে ধরবে না।
আমিঃ কেন
জেরিনঃ এতক্ষন কই ছিলে।
আমিঃ কেন বাইরে।
জেরিনঃ কার সাথে টাঙ্কি মারছিলা বল আসতে এত দেরি হল কেন।
আমিঃ তুমি এখনও আমাকে সন্দেহ কর। এই সন্দেহের জন্য কতকিছু হল তাও তোমার সন্দেহ কমল না।
জেরিনঃ ঐ আমি আমার স্বামীকে সন্দেহ করবই।
আমিঃ ওহ তাই নাকি।
জেরিনঃ হুম। আর ভালবাসার মানুষকেই সন্দেহ করা যায় অন্য কাউকে নয় বুঝলে।
আমিঃ হুম।
তারপর আমি জেরিনকে আমার বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলাম। এখন জেরিন আমার বুকে শুয়ে আছে। আমি জেরিনকে বললাম
আমিঃ তোমার সাথে ব্রেকাপ করায় তুমি খুব কষ্ট পেয়েছ তাই না
জেরিনঃ হুম।জান আমার সেদিন কত খারাপ লেগেছিল। আমাকে আর কখনও ছেরে যাবে নাতো
আমিঃ না পাগলী তোমাকে আমি কখনও ছেরে যাব না। তারপর জেরিন আমাকে বলল
জেরিনঃ আমাদের এখন কি করার কথা ছিল
আমিঃ ছাদে ওঠার।
জেরিনঃ তাহলে চল
আমিঃ হুম চল
জেরিনঃ ঐ আমিকি হেটে যাব নাকি
আমিঃ নাতো তুমি তোমার জামাইটার কোলে উঠে যাবে।
জেরিনঃ তাহলে কোলে নেও
আমিঃ হুম পাগলী নিচ্ছি।
তারপর আমি জেরিনকে কোলে করে ছাদে নিয়ে গেলাম। আসলে আমাদের ব্রেকাপের আগের থেকেই পরিকল্পানা করা ছিল আমরা বাশোর রাত কিভাবে কাটাব। এখন জেরিন আমার কোলে বসে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে আর আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। তারপর জেরিন আমাকে বলল
জেরিনঃ জান কতগুলা ছেলেকে আমার ভাগাতে হয়েছে তোমার জন্য।
আমিঃ তা কতগুলা ভাগিয়েছ
জেরিনঃ দশটার মত হবে।
আমিঃ তা কি বলে ভাগিয়েছ
জেরিনঃ বলেছি আমি পেগন্যান্ট
আমিঃ কিহহ।
জেরিনঃ হুম শুধু তোমার জন্য আমি এরকম করেছি।
আমিঃ আই লাভ ইউ বাবুনি
জেরিনঃ লাভ ইউ টু।
আর কিছুক্ষন গল্প করে আমারা নিচে চলে এলাম। তারপর লাইট অফ করে দিয়ে আমি জেরিনের কাছে চলে এলাম। ওর নিস্বাস আর আমার নিস্বাস এক হয়ে যাচ্ছে। তারপরেরটুকু আর বলতে পারলাম না। কারন ঐ অভিঞ্জতা নেই।
সকালে জেরিনের ডাকে ঘুম ভাঙল। ও এইমাএ গোসল করে এসেছে ওকে খুব সুন্দর লাগছে। আমার চোখ ওর চোখে পরতেই ও মিষ্টি একটা হাসি দিল আর ওর দুইগালে টোল পরল আমি আর নিজেকে সামলাতে না পেরে ওকে একটানে আমার বুকে নিয়ে এলাম।
জেরিনঃ এই কি করছ।
আমিঃ আমার বউটাকে আদর করছি।
জেরিনঃ এই এখন ছার অনেক বেলা হয়ে গেছে।
তারপর আমি ওর যেখানে টোল পরে সেখানে দুটা চুমু খেয়ে ওকে ছেরে দিলাম। তারপর উঠে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। এখন আমরা দুজন দুজনকে আগের চেয়ে অনেক বেশি ভালবাসি। আর জেরিন আমাকে আগের চেয়ে বেশি সন্দেহ করে। ওকে এখন আমি আর ছারতেও পারি না। কারন পাগলীটা আমার অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। ভাল থাকুক ভালবাসা।সবাই ভাল থাকবেন আর আমার জন্য দোয়া করবেন।
সমাপ্ত