“আমার যমুনার জল দেখতে কালো
স্নান করিতে লাগে ভালো
যৌবনও মিশিয়া গেল জলে”
.
মেয়ে ফুলজোড় আর করতোয়া তাদের যৌবন
হারিয়েছে অনেক আগেই। করতোয়ার যা আছে,
ফুলজোড়ের তাও নেই। এককথায় বলা চলে যে
বার্ধক্যে পৌছে গেছে প্রায়। অথচ মা হয়েও
যমুনা আজও ভরা যৌবনা রয়ে গেছে। উজান ভাটির
টানে আর মৌসুমী বানে হৃষ্টপুষ্ট তরতাজা দেহ
নিয়ে আজও সে তার সংসারধর্ম পালন করে যাচ্ছে।
আচ্ছা, ভরা যৌবনা বলে কি ভুল করলাম?
নাহ ঠিকই আছে।
মৌসুমী বানে সে রীতিমত ভরা যৌবনা।
.
উজান ভাটির টানে কত কত জায়গা থেকে ভেসে
আসা মাটি জমে গড়ে উঠেছে বিশাল চর। চোখ
যতদুর যায় ততদুরই।
নেই কোন মালিক মালিকানা, নেই কোনো
দখলদারী।
স্রোতে ভাঙ্গা বাড়িওয়ালারাই আবার এই চরে
এসেছে বাড়ি করেছে। তাদের মন বলে,
“আমাদের জমি ভেঙ্গেই চর হয়েছে, তাহলে এ
জমি তো আমাদেরই।”
.
“বধুয়া” নামক এ চরটিতে কিছুকাল ধরে ক্রমান্বয়ে
গড়ে উঠেছে লোকালয়। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে
সর্বহারা মানুষেরা আশ্রয়ের খোঁজে এসে পাড়ি
জমিয়েছে “বধুয়া” চরে।
.
এ চরের নাম কেন বধুয়া হলো, এ নামটা কে
রাখলো সে ইতিহাস যেন যমুনার অন্দরে লুকিয়ে
থাকা ঝিনুক, মুক্তার মতই গোপন।
.
“বধুয়ার চর” শহরের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা আর
আধুনিকতা থেকে বিচ্ছিন্ন, নেই কোনো শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান কিংবা চিকিত্সালয় অথবা আইন প্রশাসন।
তবুও এ চরের মানুষেরা অত্যন্ত সুখ সাচ্ছন্দ্যে
জীবন কাটায়। তাদের পঞ্চায়েতই তাদের আদালত।
প্রতিটা ঘরই হলো একেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর
রয়েছে এক ভ্রাম্যমান ডাক্তারখানা।
আর এই বধুয়ার চর টা এত শান্তিপূর্ন ও সুন্দরভাবে
সাজানোর পেছনে এই ভ্রাম্যমান ডাক্তারের
অবদানই অগ্রগন্য।
.
রেহান। কোনো পাশ করা সার্টিফিকেট ওয়ালা ডাক্তার
না। লেখাপড়া বেশিদিন তার ভাগ্যে জোটে নাই।
শহরে থেকেছে বহুদিন। কাজের তাগিদে।
শহরে থাকার বদৌলতে কাজের ফাকে ফাকে
নিয়েছে গ্রাম ডাক্তারের প্রশিক্ষন ও কর্মশালা।
আর এখন তা অকাতরে বিলিয়ে দিচ্ছে অসহায়, দুঃস্থ
মানুষদের প্রতি। এটাই হয়তো শিক্ষার মুল উদ্দেশ্য
আর রেহান তা করতে পেরেছে।
.
মধ্যবিত্ত এক পরিবার জন্ম হয়েছিল রেহানের। মা
বাবা আর ছোট দুই ভাই বোনকে নিয়ে বেশ হাসি
খুশিতে পরিপূর্ন ছিল তাদের পরিবার।
কিন্তু যমুনা যখন ভরা যৌবনা হয়ে ওঠে, তখন তার কামনা
পুরনে গ্রাস করে কত কত মানুষের যাবতীয় সহায়
সম্বলটুকু। তেমনি কোনো এক মৌসুমে একবার
তারা যমুনার ক্রোধে পতিত হয়। হারায় তাদের
যাবতীয় সহায় সম্বল। এরপর সর্বহারা হয়ে আশ্রয়
নেয় এ চরে। এরপর থেকে লেখাপড়া বন্ধ।
শহরে চলে যায় কাজের তাগিদে। বাবা যমুনায় মাছ
ধরে তা মহাজনদের কাছে বিক্রি করে দেয়।
এভাবেই তাদের রুজি রোজগার হয়।
সব হারিয়ে হতাশ হওয়া রেহানের পরিবার বধুয়ার চরে
এসে নতুন করে স্বপ্ন বোনে জীবন কে
নতুনভাবে শুরু করার। সবার মত তারাও জীবনটাকে
ভালোভাবে পেতে চায়।
.
পাঁচবছর শহরে থাকার পর বধুয়ার চরে ফিরে আসে
রেহান। শহরে থেকে কাজ করার পাশাপাশি একটু
আধটু যে ডাক্তারি শিখেছে তা সহ মানুষের সেবায়
নিজেকে নিয়োজিত করার জন্য পন করেছে সে
আর শহরে ফিরবেনা। আগে যেভাবে সে
ছুটিতে ছুটিতে ফিরে আসতো, এখন থেকে সে
ছুটিতে ছুটিতে শহরে যাবে। এখন থেকে সে
চায় গ্রামেই থাকবে।
.
এতে বাবা মায়ের অমত নেই। তাদের মনের কথা,
দিনকাল ভালো না। না জানি কখন কি হয়ে যায়। তার
চেয়ে ভালো ঘরের ছেলে ঘরেই থাকুক।
.
শহর থেকে যেদিন রেহান ফিরছিলো, তাকে
আনার জন্য গিয়েছিলো তার বন্ধু মাহিন আর শুভ।
ওদের জীবনটাও প্রায় রেহানের মতই। যমুনার
ক্রোধে পুড়ে ছাই হয়েছে ওদের নিয়তিও।
.
যাই হোক, আসার পথে কোনো এক দৃশ্য
দেখে অবিভূতের মত মুর্তিরুপ ধারন করে রেহান।
কি সেই দৃশ্য যা রেহানকে এতটা বিমোহিত
করলো.?
.
অঙ্গে জড়ানো শাড়ি, চুলের বেণীতে ঝুলছে
বন্যফুল আর সিথিতে ফুলের পরাগ। পায়ে গাঁঢ়
আলতা। এমন সাজে কাঁখে পানিভর্তি কলস নিয়ে
গ্রাম্য ললনার বিচরনের দৃশ্য সবার জন্যই
মনোমুগ্ধকর তা নিঃসন্দেহে বলে দেওয়া যায়।
রেহানের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে।
.
দেখে একেবারে থ মেরে গেছে।
পরে বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিয়ে রেহান
জানতে পারে ও শহরে চলে যাওয়ার পর আরোও
অনেক পরিবার এখানে এসেছে। ও তাদের
মাঝেরই একজন। চরের প্রায় একদিকে তাদের
বাড়িটা, শুভদের বাড়ির কাছে বলা চলে।
.
আর রেহানদের বাড়ি তো চরের অন্য দিকে।
রেহান আর মাহিনদের বাড়ি একসাথে।
.
অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে দেখছিলো রেহান।
কতক্ষন এভাবে তাকিয়ে ছিল সে হযতো নিজেও
বলতে পারবেনা। হঠাত্ ঘোর কাটে মেয়েটার
ভেংচি কাটাতে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন জানি
মেয়েটার চোখে চোখ পড়ে যায় রেহানের।
আর রেহানকে এভাবে হা করে তাকিয়ে থাকতে
দেখে মেয়েটা এত্তবড় একটা ভেংচি কেটে
ঘুরে চলে যায়।
নিজের অজান্তেই হেসে ফেলে রেহান।
তারপর বন্ধুদের সাথে বাড়ি ফিরে আসে সে।
.
গ্রামে ফিরে শুভ আর মাহিনকে সাথে করে পুরো
গ্রামে ঘুরে ঘুরে গ্রামের মানুষদের ছোট
ছোট অসুখের চিকিত্সা আর ছোট ছোট
ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করায় রেহান।
দিন শেষে একবার শুভদের পাড়াতে যাওয়া ওর
দৈনিককার রুটিন। সেটা কাজ থাকুক আর না থাকুক।
কারনটা
তো সেই অপরুপ প্রতিমা যার দর্শনে রেহানের
গতি স্থবির হয়ে গিয়েছিলো।
.
যাইহোক, এভাবেই বধুয়ার চরে চলছিল রেহানের
দিনকাল। কেউ ডাক্তার সাহেব, কেউবা মাস্টার সাহেব
আর মুরুব্বিদের কেউ বা বাবাজি বলেও ডাকে। নাম
ধরে কেউ ডাকে না। দুই বন্ধুও তাকে ইয়ার্কি
করে প্রেমিক ডাক্তার বলে ডাকে। কারন
ইতিমধ্যেই যে সে ঐ গ্রাম্য ললনার পিরিতে পতিত
হয়েছে তা ওর বন্ধুরা বুঝে ফেলেছে।
হ্যা রেহানও বুঝে ফেলেছে যে সে নিজের
অজান্তেই ঐ মেয়েটার প্রেমে পড়ে
গেছে। পড়বে নাইবা কেন? এত সুন্দর মেয়ে
দেখে প্রেমে না পড়ে থাকা যায়? ও মাঝে মাঝে
মনে মনে ওর বন্ধুদের ধন্যবাদ দেয় যে এত
সুন্দর একটা উপহার তার জন্য এখনও রেখে
দিয়েছে বলে।
.
একদিন সকালে,
ঘুরতে ঘুরতে শুভদের বাড়ির কাছে চলে যায়।
শুনেছে এখানে একটা বাড়িতে নাকি কেউ খুবই
জ্বর এ ভুগছে। মাহিনকে সাথে করে রেহান যায়
সেখানে। রেহান জানতো না যে এটাই সেই
মেয়েদের বাড়ি। মাহিনও দুষ্টামী করেই বলেনি।
.
রেহান রোগীর কাছে যেতে চাইলে ওকে
যখন নিয়ে যাওয়া হলো, গিয়ে দেখলো রোগী
সেই মেয়েটাই।
দেখে মনের ভেতর খুব অস্থিরতা অনুভব
করছিলো রেহান।
.
তারাতারি করে মেয়েটার দিকে এগিয়ে যায় সে।
মেয়েটার মা মেয়েটার পাশে বসে জলপট্টি
দিচ্ছিলো আর ডাকছিল “মা লাবন্য, লাবন্য, মা আমার”
বলে বলে।
.
মেয়েটা প্রচন্ড জ্বরে কাপছিল। রেহান কাছে
গিয়ে জ্বরের পরিমান দেখে প্রয়োজনীয়
ঔষধ আর স্যালাইন দিয়ে মেয়েটার মাকে সব
বুঝিয়ে দিয়ে ফিরে যায়।
.
যাওয়ার পথে শুভকে জিজ্ঞাসা করলোঃ
-তাহলে মেয়েটার নাম লাবন্য?
-হুম।
-যা ই বলিস, নামের সাথে চেহারার অসম্ভব মিল
আছে।
-তা যা বলেছিস।
-কিন্তু জানিস, ওর জ্বর নিয়ে তো আমার প্রচন্ড
চিন্তা হচ্ছেরে। লক্ষন ভালোনা।
-বলিস কি! তাহলে উপায়?
-শহরে নিতে পারলো ভালো হতো। কিন্তু তারও
কোনো উপায় নেই।
-খোদার উপর ভরসা রাখ আর তুই যতটুকু পারিস চেষ্টা
করে যা।
-হুম, সেটাই ঠিক বলেছিস।
.
যেতে যেতে মাহিনের সাথে দেখা। মাহিনের
সাথে লাবন্যর ব্যাপারে সব কথা বলে আবার
বেরিয়ে পড়লো পাঠশালার উদ্দেশ্যে। সাথে
চললো শুভ আর মাহিন।
.
এদিকে দিন বাড়তে লাগলো আর লাবন্যর অবস্থারও
উন্নতি হতে লাগলো। লাবন্যর যখন হুশ ফিরতে
লাগলো তখন নিজেকে এত চিকিত্সার মাঝে
দেখে অবাক হলো। মাকে ডাকতে লাগলোঃ
-মা, ও মা!
-কি হইছেরে মা লাবু?
-আমারে এগুলান কে দিছে?
-কেন রে মা?
-কওনা মা, কেডা দিছে?
-ঐ পাড়ার তোর ছাত্তার ব্যাপারী চাচারে চিনস? হের
পোলাডা তো আগে শহরে থাকতো। কয়দিন
অইলো গেরামে আইছে। এহন খালি এইগুলান কইরা
বেড়ায়। ট্যাহা পয়সাও নেয়না। বিহানে তোর
অসুখের কথা হুইন্যা আইছিল। এগুলান দিয়া গেছে।
-ওওও, হ বুচ্চি। আমারে এক গেলাস পানি দিবা?
-হ দাড়া, দিতাছি।
.
ভাবনায় পড়ে গেল লাবন্য। ছেলেটা কত ভালো।
তবে লাবন্য তার কথা শুধু শুনেছেই কিন্তু
দেখেনি। লাবন্য নিজের অজান্তেই রেহানকে
আগেই দেখেছে তা সে জানেনা।
.
হঠাত্ শুনতে পেলো বাইরে কেউ তার মায়ের
সাথে কথা বলছেঃ
-চাচি, ও চাচি। বাড়িতে আছেন?
-এই যে বাবা, আমি আইছি। কেবা আছাও বাবা?
-জ্বী চাচি আমি ভালো আছি। লাবন্যর কি অবস্থা?
-হ, ওর অবস্থা আগের চাইতে ম্যালা ভালো।
আইসো, দেখবা।
-জ্বী চলেন।
.
কথাবার্তা শুনে লাবন্য বুঝলো সকালের সেই দয়ালু
মানুষটা আবার এসেছে। মনে মনে বললো. “যাক
বাবা, এবার তাও তারে দেখা যাইবো।”
.
ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলো লাবন্যর মা আর
রেহান। রেহানকে দেখে চমকে উঠে বসে
পড়েছে লাবন্য। তার চোখে মুখে প্রশ্ন, একি
আপনি.? কিন্তু প্রকাশ করছেনা।
.
-কি ব্যাপার রোগী, কি অবস্থা? শরীর ভালো?
(রেহান)
-হ, আগেরচে ভালো।
-ক্ষুধা লেগেছে, খাবেন কিছু?
কিছু বললোনা লাবন্য।
হাতের ব্যাগ থেকে ফল বের করে লাবন্যর
মাকে বললো, চাচি এগুলো ওকে খাওয়ান।
শরীরে এখন ওর পুষ্টির দরকার।
শহরে গেছিলাম একটা কাজে। ভাবলান এগুলো
নিয়ে গেলে মন্দ হয়না।
লাবন্যর মা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললো,
আল্লাহয় তোমার ভালো করুক বাবা।
ফলগুলো কাটতে বাইরে চলে গেল লাবন্যর মা।
.
মা বাইরে যেতেই চোখ নিচু করে লাবন্য
রেহানকে বললোঃ
-আমার উপরে রাগ কইরা আছেন?
-কেন রাগ করে থাকবো কেন?
-সেদিন খারাপ ব্যাবহার করছিল্যাম।
-আরে কি যে বলেন না। আমি কিছু মনে করিনি।
.
কথা বলতে বলতে লাবন্যর মা এলো ফল কেটে
নিয়ে।
লাবন্যর অনুরোধে তার সাথে রেহানকেও নাস্তা
করতে হলো।
এরপর উঠে চলে এলো রেহান।
.
সবাই চলে যাওয়ার পর কি যেন ভেবে মুখটা
ঢেকে হেসে ওঠে লাবন্য। হয়তো ভাবছে
যে রেহান তার জন্য এত কিছু করছে কেন?
তাহলে কি. . .
এতটুকু ভেবেই বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ গুজে
হাসতে লাগলো লাবন্য।
. . .
কিছুদিন পরের কথা. .
রেহানের নিয়মিত চিকিত্সায় সম্পূর্ন সেরে
উঠেছে লাবন্য। এরই মধ্যে রেহানের প্রেমে
পড়ে গেছে সে। মাঝে মাঝে রেহানের কথা
মনে পড়লে দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে মুচকি মুচকি
হাসে। গাছের তলায় বসে মাটিতে রেহানকে
একে নাক টিপে দেয় আবার কানও মলে দেয় আর
নিজে নিজে হাসে।
আর রেহান, সে আর প্রেমে পড়বে কি! ও
তো পড়েই আছে। সে প্রথম দেখা থেকেই।
.
ওদিকে যাওয়া আসা কমে গেছে রেহানের। তবুও
আসা যাওয়ার মাঝেও লাবন্যর সাথে দেখা হলে
দুজনেই মুচকি মুচকি হাসে। চোখের ইশারায় কথা
বলে আবার শাষনও করে।
এভাবেই কাটছিলো দিন।
.
মাসের শেষ বুধবার . .
রেহান শহরে যাচ্ছিলো জরুরী কোনো
কাজে।
হঠাত্ দেখে ওদিকে থেকে লাবন্য আর তার
বান্ধবী জোরে জোরে হাসতে হাসতে
নাচতে নাচতে আসছে। রেহানকে দেখে
দুজনেই চুপ হয়ে গেল আর মুচকি মুচকি হাসতে
হাসতে যাচ্ছিলো।
রেহানকে অতিক্রম করার সময় লাবন্য তার
বান্ধবীকে বললো, জানিস সই, আমি প্রতি পূর্নিমার
রাইতে চাঁদ দেখি। আমার খুব ভালো লাগে। আইজ
তো পূর্নিমা, আমাগো পাড়ার যে বড় আমগাছটা
আছে না? ঐহানে গিয়া দেহি। পারলে তুইও আহিস।
ওর বান্ধবী বললো, না রে সই আব্বায় শহরে
গেছে। বাড়িতে মা একলা। আসতে পারমু না।
এটুকু বলেই আবার দুইজন চলে গেল।
রেহান বুঝলো ওকেই ম্যাসেজ দেওয়া হলো।
জোত্স্না দেখার নিমন্ত্রন করে গেল।
মুচকি হেসে শহরের দিকে পা বাড়ালো রেহান।
.
বিকালের আগেই বাড়ি ফিরেছে রেহান। এখন রাত।
বের হয় রেহান লাবন্যর সাথে জোত্স্না দেখার
জন্য।
তারাতারি চলে যায় গন্তব্যে।
গিয়ে দেখে আম গাছটার নিচে কেউ পেছন
ফিরে বসে আছে।
পাশে গিয়ে বসে পড়ে রেহান। লজ্জায় মুখ নিচু
করে রেখেছে লাবন্য। রেহান কিছু বলছেনা।
হঠাত্ মুখটা তুলে লাবন্যই বললোঃ
আমারে সুযোগ দিবেন আপনের সাথে
সারাজীবন একলগে চাঁদ দেখার?
কথাটা শুনে লাবন্যর দিকে তাকায় রেহান।
বাহঃ কি সুন্দর লাগছে। চাঁদের আলোয় চেহারায়
বেশ মায়াভরা অবয়ব দেখা যাচ্ছে।
তাদের দৃষ্টির অদুরে যমুনার কোলে চাঁদের ছায়াটা
তখন ঢেউয়ে ঢেউয়ে দুলছিল। আর অথৈ
জোত্স্নার মাঝে হালকা বাতাসে লাবন্যর চুলগুলো
উড়ছিলো, এমন মুহুর্তে যেন কথা বলতে ভুলে
গেছে রেহান।
.
রেহান কিছু বলছেনা দেখে লাবন্য বলে ওঠে,
“বুঝছি, দিবেন না সেই সুযোগ।” বলেই চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ায় সে।
.
হঠাত্ হাতটা টেনে ধরে রেহান দাড়িয়ে উঠে
বলে, “এই একই ইচ্ছা যে আমার মনেও অনেকদিন
হলো বাসা বেঁধে আছে। পূর্নিমার জোত্স্না
মুখরিত রাতের বেলায় নদীর পাড়ে বসে রুপালী
জোত্স্নাময় চাঁদ দেখবো। এভাবে পূরন হয়ে
যাবে স্বপ্নেও ভাবিনি। তবে এটা শর্ত আছে।
এ কথাটা শুনেই থমকে দাড়ায় লাবন্য। বলে,
-কি শর্ত, বলেন?
– আমি আর তোমার আপনি হয়ে থাকতে চাইনা। এখন তুমি হতে চাই। বানাবে তো!
.
ঘুরে দাড়িয়ে রেহানের বুকে মাথা রেখে
জড়িয়ে ধরে লাবন্য। যেন কতদিনের সাধনার ফল
মহানন্দে আবেগে জাপটে ধরেছে।
রেহানও তাকে স্বযত্নে আলতো করে চেপে
ধরে বুকের মাঝে। এ যেন চিরন্তন কোন বন্ধন
যা কখনোও ছাড়বার নয়। আজীবন এমন অটুট থাকবে।
.
এই নদীতে ভাষা জীবনের মাঝেও ওদের
চোখে এখন নতুনভাবে বাঁচার আশার আলো।
স্বপ্ন জীবনটাকে নতুনভাবে পাওয়ার।
ভালো থাকুক ওরা দুজন। যুগ যুগ ধরে টিকে থাকুক
ওদের ভালোবাসা। আর এই আমাগাছ, যমুনার জল,
ঢেউ আর এই চাঁদ থাকুক ওদের সাথেই ওদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে।
.
অনেকক্ষন হয়ে গেছে। সেই যে আলিঙ্গন
করেছে, এখনও কেউ কাউকে ছাড়েনি।
ছাড়বেই বা কেন? ওরা তো চায় এভাবেই সারাটাজীবনভর ধরে রাখতে। রাখুক না। কারই বা কি যায় আসে!
.
কিন্তু চাঁদটা তখনও আকাশ থেকে নির্লজ্জের
মতো তাকিয়ে তাকিয়ে ওদের ভালোবাসার
আলিঙ্গন উপভোগ করছিলো।
নাকি, বরং ওদের গায়ে জোত্স্না ঢেলে দিয়ে
ওদের এই প্রেমময় মূহুর্তটা আরো মাধুর্য্যপূর্ন
করে দিচ্ছিলো.?
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা