-চল না শানু আজ একটু মোমো খেয়ে আসি।
-চল চল, কিন্তু মামণি তোর তো বিকেলে পড়ানো আছে।কিভাবে যাবি?
-এই অসভ্য, মামণি আবার কি? আর পড়ানো তো হয়ে যাবে সাতটার মধ্যে হয়ে যাবে।
– সাতটা তো তোর পক্ষে রাত দশটা রে খুকি।তারপর বেরিয়ে বলবি জল খাবো,হিসু পেয়েছে।আমি বাচ্চা সামলাতে পারি না বাবা।
-শানুউউউউউউউউউ তুই আজ মরবি আমার হাতে।
-ওই নরম হাতে?আর তাছাড়া আজ ইন্ডিয়ার খেলা আছে।ঘরে বসে বসে আরাম করে দেখব।
-ওকে বাই।
পাখি ফোন কেটে ফোনটা বন্ধ করে দিল।
শানু আর পাখি দুই বন্ধু(গোপন প্রেমিক প্রেমিকাও বটে) পাশাপাশি পাড়ায় থাকে। ক্লাস সিক্স থেকে বন্ধুত্ব ওদের। একই স্কুল এবং এখন একই কলেজে পড়ছে দুজনে। ভালোবাসার কথা সেকেন্ড ইয়ারে প্রথম শানুই জানায়। পাখি ও না করেনি। কিন্তু কথাটা হল ভালোবাসার ওই মাখোমাখো ব্যাপারটা একদম জমছে না।কারণ?ওদের মারাত্মক ঝগড়া। শানু তো সেই ছোটোবেলার মতো এখনও পাখির চুল টেনে পালায় আর পাখিও ওর পিছনে ছোটে। এই তো সেদিন পাখি মেলা থেকে চল্লিশ টাকা দিয়ে একটা ক্লিপ কিনেছে। তো সেটা বিছানার ওপর ছিল।শানু ঘরে ঢুকেই ধপ করে ক্লিপটার ওপর বসল আর ব্যস।ক্লিপটার ভবলীলা আর্ধেক সাঙ্গ।শানুটা এত বদমাস,ক্লিপটা ঠিক করার নামে পুরোটাই ভেঙে দিল।পাখি তো চটে লাল।
আচ্ছা এবার তাহলে গল্পের
শুরুতে ফিরে যাই।
পাখি তো শানুর ওপর রাগ করে পড়িয়ে ফিরে ঘর অন্ধকার করে বসে আছে।পাখির মা এসে বলল,
-কিরে তুই বেরোলিনা? আবার শানুর সাথে ঝগড়া করেছিস?
-হ্যাঁ, আমিই তো করি,আর ও তো ধোয়া তুলসীপাতা।
এমন সময় বাইরে শানুর গলা
-কাকিমাআআআআআ ওওওও কাকিমাআআআআআ,মুটকি সুন্দরী আছে?
পাখি বলল “দেখছো তো মা কেমন ছোটোলোক।”
পাখির মা হাসতে হাসতে শানুকে নিয়ে এল।
-হ্যাঁ রে আমার এই এত্ত ফুটফুটে মেয়েটাকে এইসব বলছিস।আর ও কিন্তু আজ খুউউউব রেগে আছে।
-হুহ!ওইটুকু মেয়ে, এখনও ভুল করে গ্যালোপিং ট্রেনে ওঠে।ওর আবার রাগ!
পাখি আজ আর রাগছে না।উল্টে চোখে টলটলে জল।
পাখির মা বলল “নে তোরা ঝগঢ়া কর আমি একটু খাবার বানিয়ে আনি। মোমো তো আর খাওয়া হল না।”
পাখির মা ঘর থেকে বেরোতেই শানু আবার দুষ্টুমি শুরু করল।
-এই পাখি তোর ফোন টা দে না,একটু খেলা দেখব।
-নে।
-কি ব্যাপার আজ ফোন দিয়ে দিলি।রোজ তো ফোন ধরলে আমাকে বাঘিনির মতো আঁচড়ে কামড়ে দিস।আজ কি কেস ভাই?
-কিছু না।
শানু বুঝল আজ মেয়েটা জোর খেপেছে। পাগলিটা ভেবেছিল আজ একটু ঘুরবে দুজনে।শানুও ভেবেছিল।কিন্তু পাখি রাগ করে ফোন অফ করে দেওয়াতে আর যেতে পারল না।এখন ওর রাগ ভাঙাতে হবে।
-(শানু পাখির গা ঘেঁষে এসে বসল)পাখি,ওই পাখি।শোন না।
-বলে ফেল বাট দূর থেকে।
-আরে বোকা কাছে না এলে কি ভালোবাসা যায় রে?
ব্যস অমনি পাখির সব জমে থাকা অভিমান গড় গড় করে বেরিয়ে এল।
-তুই আমাকে ব্যাঙের মাথা ভালোবাসিস।বাজে ছেলে,পচা ছেলে,ইতর,হনুমান,বাঁদর,কুমড়ো।
-কিইইই আমি কুমড়ো?তুই কি?
-কি আমি বল,বল না?
-তুই পটল।
-তুই পটল,তোর চোদ্দ গুষ্টি পটল।
-চোওওওপ বাচ্চা মেয়ে।
-তুই চোওওওওপ, কুঁড়ে ছেলে।
-তোর বর কুঁড়ে।
-হ্যাঁ সেটাই তো হল।
-কি বললি?
-কই কিছু না তো, কিচ্ছু না।
পাখি আড়ালে জিভ কাটল।
শানু পাখির গালে টুকুস করে একটা হামি খেয়ে বলল
-ও আমার সোনা বউ গো আর রাগ করে না। আজকের মতো ক্ষমা করে দাও এই অধমকে।কাল তোকে অনেএএএএক মোমো খাওয়াবো।
পাখির যদিও এত তাড়াতাড়ি থামার ইচ্ছা ছিল না,তবু ও শানুর গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
-সত্যি তো শানু?আই লাভ ইউউউউউ।
-আচ্ছা মামণি এবার একটু খেলাটা চালা না,দেখি।তোর রাগ কমানোর চক্করে খেলা টা আর্ধেক মিস…..
আর বলতে পারল না,পাখি শানুর গলা জড়িয়ে ওর ঠোঁটে আদর এঁকে দিল।
সমাপ্ত