যতই শরীর ঠিক থাকুক একটা বয়সের পর মানুষ আর পরিশ্রম করতে চায় না । আফসার সাহেবের ইদানিং আর পরিশ্রম করতে ভাল লাগে না । একটু হাটলেই কেমন শরীর টা ক্লান্ত হয়ে যায় । স্ত্রীর জন্য সকালে ই মর্নিং ওয়াকে আসা নয়তো এখন আরাম করে শুয়ে থাকার মত আকর্ষনীয় কিছু হতে পারে না ! আজকেও একটু হাটার পরেই আফসার সাহেবের দম ফুরিয়ে গেল । আসে পাশে বসায় জায়গা খুজতে লাগলেন । এই সময়টাতে পার্কে মানুষের বেশ ভিড় থাকে । বসার বেঞ্চ ফাঁকা পাওয়া যায় না বললেই চলে । আফসার আহমেদ আরেকটু হেটে সামনে সামনে গেলেন । একটি প্রায় ফাকা বেঞ্চ দেখতে পেলেন বটে কিন্তু সেটার দুই দিকে দুইজন বসে আছে । মাঝ খান টা ফাঁকা ! এভাবে দুজনের মাঝখানে যেয়ে বসা ঠিক হবে কি ভাবতে গিয়ে দেখলেন দুজনেই তার পরিচিত ! এক দিকে ফাইজা বসে অন্য দিকে রিমন ।
পার্কটা তাদের সরকারী কোয়াটারের পাশেই বিধায় এখানে পরিচিত মানুষরাই হাটতে আসে । কদিন থেকে তিনি লক্ষ্য করছেন এই দুজনও সকাল বেলা হাটতে আসে । হাটার থেকের নিজেদের ভিতর গল্প করার ব্যাপারে তাদের আগ্রহ বেশি । তিনি মনে মনে হাসেন । এই বয়স টাই তো এমন । তিনি নিজেও পার করে এসেছেন ! কিন্তু আজকে দুজন দুদিকে কেন বসে আছে ? মুখ দেখে মনে হচ্ছে দুজনই একে ওপরের উপর রাগ করেছে । কোন কারনে একে অন্যের উপর অভিমান করেছে হয়তো ! আফার সাহবে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য দুজনের মাঝখানে গিয়ে বসলেন !
-কি ব্যাপার ফাইজা ? সকাল সকাল হাটতে ভাল লাগে ? আফসার সাহেবের কথা শুনে ফাইজা একটু নড়ে চড়ে বসলো ! তারপর বলল
-জি আঙ্কেল ! সকাল বেলা না হাটলে ঠিক ভাল লাগে না । মনে হয় যেন সকাল টা শুরুই হল না ঠিক মত !
-তা আজকে সকাল টা শুরু হয়েছে তো ঠিক মত !
-জি ? হ্যা ! ভাল শুরু হয়েছে
এই ফাইজা একটু ফ্যাকাসে ভাবে হাসার চেষ্টা করলো ! ফাইজার সাথে কথা বলে আফসার সাহবে রিমনের দিকে তাকালেন । ছেলেটা তখনও অন্য দিকে বসে আছে ।
-কি ব্যাপার রিমন ? তোমার মুখ গোমড়া কেন ?
-কিছু না ! আঙ্কেল ! ঐ দিক দিয়ে ফাইজা বলল
-আঙ্কেল বদ মানুষের মুখ গোমড়াই থাকে !
-কি আমি বদ ! তুমি বদ !
-তুই পাজি ! খালি। দুজনে ঝগড়া শুরু করে দিল । আফসার সাহবে হাত নেড়ে দুজনকেই থামালেন ! বললেন
-আরে সকাল বেলা কি শুরু করেলে তোমরা ! থামো ! এই সুন্দর সকালে কেউ এমন করে ঝগড়া করে ? ফাইজা বলল
-ও শুরু করেছে ।
-না ও শুরু করেছে !আফসার সাহেব বললেন
-কে শুরু করেছে বড় কথা না । কে শেষ করবে সেইটা বড় কথা ! কি বোঝা গেছে আমার কথা ? দুজনের কারো মুখে কোন কথা নেই । আফসার সাহেব বলল
-আচ্ছা একে অন্য কে সরি বল !
-বলবো না !
-আমিও বলবো না !
-বলবা না ! ঠিক আছে তাহলে আর কি করা ! তবে যদি মিলমিস করে নাও তাহলে তোমাদের একটা ইন্টারেস্টিং গল্প শোনাবো ! আমার জীবনের গল্প ! তবুও কারো মুখ কোন কথা নেই । আফসার সাহবে বললেন
-আচ্ছা ঠিক আছে । থাকো তোমরা মুখ কালো করে । আমি চললাম ! আমার তোমাদের আন্টির সাথে গিয়ে গল্প করি গিয়ে ! আফসার সাহবে উঠে যাবেন তখন ফাইজা বলল
-আচ্ছা ওকে আগে সরি বলতে বলেন ! তাহলে আমি বলবো ! এদিক দিয়ে রিমোন বলল
-আমি কেন বলবো আগে ! ও আগে বলুক ! আফসার সাহেব আবার দুজন কে থামিয়ে বললেন
-আচ্ছা ! আমি আগে গল্প শুরু করি ! তারপর তোমরা ঠিক করে নিও কে আগে বলবা ! ঠিক আছে ?
-আচ্ছা !
দুজনের কারো ইচ্ছে নেই এমন একটা ভাব করে দুজনে আফসার সাহেবের দিকে মুখ করে বসলো ! হঠাৎ করেই আফসার সাহেবের মুখে একটা আনন্দের অভিব্যাক্তি ফুটে উঠলো ! যতবারই তিনি এ গল্পটা মানুষকে বলেন নিজে খুব আনন্দ পান ! শ্রোতারা কত টুকু শুনে আনন্দ পান তার থেকেও তিনি বলে আনন্দ পান ! যতবার মানুষকে এই গল্পটা শুনিয়েছেন ততবার মন এক অনাবিল আনন্দ ভরে উঠেছে ।
-তখন আমি সবে মাত্র ভার্সিটিতে উঠেছি । নতুন জায়গা । সব কিছুই নতুন ! তখন তো এই ঢাকা শহরে এতো এতো লোক ছিল না । মানুষ জন ছিল কম ! আমাদের ভার্সিটি এলাকাটাও ছিল ফাঁকা ফাঁকা ! এখনকার মত তখনও আমি সকাল বেলা হাটতে বের হতাম । প্রতিদিন কার মত একদিন হাটতে বের হয়েছি । নির্জন রাস্তায় একটা মেয়েকে দেখলাম ! তখনকার দিনে একটা মেয়ে একা একা পার্কে জগিং করছে এটা খুব বেশি স্বাভাবিক দৃশ্য ছিল না । আমি একটু অবাক হয়েই মেয়টাকে দেখতে লাগলাম ! মেয়েদের একটা সহজাত ক্ষমতা থাকে যে কেউ তাদের দিকে তাকিয়ে থাকলে তারা বুঝে ফেলে । মেয়েটাও কিছু সময় পরে বুঝে ফেলল যে আমি তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আছি । মেয়েটাও আমাকে দেখতে লাগলো !
-তারপর ! তারপর কি করলেন আপনি ? চোখ সরিয়ে নিলেন ?
ফাইজা জানতে চাইলো ! রিমন তখন চুপ করে বসে আছে । এমন একটা ভাব যেন শুনছে না কিন্তু কানটা এদিকে ঠিকই আছে ।আফসার সাহেব বলল
-আমার মাথায় হঠাৎ তখন একটা দুষ্ট বুদ্ধি এল । আমি মেয়েটার কাছে গিয়ে পরিচিত ভঙ্গিতে বললাম আরে মিরা সেই কখন থেকে তোমাকে খুজছি ! কোথায় ছিল ? এমন একটা ভাব যেন মেয়েটাকে আমি অনেক দিন ধরে চিনি । আসলে মেয়েটা একটু চমকে দেওয়াই আমার ইচ্ছে ছিল ! কিন্তু আমি মেয়েটাকে চমকে দেবো কি মেয়েটাই আমাকে চমকে দিল ! খুব স্বাভাবিক ভাবেই বলল
-একদম মিথ্যা কথা বলবা না সজল ! আমি সেই কখন থেকে এখানে তোমার জন্য দাড়িয়ে আছি । তুমি কই শুনি ?
মেয়েটার এই উত্তর শুনে আমি কথা হারিয়ে ফেললাম । বলতে গেলে মেয়েটার কাছে এমন স্বাভাবিক উত্তর আমি আশা করি নাই ! মেয়েটা বলল
-তোমাকে যে বকুল ফুল আনতে বলেছিলাম ! কই সেটা ?
-বকুল ফুল ?
-হুম ! ভুলে গেছো ?
-হুম !
-এখনই নিয়ে আসো ! যাও বলছি !আফসার সাহেব কথা বলে একটু থামলেন ! ফাইজা বলল
-তারপর আপনি কি করলেন ?
-আমি ? আফসার সাহেব হাসলেন !
-বোকার মত একটা কাজ করলাম !
প্রায় ১৫/২০ মিনিট একটানা এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করে মেয়েটার জন্য বকুল ফুল নিয়ে এলাম । মেয়েটা মানে মিরা আমার কাছ থেকে ফুল গুলো নিলো ! তারপর কিছুই হয় নি এমন ভাব করে হাটতে হাটতে চলে গেল ! আমি বোকার মত মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম ! পরের দিন আবারও একই কাজ ! আমি মেয়েটি আগের দিনের মতই দাড়িয়ে ছিল ! আমি মেয়েটিকে দেখে এগিয়ে যাবো কি না সেটা চট করেই সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না ! একবার মনে হল কালকের মত আজকেও যাই ! তারপর মনে হল, নাহ ! রিস্ক নিয়ে লাভ নেই । কালকের মতই যে মেয়েটা আজকেও আমার সাথে একই রকম আচরন করবে এমন কোন মানে নেই । এই মেয়ে খানিকটা অন্য রকম । কালকে এর সাথে মজা নিতে গিয়ে আমি নিজেই মজা হয়ে গেছি ! আজকেও যদি এমন কিছু হয় ! আমি ঘুরে চলে চাইলাম । কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে গেছে ! মেয়েটিই আমাকে ডাক দিল !
-এই সজল ! এই কোথায় যাও ?
-আমি ?
-হ্যা ! তুমি ছাড়া আর কে ? কোথায় পালাও ?
আমি কাঁপা কাঁপা পা নিয়ে মেয়েটির কাছে হাজির হলাম ! কালকের ঠাট্টা মেয়েটা আজকেও মনে রাখবে ভাবতে পারি নি ! আমি মেয়েটির কাছে গিয়ে বললাম
-কই পালাবো কেন ?
-তাহলে ?
-আসলে আজকেও ফুল আনতে ভুলে গেছি ! মেয়েটি চোখ কপালে তুলে বলল
-তুমি কি সত্যি আমার বয়ফ্রেন্ড ? ভাবতে অবাক লাগে ? সিম্পল একটা কাজ ভুলে যাও কিভাবে ?
-আঙ্কেল একটা কথা ! ফাইজার কথা শুনে আফসার সাহেব কে থামতে হল । বললেন
-কি কথা ?
-আঙ্কেল ? বয়ফ্রেন্ড তো এখনকার শব্দ ! আপনাদের যুগে কি এই শব্দটা ছিল ?
-থাকবে না কেন ? কে বলেছে ? তোমরা যে আমাদের যুগটাকে নিয়ে কি মনে কর না ! যাক যেই কথা বলছিলাম । আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম ! মেয়েটি মানে মিরা বলল
-কি কথা বলছো না কেন ?
-আসলে ভুলে গেছি ! সেটাই তো নিয়ে আসতে যা্ছিলাম !
-তাই ?
-হুম ! সত্যি !
-যাক আজকে যাওয়া লাগবে না ! আজকে আসো আমরা একসাথে হাটি !
-এক সাথে ?
-কেন ? কোন সমস্যা আছে ?
-না মানে তোমার আব্বা যদি দেখে ফেলে ? সেদিন আমাকে দোনালা বন্দুক দিয়ে হুমকি দিয়ে বলেছে আমাকে তোমার আসেপাশে না ঘেষতে । এখন যদি বন্দুক নিয়ে হাজির হয় !
-ও !! তাই বাবু ! এতো ভয় পেয় না । আব্বা এখন আসবে না ! আর আসলে আমার জন্য একটা দুইটা বন্দুকের গুলি হজম করতে পারবা না ?
এটা কেমন কথা ! বলতে বলতে মিরা হেসে উঠলো ! মনে হল নিস্তব্ধ সকালে কোন পাখি ডেকে উঠলো ! আমি হাসির শব্দে কোথায় যেন হারিয়ে গেল খানিকক্ষন ! তারপর আবার কথা শুরু ! এভাবে কথার পিঠে চলতেই থাকলো আমাদের মাঝে ! তারপর থেকে প্রতিদিন আমাদের দেখা হতে লাগলো । আমাদের দেখা হলে আমরা খুব পরিচিত ভঙ্গিতে কথা বললাম । ওর জন্য বকুল ফুল নিয়ে আসতাম ! ও ফুল নিতো । কথা বলতো হাসতো আমিও কথা বলতাম ! বলতে গেলে আনন্দেই সময় কাটতো !
এভাবেই কাটলো পরের সপ্তাহ টা ! এরপর থেকে আমি ফুল নিয়েই মিরার সাথে দেখা করতে যেতাম । আমরা নিজেদের ব্যাপারে কি জানতে চাইতাম না ! নিজেদের মনে বানানো কিছু কথা বলতাম ! মিরা সায় দিতো আমার কথায় ! আমি সাই দিতাম ওর কথায় ! মাঝে মাঝে তোমাদের মত অভিমান করতাম । আসলে মিরাই অভিমান করতো আমার উপর ! আমি রাগ ভাঙ্গাতাম ! হা হা হা ! এই টুকু বসে আফসার সাহবে আবার একটু থামলেন ! চোখ বন্ধ করলেন আনন্দ নিয়ে ! পুরানো সেই দিন গুলো এখনও যেন তার চোখের সামনে ভাসে । প্রতিবার গল্প বলার সময় এই বিরতির সময়ে তিনি উপভোগ করেন !
ফাইজা রিমন কে উদ্দেশ্য করে বলল
-দেখছো তো ! মেয়েরা রাগ করে আর ছেলেরা রাগ ভাঙ্গায় ! আর আমি ! হুহ !
-আমার ঠেকাই পরেছে ! আফসার আবার বলল
-আবার শুরু করলে তোমরা !
-তারপর কি হল ?
-তারপর ?
এভাবেই বেশ কিছু দিন চলল ! আমরা সারাদিন যেমনই হোক না কেন এই সকাল বেলা এলেই আমরা একে অপরের প্রেমিক প্রেমিকা হয়ে যেতাম ! এই সকালের সময়ে যেন আমরা সব কিছু ভুলে যেতাম । কত রকমের রোমান্টিক কথা বার্তা বলতাম ! বিশেষ করে বই পুস্তকে যেমন টা হয় ! তখনকার বাস্তবতার সাথে সেটা মানায় না কিছুতেই ! কিন্তু আমাদের দিন ভালই যাচ্ছিল ! কঠিন বাস্তবতার ভিতরে একটু কল্পনা ! খারাপ কি ?
কিন্তু একদিন মিরা এল না ! আমি বেশ কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে চলে এলাম কিন্তু কিছুতেই শান্তি পেলাম না ! বারবার মনে হচ্ছিল কি যেন নাই । কি যেন নাই । পরের দিনও মিরা এল না ! সদ্য প্রেমিকার কাছ থেকে দুরে থাকার মত অবস্থা হতে লাগলো আমার । সারাদিন অস্বস্থিরতার ভিতর কাটে । সকাল না ভোর হলেই আমি পার্কে চলে যাই । বিভিন্ন দিন বিভিন্ন রকমের ফুল নিয়ে ! অনেকক্ষন অপেক্ষা করি তারপর চলে আসি । মনে হল যেন মিরার সাথে মনে হয় আর দেখা হবে না ! আমার কাল্পনিক প্রেমিকা মনে হয় আমাকে সেখানেই রেখে চলে গেছে ! কিন্তু মিরা এল ! সেখানেই আমাদের গল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল না ! প্রায় এক সপ্তাহ পরে মিরা আবার এল ! খুব ঝগড়া করলাম ওর সাথে ! মুখে যা আসলো তাই বললাম ! মিথ্যে মিথ্যি না রাগ না একেবারে সত্যি সত্যি রাগ । যেন মিরা সত্যি সত্যিই আমার প্রেমিকা ! আমাকে না বলে কোথাও চলে গিয়েছিল ! মিরা কোন কথা না বলে কেবল চুপ করে শুনে গেল ! আমি যখন চুপ করলাম ! মিরা হেসে বলল
-বকা দেওয়া শেষ ?
-মানে ?
-মানে হচ্ছে চাইলে আরও বকা দিতে পারো । পরে কিন্তু আর সুযোগ পাবে না !
-মানে কি ?
মিরা আর কোন কথা বলে নি । হাসতে হাসতে আমার হাত থেকে ফুল গুলো চলে গেল । যাওয়ার আগে বলে গেল যে বিকেল বেলা যেন আমি তার সাথে দেখা করি !
-তারপর ? আফসার সাহেব লক্ষ্য করলেন দুজনেই বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে ।
-এরপরেই সব থেকে আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটলো আমার জীবনে ! বিকেল পার্কে এসে দেখি মিরা এসে হাজির । হাতে একটা ছোট্ট ব্যাগ ! আমার কাছে এসে বলল
-আমি বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি ! আমি আকাশ থেকে পড়ার ভঙ্গি করে বললাম
-মানে কি ?
-কোন মানে নেই !
গত সাত দিন আমি বাসা থেকে বের হতে পারি নি এই কারনে । আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে । বাসা থেকে বের হওয়া নিষেধ ! কিন্তু গত সাত দিনে একটা জিনিস পরিস্কার বুঝতে পেরেছি যে তুমি খুব বড় কিছু হয়ে গেছো আমার জীবনে । আমি অনুভব করেছি তোমাকে বলা প্রতিটা মিথ্যে কথা সত্যি হওয়া আমার জন্য কতটা জরুরী ! সত্যিই জরুরী ! আর আজকে সকালে আমাকে যেমন ভাবে বকেছো তাকে আমারও মনে হয়েছে আমি তোমার কাছে বেশ জরূরী কিছু ! তাই তবুও এভাবে চট করে চাইলেই তো আর একটা মেয়ের সাথে পালিয়ে যাওয়া যায় না । আমি ইতস্তত করে বললাম
-কিন্তু …..
-সমস্যা নেই !
তুমি যদি আমার সাথে না যেতে চাও, ফাইন ! আমি ফিরে যাচ্ছি ! রাতের আগে বসায় ফিরে গেলে আমার কোন সমস্যা হবে না ! যাবো ফিরে ? আমি তখন সবে মাত্র পড়াশুনা করছি ! এভাবে একজন কে বিয়ে করা আমার পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব ছিল না ! এটা আমি যেমন জানতাম মিরাও তেমন ভাবেই জানতো ! আর তখন পালিয়ে বিয়ে করাটা একটা কঠিন অপরাধ হিসাবে গন্য করা হত সমাজে ! মিরা আমার চুপ করে থাকা দেখে বুঝে নিল যে আমি ওর সাথে যেতে প্রস্তুত না !
-কি ? আপনি মিরা কে যেতে দিলেন ? ফাইজা চিৎকার করে উঠলো ! রিমোর ফাইজার সাথে সুর মিলিয়ে বলল
-একটা মেয়ে সব কিছু ছেড়ে আপনার কাছে এল আর আপনি তাকে এভাবে চলে যেতে দিলেন ?দুজনের মুখ দেখেই মনে হচ্ছে তারা আফসার আহমেদের উপর খুব রাগ করেছে । আফসার সাহেব বলল
-আরে আমার দিক টাও তো একটু ভেবে দেখবে ! নাকি ! ঐ বয়সে চট করেই কি এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নেওয়াসম্ভব ছিল ?
-বাহ ! মেয়েটা এটোবড় সিদ্ধান্ত নিতে পারলো আর আপনি পারলেন না ? আপনার এমনই !
ফাইজা রীতিমত রেগে গেছে ! রিমনের দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমারও কি এমন মনোভাব ? আমি যদি তোমার কাছে চলে আসি তাহলে তুমিও আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দিবো ?
-কি বল ! আমি মোটেই এমন করবো না ! কোন দিন না !
-মনে থাকবে তো ?
-অবশ্যই থাকবে !
-আরে আরে কোথায় চললে ?
-আমরা গল্প শুনবো না ! মিরার জন্য খারাপ লাগছে ! আপনি পচা ! আফসার সাহেব হাসতে হাসতে বলল
-গল্পের শেষ টা শুনে যাও ! তোমাদের থেকে একটু বসয় বেশি ছিল তখন কিন্তু আবেগটা তোমাদের মতই ছিল ! মাথা দিয়ে না আমিও মন দিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ! দুজনেই এক সাথে বলল
-মানে ? আপনি মিরাকে বিয়ে করেছিলেন !
-হুম ! ও যখন চলে যেতে উদ্ধত হল তখন ওর হাত চেপে বললাম, চল ! হলে গিয়ে বন্ধু-বান্ধবের কাছে টাকা পয়সা ধার কে ব্যাগ গুছিয়ে বের হয়ে এলাম ! মিরা আগেই ট্রেনের টকেট কেটে রেখেছিল ! আমরা ট্রেনে চেপে বসলাম ! শুরু হল আমাদের নতুন যাত্রা !
-তারপর ?
-তারপর আর কি ? এখনও সেই যাত্রা চলছে । যত দিন বেঁচে আছি চলবে !
শুনো, আমি ঠিক জানি ঐদিন মিরার সাথে একটু ঠাট্টা না করতে গেলে হয়তো আজকে আমার জীবন অন্য রকম হত ! তবে এটুকু বলতে পারি জীবন এতো সুন্দর হত না । আচ্ছা তোমরা এবার সরি বল !
দুজনেই হেসে বলল
-লাগবে না ! তবে আমরা কিন্তু মিরা আন্টির সাথে দেখা করবো ! কবে আসবো আপনার বাসায় বলেন ?
-মিরা ? হাহাহাহা ! আফসার সাহেব হেসে উঠলেন ! বললেন
-তোমাদের আন্টির নাম কিন্তু মিরা না !
-তাহলে ?
-তবে আমি তাকে মিরাই ডাকি !
তেমনি ও আমাকে সজলই ডাকে ! যদিও আমার না সজল না ! আচ্ছা আমি যাই ! এখন যাই ! দেরি হলে মিরা আবার চিৎকার চেচামিচি শুরু করবে ! ঐ সে বলেছিল না যে আর সুযোগ পাবো না ! সেই দিনের পর আমি আর সুযোগ পাই নি । কেবল বকা শুনেই গেছি ! হে হে হে ! আফসার সাহেব এমন ভাবে হাসলো যেন বকা শুনা খুব আনন্দের কিছু ! আর দাড়ালনে না ! হাটা দিলেন ! দুজন কিশোর কিশোরী তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো পৃথিবীর অন্যতম সুখী একজন মানুষ তার জীবনের সব থেকে সুখের গল্পটা বলে হেটে চলে যাচ্ছে !