প্রতিদিনেরমত আজও কলেজ থেকে একা একা বাড়ির দিকে পা বারিয়ে চলছি আর নিশির কথা মনে মনে ভাবছি!আজ যদি আমার সঙ্গে নিশি থাকত, কত হাসি ঠাট্টা, গল্প করে করে বাড়ি যেতাম। হ্যা নিশি, আমার চাচাত বোন।
আমরা ক্লাস ওয়ান থেকে এই পর্যন্ত একসাথে পড়ালেখা করে আসছি কিন্তু গত কয়েক দিন আগে (পরিক্ষার পর)ও আমায় একা রেখে চলে যায় অষ্ট্রলিয়া ডাক্তারি পড়তে, চাচা(নিশির বাবা)সম্পূর্ণ ভাবে নিষেধ দিছেন যাতে কোনো ধরনের ইন্টারনেট,মোবাইল ইউজ না করে আর পড়ালেখায় মন দেয়,যোগাযোগ করতে হলে ওর খালামনির কাছে যেন যায়(নিশির খালামনিও সেই দেশে)।
নিশির জন্য আমার মনে একটু একটু করে বিশাল পরিমাণ জায়গা তৈরি হয়েছিলো কিন্তু সেই জায়গার মানুষইত চলে গেছে জায়গাটা ছেড়ে। আমার মনের মাঝে এখন অনেক প্রশ্ন ঊকি ঝুকি, ও কি আমার সাথে যোগাযোগ রাখবে? ওকি আমার হবে?আমিত আমার মনের না বলা কথা তাকে জানাতে পারিনি। আমি কি তাকে পাব? নিশিত ডাক্তার হবে কত ভালো ভালো সম্মন্দ আসবে, তখন কি আর আমার কথা ভাববে? এসব ভাবতে ভাবতে বাড়িতে চলে আসলাম। অনেক খিদা পেয়েছে,ফ্রেস হয়ে খেতে বসলাম। খাওয়া দাওয়া শেষে বিছানায় গিয়ে শরির এলিয়ে দিলাম।মনে মনে ঠিক করলাম কাল আর কলেজে যাব না।
— আশরাফ,আশরাফ উঠ।
— ওহ,
— উঠ ঘুম থেকে,ভাত খাবি আয়।
— আসছি,
কত কল্পনা কত কিছু ভেবে ভেবে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি নিজেই জানি না।মা এসে ডেকে গেছেন ভাত খাবার জন্য কিন্তু এখন খেতে ইচ্ছা করছে না, তবুও খেতে হবে মা আবার অনেক রাগি। খাবার খেয়ে নিজের ছোট্ট একটি বাটম মোবাইল হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ উল্টাপাল্টা টিপাটিপি করলাম। আসলেই আমার মোবাইল ছোট্ট। আহ!আগে কীভাবে সময় অতি বাহিত হত নিজেই জানতাম না,হাসি গল্প করে। আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পরলাম, ফজরের সময় ঘুম থেকে উঠে পাঞ্জাবি গায়ে দিয়ে মসজিদের রাস্তায় হাটা দিলাম, উদ্দেশ্য মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করা। পথেই পেলাম ইরহান কে (নিশির পর আমার একমাত্র বন্ধু)সেও নামাজের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে। আমি সালাম দিলাম,
— আসসালামু ওয়ালাইকুম।
— ওয়ালাইকুম আসসালাম,আশরাফ?
— হুম, কেমন আছিস?
— আলহামদুলিল্লাহ, তুই।
— আমিও।
যেতে, যেতে, এসব কথোপকথন করে মসজিদে পৌছে গেলাম। নামাজ পরে মসজিদেই বসে রইলাম, ইমাম হুজুরের সাথে। আস্তে আস্তে মকতবে ছাত্রছাত্রী আসতে লাগল, কিছুক্ষণ পর তেলাওয়াত এর শব্দে চারদিক ভরে উঠল।আমি বসেবসে শুনতে লাগলাম,কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে বাড়ির দিকে রয়ানা হলাম। বাড়িতে এসে হালকা নাস্তা করে, বারান্দার চেয়ারে গিয়ে বসলাম,আমার মুবাইলটা বেজে উঠল, হাতে নিয়ে দেখি বিদেশি নম্বার। রিসিভ করলাম,অপাশ থেকে পরিচিত একটা মেয়েলি কন্ঠে ভেসে এলো অর্থাৎ নিশির কন্ঠে,
— আসসালামু ওয়ালাইকুম।
— ওয়ালাইকুম আসসালাম।
— কেমন আছিস?
— ভালো নেই রে, তুই?
–কি করে ভালো থাকি বল?এত দিন পার করেছি তর সাথে থেকে, হাসি, মজা, গল্প করে কিভাবে সময় অতিবাহিত হত নিজেই জানতাম না, আর এখন,,(নিশি)
— আর এখন কী?
— তুই বুঝতে পারিস না,
— ,হুম।
— কী হুম?
— আচ্ছা, এখন বল কল করলি কীভাবে?
— লুকিয়ে, আমি আর পারব নারে কল করতে।
— কেন?
— তুই জানিসিত কি চাপে আছি,বাড়িতে যোগাযোগ করতে হলে খালামনি।
— অহ,
— ভালো থাকিস, নিজের খেয়াল রাখিস!
— হুম তুইও,আর শুন ভুলিস না কিন্তু আমাকে।
— আরে কি বলিস???
— ওহ,সরি।
— হুম,রাখি খালামনি দেখলে খবর আছে।
–,,,,,,,,, ওকে!
কানের কাছ থেকে মুবাইলটা সরাতে মন চাইছিলো না! কি করব?সরাতেত হবেই। দেখতে দেখতে দিন অতিবাহিত হতে লাগল। আমিও নিজেকে ঠিকমত পরিচালনা করার চেস্টা করিতে লাগিলাম। একদিন সকালে ঘুমিয়ে আছি, এমন সময় মা এসে ডাকাডাকি শুরু করলেন।
— আশরাফ ঘুম থেকে উঠ।
— ওম,,
— উঠ,তর চাচা আর চাচির অষ্টলিয়া যাবার কাজ হয়ে গেছে,আজ রাতে চলে যাবেন।
— কী????
— হুম, ফ্রেস হয়ে বাজারে যা।
মনটা কেমন যেন লাফিয়ে উঠল,নিশির কাছে ওর বাবা মা চলে যাবেন(চাচা চাচি)। অদ্ভুত এক হাসি ফুটে উঠল আমার মুখে! আমি কী পাব আবারো সেই হাসি মাখা দিন গুলা ফিরে?আহ! বিছানে ছেরে উঠে ফ্রেস হয়ে বাজার কাজ শেষ করলাম। রাতে চাচাকে বিদায় দিলাম। বাড়িতে ফিরে এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে চলে গেলাম ছাদের এক কোণে। একএক করে পুরোনো দিন গুলার কথা ভাবি আর কালো ধুয়া উড়াই। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি তারাতার মেলা। একদিন,দু’দিন, সপ্তাহ, মাস করেকরে বছর যায়। মা বাবার সাথে চাচাচাচির কথা হয় কিন্তু আমার সাথে না,হঠাৎ সামান্য কথা হয়। নিশির সাথেত কথা, সেই যে বলে ছিলাম আর কথা বলা হয়নি।
নিজেকে ঠিক ও সাভাবিক রাখার চেস্টা করে চলে,এক সময় মানিয়ে নিয়েছি,কিন্তু নিশির কথা পারিনা ভুলতে!। সময়ত সময়ের মতই এগিয়ে চলছে। নিশি চলে যাওয়ার পর আমি একটা নিত্যদিনের সঙ্গি পেয়েছি ‘নিকোটিন। প্রতিদিনের জন্যই এটাকে আমার কাছে অতি আপন মনেহয়। আমি নিজেই জানি না, আমি নিশিকে কী পাব! কয়েক বছর পর, আমি এখন পড়ালেখা শেষ করে,মোটামুটি ভালো একটা চাকরি করি। কোনো একদিন বিকেল বেলা,বসে আছি একা এক নদীর তীরে,এমন সময় উঠল বেজে, ক্রিং ক্রিং,কল আসছে,দেখি মোবাইল বের করে কে দিছে কল। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি ইরহান কল দিছে।
— হ্যালো
— আশরাফ?
— হুম।
— শুন, আমি একটা কাজে রংপুর আসছি।
— আমাকে বলে গেলি না?
— জরুরি ছিলো তাই তাড়াতাড়ি আসতে হইছে বলার সময় পাইনি।
— আচ্ছা, এখন কী?
— দোস্ত!
— যা বলবার সোজা বল।
— তুই কী রংপুর আসতে পারবি?
— হ্রামি আমি কী বাচ্চা ছেলে?কী জন্য বল?
— আমার একটা জরুরি কাজে।
— আমার অফিস কে করবে?
— ছুটি নে।
— আমি কি কাজ করব গিয়ে?
— আসলেই দেখবি।
— আচ্ছা, দেখি।
— ওকে।
টুট, অফিসে কাজের চাপ অল্প,তাই ছুটি মিলবে।দেখি বাড়িতে গিয়ে মাকে বলে। বাড়ির দিকে পা’বাড়ালাম, নিশির কথা মনে পড়েছে। ওর কথা ভাবতে ভাবতে বাড়িতে পৌছে গেলাম। গিয়ে ফ্রেস হয়ে মার কাছে গেলাম।
— মা।
— বল
— ইরহান কল করে বলেছে ওর একটা কাজে আমাকে রংপুর যেতে,সেও রংপুর।
— কখন?
— আজ।
— আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফিরিস,সাত দিন পর তর চাচারা দেশে আসতাছেন।
— সত্যি?
— হুম, আর নিশি একটা হসপিটালে জয়েন করবে কিছু দিনের জন্য।
— আচ্ছা।
বলে সরে আসলাম। নিশি ডাক্তার হয়ে গেছে। আমার কথা কী ওর মনে আছে! আল্লাহ জানেন। আমি দেখি বসকে কল করে ছুটি নেওয়া,যায় কিনা। দিলাম কল। অনেক কথা বলে কাজ হয়ে গেছে, পনেরো দিনের ছুটি পেয়েছি।
রাতে সবগোছিয়ে ইরহানকে কল করে রাতেই রওয়ানা দিলাম রংপুরের দিকে। রংপুর গিয়ে দেখি তেমন কাজ নয়, সামান্য কিন্তু ইরহানের পক্ষে একা সম্ভব ছিলো না। দুই দিনেই সমাধান আরো দুই দিন, ইরহানের এক আত্মিয়ের বাসায় থাকলাম, এরপর বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম।দুই বন্ধু একসাথে গাড়ীতে উঠলাম। নির্দিষ্ট সময়ে গাড়ি চলতে শুরু করল। আহ! ভালোই লাগছে,জানালার পাশে বসায়। হঠাৎ সামন দিয়ে আসা আরেকটা গাড়ীকে পাশ করতে গিয়ে আমাদের গাড়ী রাস্তার পাসদিয়ে উল্টে পরে যায়।তারপর আর কিছু আমার মনেনেই,জ্ঞান হারাই। এরপর যখন চোখ খুলি চারদিকে তাকিয়ে দেখে, নিজেকে হাসপাতালে মা বাবা পাশে বসে কাঁদছেন।আমি বললাম,
— মা.. চমকিয়ে উলটলেন মা বাবা, কান্নার মাঝে হালকা হাসি ফুটে উটল তাদের মুখে।
— এখন কেমন লাগছে বাবা। মা কেঁদে কেঁদে বললেন!
— এখন ভালো লাগছে, তাছারা আমার কিছু হবেনা মা,কেঁদো না তুমরা।
— আচ্ছা,আর শুনো সামান্যের জন্য তুমার হয় নি কিছু শুধু ডান হাত আর ডান পায়ে আগাত পেয়েছো হালকা মাথায়।(বাবা)
— বাবা ইরহান কেমন আছে?
— ইরহানও তুমারমত আগাত পেয়েছে। এখন মোটামুটি ভালো।
— আলহামদুলিল্লাহ।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে আমায় ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে গেলে। আমিও ঘুমিয়ে গেলাম আস্তে আস্তে। যখন ঘুম ভাংল চারদিকে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। জানালায় গ্লাস সাথে পর্দা দেওয়া এর ফাকদিয়ে দেখা যাচ্ছে অন্ধকার, রাত হয়ে গেছে।বুকের মধ্যে হালকা চাপ অনুভব হচ্ছে। মনের মধ্যে কেমন যেন করছে, ডাক্তারকে ডাক দিব কি?নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছি। হালকা মাথা তুলে দেখি কেউ একজন আমার বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। কে হতে পারে? আচ্ছা ডাক দেই।
— এই যে, তাড়াতাড়ি মাথা তুল্ল।এত নিশি, আমি যেন বোবা হয়ে গেছি ওকে দেখে, মুখদিয়ে কথা বের হতে চাইছে না। এতদিন বিদেশে থেকেও ওর চেহারার গঠন একটুও পালটায়নি।
— কেমন আছ? নিশির কথায় ঘোর কাঠল।
— দেখতেইত পারছিস।
— আমায় চিনেছিস?
— তর কি মনে হয়?
— ইয়ে,,
— কখন আসলি?
— আজকে।
— আজকে এসেই এখানে কেন?আর তর চোখে পানি কেন?
— আগে বল তর চোখে পানি কেন?
— না মানে,
— না মানেই থাক, আমার যে হুবো স্বামি সে এই ভাবে অসুস্ত আর আমি বাড়িতে থাকব আরামে, কোন পাগলে বলে। স্বামি কথাটি শুনে যেন মনের মধ্যে বিশাল এক খুশির ধাক্কাখেলো, যেন আমি মহা মূল্যবান কোনো কিছু না পেয়েও পেয়ে গেছি। আমি বললাম,
— হুবো স্বামি মানে?
— কেনো তুমি জানো না?
— এখন আবার তুমি, ব্যপার কি রে?
— কাল বাদ পরশু যার বিয়ে হবে আমার সাথে সে বলে ব্যপার কী? লজ্যায় লাল হয়ে বলল।
— ওরে লজ্জাবতি আমার সাথে বিয়ে হবে আর আমিই জানি না? এসব কি?
— আসলেই আমি যখন বিদেশে যাই তখনি বাবা, মা,আর চাচা,চাচি তুমার আমার বিয়ে ঠিক করে ছিলেন। আমিই না করেছিলাম তুমাকে জানাতে।
— কেন?
— কারণ আমি বুঝতে পেরেছিলাম তুমি আমায় মনেমনে ভালোবাসো।
— কেমনে বুঝলে?
— সব কথা কি এখানেই হবে কিছু কথা থাক না,বিয়ের পর হবে।
— ওরে পাগলি। খুশিতে আমার আর আমার হুবো বউর (এখনত আর নাম বলা যাবে না)চোখ বেয়ে পানি পরছে।
— ওরে পাগলা তুমি তাড়াতাড়ি সুস্ত হও।
— সামান্যইত, বউ ডাক্তার অসুস্ত থাকলে কী হবে? চোখবুজে আমার বুকে মাথা রাখল,আমিও বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলাম