সকাল বেলা আরামচে কোল বালিশ টাকে জরিয়ে ধরে ঘুমুচ্ছি। মা এসে কয়েক বার আমায় ডেকে গেছেন। কিন্তু তাতে কি হবে মায়ের মার ও সাধ্য নেই আমায় ঘুম থেকে তোলার। অবশেষে মায়ের ডাকে পরাস্ত হয়ে ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এরই মধ্যে আবার মায়ের ডাক
–কিরে ফয়সাল, এখনো তর হই নি।সেই কখন থেকে টেবিলে নাস্তা নিয়ে বসে আছি।।
–আসছি মা,আর এক মিনিট মোটামুটি একটা ভালো মাঞ্জা মেরে নাস্তার টেবিলে গিয়ে মায়ের সাথে নাস্তা করছি।
— কিরে? তুই নাকি বউমার ফোন গতকাল থেকে রিসিভ করছিস না
–ব্যস্ত ছিলাম তাই ধরি নি
–মেয়েটা আমায় ফোন দিয়ে তর খবরাখবর নিয়েছে। তোকে যেতে বলেছে
— কোথায়
–কোথায় আবার ওদের বাসায়। (মানের আমার শ্বশুর বাড়ি)
–আচ্ছা যামু নি
–যামু নে কি?তুই আজই বউমা কে গিয়ে নিয়েআসবি।
— আচ্ছে যাব নে আজই যাব। এবার হয়েছে
— এইত আমার লক্ষি ছেলে
(ও আপনাদের কে তো আবার আমার মায়ের বঊমা আই মিন আমার বউ প্রভার কথা বলাই হয় নি। প্রভা পুরো নাম মুহসিনা খাতুন প্রভা আমার প্রাণ প্রিয় বউ মণি। মেয়েটা খুবই সরল মনের। আমি ও আমার মাকে সে খুব ভালবাসে। গত পরশুদিন সে বায়না ধরেছিল তাকে নিয়ে যেন ওর বাবার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসি। আমি প্রথমেই বলেছিলাম যে আমার অফিসে কাজের খুব চাপ। তাই আমি যেতে পারব না। আর এতেই মহারাণী রাগ করে গাল ফুলিয়ে একাই ওনার বাপের বাড়ি চলে গেলেন। গতকাল ও আমায় ফোন দিয়ে বলেছে তার কাছে যেতে কিন্তু আমি যাই নি। আজ আবার মায়ের কাছে ফোন দিয়ে আমার নামে নালিশ করেছে। আর তাই তো এখন আমাকে ওনাদের বাসায় যেতে হচ্ছে) সারাদিন অফিসের সকল কাজ সামলিয়ে বসের কাছ থেকে একটু ছুটি নিয়ে রাত প্রায় ৮ টা সাড়ে ৮ টার দিকে প্রভাদের বাসায় কলিং বেল বাজাই। একটু পরে এসে আমার দ্বিতীয় স্ত্রী আই মিন প্রভার ছোট বোন আভা এসে দরজা খোলে।
–আরে দুলাভাই দেখি তো আমাদের কে একেবারে ভুলেই গেছেন
— নারে ভাই, তোমাদের কি আর ভুলা যায়
— তাহলে এত দিন আসেন নি যে
— কাজের চাপ রে ভাই। কাজের চাপ। মানুষের যখন ঘুরা ফিরা করার বয়স বা ইচ্ছ থাকে তখন তার কাছে সময় থাকে না আর যখন ইচ্ছা থাকে না। তখন আবার সময় কাটে না। এটাই প্রকৃতির নিয়ম।
— তো এখন কয় দিনের সময় হল
— আর হল কই, তোমার আপু কে নিয়ে আজ রাতেই গো ব্যাক করতে হবে
— বলেন কি এত তাড়া আপনার। না ভাইয়া আজ কিন্তু আপনাকে থাকতেই হবে। এরই মধ্যে প্রভার মা আসলেন, আরে জামাই বাবাজি যে দেখছি।
— হুম। মা ভালো আছেন (অতঃপর উনাকে সালাম করলাম)
— তা বাবা তোমার মায়ের শরীর টা এখনকেমন তাহলে?
— জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছেন
— উনা কেউ সাথে করে নিয়ে আসিলেই পারতা
— জ্বি অন্য একদিন (মনে মনে বলি আমি নিজেই আউসরা না আবার মাকে নিয়ে)
এতক্ষণ হলো আমি এসেছি কিন্তু প্রভা একবার ও আমার সামনে আসল না। বিষয় টা কি আল্লাই ভালো জানেন। তাই আভাকে বললাম
— তোমার আপু কোথায় আভা?
— আপু মনে হত ছাদে আছে। আমি ডেকে দিচ্চি ভাইয়া। আপনি বসেন
— আরে না থাক আমি নিজেই যাচ্ছি।
তোমায় আর কষ্ট করতে হবে না এটা বলেই ছাদে গেলাম।গিয়ে দেখি আমার মহারাণী মন খারাপ করে বসে আছে।আমি ও তার পাশে একে বারে শরীর গেসে বসলাম। সে শুধু একবার আমার প্রতি তাকিয়ে দেখলো কিছু বলল না। আমিও তার দিকে না তাকিয়ে সামনের ওই দূর গাছটার দিকে তাকিয়ে আছি।
— কখন এলে?
— এইত এই মাত্র
— কেন এসেছ আমি তো আর ফিরে যাব না
–তাহলে আমিও আর যাচ্ছি না|
অতঃপর নিচে নেমে খাওয়া দাওয়া সেরে প্রভার রুমে গেলাম। বার বার রিকুয়েস্ট করচ্ছি। কিন্তু তাতে কি হবে মহারাণীর মন যে গলে না।
— এই চল না। বাসায় ফিরে চল। বাসাটা একদম খালি খালি লাগে তোমায় ছাড়া
— না আমি যাব না।
— এটা কেমন কথা, বিয়ের পর কি কোন মেয়ে বাপের বাড়ি পরে থাকে।
— কি? আমি এখানে পড়ি আছি
এটা বলেই আমার গলা চেপে ধরল প্রচন্ড জোরে। আমার একেবারে অন্তিম অবস্থা শুরু হয়ে গেল এই বুজি। তারপর কি জানি ভেবে আবার ছেরে দিল আমি একেবারে কাশতে শুরু করেছি।আর উনি বিছানায় বসে হাপাচ্ছেন।
— উ হ হ হু, এবাবে কেউ চেপে ধরে আর একটু হলেই তো। নামের আগে দ্বিতীয় বার মরহুম শব্দটা যুক্ত করতে হত
— দ্বিতীয় বার মানে। এর আগেউ কি তুমি মরে ছিলা নাকি?
— না একবার তো তোমায় বিয়ে করে জীবন্ত অবস্থায় নামের আগে মরহুম শব্দ টা ব্যবহার করেছি
— কি?
আবার সেই ক্ষিপ্র গতিতে আমার উপর ঝাপিয়ে পড়ল। এখন মনে হচ্ছে এই বুজি আজরাইল আমার সামনে উপস্থিত হতে গেছে ন। না আজরাইল আসার আগেই আমায় ছেরে দিয়েছেন। উফ কি জেদী মেয়ে রে বাবা। সব দোষ ওই আমার শ্বশুর শ্বাশুরির। আদঁর দিয়ে মেয়ে টাকে একে বারে বেশি লাই দিয়ে ফেলছে। আর এখন আমার মানে নিজের স্বামীর গলা চেপে ধরে।
— এই তুমি আমার সামনে থেকে দূর হওউ
— কেন জানপাখি এরকম করচ্ছ?
— এই তুমি যাবে কিনা
— ব্যস ইটস এনাফ। আমি চলে যাচ্ছি আর কখনো তোমার সামনে আসব না। তার আগে একটি কথা
— আমি তর কোন কথা শুনতে চাই না। ( বুজলাম রাগের মাত্রাটা অত্যধিক পরিমাণে বেড়ে গেছে। কিন্তু রাগলে যে আমার মহারাণী কে আরো বেশি সুন্দর লাগে)
— আচছা যাচ্ছি।আগে বল আমার কোল বালিশ গুলো কোথায় রাখছ
— কি! কোল বালিশ কেন
— এখন তো আর তুমি নেই তাই আর কাকে জড়িয়ে ঘুমাব। নতুন বিয়ে করতেউ তো দেরী হবে তাই আপাতত এই গুলারে দিয়াই কাম চালাই।
— তার পর কি যেন ভাবল
এই মনে হয় আমার মহারাণী মহোদয় এর রাগ কমেছে। কিন্তু না রে ভাই মেয়েদের রাগ তো আর এত সহজে কমে না। পুরাই ডাইনির নাতনী মনে হয়। তার উপর তার বাড়ি আবার রাজশাহী তে। শুনেছি ওখানকার মেয়েরা নাকি দিন দুপুরে র্যাগিং করে আর স্বভাব পুরাই গুন্ডা টাইপের। আল্লাই জানে আমার কপালে কি আছে।এত দিন তো ভালভাবেই চলছিল এখন আবার কি হল।
কিছুক্ষণ পরঃ
— এই আমি যাব না তুমি চলে যাউ কি আর করব। এবার শেষ অস্ত্র প্রয়োগ করলাম। আমি নিজেই কেঁদে দিলাম
— না থাক। দরকার নেই তোমার (এটা বলে চলে আসছি লাম। আর টিক তখনই)
— এই দাঁড়াও
— কিছু বলবে
না দেখি উনি বেগ গুছা তে ব্যস্ত। যে কাপড় চোপড় গুলো বাসা থেকে নিয়ে আসছিল সে গুলো ব্যাগে ভরে আবার বলল
— হুম চল
— হুম ( হাসি মাখা দৃষ্টি তে)
রাত প্রায় ১২ টা বেজে গেছে এত রাতে যানবাহন পাওয়াটা খুব কষ্ট। অবশেষ একটা সি এন জি দ্বিগুণ ভাড়ায় ঠিক করে উঠ লাম। পিছনের সিটে দুজন বসে আছি। দেখি প্রভা অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। বাতাসে তার চুল গুলো মুখে এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি তার চুল গুলো সরিয়ে একটা উম্মা দিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছি যেন আমি কিছুই করি নি। নেহাত একটা বাচ্চা শিশু। অতঃপর সে আমার বুকে এলোপাথাড়ি কয়েক টা খিল ঘুষি মেরে দিল।
আমি মনে মনে খুব রাগ হলাম। ধ্যাত আর কথাই বলব না ফলে একটু সরে বসলাম। মহারাণী সেটা বুজে গেছেন।তাই আমার রাগ ভাঙানোর জন্য মিষ্টি করে একটা উম্মা দিয়ে আমার কাধে মাথা রাখল। এভাবে কেউ আদর করলে কোন মানুষেই কারো প্রতি রেগে থাকতে পারে না তাই আমিও এর ব্যতিক্রম হলাম না।শক্ত করে জরিয়ে দরলাম আর রাগ কুমারি কে। সারাজীবন এভাবে ধরে রাখতে চাই।।