-এই যে শুনছেন?
-হ্যা,বলো?
-আপনি আমাকে ইগনোর করেন কেন?
-কখন করলাম?
-আপনি কখনো আমায় বুঝবেন না,না?
-চুপ করো,বেয়াদব মেয়ে।
কথা হচ্ছিল আমাদের বাড়ীওয়ালার মেয়ে শিফার সাথে। মেয়েটা কি চায় সেটা আমি বুঝি কিন্তু এটা কখনও সম্ভব না। আমার পরিচয়টা দিয়ে নিই।আমি ইমরান। মাস্টার্স শেষ করে এখন বাবার অন্ন ধ্বংসে ব্যস্ত আছি। আসলেই বাবাই আমাকে জব করতে দেন না।তিনি চান যে আমি যেন তার বিরাট ব্যবসা সামলায় আর তাতেই যত সমস্যা। আমি ঠিকমতো বসি না ব্যবসাই।কিন্তু বাবার বিশ্বাস, ব্যবসা না করলে আমি জিবনে উন্নতি করতে পারব না। নতুন করে বাড়ি বানানোর কারনে আপতত ভাড়া বাসায় থাকতে হচ্ছে। আর যার সাথে কথা বলছিলাম, শিফা।। মেয়েটা দুস্টামিতে টপে থাকে সবসময়। যেদিন প্রথম দেখা হয়েছিল-
-কে আপনি?(শিফা)
-আপনাদের নতুন বাড়াটিয়া।
-তাই নাকি?
-হ্যা।
-ওলে হ্যা।
(চোখ টিপ দিয়ে চলে গেল। আমি হা করে তাকিয়ে ছিলাম। এসব মেয়েরা নিজেদের কি জানি ভাবে! মনে হয় যেন বিশ্বসুন্দরী।তাই এড়িয়ে চলি দেখা হলে। বিকেলে ঘুরা-ঘুরি আর আড্ডা শেষ করে সন্ধায় বাসায় আসলাম।আম্মু বলল,
-সারাদিন তো ঘুরাঘুরি করস।ব্যবসার দিকেও নজর নাই। আমাদের দিকেও নজর দেস না
-কি হয়ছে সোজাসুজি বলো?.(আসলে আম্মু কিছু বলতে গেলে পুরো ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করেন)
-ঐ যে তোর রুনা অ্যান্টি আছে না তার মেয়েকে পড়াতে হবে।সারাদিনতো কোন কাজ করিস না অন্তত এ কাজটা কর।(রুনা অ্যান্টি হলো শিফার আম্মু,মানে আমাদের বাড়িওয়ালা।আর আম্মু এবং শিফার আম্মু নাকি স্কুল জীবন থেকে বান্ধবী)
-সম্ভব না।এ মেয়ে অনেক ফাযিল।
-পড়াবি,বাস শেষ কথা।
-আচ্ছা ঠিকাছে।
ফেসে গেলাম একদম।আমি জানি শিফারই কাজ।কেন যে গণিতে ভালো হতে গেলাম। তাই আজ তার খেসারত দিতে হচ্ছে। পরদিন বিকেলে ওনিকে পড়াতে গেলাম আমার আরামের আড্ডা বাদ দিয়ে। বাসায় নক করতেই অ্যান্টি দরজা খুলে দিল। টেবিলে বসতে বলল। একটু পর ও শিফা বই নিয়ে আসলো।(বলা হয়নি শিফা ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ে)
-হাই (বলেই সামনের চেয়ারটাই বসে পড়ল)
-আচ্ছা ভদ্রতা কি! সেটা কি তুমি জানো?. কাকে কখন কি বলতে হয় সেটাও শিখনি?
-আমি কি করলাম হুুুহ!
-টিচারের সাথে দেখা হলে সালাম দিতে হয় সেটা নিশ্চয় জানো?
-না জানি না,হয়েছে? এটার জন্য আপনি আমায় বকলেন?
-তোমাকে কেন যে আমি পড়াতে আসলাম। আচ্ছা এখন বই বের করো। তারপর কিছু অঙ্ক করিয়ে ছুটি দিয়ে চলে আসলাম। সবকিছু ঠিকই ছিল। কিন্তু শিফার কি হলো বুঝলাম না।আজ কাল প্রায় সময় দেখা যায়,মন খারাপ করে বসে থাকে,অন্য মনস্ক হয়ে পড়ে।
-তোমার কি কিছু হয়েছে?
-কি হবে আমার! কিছু হয়নি।
-সমস্যা থাকলে বলতে পারো।আমি কি ঠিকমতো পড়াতে পারছি না?
-উফফ..! আপনি কখনই আমার সমস্যা বুঝতে পারবেন না। পারবেন শুধু সারাদিন পড়া পড়া করতে।
-আচ্ছা তাহলে যাও আজ আর পড়াবোনা।
-না,আজ আরও বেশি পড়াতে হবে।
-আচ্ছা পড়ো। কিছুক্ষন পর মনে হল পা’য়ে কিছু একটা লেগেছে।বুঝতে বাকি রইল না এটা যে একটা পা।পা’গুলো শিফারই।
-কি হচ্ছে কি?
-কি স্যার?
-পা সরাও
-আমি?পা?কি?কখন?(রহস্যজনক হাঁসি দিয়ে
-টিচারের সাথে কেউ এমন করে?
-(একটা রাগি লুক নিয়ে পা নিয়ে সরিয়ে নিল)
-স্যার,কাল আমার জন্মদিন।আপনি কি গিফটদিবেন?
-কিছু না।
-কিহ! তুমি গিফট দিবা না!এটা বলতে পারলা?
তুমি আমাকে কষ্ট দিতে পারলে?(কথাগুলো বেশ ধমকের সাথে বলল।বলেই মুখে হাত দিয়ে ফেলল যেন সে অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছে।)
-বেশ উন্নতি হয়েছে তোমার। কথাগুলো বলেই চলে আসলাম রাতে খাওয়ার সময় প্রতিদিন আম্মু শিফার নামে অন্তত দুটি ভালো কথা বললেন। এটাই এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
-আচ্ছা তোর শিফাকে কেমন লাগে?
-ভালো না।অঙ্ক কম বুঝে,পড়া দিলে ঠিকমতো করে না।
-পড়া না, এমনিতো ওকে তোর কেমন লাগে?
-এমনিতে মানে?
-মানে আমার ঘরের বড় বউ হিসেবে কেমন লাগবে?
-মানে! কি বলতে চাইতেছো? অসম্ভব। শিফা আমার ছাত্রী হয়।
-ছাত্রী হয়েছে তো কি হয়েছে? আর ওতো তোকে অনেক পছন্দ করে।তোর সাথে মানাবেও।
-দেখো এ নিয়ে আমাকে আর একটা কথাও বলবে না আম্মু, আমার এসব ভালো লাগে না।
-বুঝবি একদিন যখন আমি থাকবো না।
থাকবো কি করে! সারাদিন সংসারের জন্য খেঁটে মরি। আমার কথা বলার কেউ আছে! কেউ আমার কষ্ট বুঝে না। প্রায় দিনই এখন এসব বাণী শুনা যায় আম্মুর মুখ থেকে। সত্যিই আর উইস করিনি। তাই সে দিন সে আমার সাথে কোনো কথাই বলেনি। একদিন দুপুরে দেখলাম শিফা আম্মুর সাথে রান্না ঘরে। আমাকে দেখেই শিফা মাথায় ঘোমটা দিয়ে ফেলল। কি ব্যাপার অন্যদিন হলে তো গায়ে পড়ার উপক্রম হয় আর আজ এতো ভালো কি করে। আম্মু বলল,দেখ ইমরান, শিফা কি সুন্দর রান্না করতে পারে।ইনফ্যাক্ট আমার হচ্ছে আজ ও রান্না করছে আমি সাহায্য করছি মাত্র। ও তোকে বলে কি হবে তুই আমার কষ্ট বুঝবি না। এরপর শিফাকে উদ্দেশ্য করে বলল,বুঝলি বউ মা,,আমার আর বেশি দিন বাঁচতে ইচ্ছে করে না।
-ছিঃছিঃ কি বলছেন মা।আমি থাকতে আপনি মরবেন কেন? আমি তো আপনার কষ্ট বুঝি.।
-তুই ছাড়া আর কে বুঝবে!
আরে রে! এর মধ্যে আম্মুকেও পটানো শেষ। বাহ! কি ব্রেইন আমার ছাত্রীর! আবার বউ মা। বাহ! বাহ! (কথাগুলো মনে মনে বললাম) ছাঁদে আসলাম আর সেই পুরনো অভ্যাস আরম্ভ করলাম।একটা পর একটা সিগারেট। একটু পর শিফা আসল। ওকে দেখা মাত্রই সিগারেট ফেলে দিলাম।
-একি আপনি স্মোক করেন?
-দেখেই যখন ফেলেছ তাহলে আর জিঙ্গেস করো কেন?
-না আপনি আর কখনও খাবেন না এসব।
-দোখো শিফা, তোমাকে আগেও বলেছি এখনও বলছি।তুমি যা চাও তা কখনো সম্ভব না।। আমি মোটেও ভালো মানুষ না।(একটু রাগান্বিত হয়ে)
-আমি জানি আপনি কেমন!সো আমাকে এসব বলবেন না। তারপর ছাঁদ থেকে নেমে আসলাম। আজ দিপার কথা খুব মনে পড়ছে।আর দিপার কথা মনে পড়লেই আমার চিন্তা বেড়ে যায়,অস্থিরতা বেড়ে যায়।তখন স্মোক না করলে আমি ঠিক থাকতে পারি না। বাসার নিচে আসসলাম ছোট চায়ের দোকান টায়। একটার পর একটা টানছি।
দিপা আমিতো তোমায় সত্যিকারের ভালোবেসে ছিলাম।কিন্তু তুমি কেন আমাকে মিথ্যা ভালোবাসা দিলে। আমি তো চাই নি এ ভালোবাসা। আজ ইচ্ছে করছে নিজেকে পুড়িয়ে ফেলি নিকেটিনের ধোঁয়ায়। ভাবতে ভাবতেই বাসারদিকে তাকালাম।নিচ থেকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম শিফা ছাঁদ থেকে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।আমি তাকাতেই চলে গেল। মনে মনে ভাবলাম যাক মেয়েটাকে পিছু ছাঁড়ানো গেল। বাসায় এসে যা শুনলাম তার জন্য আমি কখনো প্রস্তুত ছিলাম না। শিফা নাকি বলেছে আজ এবং এক্ষুণি যদি আমার সাথে তার বিয়ে না হয় তবে সে আত্মহত্যা করবে। আর এজন্যই রুনা অ্যান্টি আম্মুর কাছে এসে বলল তার মেয়েকে বাঁচাতে। আম্মু আমাকে রেডি হতে বলল।আমি চুপচুপ দাঁড়িয়ে ছিলাম।কি বলল বুঝতে পারলাম না।।
অতঃপর সাদাকালো টিভির মতো বিয়েটা হয়ে গেল। বাসর রাতে ডুকবো কি না সেটা নিয়ে কনফিউসনে পড়ে গেলাম। অবশেষে ডুকে পড়লাম। দরজা বন্ধ করে খাঁটের সামনে আসতেই শিফা নিজে থেকে পা ধরে সালাম দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলো।
-আমাকে মাফ করবেন।আমি শুধু আপনাকে চাই। তাই একাজ করতে বাধ্য হয়েছিলাম।
–নিশ্চুপ (আমি)
-দেখবেন আমি ঠিক আপনাকে আমার মতো গড়ে নিবো।বিশ্বাস করুন অনেক ভালোবাসবো।
-আমাকে গড়ে নেওয়ার কি আছে?তোমার কি মনে হয় আমাকে আমি বাচ্ছা??
-নাহ,আপনাকে আমি আমার জামাই হিসেবে গড়ে নিবো।(মুখ উপরে উঠিয়ে বলল) শিফাকে খুব সুন্দর লাগছে।আজ প্রথম তার সৌন্দর্যময় চেহারার মর্মার্থ বুঝতে পারলাম।
-আচ্ছা তুমি চেন্জ হয়ে এসে শুয়ে পড়।আমি সোফায় ঘুমাবো।
-কি বললা তুমি? আমার সাথে ঘুমাবা না?. তুমি জানো আমার কত স্বপ্ন এ রাতে কত কিছু করব!.
-তুমি বলার অধিকারটুকু তোমাকে আমি দিই নাই।
-হুহ,আমি কিছু জানি না,, শুধু জানি আমি আপনার বুকে ঘুমাবো।
-আমি গেলাম।
বলেই সোফায় এসে শুয়ে পড়লাম।। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতে পারলাম না। ফোনের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো। ফোন কোথায় চেক করতে ভাবতে ভাবতেই মনে হলো আমার উপরে ভারি কিছু রয়েছে,পরক্ষণেই বুঝতে পারলাম যে এটা শিফা। শিফা বলেছিল আমার বুকের উপর ঘুমাবে আর সেটা করেই ছাড়লো। ঘুমন্ত অবস্থায় শিফাকে পুরো মায়াবি বাচ্ছাদের মতো লাগছে।
কেন এতো ভালো লাগছে তার ঐ চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকতে! আজ কেন দিপার কথা মনে পড়ছে না! তবে কি আমি শিফার মায়ায় জড়িয়ে পড়লাম!!? ঘুটিসুটি মেরে শুয়ে থাকা, আমার শিফাকে জড়িয়ে ধরলাম। শিফাও আমাকে জড়িয়ে ধরল ঘুমের মাঝে। কিন্তু না একটু পর চোখ খুলে একটা টিপ মেরে আবার চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ভান করল। আমি অবাক চোখে ওর দুস্টামি দেখতে লাগলাম। করুক না একটু দুষ্টামি।। আর এ দুষ্টামির জন্যই তো ভালোবেসে যাবো জীবনভর..!!!